আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈশ্বরের অস্তিত্ব : আমার চিন্তাভাবনা

শালিক পাখি বাংলা ব্লগ ইতিহাসের শুরু থেকেই একটা ব্যাপার খুব আলোচিত, সমালোচিত হচ্ছে। আর তা হলো ঈশ্বর আছে কি নেই তা নিয়ে আস্তিক এবং নাস্তিকদের মধ্যে প্রবল তর্কযুদ্ধ, এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে গালি গালাজ। এসব দেখে আমার মনে হলো আমার নিজের ধারণাটাও সবাইকে জানাতে পারি। এই পোস্টটা অনেক আগেই লিখেছিলাম, কিন্তু তখন ওয়াচে থাকায় ফার্স্ট পেইজে অ্যাক্সেস পাই নাই। পরে আমু ও সদালাপে পোস্ট করেছিলাম।

কাজেই, সামুতে আবার পোস্ট করছি। লেখাটা লিখেছি নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নয়, শুধু নিজের মতামত বা চিন্তা ভাবনা প্রকাশ করার জন্য। যদি এই লেখা কারো দৃষ্টিতে পড়ে এবং কেউ এটাকে বিশ্লেষণ করতে চান বা আমার সাথে দ্বিমত বা সহমত পোষণ করতে চান, তাহলে তাকে স্বাগত জনাব। আর এক্ষেত্রে অবশ্যই ভদ্র ব্যবহার প্রত্যাশা করব। আর হ্যাঁ, যদি কেউ এটা থেকে কোনো রেফারেন্স দিতে চান (যদিও রেফারেন্সের যোগ্য কি না জানিনা), তবে আমার অনুমতি নিয়ে নিলে খুশি হব।

এবার আসি মূল কথায়। আমার ধর্ম বিশ্বাস আপাতত কাউকে জানাতে চাচ্ছিনা। তবে সেটা এই পোস্টের শেষে বলে দিয়েছি। জানাতে চাচ্ছিনা, কারণ আমি চাই না কেউ আমার এই লেখাটি একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়ুক। এখন যদি আমি বলে দেই আমি আস্তিক, বা আমি নাস্তিক, তাহলে লেখাটা অনেক খানি প্রভাবিত হয়ে যাবে, পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে।

আস্তিক পাঠকরা আমার লেখাটি তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে পড়বেন, আর নাস্তিক পাঠকরা তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে। ধৈর্য্য ধরে যদি পুরোটা পরেন, তবে লেখকের বিশ্বাস জেনে যাবেন। আর যারা একটু অধৈর্য্য, তাদের জন্য তো স্ক্রল বাটনটা আছেই। আমার এই লেখাটি শুধুই বিশ্বাস নিয়ে। শরীয়ত, আচার ব্যবহার, বা কোনো নিয়ম কানুন নিয়ে নয়।

কাজেই যারা আশা করে আছেন যে আমি শরীয়তের পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলব, তারা হতাশ হবেন। কাজেই তাদের মূল্যবান সময় অন্য কাজে ব্যয় করার পরামর্শ রেখে নিচ্ছি। এই পোস্টে আসলে আমি কিছু শব্দ নিয়ে আলোচনা করব। এগুলো হচ্ছে বিশ্বাস, মানুষ এবং ঈশ্বর। ১. বিশ্বাস: শুরুতেই আশা যাক বিশ্বাস কাকে বলে।

তার আগে আমাদের জানতে হবে প্রমাণ কী? জানতে হবে কারণ প্রমাণ আর বিশ্বাস শব্দদুটো ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। নাস্তিকদের যখন বিশ্বাস করতে বলা হয়, তখন তারা প্রমাণ চায়, আর আস্তিকদের যখন কেন বিশ্বাস কর জানতে চাওয়া হয়, তখন তারা প্রমাণ দেবার জন্য মরিয়া হয়ে যায়। প্রমাণ হচ্ছে সেই জিনিস, যা কোনো মতবাদকে বা ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করে। যেমন আপনি বললেন, একটা থালায় কিছু পানি নিয়ে রোদে রেখে দিলে একটা সময় পরে তা জলীয়বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে। আপনার ক্লাস ৫ পড়ুয়া ছোট ভাই তা বিশ্বাস করলো না।

তাই সে নিজে একটা পাত্রে কিছু পানি রোদে রেখে দিল এবং দেখল সেটা কিছুক্ষণ পরে আর নেই। সে তখন আপনাকে এসে জিজ্ঞেস করলো, তখন আপনি তাকে পানির স্বতবাষ্পীভবন বুঝিয়ে বললেন, তারপর সে বুঝলো এবং আপনার কথা বিশ্বাস করলো। একটু ভুল হলো, বলা উচিত সে আপনার কথায় সম্মতি জ্ঞাপন করলো। আরেকটা উদাহরণ দেই। আপনি কী বিশ্বাস করেন যে ২ + ২ = ৪? প্রশ্নটা একটু হাস্যকর হয়ে গেল না? উচিত ছিল বলা, “আপনি কি জানেন, ২ + ২ = ৪?” কিংবা যদি বলি আপনি কী বিশ্বাস করেন, সূর্য পূর্ব দিকে উঠে? এটাও একটা হাস্যকর প্রশ্ন।

