আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিবর্তন: শিশুতোষ লেখা

কয়েক দিন আগে আমাকে একজন প্রশ্ন করলো, আপনি কি "থিওরী ওফ ইভোলিউশন" বিশ্বাস করেন? বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে কোনো বিষয়কে নি:সংশয়ে বিশ্বাস করা সম্ভব না, বরং প্রশ্নটা যদি অন্য ভাবে আসতো, যেমন বর্তমানের পৃথিবীর যে জীববৈচিত্র তা মূলত এক কোষী প্রাণী বিবর্তিত হয়েই এ অবস্থায় পৌঁছেছে এমন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় আমার আস্থা আছে কি না? তাহলে উত্তর দেওয়াটা সহজ হতো। পৃথিবীতে বর্তমানের জীববৈচিত্র যে অতীতের এক কোষী প্রাণীর বিভিন্ন ধরণের রূপান্তর সেটা হয়তো মেনে নেওয়া অনেক বেশী কঠিন কিন্তু এককোষী জীবের ভেতরে যে ধরণের ধারাবাহিক রূপান্তর কিংবা বিবর্তন প্রক্রিয়া চলমান তাতে থিওরী ওফ ইভোলিউশনে আস্থা স্থাপন করতে না পারাটাই অবৈজ্ঞানিক। বিজ্ঞান কার্যকারণ খুঁজে, প্রতিটি ঘটনাকে কোয়ালিটিটেভলি এবং কোয়ান্টিটেটিভলি ব্যাখ্যা করতে চায়। প্রতিটি পরিবর্তনের নেপথ্যে কোনো না কোনো উদ্দীপনা বিদ্যমান এ বিষয়টির যৌক্তিকতা কেউই অস্বীকার করে না, অলৌকিক অব্যাখ্যায় কিছু ঘটে যাওয়ার সম্ভবনা কম। হয়তো ঘটে, কিন্তু আমার চারপাশে ঘটে নি।

প্রতিটি জীব, এককোষী কিংবা বহুকোষী যেমনই হোক না কেনো উদ্দীপনার সাড়া দেয়, বিরুপ পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে নিজেকে পরিবর্তিত করে এবং অনুকূল পরিবেশে নিজের সংখ্যাবৃদ্ধি করে। কিন্তু তারা প্রজন্মে প্রজন্মে বিবর্তিত হতে পারে এবং এটি এখন প্রমাণিত। প্রতিটি জীবনই আসলে বেশ কয়েক কেজি হাইড্রোজেন, কার্বন, অক্সিজেন,নাইট্রোজেন আর কিছু পরিমাণ সালফার, সোডিয়াম এবং অন্যান্য মৌলিক পদার্থের একটা সন্নিবেশ। সেসব মৌলিক পরমাণুগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়ে শর্করা, প্রোটিন, এমাইনো এসিড, এমিন, এমাইড এসব তৈরি করে, একটি এককোষী প্রাণীও এসব তৈরি করে, বহুকোষী প্রাণীও একই ধরণের যৌগ তৈরি করে বিপাকীয় প্রক্রিয়ায়। কিন্তু এসব অনুগুলোর কাঠামোর ভিন্নতার বাইরে এক কোষী এবং বহুকোষী জীবের জীবনচক্রে তেমন বড় মাপের তফাত নেই।

আকৃতিতে যেমন তফাত থাকুক না কেনো আণবিক পর্যায়ে একটি ব্যাকটেরিয়ার সাথে আমাদের পার্থক্য খুব বেশী নয়। প্রতিটি প্রাণী কি ধরণের রাসায়নিক যৌগ নিজস্ব বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় উৎপাদন করতে পারবে তা নির্ধারণ করে তারা ডিএনএ- আরএনএ- এখানে যেসব যৌগ পরস্পর যুক্ত তারাই এইসব বিপাকীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রন করে, নিজেদের প্রতিরূপ তৈরি করে। একই প্রজাতির প্রতিটি প্রাণী একই ধরণের রাসায়নিক যৌগ তৈরি করলেও প্রতিটি প্রাণী আলাদা আলাদা বৈশিষ্ঠ্যসুচক যৌগ নির্মাণ করতে সক্ষম। এই যৌগগুলো প্রতিটি প্রাণী সংগ্রহ করে, সংগ্রহের প্রক্রিয়াটিকে আমরা পুষ্টি হিসেবে চিহ্নিত করি। কোন কোন রাসায়নিক যৌগ আমরা গ্রহন করতে পারবো সেটা নির্ধারণ করে আমাদের ডিএনএ-র আণবিক গঠন, দির্ঘ অনভ্যাসে কিংবা অন্য যেকোনো উদ্দীপনায় আমাদের বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় আমরা অনেক পুষ্টিই গ্রহন করতে পারি না।

