আমি একজন মানুষ। পুরুষ তো বটেই। এর চেয় বড় পরিচয় কি হত পারে।
‘বাড়ি এসে বিএসএফের নির্যাতনের কথা বললেও লজ্জায় বিবস্ত্র করে পেটানোর কথা কাউকে বলিনি। ’ আটরশিয়া গ্রামের বাড়িতে গেলে নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করেন হাবিবুর।
ভারতীয় সীমান্তরÿী বাহিনীর (বিএসএফ) নির্মম নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি সেই তরুণ হচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আটরশিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান ওরফে হাবু।
বিএসএফের জওয়ানেরা গত ৯ ও ১০ ডিসেম্বর হাবিবুরের হাত-পা বেঁধে বিবস্ত্র করে তাঁকে রাইফেলের বাঁট ও লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পেটান। বর্বর ওই নির্যাতনের কথা ভাবলে এখনো আঁতকে ওঠেন হাবিবুর। এক মাসের বেশি সময় পার হলেও এখনো বর্বরতার ÿতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালচে দাগ।
হাঁটেনও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। হাবিবুরকে পেটানোর ভিডিওচিত্র বুধবার ফাঁস করে ভারতের এনডিটিভি। এ নিয়ে ওই দিন ও বৃহস্পতিবার বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সারা দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
আটরশিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, হাবিবুরের বাড়ির সামনে লোকজনের জটলা। সেখানে হাবিবুরের খোঁজ করতেই জানা গেল, তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) শিবগঞ্জের মনাকষা ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।
এর আগেও সকালে একবার তাঁকে ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে বিএসএফের নির্যাতনের ঘটনা শোনেন বিজিবির কর্মকর্তারা।
হাবিবুর বলেন, তাঁরা তিনজন ভারত থেকে গরু আনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা গরু কিনতে না পেরে ৯ ডিসেম্বর রাতে দেশে ফিরছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার মৌরুসি সীমান্তচৌকির বিএসএফ সদস্যদের হাতে ধরা পড়েন তিনি। অন্য দুজন পালিয়ে যান।
এ সময় বিএসএফের জওয়ানেরা তাঁর কাছে দুই হাজার টাকা, পাঁচটি টর্চলাইট ও একটি মুঠোফোন দাবি করেন। কিন্তু সেগুলো দিতে না পারায় বিএসএফের সদস্যরা তাঁকে একটি চৌকিতে নিয়ে নির্যাতনের পর সারা রাত বেঁধে রাখেন। পরদিন ভোর সাড়ে চারটার সময় আবারও নির্যাতন চালান তাঁরা।
হাবিবুর বলেন, ‘বিএসএফ জওয়ানেরা আমার পরনের লুঙ্গি খুলে ছিঁড়ে দুই ভাগ করে লাঠির সঙ্গে হাত বেঁধে দ্বিতীয় দফায় মারধর শুরু করে। তারা সাতজন আমাকে রাইফেলের বাঁট ও লাঠি দিয়ে গোপনাঙ্গসহ পুরো শরীরে বেধড়ক পেটায়।
আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। মৃত ভেবে তারা আমাকে বাঁধা অবস্থাতেই সীমান্তে শূন্যরেখার পাশে একটি সরিষাখেতে ফেলে রাখে। ’
‘মার খাওয়ার সময় মনে হয়েছিল জীবনে আর বেঁচে ফিরতে পারব না। বাবু, স্যার, মামা বলে কত কাকুতি-মিনতি করেছি, বলেছি জীবনে আর ইন্ডিয়ায় আসব না। কিন্তু তাদের মারের হাত থেকে রেহাই পাইনি।
’ বলছিলেন হাবিবুর।
এদিকে, হাবিবুরকে সরিষাখেতে পড়ে থাকতে দেখে বাংলাদেশি অন্য রাখালেরা তাঁকে উদ্ধার করে রাজশাহীর খানপুর গরুর বিট এলাকায় নিয়ে আসে। তারা কাঠে আগুন জ্বালিয়ে তাঁর শরীর উষ্ণ করার চেষ্টা করে। পরে সেখানে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হন হাবিবুর। খবর পেয়ে পরদিন ১১ ডিসেম্বর পরিবারের সদস্যরা খানপুরে গিয়ে হাবিবুরকে নিয়ে আসেন।
হাবিবুরের সঙ্গে কথা হওয়ার আগে কথা হয় তাঁর মা ছবিয়ারা বেগমের সঙ্গে। ছবিয়ারা বলেন, ‘বিএসএফ আমার ছেলের ওপর যেভাবে নির্যাতন চালিয়েছে, তা কোনো মানুষ করতে পারে না। ছেলে বাড়ি ফেরার পর নির্যাতনের চিহ্ন দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। ’
ছবিয়ারা বলেন, ‘হাবিবুরকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও কয়েক দিন আগে থেকে এলাকার মুঠোফোনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে হাবিবুর লজ্জায় বাড়ি থেকে বের হতো না।
’
হাবিবুরের বাবা সাইদুর রহমান বলেন, হাবিবুর নানা ধরনের মালামাল ফেরি করে বিক্রি করতেন। ঢাকা বা চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হতেন। কিন্তু হাবিবুর গোপনে ভারতে গরু আনতে যেতেন, এটা তাঁদের জানা ছিল না। নির্যাতনের ওই ঘটনার পর ছেলের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, এর আগে আরও একবার হাবিবুর ভারত থেকে গরু এনেছেন।
দরিদ্র কৃষক সাইদুর বলেন, অন্যের জমি চাষ করে তিনি সংসার চালান।
তার পরও ছেলে অবৈধভাবে গরুর নিয়ে এসে আয় করুক এটা তিনি সমর্থন করেন না। তিনি বলেন, এলাকার অনেকেই ভারত থেকে গরু আনার কাজে জড়িয়ে পড়েছে। বিএসএফকে হাত করে তারা গরু পাচার করে বলে খুব একটা ভয় থাকে না।
গত বুধবার স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গরু চোরাচালানি সন্দেহে বিএসএফের সদস্যরা ওই তরুণকে (হাবিবুর) আটক করেন। ঘুষ দিতে অস্বীকার করায় বিএসএফের সদস্যরা তাঁর হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে পেটান।
নির্যাতনের পর ওই তরুণকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়।
এ ঘটনায় গত বুধবার বিএসএফের দÿিণবঙ্গ সীমান্তের মহাপরিদর্শক রবি পোনোঠ টেলিফোনে এক সাÿাৎকারে বলেন, ঘটনাটি যে অত্যন্ত ভয়াবহ আর লজ্জাজনক, তা বলার অপেÿা রাখে না। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এ ঘটনায় বিএসএফের আটজন সদস্য জড়িত। তাঁদের সাময়িকভাবে বরখা¯Í করা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।