আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি। প্রেমিকার বিয়ে দেয়া তার কাছে ডাল ভাত। নিজ হাতে কত প্রেমিকার হাত আরেকজনের হাতে সঁপে দিয়েছেন তার কোন হিসেব নাই। আর বিয়ে দেয়া মানে যদু মধুর মত না, নিজে উপস্থিত থেকে বিয়ে বাড়ির কাবিলদের মধ্যে একজন হয়ে সে প্রেমিকার বিয়ে দিয়েছে। এমনটাই আমাদের পটকা ভাই।
পটকা ভাইয়ের স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে অলরেডি সবাই জেনে ফেলেছেন। এ জীবনে যতগুলো মেয়েকে ভালবেসেছেন সবাইকে জীবন দিয়ে ভালবেসেছেন। জীবনটা কেবল রয়ে গেছে অথচ প্রেমিকাদের বেশীর ভাগরই বিয়ে হয়ে মা হয়ে স্কুলের গেইটে সন্তানের জন্য অপেক্ষা করেন।
পটকা ভাইয়ের পরিচয়টা দেয়টা জরুরী। পটকা ভাইর বাবা সরকারী বড় অফিসার।
পটকা ভাই ভীষন ভাল মানুষ। তবে একটু পাগলাটে। তার নাম পটকা ভাই কেন সেটা আমি জানিনা। তবে সবাই পটকা ভাই নামেই ডাকে। তবে উনি পটকা মানে ফাউল টাইপের না।
নাম দিয়ে কি আর মানুষ বিচার করা যায়? তাহলে সাবেক ক্রিড়া মন্ত্রী পটল ক্ষেতের মালিক হতেন অথবা পটল তুলতেন।
কিছুদিন আগে মোড়ের দোকানে কযেকজন আড্ডা মারছিলাম,হঠাৎ দেখলাম পটকা ভাই হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যেন ছুটছে। জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু উত্তর না দিয়ে হাত দেখিয়ে চলে গেল। পটকা ভাই অনেক ব্যস্ত মানুষ।
পেশায় বেকার। এ পেশায় উনি অনেকদিন যাবত। পেশাটাকে অত্যন্ত ভালবাসেন। দায়িত্বের সাথে সারাদিন লেগে থাকেন কাজে।
একদিন পটকা ভাই খুব বিমর্ষ মুখে দোকনে এসে বসলেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হল পটকা ভাই মন খারাপ কেন?এমনিতে পটকা ভাইর মন খারাপ হওয়া আশ্চর্য্যের ব্যাপার। উনি বলল “নোমান আমার জন্য একটা চাকরী দেখতে পারবি?
কথা শুনে আমি অবাক হলাম। জিজ্ঞেস করলাম হঠাৎ চাকুরী ক্যান ভাই?
-আর বলিস না আব্বা নাকি আমাকে বিয়া করাবে। পাত্রী রেডী। আমার মামতো বোন।
খালি আমি চাকরী পেলেই বাসর রাত হয়ে যাবে। তারপর লাইট বন্ধ। কিন্তু এ জিনিস আমি কই পাই?
জলিল নামের বন্ধুটি বলল “তারপর দশমাস দশদিন পর….
-চুপ কর
তাহের ভাবতে ভাবতে অবচেতন মনে বলল “দশমাস দশদিনই যে লাগবে তা তুই নিশ্চিত কিভাবে হলি?