বলা উচিত ছিল, “আপনি কী জানেন, সূর্য পূর্ব দিকে উঠে?” এখানেই হচ্ছে জানা আর বিশ্বাস করার মধ্যে পার্থক্য। যে জিনিসটা সবার চোখের সামনে ঘটে, তা আমরা জানি, আর যে জিনিসটা আমাদের চোখের সামনে নাই, সেটাই আমরা বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করি। আপনি কি বিশ্বাস করেন ২ + ২ = ৪? না। আপনি জানেন ২ + ২ = ৪। আপনি কি বিশ্বাস করেন, সূর্য পূর্ব দিকে উঠে? না।

আপনি জানেন সূর্য পূর্ব দিকে উঠে। কারণ এটা আপনার কাছে প্রমাণিত। কাজেই এটা আপনি জানেন। আশা করি জানা আর বিশ্বাস করার মধ্যে পার্থক্যটা পরিষ্কার হয়েছে। যেটার প্রমাণ আপনার কাছে নেই, সেটাকে মেনে নেয়াকেই বিশ্বাস বলে।

তার মানে কি আপনি আগডুম বাগডুম যা খুশি তাই মেনে নিবেন? মোটেই না। কারণ আপনার নিজস্ব কিছু বিচার বিবেচনা আছে আর আপনি সেই বিচার বিবেচনার উপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নিবেন, কোনটা বিশ্বাসের যোগ্য আর কোনটা তা না। আরেকটু বিজ্ঞানভিত্তিক উদাহরণ দেই। নিউটনের গতি বিষয়ক তিনটা সূত্রের মূলে কিন্তু একটা বিশ্বাস বা ধারণা বা স্বতসিদ্ধ আছে। আর তা হলো বস্তুর ভর স্থির বা ধ্রুবক।

১৬০০ সাল থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত মানুষ কিন্তু এটা বিশ্বাস করে এসেছে, কারণ মানুষ তখন পর্যন্ত সেটাকে ভুল প্রমাণ করতে পারেনি। তার পরের ঘটনা অনেকেরই জানা। আইনস্টাইন নামের এক ভুবন বিজয়ী বিজ্ঞানী প্রমাণ করলেন যে বস্তুর ভরও পরিবর্তনশীল। তবে হ্যাঁ, এটা প্রমাণের জন্যও তিনি কিন্তু একটা বিশ্বাসের বা স্বতসিদ্ধের আশ্রয় নিলেন। যারা আপেক্ষিকতা সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানেন, তারা জানেন যে এই স্বতসিদ্ধটা হচ্ছে “আলোর গতি ধ্রুবক”।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনায় যেতে চাচ্ছিনা, কারণ সেটা আমার উদ্দেশ্য না। আবার এটা নিয়ে অনেক সূক্ষ গবেষনায় ভিন্ন কিছু ব্যাপারও লক্ষ্য করা গেছে। শুধু এইটুকুই বলবো, এখনো কিন্তু পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি যে আলোর বেগ ধ্রুবক নাকি পরিবর্তনশীল। বিজ্ঞান যা পেরেছে, তা হলো কিছু বাস্তব ঘটনার ব্যাখ্যা করতে পেরেছে এই স্বতসিদ্ধের মাধ্যমে। অর্থাৎ কিছু নির্দেশনা পাওয়া গেছে যে আলোর বেগ ধ্রুবক, কারণ আপনি যদি এটা মেনে না নেন, তাহলে বাস্তব অনেক ঘটনার ব্যাখ্যাই আপনি দিতে পারবেন না।

কাজেই আপনাকে আপাতত স্বীকার করে নিতেই হচ্ছে যে আলোর বেগ ধ্রুবক। হয়তো আরো কয়েকশো বছর পরে নতুন কোনো বিজ্ঞানী নতুন কিছু আবিষ্কার করবেন এই ব্যাপারে, কিন্তু তার আগ পর্যন্ত আমাদের এই স্বতসিদ্ধ মেনে নিতে হবে। অতএব, বিশ্বাসের উপর আমার উপসংহার: ‘বিশ্বাস’ হলো সেই জিনিস, যা আপনাকে কোনো মতবাদ মেনে নিতে সাহায্য করে, যেটা আপনি জানেন না, কিন্তু এসম্পর্কে কিছু ধারণা বা Indication হয়তো আপনি পেতে পারেন। এটা আমার ব্যাখ্যা। আপনি আমার ব্যাখ্যা মেনে নিতে নাও পারেন।

