ইজিপ্টোলজিস্ট লি ইয়ং তাঁর অফিসে কাজ করছেন, তাঁর সেলফোনটা বেজে উঠলো। তার ছেলেবেলার বন্ধু রবি মূর।
'কি খবর বন্ধু বহুদিন পর? চলে এসো আমি অফিসেই আছি। '
দুই বন্ধুর বহু দিন পর দেখা। দুজনই ব্যস্ত, একজন গবেষনায়, অন্যজন শোবিজ নিয়ে।
দুজনই এখনো অবিবাহিত।
'বন্ধু তোমাকে তো টিভিতে ছাড়া আজকাল দেখাই যায় না। আমিও শিগগিরি এমন একটা কিছু করতে যাচ্ছি যাতে তুমিও এবার আমাকে টিভিতে দেখতে পাবে। ' বললেন লি।
'নতুন কোনো গবেষনা?'
'হ্যা, সেরকমই বলতে পারো।
কিছু অদ্ভুত ব্যাপার মেলাতে চেষ্টা করছি। পিরামিড শ্রমিকদের কথা কি কখনো ভেবেছো?'
'কিছুদিন আগে কোথায় যেন শুনলাম, পিরামিড শ্রমিকেরা নাকি ক্রীতদাস ছিলো না, স্বাধীন শ্রমিক ছিল?' রবি স্মৃতিচারণ করলেন।
লি উত্তেজিত। 'এই ব্যাপারটা কি তোমার কাছে অদ্ভুত মনে হয় না, এই স্বাধীন শ্রমিকেরা কিভাবে এত পরিশ্রমের কাজ করত? গিজায় ফারাও সম্রাট খুফুর পিরামিড গড়তে আশি বছর ধরে ত্রিশ হাজার শ্রমিক দিনরাত খেটেছিল। এই সব শ্রমিকেরা আলাদা গ্রামে থাকতো, সেইসব গ্রামে দরজি থেকে বেকারি সবই ছিলো।
এইসব শ্রমিকেরা নিজেদের বলতো 'খুফুর বন্ধু'। তাদের ধারনা ছিলো সম্রাট তাদের সুখ দুঃখের খোঁজ রাখেন, তাদেরকে বিপদে আপদে রক্ষা করেন। সারাদিন হাড় ভাঙা পরিশ্রম করেও তারা ছিলো সুখী। দুর্ঘটনায় পঙ্গু শ্রমিকদেরকেও কাজ করতে দেখা যেত। অন্তত তাদের কংকালগুলো দেখে তাই মনে হয়।
'আজকাল তো অনেক গবেষনাই বলছে শারিরীক শ্রমের সাথে মানসিক প্রশান্তির সম্পর্ক আছে। '
' ব্যায়ামের ক্ষেত্রে সেটা হতে পারে কিন্তু নগন্য মজুরিতে রাত দিন পাথর টানার মত কঠোর পরিশ্রমের ক্ষেত্রে একথা কতটুকু সত্য তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। এতো মানুষকে কিভাবে এ কাজে রাজি করানো হতো সেটাও একটা চিন্তার বিষয়। '
'এরমানে তুমি কি বলতে চাইছো?'
লি অন্যমনষ্কভাবে বলেই চলেছেন। 'অনেক পূরাতন কাহিনীতেই শোনা যায় ফারাওদের মোহিনী ক্ষমতার কথা, তারা ছিলো ঈশ্বরের মত।
কখনো তাদের বলা হতো সূর্য দেবতার রক্ষা কর্তা, কখনো বলা হতো পাতালের দেবতা। দেবতার কথার অবাধ্য হবার ক্ষমতা ছিলো না কারো।
মিশরের শেষ সম্রাট ক্লিওপেট্রার আকর্ষনী ক্ষমতার কথা তো সবাই জানে। সিনেমাতে তাঁকে যেমন সুন্দরী হিসাবে দেখানো হয় তেমন তিনি মোটেও ছিলেন না। যেসব পুরাতন মুদ্রা আর প্রতিকৃতি আমাদের হাতে এসেছে তা দেখে তাকে মোটেও সুন্দরী বলা যায় না।
বাকানো নাক আর ভাঙা চোয়ালে তাকে সাদামাঠই মনে হয়। অথচ তার রূপেই নাকি দেশ ছেড়েছিলেন মার্ক এন্টোনিও। আর অযথা যুদ্ধে জড়িয়েছিলেন জুলিয়াস সিজার। '
'তুমি কি বলতে চাইছো? তাদের মমি নিয়েই তো তোমরা গবেষনা করছো?' রবি অধৈর্য হয়ে উঠেছেন।
'শারিরীক গঠনে তাদের সাথে মানুষের কোনো অমিল নেই।
কিন্তু মানসিক গঠনে বিস্তর ফারাক। কেন তারা নিজেদের দেবতা ভাবতো! কেন তারা তাদের দেহাবশেষের উপর পিরামিড তৈরি করতো! এসব কি ভবিষ্যতের মানুষদের জন্য কোনো ইঙ্গিত?'
'তারমানে, তারমানে.....'
উত্তেজিত রবির মুখের কথা কেড়ে নিলেন লি।
'হ্যা, ঠিক ভেবেছো। ফারাওদের মানষিক ক্ষমতা ছিল। মানুষের মন নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা, মন চালনা করার ক্ষমতা।
ওরা ছিলো মেন্টালিস্ট। '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।