->মামা চুল কাটানো যাবে?
--> হ মামা যাবে। বসেন।
বসলাম। যুবক বয়সী নরসুন্দর বসালো সেলুনের কেদারায়। বসলাম।
--> মামা বসছেন ঠিকমতো?
-> সামনের আয়নাটাতে তো ঠিকমতো দেখা যায় না। চেয়ারটা সরায়ে দেন একটু।
--> ঠিক আছে মামা। আপনে বসেন আমি সরায়ে দিতাছি।
-> ঠিক আছে এবার দেখা যাচ্ছে ঠিক মতো।
--> কিরম কাটমু মামা?
-> সাইডের চুল অল্প। বেশি উপরে উঠাবেন না। সামনের চুল বেশি খাটো করবেন না। আর পিছনের দিকে যেভাবে সুন্দর দেখায় সেভাবেই কাটেন।
--> ঠিক আছে মামা।
একটা প্রায় ময়লা সাদা কাপড় দিয়ে আমারে ঢেকে দিলো। পানি দিয়ে চুল গুলা একটু ভিজালো। ভালোই লাগছিলো। সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিলো।
দেখলাম পাশের চেয়ারে একটা কিশোর বয়সী ছেলে কাপড়ের ছোটো পুটলির মধ্যে কিছু একটা নিয়ে নাকের কাছে ধরে বসে আছে।
বুঝতে পারছিলাম না কেন। একটু পরে পাশের দোকান থেকে আরেকজন ছেলেটিকে বললো।
--> কিরে তোর সর্দি কমছে?
-> না এখনো কমে নাই
আমার নরসুন্দর তখনই অনেকটা চিৎকার করে উঠলো।
-> কমবো না মানে! অবশ্যই কমবো। একটু ধৈর্য ধরো।
কালো জিরার গুন অনেক। তার উপর আমি ফুঁ দিয়া দিছি। আরো কিছু সময় নাকের কাছে ধৈরা রাখো সর্দি দৌড়াইয়া পালাইবো। আজকে না কমলেও ২ দিন পরে কমবো এর পরেই শুরু হলো তার কথার ফুলঝুরি। সাথে আমার চুল কাটা।
পাঁচ-ছয় মিনিট এই টপিকের পরে শুরু হলো নতুন টপিক।
পাশের ফটোকপি, প্রিন্টের দোকান থেকে কম্পিউটারে চালানো গান শোনা যাচ্ছিলো। রুমি র গান। "থাকতে যদি না পাই তোমায়, চাইনা মরিলে, আমায় কাঁদালে"।
খুবই অপ্রত্যাশিত ভাবে নরসুন্দর আমারে জিজ্ঞেস করলো।
-> মামা এইটা ছ্যাঁক খাওইন্যা গান না।
একটু বুঝতে সময় লাগলো। বললাম।
-> হা, দু:খের গান। বিরহের গান।
--> ছ্যাঁক খাওইন্যা গান আমার অনেক ভালো লাগে। গতো কালকে গেছিলাম এক দোকানে। মোবাইলে গান ঢুকানোর লাইগ্যা। নব্বই টা গান ঢুকাইছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ গানই ভালা লাগে নাই।
৩০-৩৫ টা গান ছ্যাঁক খাওইন্যা। বাকী গুলা ধুম ধারাক্কা। আমার ঐগুলা ভালা লাগে নাই।
রাজা হিন্দুস্থানি সিনেমার গান আমার ভালা লাগে। ঐগুলা হৈতাছে ফাইন গান।
আমিও মাথা ঝাঁকাইলাম। হাসতে হাসতে । এই টপিক চলতে লাগলো আরোও ২-৩ মিনিট। অনবরত বক বক। ভয় লাগছিলো বেটা কথা বলতে বলতে না আমার চুলের বারটা বাজায়।
শেষ পর্যন্ত চুল কাটা শেষ হলো। এবং কোনো বারটা বাজলো না। ভালোই কেটেছে। যেভাবে বলেছিলাম।
--> মামা শেভ করবেন?
নরমালি আমি সেলুনে শেভ করি না।
কিন্তু গোফ-দাড়ি গুলো ভালোই বড় হয়ে গেছিলো। তাই ওরেই বললাম ঠিক আছে কেটে দাও। ফোম লাগালো মুখমন্ডলে।
--> মামা, আপনে বাসায় কোনটা ব্যবহার করেন।
কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছিলো না।
তারপরে ও বললাম। জিলেট।
আবার শুরু হলো আরেক কাহিনী।
--> শুনেন মামা। আইজকাল সত্যি কথার ভাত নাই।
ভালো জিনিসের কেউ মুল্য বুঝে না। এই যে আপনারে একটা ফোম দিলাম। আপনার মুখে কি জ্বলতাছে?
-> না জ্বলছে না তো।
--> দেখছেন এইটা হচ্ছে এই জিনিস (ফোমের বোতলটা আমার চোখের সামনে ধরে)। এইটা দাম ও কম।
জ্বলেও না। আমি আমার দোকানে আগে জিলেট রাখতাম। এর কারনে আমি অনেক কাস্টমার হারাইছি। এইটা লাগাইলে নাকি জ্বলে। এর লাইগা অনেক কাস্টমার আমার হাত ছাড়া হৈছে।
এর লাইগা এখন আর জিলেট রাখি না। কম দামী টা ই রাখি। আমার ট্যাকা ও কম লাগে। ব্যবসা ও ভালা হয়।
-> কই আমি তো নিয়মিত জিলেট ইউজ করি।
আমার তো জ্বলে না।
এর পরে কিছুক্ষন চুপ হলো বেটা। বেশিক্ষন না। ৩০-৩৫ সেকেন্ড। এরপরে আবার হঠাৎ করে বলে উঠলো।
--> মামা আমারে অনেকেই পছন্দ করে না। বেশি কথা কই তো। আইচ্ছা মামা আপনেই কন আমি কি বেশি কথা কই?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।