এবার তাহলে ‘মানুষ’ নিয়ে কথা বলা যাক। ২. মানুষ: মানুষ এর ব্যাখ্যা খুব সহজ, আবার বড়ই জটিল। সহজ ভাবে বলতে গেলে আমি, আপনি আমরা সবাই মানুষ। অনেকে আবার দার্শনিকভাবে অনেক দিক দিয়ে মানুষের সংজ্ঞা দিতে চান। আমি সেসব দিক নিয়ে বলবো না।

আমি একটু বিজ্ঞানের দিক দিয়ে বিচার করবো। আশা করি আমরা সবাই জানি, মাত্রা কী। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এগুলো হচ্ছে মাত্রা। মানুষ সামনে-পিছনে যেতে পারে, ডানে-বামে যেতে পারে, আবার উপর-নিচেও যেতে পারে। কাজেই মানুষ একটি ত্রিমাত্রিক প্রাণী।

মাত্রার সংজ্ঞা আরেকটু ভালোভাবে দেয়া যায়: মাত্রা হচ্ছে আপনার সীমা। যেহেতু আপনি তিনটা দিকে যেতে পারেন, কাজেই আপনার মাত্রা তিন। যদি আপনার মাত্রা দুই হত, তাহলে শত চেষ্টা করেও আপনি তৃতীয় দিকে যেতে পারতেন না। ব্যাপারটা আমাদের জন্য চিন্তা করা একটু কষ্টকর, কারণ আমরা ত্রিমাত্রিক, কাজেই আমাদের চিন্তা ভাবনাও ত্রিমাত্রিক। আমরা চাইলেও দ্বিমাত্রিক প্রাণী (যদি আদৌ থেকে থাকে) কিভাবে তৃতীয় মাত্রায় যেতে পারবে না, তা বুঝতে পারবো না।

নিজেরা কিভাবে চতুর্মাত্রায় যেতে পারবো না, তা হয়তো বুঝতে পারবো, কিন্তু সে ব্যাপারে পরে আসছি। আপাতত একটা দ্বিমাত্রিক জিনিস নিয়েই আলোচনা করি। আপনাকে যদি কোনো দ্বিমাত্রিক জিনিসের (অর্থাৎ যার শুধু দৈর্ঘ্য আর প্রস্থ আছে, উচ্চতা নেই) উদাহরণ দিতে বলা হয়, আপনি হয়তো বলবেন, কাগজ বা এই জাতীয় পাতলা কিছু। কিন্তু সেটা সঠিক না। কাগজ যত পাতলাই হোক, তার কিছু উচ্চতা আছে।

দ্বিমাত্রিক জিনিস হলো সেই জিনিস, যার উচ্চতা নাই বা শূন্য। অনেক চিন্তা করে এই ত্রিমাত্রিক পৃথিবীতে একটা মাত্র দ্বিমাত্রিক জিনিসের সন্ধান পেয়েছি, আর তা হলো ছায়া (যদি কেউ আর কোনো দ্বিমাত্রিক জিনিস আছে বলে জেনে থাকেন, জানাবেন দয়া করে)। ছায়া দ্বিমাত্রিক, অর্থাৎ এর সীমা বা মাত্রা দুই। শত চেষ্টা করলেও এটা তৃতীয় মাত্রায় যেতে পারবে না। আপনি কী কখনো একই সাথে দুটি তলে একটি ছায়া দেখেছেন? দেখেননি।

কখনো দেখবেন ও না। কারণ এটা সম্ভব না। আপনি হয়তো বলতে পারেন, কেউ যদি দেয়ালের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে তার ছায়ার কিছু অংশ পড়ে মাটিতে, আর কিছু অংশও দেয়ালে। আপনার কথা ঠিক, কিন্তু এটা ছায়াকে ত্রিমাত্রিক বানায় না। কারণ, আপাত দৃষ্টিতে ছায়াটিকে দুটি তলে মনে হলেও, ছায়ার একটি নির্দিষ্ট অংশ কিন্তু একটি তলেই আছে, আর তা হলো দেয়াল অথবা মাটি।

দেয়াল বা মাটির তলই ছায়ার তল এবং ছায়া কখনোই এর বাইরে যেতে পারবে না। এবার আপনি বলতে পারেন, ছায়ার তো জীবন নেই, ছায়া কিভাবে নিজ থেকে এক তল থেকে আরেক তলে যাবে? তাহলে ধরে নেই, এই পৃথিবীতে কোনো দ্বিমাত্রিক প্রাণী আছে। আপনি যদি এই প্রাণীর সামনে গিয়ে দাঁড়ান, সে কী দেখবে? সে কিন্তু আপনাকে পুরোপুরি দেখবে না। এমনকি সে ধারণাও করতে পারবে না, আপনি কে বা কী? তাহলে সে কী দেখবে? ধরেন, তার অবস্থান আপনার দেহের মাঝ বরাবর (পেটের কাছাকাছি) এবং আপনার সামনে। এবার আপনার পেটের ভিতর দিয়ে দুটো তল (যারা পরস্পরের খুব কাছাকাছি, অর্থাৎ যাদের মধ্যে দুরত্ব খুব কম) কল্পনা করেন, যা আপনার পেটকে ব্যবচ্ছেদ করছে (গা গুলালেও কল্পনা করেন)।

