ত মামা, আদর খাবো !!! কি খাবি ?? !!
আদর খাবো। আদর আবার কিভাবে খায় !!
খায়, তুমি জানো না। মাম্মী আমাকে প্রতিদিন রাতে আদর খাওয়ায়।
কিভাবে খাওয়ায় , বল্।
এরপর সে আমার বাম গালের সাথে তার ডান গাল, ডান গালের সাথে তার বাম গাল ঘষে কপালে একটটা চুমু দেবে।
এটা হচ্ছে আমার অতি আদরের ভাগ্নীর ভাষায় আদর খাওয়া !!
আদর খাওয়ানোর আবার কন্ডিশন আছে। শেভ না করে তাকে আদর করা যাবে না !! মুখে কাটা (খোচা দাড়ি) নিয়ে তার গালে গাল ঘষা নিষেধ !!
আদর দেয়ার আরও রকমফের আছে। গালে চুমু দেয়ার নাম হচ্ছে আপ্পা!!আপ্পা দিতে বল্লে গালে থুতু টুতু লাগিয়ে মুখে আ.......প্পা........ শব্দ করে চুমে দেবে এবং অবশ্যই যে কেউই তার এই আপ্পা পেতে পারে না । এটা তার মা-বাবা এবং অতি কাছের দুই একজন মানুষের জন্য বরাদ্দ। মাঝে মাঝে আমি তার পেটে মুখ দিয়ে সুরসুরি দেই।
তার ভাষায় এটা হচ্ছে পামপা !! পামপা দিলে তার খিলখিল হাসি মোটামোটি মাইল খানেক দূর থেকে শোনা যায়।
"আর না প্লিজ..আর না মামা ....প্লি.........জ" .....সে এক দেখার মতো দৃশ্য। আমার সাথে খেলাধূলা পার্টের তার অন্যতম পছন্দের একটা অংশ হচ্ছে আমার ঘাড়ের উপর চড়ে সারা বাড়ি ঘোরা। উপরের সব জিনিষ ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখা যেগুলো সচরাচর ছুতে পারে না। আর সামনে যাকেই দেখবে তাকে বলা, "দেখো দেখো আমি কতো বড় !!" আর আমার চুলের বারোটা বাজানো।
টেনে হিচড়ে ঘোড়ার সওয়ারীর মতো করে চুল টেনে মোটামোটি গাছিখানেক চুল তার হাতে নিয়ে আসা। আমাকে ঘোড়ার মতো করে আমার পিঠের উপর চড়ে বাড়ি চড়ে বারানোও তার আরেকটা প্রিয় খেলা এবং পায়ের গোড়ালী দিয়ে আমার পেটে ঘোড়ার মতো আঘাত করা।
হুট করে এসে দুই হাত মুঠি করে আমাকে হালুম!!! বলে ভয় দেখাবে এবং যথারীতি আমাকে ভয় পেয়ে বিছানায় গড়াগড়ি করতে হবে। এবং সে হেসে কুটিকুটি খেয়ে বলবে "আরে বোকা, আমি তো তোমাকে ভয় দেখাচ্ছি !! আমি কি সত্যি সত্যি বাঘ নাকি!!"। আবার যদি সে হালুম দেয় এবং আমি ভয় না পাই তখন সে হতাশ হয়ে বলবে, তুমি ভয় পাও না, দেখো না আমি তোমাকে ভয় দেখাই ..!! আমিও মাঝে মাঝে তাকে হালুম দেই সেও ভয় পেয়ে বিছানায় গড়াগড়ি করবে যতক্ষণ না তাকে বলা হবে , ""আরে বোকা মেয়ে, আমি তো তোমাকে ভয় দেখাচ্ছি !! আমি কি সত্যি সত্যি বাঘ নাকি!!"।
রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে গুড নাইট বলবে না , বলবে "গুডু নুডু!!"। এবং আমাকেও বলতে হয় "গুডু নুডু ....গুডু নুডু" ।
ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবলের সময় আশেপাশে হাজার হাজার পতাকা দেখে তার মাথা খারাপ।
মামা এগুলা কি ? বল্লাম পতাকা।
মামা দেখো দেখো কত্তো কত্তো পকাতা !!
