আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্তহীন

আমি এই খেলাঘরের একজন দর্শক মাত্র। -তাহলে তুমি চট্টগ্রাম থেকে এসেছ? জান চিটাগাং আমার অনেক ভাল লাগে। -হুম। (অনিচ্ছাসত্ত্বে জবাব দিল নাবিল) -চিটাগাং তুমি কই থাক? হয়ত আমি চিনবনা আমি পাঁচ-ছ বার গিয়েছি ওখানে। অনেক সুন্দর শহর, যেন চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই।

নাবিল কিছু বলছেনা। বরং বিরক্ত হয়ে শুনে যাচ্ছে। কারণ ঢাকার মেয়েদের সম্পর্কে একটু আলাদা ধারনা রয়েছে। এর জন্য অবশ্য সে দায়ী না। তার বন্ধু রাসেলের কথা মনে পড়লে তার অনেক কষ্ট লাগে।

তাই সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর যাই হোক কোন মেয়ের কাছে সে কখনও বন্ধী হবে না। হঠাৎ এক ধাক্কা খেয়ে ওর সম্ভীত ফিরে এলো। -ওই স্যার আসছেন। কি ভাবছ? ওহ হ্যাঁ তাইতো, স্যার এসে গেছেন। ক্লাসের পরে কথা হবে।

এই বলে নাবিল নিজেকে সামলে নিলো। -আচ্ছা আপনি কেমন মানুষ বলেন তো? -আমি কি করলাম, নাবিলের উত্তর। - আহ আপনি রাগ করছেন কেন? আ-মিকি আপনাকে বেশি বিরক্ত করছি? -হ্যাঁ তাতো করছেন ই মনে মনে বলল নাবিল। তারপর মুখে একটা শুকনা হাসি এনে বলল কই না ত। -আমি জানতাম আপনি রাগ করতেই পারেন না।

তবে আপনি খুব একটা সুবিধার লোকও না। দেখছেন এতকিছু বলার পরেও আপনি চুপ করে বসে আছেন। আরে ভাই অন্তত এতটুকু জিজ্ঞাসা করেন কেন আপনাকে আমি দোষারোপ করলাম? নাবিল উত্তর দিলনা। তবুও মেয়েটা বলে চলছে। নাবিলের মনে হচ্ছে সে বাংলাদেশ বেতারে বাংলা সিনেমার কোন ট্রেইলার শুনছে।

-আপনি নিজের নাম তো বললেনই না, আর আমার নাম জিঞ্জাসাও করলেন না। আমি বর্না। আপনি? আমি নাবিল। বলে নাবিল সামনের দিকে হাটতে শুরু করল। ও বুঝতে পারছেনা কি করবে? সে কি মেয়েটার সাথে কথা বলবে, নাকি ক্রমাগত উপেক্ষা করতে থাকবে।

তার উপর নাবিলের দু-একটা এলোপাতাড়ি দৃষ্টি ইতিমধ্যে মেয়েটিকে সুন্দরি বলে দাবি জানিয়েছে। এছাড়া তার অস্থিরতা আর সহজভাবে কথা বলার ভাবটা ইতিমধ্যেই নাবিলকে কিছুটা দুর্বলও করে ফেলেছে বৈকি। পরক্ষনেই তার মনে হল, আজকের পর এই মেয়ে আর তার সাথে আর কথা বলবেনা। কারণ তাকে আজ পরোক্ষভাবে যথেষ্ট অপমান করা হয়েছে। এসব উদ্দেশ্যহীন ভাবনা ভাবতে ভাবতে সে তার বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়াল।

রাতে তার মাথায় ক্যাম্পাসের কথাগুলো বাসা বাধতে শুরু করল। তার মনে পড়ল সবসময় হাসি খুশি প্রানবন্ত রাসেলের কথা। একটি মেয়ে তাকে একদম বদলে দিল। সে এখন চার দেয়ালে বন্দি একজন মানুষ। অথচ কনা? সেতো ঠিকই শহরের সুনামধন্য শিল্পপতিকে বিয়ে করে সুখের সংসার পেতেছে।

নাবিলের মনে পড়ল সেই দিনটির কথা। রাসেল তাকে রাত দুইটার সময় ডেকে তুলছে। আরে বেটা এখন কি দুপুর দুইটা নাকি? ভদ্রঘরের ছেলেরাকি এত রাতে বাইরে থাকে। দাড়া আমি নিচে আসছি। এই বলে নাবিল রাসেলকে তার ঘরে নিয়ে এলো।

- দোস্ত আগে এক গ্লাস পানি খাওয়া। বাসা থেকে এই পর্যন্ত দৌড়ে এসেছি। অবস্য তোদের মোড়ের কুকুরগুলা আমাকে আরও জোরে দোড়াতে সাহায্য করেছে। - থাম। আমি পানি নিয়ে আসছি।