আমরা যদি ধরে নেই, ওই দ্বিমাত্রিক প্রাণীটি সেই দুই তলের মাঝখানে অবস্থান করছে, তাহলে সে আপনার দেহের যে অংশটুকু ওই দুই তলের মাঝখানে আছে, সেই অংশটুকুই দেখবে। এখন আপনি হয়তো বলবেন, “একটু আগে আপনিই তো বললেন যে দ্বিমাত্রিক মানে যার কোনো উচ্চতা নাই। তাহলে যদি ওই দুই তলের মাঝখানে কিছু জায়গা থাকে, তা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, তাহলে তো তা আর দ্বিমাত্রিক থাকলোনা, ত্রিমাত্রিক হয়ে গেলো, কারণ ওই অংশের কিছু উচ্চতা অবশ্যই আছে। ” খুব ভালো প্রশ্ন। উত্তর হলো, কল্পনার সুবিধার্থে আমরা ধরে নিয়েছিলাম প্রাণীটা এবং আপনার দেহের ওই অংশটুকু প্রায় দ্বিমাত্রিক, যার তৃতীয় মাত্রা, অর্থাৎ উচ্চতা প্রায় নাই বললেই চলে।

একটু পরেই আমরা পুরো দ্বিমাত্রিক প্রাণী নিয়ে আলোচনায় যাবো। এখন ধরে নেই, প্রাণীটা আপনার দেহের ওই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উচ্চতার অংশটুকু দেখছে। যদি আপনার দেহের ওই অংশের প্রস্থ এক ফুট হয়, তাহলে সে দেখবে এক ফুট দৈর্ঘের একটি অনুভূমিক রেখা, যার উচ্চতা খুব কম। এবার আপনি মনে মনে ঘুরে দাঁড়ান, অর্থাৎ এখন প্রাণীটা আপনাকে পাশ থেকে দেখছে। আপনার পেট আর পিঠের মাঝের অংশের দৈর্ঘ্য যদি আধ ফুট হয়, তাহলে এবার প্রাণীটা দেখবে আধ ফুটের একটা রেখা, এবারও উচ্চতা নগন্য।

আপনার এই ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারটা এবার একটু ভিডিওর মতো করে ভাবুন তো, প্রাণীটা কী দেখবে? সে দেখবে, কথা নাই, বার্তা নাই, হঠাৎ করে সেই এক ফুটের রেখাটা আস্তে আস্তে কমে আধ ফুট হয়ে গেলো। আশা করি ব্যাপারটা পরিষ্কার করতে পেরেছি। এবার ধরা যাক, প্রাণীটা পুরোপুরি দ্বিমাত্রিক। তাহলে সে আপনার দেহের যে অংশটুকু দেখবে, তার আসলে কোনো উচ্চতা নাই বা উচ্চতা শূন্য। এবার একটু চিন্তা করেন তো, সে আসলে কী দেখবে, বা আদৌ কিছু দেখবে কিনা? সে আসলে কিছুই দেখবে না, কারণ যে তলের বা রেখার উচ্চতা শূন্য, তাকে কি দেখা যায়? এবার ধরে নেন, আপনার কাছে একটা ক্ষমতা আছে, যার ফলে আপনি ওই প্রাণীটাকে পুরোপুরি দ্বিমাত্রিক থেকে কিঞ্চিত ত্রিমাত্রিক বানাতে পারেন, অর্থাৎ আপনি চাইলে সে আপনার খুব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ দেখতে পারবে।

অতএব এবার সে আপনাকে একটা রেখা হিসাবে দেখতে পারবে, যার উচ্চতা আসলে খুব কম (প্রথম ক্ষেত্রের ঘটনা)। এবার এই জিনিসটাকে একটু বৃহৎভাবে চিন্তা করি। আমাদের যে ত্রিমাত্রিক জগৎ, তা আসলে অসংখ্য দ্বিমাত্রিক জগতের সমষ্টি। বুঝিয়ে বলি। বইয়ের একটা পাতা প্রায় দ্বিমাত্রিক, কিন্তু যখন ৩০০ পাতা মিলে একটা বই হবে, তখন তা হবে ত্রিমাত্রিক।