বল্লাম - মামা, এগুলা পকাতা না এগুলো পতাকা।
সে এরপরও বলবে , পকাতা, পকাতা.....পকাতা !!
বারান্দায় গিয়ে প্রতিদিন বিকেলে পতাকা গুনবে।
"একটা পকাতা, দুইটা পকাতা.......তিনশটা পকাতা" !!!!
পাগলের মতো খিলখিল করে হাসবে আর পকাতা পকাতা করবে !!!
আমাদের বাসায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুইটা গ্রুপ ছিলো এবং আমরাও বাচ্চা কাচ্চাদের যে যার দলে
নেয়ার চেষ্টা করতাম। কারণ তারা আর কিছু বুঝুক না বুঝুক খেলার সময় চিতকার করে করে বাড়ি মাথায় তোলা আর পেইন দেয়ার জন্য খুবই কার্যকরী। স্বাভাবিকভাবেই আমি তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে চকলেট এবং চিপ্স দিয়ে তাকে সব ধরনের সবক দি্যে দিতাম, "আর্জেন্টিনা আর্জেন্টিনা " করার জন্যে। যতোক্ষণ তার হাতে ওসব থাকতো ঐ পর্যন্তই ।
এরপর থেকে আবার শুরু হতো ব্রাজিল ব্রাজিল। আর্জেন্টিনা নামটা উচ্চারণে কঠিন এজন্যে নাকি তার মা ব্রাজিল সাপোর্টার এজন্যে সে ব্রাজিল ব্রাজিল করতো আমি জানি না। একবার আমি বল্লাম , তোকে আর কোনো চকলেট নাই , নো চিপ্স। এবার সে খুব চিন্তিত, দু:খিত ও হতাশ। তাকে নিয়ে প্রথমবারের মতো গেলাম ফ্যান্টাসি কিংডমে।
গিয়েই তার প্রথম কথা। "মামা, আমি এখানে কতোদিন পরে আসলাম !!!" আমি অবাক হয়ে জিগ্গেস করলাম , তুই কখন আসছিলি এখানে ?
৫ বছরের বাচ্চাটার জবাব, "অনেক ছোটকলে !!!"। তার মা-বাবার বিয়ের ভিডিও আর ছবিতে সে প্রায়ই নিজেকে দেখতে পায়। একটু পরপর তার সাইজের বাচ্চা কাচ্চা দেখলেই, "ঐ তো আমি !!" "আমার লাল ড্রেসটাই তো পড়েছিলাম তোমার বিয়েতে, না মাম্মি ?"
"হুম মা... আমার বিয়েতে তুমি ঐ ড্রেসটাই তো পড়েছিলে" - তার মায়ের উত্তর।
বাচ্চাদের একটা অদ্ভূত জগৎ আছে।
সে অদ্ভূত জগতে তার দৃঢ়বিশ্বাস সে আসলে তার মায়ের মেয়ে না। সে হচ্চে তার ময়নার (আমার মা , তার নানু) মেয়ে। তাই যদি না হয়, ময়না কেনো তাকে আদর করে করে খাওয়াবে !! সে খেতে না চাইলে মারেনা। "আমি তো খাবোই, তাই না মামা। তুমিই বলো।
তাহলে আমাকে মারতে হবে কেনো ? " অদ্ভুত ফুলের মতো লাগে যখন সে ঘুমিয়ে থাকে। একটা হাত দিয়ে সবসময়ই ধরা থাকে তার মায়ের জামা আর ঘুমের মধ্যে একটা মুচকি হাসি ছড়িয়ে থাকে তার সারা মুখে। কেমন যেন একটা শুভ্রতা। দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়, মোচড় দিয়ে উঠে বুকে।
তুই ভালো থাক মামা......অনেক ভালো !! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।