আমাদের শরীর সেটা গ্রহন করতে পারে না। কিভাবে পুষ্টি কোষে প্রবেশ করে তার একটা সাধারণ ব্যাখ্যা হিসেবে আছে তালা-চাবি প্রক্রিয়া, যেখানে আমাদের কোষপ্রাচীরের ভেতর দিয়ে যেসব রাসায়নিক যৌগ অনায়াসে গতায়ত করতে পারে তাদের কোন একটির সাথে যুক্ত হয়ে ভিন্ন কোনো যৌগ কোষের ভেতরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। এই তালাচাবি প্রক্রিয়াটুকু দিয়ে এক কোষী জীবের বিবর্তনের একটা ধারণা পাওয়া যায়। পৃথিবীতে অনেক ধরণের ব্যাকটেরিয়া আছে, অনেক ধরণের ভাইরাস আর ছত্রাক আছে, সেসবের সবগুলো আমাদের দেহে বংশবিস্তার করতে পারে না। এমন কি পশুকে যে ব্যাক্টেরিয়া আক্রান্ত করে সেই একই ব্যক্টেরিয়া পাখীকে আক্রান্ত করতে পারে না।

ব্যক্টেরিয়া যখন কোনো প্রাণীর ডিএনএ-র সাথে খাপ খাওয়ানো কোনো অনু নিজের ডিএনএতে তৈরি করতে সক্ষম হয় তখনই একমাত্র তা অন্য কোনো প্রাণীকে আক্রান্ত করতে পারে। এই বিবর্তনের ধারাটা চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়ে আছে, বিভিন্ন ধরণের এন্টিবায়োটিক তৈরি করা হচ্ছে, সেসব এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয় ল্যাবরেটরিতে। বহুল প্রচলিত এন্টিবায়োটিকগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারে এমন ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এইসব এন্টিবায়োটিকপ্রতিরোধক্ষম ব্যক্টেরিয়া মানুষের নিরাপত্তার প্রতি বড় রকমের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাক্টেরিয়া কিভাবে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধক্ষম হয়ে যাচ্ছে? তারা এন্টিবায়োটিকের যে উপাদান তাদের ধ্বংসের কারণ সেসব যৌগ এখন নিজেরাই উৎপাদন করছে, সেসব তাদের পুষ্টির অংশ হয়ে গেছে, এখন তা তাদের কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

অনেকে এই এককোষী প্রাণীর বিবর্তনে আস্থা রাখে কিন্তু এর পরবর্তী যৌক্তিক ধাপটুকু মেনে নিয়ে অনাগ্রহী। তাদের বিরুদ্ধ যুক্তি এখন কেনো বাঁদর থেকে মানুষ হচ্ছে না। বিবর্তন একটা দীর্ঘমেয়াদী ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, কয়েকশত প্রজন্মের ব্যপ্তিতে এই পরিবর্তনগুলো দৃশ্যমান হয়ে এক ধরণের ভিন্ন প্রজাতি তৈরি করতে পারে- মানুষের জীবনযাপনের ব্যপ্তি মাত্র ৭০ বছর, এমন একশ প্রজন্ম অতিক্রম করতেও কয়েক হাজার বছর প্রয়োজন। মাত্র ১৭০ বছরে ৫ প্রজন্মে বাঁদরকে মানুষ হতে দেখার মতো ঘটনা ঘটলে সেটা এক ধরণের অলৌকিক ঘটনাই হবে। যারা আশা করেন একদিন হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে চিড়িয়াখানা গিয়ে তারা দেখবেন খাঁচায় অনেকগুলো উনমানুষ ঝুলে আছে তাদের প্রত্যাশা পুরণ হয় না বলে তারা বিবর্তনে আস্থা স্থাপন করেন না।

প্রতিকূল পরিবেশে এই খাঁচার বাঁদরগুলো ছেড়ে দিয়ে ১৫ প্রজন্ম পরের কোনো সময়ে গিয়ে দেখলে বিবর্তনের পরিমাণটুকু তারা নিশ্চিত উপলব্ধি করতে পারতেন, তবে আমাদের জীবনকালের ব্যপ্তিতে ২০ থেকে ৫০ মিনিটের জীবনকালের ব্যাক্টেরিয়ায় বিবর্তন দেখবার সম্ভবনা অনেক প্রবল। এ কারণেই আমরা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি থিওরী ওফ ইভোলিউশনের যৌক্তিক ব্যাখ্যাটিতে আমি আস্থা রাখি। ( অনেককে অনেক ধরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েও রাখতে পারি নি, প্রায় ভুলেই ছিলাম লেখালেখির কথা। অনুপস্থিতির সময়সীমা যাচাই করলে দেখা যাবে প্রায় ২ বছর ধরে তেমন কিছুই লেখা হয় নি। কিন্তু আমার মতো অনুপস্থিত ব্লগারের ব্লগ নিয়ে অনেকের বিষম উৎসাহ, তারা নিয়মিত বিরতিতে পাসওয়ার্ড দিয়ে ব্লগটিকে সচল করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন।

সেসব পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের আবেদন আমি বিভিন্ন সময়ে পাই, এর আগে লিখেছিলাম যদি আপনি আপনার প্রয়োজনটুকু জানান তাহলে আমি আপনাকে মন্তব্যে পাসওয়ার্ড দিয়ে দিবো। এখনও সে অনুরোধটুকু থাকলো। অন্যের ব্লগের পাসওয়ার্ড নিয়ে অযথা টানাহ্যাঁচরা করাটা অশোভন। এই অশোভোনতাটুকু বাদ দিয়ে সুন্দর জীবনযাপন করা যায়। ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।