যদি বইয়ের পাতা পুরোপুরি দ্বিমাত্রিক (উচ্চতা নাই বা শূন্য) হত, তাহলে এরকম কতগুলো পাতা লাগতো, একটা ত্রিমাত্রিক বই বানাতে? উত্তর: অসীম সংখ্যক। কাজেই আমাদের ত্রিমাত্রিক জগৎ আসলে অসীম সংখ্যক দ্বিমাত্রিক জগতের সমষ্টি (চিন্তার সুবিধার জন্য ধরে নিতে পারেন, কোটি কোটি প্রায় দ্বিমাত্রিক জগতের সমষ্টি)। এবার তাহলে আরেকটু গভীরে যাই। এই যে অসংখ্য দ্বিমাত্রিক জগৎ, সেগুলো আসলে ত্রিমাত্রিক স্পেসে অবস্থানকারী অসংখ্য দ্বিমাত্রিক তল। এই অসংখ্য দ্বিমাত্রিক তলের প্রত্যেকটাতে যদি একটা করে দ্বিমাত্রিক প্রাণী থাকে, তাহলে তারা কী দেখবে? আপনার দেহের যে অংশটুকু তাদের সেই তলে/জগতে থাকবে, শুধু সেই অংশটুকু।

ঘটনাগুলো মনে হয় একটু পেঁচিয়ে গেলো। একটু summarize করি। মূল ব্যাপারটা হলো, ত্রিমাত্রিক বস্তু বা প্রাণী কী জিনিস, তা দ্বিমাত্রিক প্রাণী কখনোই জানতে পারবে না। তারা শুধু আঁচ করতে পারবে এবং ত্রিমাত্রিক বস্তুটির শুধু সেই অংশই দেখতে পারবে, যা তাদের জগতে বিরাজমান। এমন কি তারা তাদের সীমিত দ্বিমাত্রিক জ্ঞান (যদি থেকে থাকে) দিয়ে বুঝতেও পারবে না, ত্রিমাত্রিক প্রাণীটা আসলে ঠিক কী জিনিস।

একটু আগে বলেছিলাম, আমরা কেন চতুর্মাত্রায় যেতে পারবো না তা পরে আলোচনা করবো। শুরু করা যাক। আলোচনা করছিলাম দ্বিমাত্রিক আর ত্রিমাত্রিক প্রাণী/বস্তু নিয়ে। এবার চলুন ভাবি ত্রিমাত্রিক আর চতুর্মাত্রিক বস্তুর কথা। এতে কল্পনা করতে একটু সুবিধা হবার কথা, কারণ আমরা মানুষরাই ত্রিমাত্রিক প্রাণী! ধরেন আপনার আশেপাশের জগৎ চতুর্মাত্রিক, যেখানে চতুর্থ মাত্রাটি হচ্ছে ‘সময়’।

আপনি নিজে ত্রিমাত্রিক প্রাণী, কাজেই আপনার পক্ষে চতুর্থ মাত্রায় বিচরণ করা অসম্ভব (টাইম মেশিন দিয়ে সময় পরিভ্রমণ আসলে পুরোপুরিই কল্পকাহিনী। এটা logically প্রায় অসম্ভব। বিস্তারিত ব্যাখ্যা অন্য কোনো দিন)। কিন্তু যদি জগৎটা চতুর্মাত্রিক হয়, তাহলে আপনি যে জগৎটা দেখেন, সেটা আসলে আপনার ‘সময়’এ সেই জগতের একটা প্রতিচ্ছবি। ঠিক যেমন, দ্বিমাত্রিক প্রাণী আপনাকে দেখে না, শুধু আপনার (বা পুরো ত্রিমাত্রিক জগতের) যে অংশটুকু তার তলে/জগতে থাকে, সে অংশটা দেখে, ঠিক তেমনি আপনিও পুরো জগৎ কখনোই দেখতে পারবেন না।

শুধু আপনার সময়ের জগৎকে দেখতে পারবেন। এবং আপনি শত চেষ্টা করলেও কখনো অন্য সময়ে যেতে পারবেন না, অর্থাৎ সময় বরাবর ভ্রমণ করতে পারবেন না। ঠিক যেমন, ছায়া শত চেষ্টা করেও এক তল থেকে আরেক তলে যেতে পারেনি। ব্যপারটা কিন্তু আসলে সেরকমই। আমরা কি কখনো পারি, এক সেকেন্ড আগের সময়েও যেতে? কিংবা আধ সেকেন্ড পরে চলে যেতে? পারিনা।

এবার ধরেন, চতুর্মাত্রিক জগতে কোনো একটা চতুর্মাত্রিক প্রাণী আছে। তার কোন অংশটুকু আমরা দেখবো? যে অংশটুকু আমাদের জগতে থাকবে, ঠিক সেই অংশটুকু। কারণ চতুর্মাত্রিক প্রাণীটা চতুর্থ মাত্রায়, অর্থাৎ সময় বরাবর ভ্রমণ করতে পারে। কাজেই সে যদি আমাদের সময়ে আসে, তবেই আমরা তাকে দেখবো। যদি সে আমাদের জগৎ থেকে সময় অক্ষে এক মিলিসেকেন্ড আগে বা পরেও থাকে, আমরা কিন্তু তাকে কখনোই দেখবো না।