বলে চলে গেল নাবিল। এক নিশ্বাসে পুরো গ্লাসটি খালিকরে রাসেল বললঃ জানিস দোস্ত? ও হ্যা বলেছে। - কে হ্যা বলেছে নাবিল বলল। - তিন্নি। - তুই কি এই কথা বলার জন্যই এত রাতে এখানে এসেছিস? - রাসেল বলল হ্যা দোস্ত।

আর তোকেই আগে জানালাম। সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। দেখ আমার শরীর এখনও কাঁপছে। - আচ্ছা এখন ঘুমা। কাল সকালে উঠে সব শুনব।

ব্যাস সেই থেকে আর রাসেলকে পায় কে? সারাক্ষন ফোন বিজি থাকে। দশবার কল দিলে সে একবার পিক করে। নাবিলের মনে হলো তিন্নি মনেহয় তার বন্ধুকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। তারপর মনে তার মনে হলো, তাতে কি আসে যায়? যদি তার বন্ধু সুখে থাকে সেটাই হবে তার জন্য বড় পাওয়া। সামনে এইস.এস.সি পরীক্ষা, তাই নাবিল মাঝে মাঝে রাসেলকে পড়ার কথা বলে।

কিন্তু তার কাছে মনে হয় রাসেল বুঝি রাগ করছে। তাই সে ইদানিং আর কিছু বলেনা। এভাবে কেটেগেলো বেশ কিছুদিন। পরীক্ষা শেষ হল, রেজাল্ট বের হতে কয়েকদিন বাকী। রাসেলের কল পেয়ে একটু অবাকই লাগল নাবিলের।

ওপাশ থেকে খুব শান্ত গলায় রাসেল বলল দোস্ত তোর কি একটু সময় হবে? তাহলে আজ আমি তোর ওখানে থাকব। অবশ্যই চলে আয় নাবিল বলল। প্রায় আধ ঘন্টা হয়ে গেল। রাসেল কিছু বলছেনা। কি হয়েছে আমাকে বল, নাবিল বলল।

- হুম তোকে সব বলার জন্যইতো স্বার্থপরের মত চলে এসেছি তোর কাছে। - কি বলছিস এসব? তুই স্বার্থপর হবি কেন নাবিল বলল। - যে একটি মেয়ের জন্য পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদেরকে দুরে সরিয়ে দেয় সেতো স্বার্থপরের চেয়েও খারাপ। - বাজে কথা রাখ। কি হয়েছে তোর এটা বল।

আচ্ছা এক কাজ করি আম্মুকে খাবার দিতে বলি। খাওয়া শেষ করে তারপর তোর সব কথা শোনা যাবে। তুই কি বলিস রাসেল? - আমার ক্ষিদে নেই। এক কাজ কর তুই খেয়ে আয়। - নাবিল বলল তাই কি হয় দোস্ত? তোকে রেখে আমি খাই কি করে? রাসেল আর চোখে পানি রাখতে পারলনা।

নাবিলকে জড়িয়ে ধরে শিশুর মত কাদতে লাগল। ও আমার সাথে প্রতারনা করেছে নাবিল। আমি ওকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতাম, আর ও আমার সাথে...! রাসেল কাদতে লাগল। - নাবিল বলল, একটু শান্ত হ দোস্ত। দেখবি ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।

কিছুই ঠিক হবেনা। আগামী মাসের পনেরো তারিখে ওর বিয়ে। ছেলে শহরের নামকরা ব্যাসায়ী। আমার কাছ থেকে সব কেড়ে নিয়ে ও এখন শিল্পপতির স্ত্রী হতে চলেছে। আসলে কি জানিস নাবিল যারা ভালবাসে তারা কিছুই পায় না।

আর তাদেরই সব যারা অভিনয় করে। আবার কাদতে শুরু করল রাসেল। কিছুক্ষন পরে রাসেল আবার বলতে শুরু করল জানিস- এবার ঈদে নিজের সপিং এর টাকা দিয়ে ওকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম শাড়িটা একদিন পরো দেখব তোমায় কেমন লাগে। ও বলল আমার শাড়ি ভাল লাগেনা।

অথচ গত সপ্তাহে ওকে আমি সেই শাড়িটা পড়ে তার হবু বরের সাথে ঘুরতে দেখেছি। বল দোস্ত এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে? - নাবিল রাসেলের মাথায় হাত রেখে বলল। সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই চিন্তা করিসনা। মনকে শক্ত কর।

-অনেক্ষন যাবত লক্ষ করলাম চুপচাপ বসে আছিস। কি চিন্তা করছিস নাবিল? জয়ের ডাকে নাবিলের চিন্তার ঘোর কাটে। বলল কিছুনা জয়। মায়ের কথা মনে পড়ছিল। মাকে ছাড়া কখনও থাকিনিতো তাই একটু খারাপ লাগছে।

আচ্ছা রাত অনেক হয়েছে ঘুমিয়ে পড়। আগামী সপ্তাহে তুই আর আমি একসাথে আন্টিকে দেখে আসব। নে ঘুমা এখন বলে লাইট বন্ধ করে দিয়ে জয় তার রুমে চলে গেল। নাবিল মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে পাড়ি জমাল।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।