সকালের স্নিগ্ধ বাতাস মনে দেয় শান্তি, দুপুরের সূর্যটা মিষ্টি করে হাসে, রাত্রের আকাশে চাদ মামা দেখা দেই আকাশটা তখনই সকলের চোখে পরে যাই......... হাবু ভাই আমাদের এক বছরের বড়,বড় হলেও সে আমাদের সাথে একই ক্লাসে পড়ত। আমরা তখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। দুষ্টমিতে সবার সেরা ছিল চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্ররা। হাবু ভাইয়ের আসল নাম ছিল হাসমত আলী। আমরা তাকে হাবু ভাই বলে ডাকতাম।
হাবু ভাই যেমন ছিল লম্বা তেমনি ছিল মোটা সোটা। সে ক্লাসে ঢুকলে আমরা সবাই চুপ হয়ে যেতাম। কারণ সবাই তাকে ভয় করত। শক্তি আর সামর্থে তার সাথে পাল্লা দিয়ে কেউ পারতনা। তবে লেখাপড়ায় ছিল একদম কাঁচা।
সারাদিন পড়ত I am a good boy, I am a good boy.ইংরেজী ঘন্টায় স্যার এসে প্রথমে জিজ্ঞেস করত,হাবু বল দেখি,আমি ভাল ছেলে এর ইংরেজী অনুবাদ কী?হাবু ভাই অনেক কষ্ট করে বলত I am -------- I am a---------ইত্যাদি। শতবার চেষ্টা করেও পুরো বাক্যটা বলতে পারতনা। স্যার তখন বলতেন নাম যেমন হাবু,পড়া লেখায়ও হাবু। এ রকম হাবাগোবা ছেলে দিয়ে কী কিছু হবে’?তবে হাবু ভাইয়ের একটা বিশেষ গুণ ছিল। প্রতিদিন স্যারদের জন্য খিলিপান আনত।
স্যারদের খিলিপান দিত। স্যারেরা খুব খুশি হতো। স্যারেরা আরো বলত,হাবু আগামীকাল আরো দুই একটা খিলিপান বাড়িয়ে আনবে। ’হাবু ভাই ঠিক তাই করত। হাবু ভাই ও আমি এক সাথে স্কুলে যেতাম আর স্কুল থেকেও একসাথে আসতাম।
একদিন এক মজার ঘটনা ঘটল। হাবু আর আমি স্কুলে যাচ্ছি। তখন মধ্যবয়সী এক লোক আমাদের সামনে এসেদাঁড়াল। আমরা উনাকে সালাম দিলাম। হাবু ভাই তার নার নাম বললেন-‘আমার নাম হাবু’।
তখন লোকটি রেগেমেগে বললেন,খাবি তো খাবি,আমার মাথা খাবি। আসলে লোকটি মনে করলেন,কিছু খাবারের জন্য আমরা তাকে বললাম,আমরা হাসতে হাসতে স্কুলে চলে গেলাম। হাবু ভাই ক্লাসে প্রায় পিছনে বসত আর মাথা নিচু করে চুপটি মেরে বসে থাকত। সে পিছনে বসলেও স্যারের নজর এড়াতে পারত না। একদিন প্রধান শিক্ষক সতীশ স্যার গণিত ক্লাসে ঢুকলেন এবং অংক করতে আরম্ভ করলেন।
কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করলেন ,হাবু আছে?হাবু উঠে দাড়াল আর বলল,YES স্যার। স্যার নিকটে ডাকলে হাবু ভয়ে ভয়ে নিকটে গেল। স্যার বললেন,দেখি বলত কলাগাছে কয়টি পাতা?হাবু বলল,স্যার একটি। উত্তর শুনে স্যারসহ সকলে হাসল। স্যার বললেন,হবেনা,হবেনা,হাবু,তোরে দিয়ে কিছু হবে না।
হাবু ভাই আসলে বলল যে তাদের গোয়াল ঘরের পাশে যে কলাগাছটি ছিল সেখানে একট কলাপাতা ছিল। অন্য পাতাগুলো গরু খেয়ে ফেলেছে। সেটা দেখে হাবু ভাই তা বলেছে। ছুটির ঘন্টা বাজার সাথে সাথে স্যার চলে গেলেন। আর আমাদের তো আনন্দ ধরে না।
আমরা সকলে শ্লোগান দিয়ে বলতে লাগলাম,হাবু ভাই,হাবু ভাই,আমরা কিছু খাবু ভাই । হাবু আমাদেরকে আইসক্রিম খাওয়ালেন। এরপর আমরা বাড়ি চলে গেলাম। পরের দিন হাবু ভাইয়ের আর স্কুলে যাওয়া হল না। ভীষণ অসুস্থ।
হাবু ভাইয়ের বাড়ি আমার বাড়ির নিকটে তাই খবরটা আমি সবার আগে পেলাম। ডাক্তার ,কবিরাজ অনেকে আসলেন,আর দেখলেন,কিন্তু কোন উন্নতি হচ্ছেনা বরং ধীরে ধীরে অবনতি হচ্ছে । সহপাঠীরা সবাই আসল। হাবু শুধু বলত লাগল,আমি যামু’’সহপাঠীরা জিজ্ঞেস করল কোথায় যাবে, হাবু ভাই,বলে-’’স্কুলে যাব। ’একদিন শুক্রবার ভোর হবার আগে হাবু ভাই পৃথিবী থেকে চলে গেলেন।
মা বিলাপ করতে করতে বলতে লাগল,হাবু গেলি কই,আমার হাবু গেলি কই?হাবুরে,ও হাবু,কোথায় গেলি বাপধনরে,’’কিন্তু হাবু শুধু নীরবে শুনে। কিছুই বলেনা। সে যে গেল হাবু আর ফিরলনা। হাবু চলে গেল। কিন্তু স্মৃতির মনিকোঠায় জেগে থাকবে আমাদের হাবু ভাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।