ঠিক যেমন দ্বিমাত্রিক প্রাণীটা শত চেষ্টা করেও উঁকি-ঝুঁকি দিয়েও দেখতে পারেনি, ঠিক তার উপরের তলে কী আছে। এবার আসা যাক, চতুর্মাত্রিক প্রাণীর স্বরূপ আসলে কেমন, সে আলোচনায়। আমাদের কাছে যেমন ভিন্ন উচ্চতার অনেক বস্তু একসাথে দৃশ্যমান (যেমন মাটিতে যদি তিনটা লাঠি থাকে, একটা ২ ফুট, একটা ৩ ফুট, একটা ৫ ফুট, সবগুলোই কিন্তু আপনার কাছে দৃশ্যমান হবে), ঠিক তেমনি চতুর্মাত্রিক প্রাণীর কাছে কিন্তু ভিন্ন সময়ের সবকিছু একসাথে দৃশ্যমান। অর্থাৎ তার কাছে স্থান, কাল, পাত্রের কোনো ধারনাই নেই। তার কাছে সবই বর্তমান।

আপনি যদি জানালা দিয়ে বাইরে তাকান, তাহলে আপনার দৃষ্টিসীমার মধ্যে যা কিছু পড়া সম্ভব, সেসব যেমন একসাথে আপনার চোখে পড়ে, ঠিক তেমনি চতুর্মাত্রিক প্রাণী যখন সময়ের জানালা দিয়ে আমাদের এই জগতের দিকে তাকায়, তখন তার কাছে সব সময়ের ঘটনা একসাথে চোখে পড়ে। এই প্রাণীটির অবস্থান যদি সর্বস্থানব্যাপী হয় (এটা শুধুই একটা কল্পনা, বিজ্ঞান সব কিছুই কল্পনা করার অধিকার দেয়, প্রমাণ করা পরের ব্যাপার), তাহলে তার কাছে আসলে ঐ চতুর্মাত্রিক জগতের কোনো কিছুই সীমাবদ্ধ হবে না। সে হবে সেই জগতের সর্বস্থানব্যাপী এবং সে হবে সকল সময়ে বিরাজমান। আর আমরা, আমাদের ত্রিমাত্রিক সীমিত জ্ঞান দিয়ে কখনোই সেই প্রাণীকে জানতে বা বুঝতে পারবো না। কাজেই, মানুষ সম্পর্কে উপসংহার হলো: মানুষ একটি ত্রিমাত্রিক প্রাণী, যে তার এই ত্রিমাত্রিক জগতে সবচেয়ে জ্ঞানী প্রাণী হতে পারে, কিন্তু চতুর্মাত্রিক প্রাণীর কাছে সে অসহায়।

চর্তুর্মাত্রিক প্রাণীর শুধু সেই অংশটুকুই সে দেখতে পারবে, যে অংশটুকু তার ত্রিমাত্রিক জগতে থাকবে। ৩. ঈশ্বর: এবার সবচেয়ে কঠিন প্রসংগ। ঈশ্বর কে বা কী? তার আগে চলুন দেখি, ঈশ্বর (যদি থেকে থাকে) নিজেকে কি বলে দাবি করেন? ঈশ্বর বলেন তিনি সর্বস্থানব্যাপী, তিনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তাঁর এই কথা কিন্তু বড় ধর্মগুলোর সবগুলোতেই পাওয়া যায়। এই কথাগুলো প্রমাণ করে, যদি ঈশ্বর থেকে থাকেন, তাহলে তিনি অবশ্যই ত্রিমাত্রিক নন, বরং অনেক বেশি মাত্রা সম্পন্ন কেউ।

প্রকৃতপক্ষে, তিনি দাবি করেন, তাঁর কোনো সীমা নেই, অর্থাৎ তাঁর কোনো মাত্রা নেই। কাজেই মাত্রার ধারনাগুলোও তার জন্য খাটবে না। তাঁর কথা অনুযায়ী তিনি অসীম, স্থান-কাল-পাত্রের ধারনাটাই তাঁর জন্য প্রযোজ্য নয়। কাজেই, তাঁর কাছে সব কিছুই বর্তমান। এবার আসি যদি ঈশ্বর থেকে থাকেন, তাহলে তিনি কীভাবে মানুষকে জানাবেন যে তিনি আছেন? বা কীভাবে মানুষকে জানাবেন যে তাঁর উপাসনা করতে হবে? চিন্তা করুন তো, আপনি আপনার সেই দ্বিমাত্রিক বন্ধুদের সাথে কীভাবে যোগাযোগ করবেন? আপনি কি সরাসরি তাদের সাথে কথা বলতে পারবেন? প্রশ্নই উঠে না।

