যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য ভারতকে আর ভারতের আদালতকে অভিনন্দন লুটেরা বহুজাতিক কোম্পানি নোভারটিসকে কষে একটা চড় মারার জন্য! তো ঘটনাটা একটু খুলে বলি- ২০০৬ সাল থেকেই নোভারটিস ক্যানসার নিরাময়ে ব্যবহূত ‘গ্লিভেক’ নামের ওষুধটির উপর মেধা সত্ত্বের দাবি জানিয়ে আসছে এবং ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো ওই ওষুধটি নকল করে বাজারজাত করছে বলে অভিযোগ করে। কিন্তু ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নোভারটিস এর মেধাসত্ত্বের দাবিকে বেআইনি ঘোষণা করে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, নোভারটিস যে ওষুধটির স্বত্ব দাবি করছে,সেটির মধ্যে ‘নতুনত্ব বা নব-আবিষ্কারের কোনো বিষয়’ নেই। তাই ভারতীয় আইনে নোভারটিস সেটির স্বত্ব পেতে পারে না। ভারতের আইন অনুযায়ী, প্রচলিত ওষুধের চেয়ে খুব বেশি উন্নত বা আলাদা নয় এমন কোনো নতুন ওষুধ স্বত্ব পেতে পারে না। ভারতের ওষুধ কোম্পানি সিপলা লিমিটেড ও ন্যাটকো ফার্মা লিমিটেড ‘গ্লিভেক’ ওষুধটি তৈরি করে নোভারটিসের চেয়ে প্রায় দশ গুণ কম দামে বিক্রি করে।
নোভারটিস এর মতলব ছিল এই ওষুধের সত্ত্ব আদায় করে নিয়ে ভারতের কোম্পানিগুলার ওষুধ উৎপাদনের অধিকার কেড়ে নিয়ে ভারতের বিশাল বাজারে নিজে চড়া দামে এই ওষুধ বিক্রি করে অবাধে মুনাফা লুটা। কিন্তু ভারতের আদালত এই মতলববাজি আইনের মারপ্যাঁচেই রুখে দিয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতের দরিদ্র জনগণের কম দামে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ কেনার অধিকার সুরক্ষিত হল সাথে সাথে তাদের ওষুধ শিল্পও বহুজাতিকের অবৈধ আগ্রাসন থেকে রক্ষা পেল।
ন্যাটকো ফার্মার সচিব এম আদিনারান্ন নোভারটিস এর বিরুদ্ধে এই আইনি বিজয়কে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও সরকারের জন্য বড় জয় বলে অভিহিত করেন, তার সাথে আমরা সহমত পোষণ করে বলতে চাই এই বিজয় শুধু ভারতের নয়, এই বিজয় আমাদেরও, এই বিজয় পেটেন্ট আগ্রাসনের শিকার আফ্রিকা ও এশিয়ার প্রতিটি দরিদ্র দেশসমূহের কেননা এর মধ্য দিয়ে আইনি লড়াইয়ে বহুজাতিক জায়ান্টের পরাজয় আমাদের সাহস জোগাবে, আমাদের পথ দেখাবে মেধাসত্ত্ব আইনের অন্তরালে অবাধ মুনাফা অর্জনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য!
রায়ের পর নোভারটিস এর বিবৃতিতে দেখে আরও মজা পেলাম , “ভারতীয় আইনে ‘সম্পত্তির মেধাস্বত্ব অধিকার খুব কম রক্ষিত হয়েছে’। এখন ভারতের আইনকে দুষে লাভ নাই, আমাদের সুস্পষ্ট কথা হচ্ছে একটা প্রচলিত ওষুধের মৌলিক কোন পরিবর্তন না করে (no drastic modification)সামান্য পরিবর্তন করেই তা পেটেন্ট করে নিয়ে বছরের পর বছর সত্ত্ব দাবি করে একচেটিয়া ব্যবসা করে কোটি কোটি ডলার মুনাফা কামানোর ধান্দাবাজি আইন বাদ দেন, আপনাদের এইসব অন্যায় সাম্রাজ্যবাদী আইন বাতিল করে লাইনে আসেন, প্রতিরোধ শুরু হয়ে গেছে, ভারত দেখিয়ে দিয়েছে আপনাদের এইসব ভণ্ড আইন যতই WTO থেকে পাস করিয়ে নেন না কেন তা মানতে আমরা চাই না! পশ্চিমাদের বিদ্যমান পেটেন্ট আইনটি উন্নত দেশগুলোর মালিকানাধীন বহুজাতিক কোম্পানির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেই কাজ করবে, যাতে দরিদ্র দেশগুলোর কাছ থেকে অবাধে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা লুণ্ঠনের আইনি বৈধতা পাওয়া যায়।
মেধাসত্ত্বের অধিকার আইনকে ব্যবসায়িকভাবে অবাধ মুনাফা অর্জনের হাতিয়ার বানানোর যে পরিকল্পনা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দোহা ঘোষণায় নেয়া হয়েছে তা একটা বড় সড় ধাক্কা খেল ভারতের আইনের কাছে।
বাংলাদেশকেও এখন ভারতের আদালতের মত উপর্যুক্ত আইন তৈরি করে জীবন রক্ষাকারী অনেক ওষুধের উপর বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির অবৈধ মেধাসত্ত্ব দাবিকে প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিতে হবে কেননা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে ওষুধ শিল্প সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেধাসত্ত্ব অধিকার আইন কার্যকর করতে হবে বাংলাদেশ সহ অনুন্নত দেশগুলোকে, এর আগ পর্যন্ত উন্নত দেশগুলা আমাদের দয়া(?) করে ছাড় দিয়ে যাচ্ছেন এল ডি সি হওয়ার কারনে। মেধাসত্ত্ব আইন কার্যকর হলে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো অনেক ওষুধ তৈরি করতে পারবে না। আমাদের কয়েকগুণ বেশি দামে বিদেশি কোম্পানির পেটেন্ট করা ওষুধ খেতে হবে। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে রপ্তানি সম্ভাবনা হারাবে।
দরিদ্ররা ওষুধ কিনতে গিয়ে হিমশিম খাবে। আমাদের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
ভারতের মত বাংলাদেশ কি পারবে বহুজাতিকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে দরিদ্র জনগণের কম দামে ওষুধ পাওয়ার নিশ্চয়তা বিধান করতে আর দেশীয় ওষুধ শিল্প রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ? বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী লুটেরা বহুজাতিক কোম্পানির সেবাদাসত্ত করলেও এদেশের ফার্মাসিস্ট, চিকিৎসক সহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের জনগণকে সাথে নিয়ে সরকারকে বাধ্য করতে হবে সাহসী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য!! http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-04-01/news/341412 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।