কারণ তারা আপনার ঐ ত্রিমাত্রিক কথাবার্তা বুঝতেই পারবে না। দ্বিমাত্রিকের প্রসঙ্গে পরে আসেন। ত্রিমাত্রিক একটা পিপড়ার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন তো দেখি। তবে হ্যা, আপনি যেটা করার চেষ্টা করতে পারেন, তা হলো একটা পিপড়াকে ধরে তাকে অনেক সময় ধরে আপনার কথা বুঝাতে পারেন, যাতে সে তার প্রজাতিকে আপনার কথা পৌঁছে দিতে পারে। আর এটা একটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।

এবার মনে করেন, আপনার কিছু অলৌকিক ক্ষমতা আছে। আপনি চাইলে পিপড়ার (কিংবা সেই দ্বিমাত্রিক প্রাণীটির) বুদ্ধিমত্তাকে বাড়িয়ে দিতে পারেন, যাতে আপনার কথা তারা বুঝতে পারে। আপনার তখন ইচ্ছা হলো যে আপনি তা করবেন না। বরং একটি মাত্র পিপড়ার বুদ্ধি বাড়িয়ে তাকে কথাগুলো বুঝাবেন, যাতে সে সেই কথাগুলো অন্য পিপড়ার মাঝে বলতে পারে। কারণ আপনি দেখতে চান যে বাকিরা তার কথা মেনে নেয় কিনা।

আপনি তাকে বুঝালেন এবং বললেন, অন্যদের মাঝে আপনার কথাগুলো গিয়ে বলতে। সে তাই করলো। অন্য পিপড়াগুলো তখন কী করবে? এক বাক্যে তার কথা মানে নিবে? অবশ্যই না। কারণ বাকি পিপড়াগুলোর বুদ্ধি তো আপনি বাড়িয়ে দেননি। আপনি দেখতে চাইছেন, বাকিরা তার তথা আপনার কথা মেনে নেয় কিনা।

কেউ মানবে কেন? কাজেই আপনি তখন কী করবেন? কিছু Indication রাখবেন। প্রমাণ না। যদি প্রমাণই রেখে দেন যে আপনার কথাগুলো সত্য, তাহলে তো আপনার মূল ইচ্ছাটাই মাটি হবে। যদি পিপড়াদের উপযোগী করে সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়েই দেন, তাহলে তো তারা সবাই আপনার কথা মেনে নিবে, আর আপনি তাদের আর পরীক্ষা করতে পারবেন না। যদি ঈশ্বর থেকে থাকেন, তাহলে তিনিও ঠিক একই কাজটা করেছেন।

তিনি চান আমাদের পরীক্ষা করতে, যে তাঁকে না দেখেই, তিনি আছেন এটার সুস্পষ্ট প্রমাণ না পেয়েই মানুষ তাঁকে ‘বিশ্বাস’ করতে পারে কিনা। খেয়াল করুন, (সব ধর্মেই) তাঁকে বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে। কারণ তিনি আছেন এটার সপক্ষে অত্যন্ত সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ (যেমন ২ + ২ = ৪ কিংবা সূর্য পূর্বদিকে উঠে) তিনি নিজেই দেননি। যা দিয়েছেন, তা কিছু তত্ত্ব, কিছু ধারণা, কিছু Indication, কিছু যুক্তি। কার বা কাদের মাধ্যমে দিয়েছেন? কয়েকজন মানুষের মাধ্যমে, যাদের আমরা নবী, অবতার ইত্যাদি বিভিন্ন নামে চিনি।

তাদের বুদ্ধিমত্তাকে তিনি বাড়িয়ে দিয়েছেন, যাতে তাঁরা ঈশ্বরের কথা বুঝতে পারেন। আর যখন তাঁরা আমাদের বুঝিয়েছেন, তখন আমরা শুনিনি। তাই ঈশ্বর তাঁদের দিয়েছেন কিছু অলৌকিক ক্ষমতা, যা তাঁদের সাহায্য করেছে, মানুষকে ঈশ্বরের পক্ষে ডাকতে। ব্যাপারটা এরকম, ঈশ্বর (যদি থেকে থাকেন) তিনি সকল মাত্রার উর্ধ্বে (তাঁর নিজের ভাষ্য অনুযায়ী)। তিনি মাত্রাহীন (সীমাহীন তথা অসীম), তিনি সময়ের বন্ধনে আবদ্ধ নন।

তাঁর কাছে সব দৃশ্যমান, সব বর্তমান। তিনি মানুষের কাছে যুগে যুগে মানুষেরই মধ্য থেকে কাউকে নির্বাচন করে তাঁর কথা প্রচারের জন্য নিয়োজিত করেছেন, যাতে মানুষ তাঁর সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে। কারণ তিনি জানতে চান, মানুষ তাঁর স্রষ্টাকে সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া, কিছু তত্ত্ব বা ধারণা বা Indication থেকে মেনে নিতে পারে কিনা, বা বিশ্বাস করতে পারে কিনা। যদি তিনি সব প্রমাণ দিয়েই দিতেন, তাহলে তিনি তো আর এটা দেখতেই চাইতেন না যে মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করে কিনা, তাইনা? এজন্য অবশ্য তিনি কিছু ভালো জিনিসের লোভ আর খারাপ জিনিসের ভয় দেখিয়েছেন, যাতে মানুষ এসব লোভ বা ভয়ের কারণে হলেও তাঁকে বিশ্বাস করে আর তাঁর কথা মেনে চলে। আমার কথা শেষ।

আবারও বলছি, এগুলো সবই আমার নিজের চিন্তাভাবনা। মেনে নেয়া বা দ্বিমত পোষণ করা একান্তই পাঠকের উপর। তবে যদি কেউ মন্তব্য করেন, তাঁকে অনুরোধ করবো, দয়া করে শালীনতা বজায় রাখতে। পরিশেষে কথা রাখছি। নিজের বিশ্বাসের ব্যাপারটা দিয়েই শেষ করি।

আমি আস্তিক। কিন্তু কোন ধর্মে বিশ্বাস করি, তা বলছিনা। কারণ আমার এই পোস্টটা কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম নিয়ে না, তা আগেই বলেছি। এটা ছিলো ঈশ্বরের ধারণা নিয়ে আমার কিছু চিন্তাভাবনা। যদি কখনো সময় পাই, তাহলে বিভিন্ন ধর্ম নিয়েও আলোচনা করবো।

অবশ্য তার আগে অনেক পড়াশোনা করে নিতে হবে, কারণ সামুর ব্লগাররা (যারা এই জাতীয় ব্লগ লিখেন বা পড়েন) মনে হয় আমার চেয়ে ধর্ম সম্পর্কে অনেক বেশি গবেষণা করেছেন। এবার আসি কেন আমি আস্তিক, এই প্রসঙ্গে। ছোট একটা যুক্তি। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত আমি এমন কিছুই পাইনি, দেখিনি, শুনিনি যা নিজে নিজে তৈরি হয়ে গেছে। কাজেই এই বিশাল সৃষ্টিজগৎ নিজে নিজে তৈরি হয়ে গেছে, এমনটা আমার মনে হয় না।

আর হ্যা, প্রমাণ কোথায় পেলাম যে ঈশ্বর আছেন? অত্যন্ত সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ পাইনি, পেয়েছি কিছু Indication, যা ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে স্রষ্টার উপর বিশ্বাস আনার জন্য যথেষ্ট। নাস্তিকতার পক্ষের যুক্তিগুলো এসব Indication এর কাছে বড়ই ঠুনকো মনে হয়। তার একটা উদাহরণ এই মাত্রই দিলাম। আমি সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ জানার চেষ্টাও করিনা, কারণ সেটা আমি পাবো না বলেই মনে হয়। আমার ক্ষুদ্র ত্রিমাত্রিক জ্ঞান দিয়ে আমি সীমাহীন ঈশ্বরের প্রমাণ বের করতে পারবো না, এটাই কি স্বাভাবিক না? ব্যাপারটা একটা প্যারাডক্সের মতো।

আপনি কীভাবে প্রমাণ করবেন, স্রষ্টা বা ঈশ্বর আছেন? অনেকেই সেটা করেন বা করতে চান ধর্মগ্রন্থের সাহায্যে, যেটা আসলে প্রমাণের মূল শর্তকেই ব্যাহত করে, কারণ আপনি যদি ঈশ্বরেই বিশ্বাস না করেন, তাহলে ধর্মগ্রন্থ আসলো কোত্থেকে? আবার অন্য কোনোভাবে প্রমাণ করাও প্রায় অসম্ভব, তার কারণ একটু আগেই বলেছি। যদি ঈশ্বর প্রমাণ দিয়েই দিতেন, তাহলে (তাঁর মতে) তিনি আমাদের পরীক্ষা করার জন্য তাঁকে মানতে বলতেন না। আর যদি আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস নাই করেন, তাহলে সৃষ্টিজগতের ব্যাখ্যা কিভাবে দিবেন? বিবর্তনবাদ, বিগ ব্যাং থিওরি কোনো কিছুই এত সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ একটা সিস্টেম ব্যাখ্যা করার জন্য যথেষ্ট না (আমার মতে)। কাজেই, “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদুর। ” সেটা অবশ্য আরেক বিশাল আলোচনা হতে পারে।

আরেকদিন করবো না হয়... অনেক বড় এই পোস্টটা ধৈর্য্য ধরে যারা পড়েছেন বা যারা মাঝখানে ধৈর্য্য হারিয়ে পড়া বাদ দিয়েছেন, তাদের সবাইকেই ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।