পটকা ভাই এবারও ধমক দিয়ে থামিয়ে দিল “আগে আমার চাকরী দরকার সেটা নিয়ে কিছু কর”
চিকনা তাহের বলল "ভাই টেনশন কইরেন না। আফনের চাকরী রেডী"।
তাহের চিকনা হলেও মোটা দরের চাপা ধ্রুব সত্যের মত বলতে পারে।
পটকা ভাই কিছুটা অবাক কিছুটা অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বলল কি চাকরী? আর জানসতো আমি সব কাজ করতে পারি না।
-আরে ভাই আপনি চাকরী করবেন ক্যান চাকরী আপনাকে করবে।
পটকা ভাই খুশী মনে চলে গেল। হবু বৌ মামাতো বোনের সাথে ফুচুর ফচুর টাইপের প্রেম হয়ে গেল। দুএকটা শর্ট ডেটিংও নাকি হয়েছে।
একদিন ডেটিংয়ে মামাত বোন চাকরীর কথা বললে পটকা ভাই চিকনার উপর পুরা ভরসা করে বললেন “আর চাকরীতো আমি করবো না,চাকরী আমাকে কইরা টাকা দিবে”
কথাটা শুনে পটকা ভাইয়ের মামাত বোন হতচকিত দৃষ্টিতে পটকা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। বুঝাই যাচ্ছে মামাত বোন অন্যকিছু ভেবে ফেলেছে। মুখ ফসকে সেটা বেরও করে ফেললেন “কি বললা তুমি???
পটকা ভাই মুহুর্তে বুঝে গেলেন। মনে মনে চিকনাকে গালি দিয়ে বললেন “না মানে এটাতে অশ্লীল কিছু ভাবার কোন ওয়ে নাই,এটা সৃজনশীল অর্থে ব্যবহৃত”। আম জাম কাঠাল পাতা বুঝিয়ে সেদিনের মত মামাতবোনকে সামলালেন পটকা ভাই।
কিন্তু কিছুদিন পর তার মামতো বোন বুঝে গেল আর যাই হোক পটকা ভাইকে দিয়ে চাকুরী হবে না,চাকুরীকে দিয়ে পটকা ভাইকে করানা যাবে না। মামার পরিবার থেকে মামাতো বোনের অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। পটকা ভাইয়ের দুখে দেবদাস অথবা শাকিব খান হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি সে বিয়েতে বরযাত্রী খাওয়ানোর দায়ীত্ব পেলেন। কাজী আনার ব্যাপারটাও নাকি উনি দেখেছিলেন। সবাই প্রেমিক হতে পারে,তবে কতজন প্রেমিক পটকা ভাই হতে পারে? আমরাও বিশেষ দাওয়াতে বিয়েতে গেলাম ।
গিয়ে দেখলাম পটকা ভাই এক বেয়ারাকে বুঝাচ্ছেন "এখানেই বর বসবে,তার আপ্যায়নে যেন কমতি না হয়,বুইঝেন কিন্তু আমার আপন বোন এর জামাই। ঠিকমত না খাওয়াইলে মামার বদনাম হবে”
খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ বন্ধুরা মিলে পটকা ভাইয়ের আরও হাজার খানেক মামাত বোনের বিয়ের জন্য মোনাজাত করলাম। বৌ দেখতে উঁকি মারলাম কনে ডিপার্টমেন্ট। পটকা ভাইয়ের মামাত বোনকে বৌয়ের সাজে দেখে নিজের উপর নিজের রাগ হল। এ জীবনে কেন পটকা ভাই হতে পারলাম না।
বিয়ে না করতে পারি দুএকটা শর্ট ডেটিংতো করতে পারতাম। মুখে কেজি দশেক মেকআপ থাকলেও ভিতরেযে কঠিন সুন্দর তাতে কোন সন্দেহ নাই!
সবশেষে এলো সেই মহেন্দ্রক্ষন। কনে বিদায় দেয়া হবে। নিয়ম অনুযায়ী বৌ কান্না করবে হাউমাউ করে,বৌয়ের বাবা শব্দহীন কান্না করতে করতে রুমাল দিয়ে মুখ মুছবে এবং বৌয়ের মা তার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদবে। কিন্তু হল উল্টোটা।
কিন্তু পুরুষ কন্ঠে হাউমাউ কন্ঠে কে কাঁদে? উৎস খুজতে গিয়ে দেখি পটকা ভাই। একি উনি কাঁদছেন কেন? মামাত বোনের বিয়েতে কনের ফুফাত ভাই কাঁদার ইতিহাস বোধহয় পটকা ভাই শুরু করলেন।
পটকা ভাইয়ের কান্নার ভঙ্গি বলে দিচ্ছে তিনি সুযোগ পেলে হয়ত কনেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতেন, কিন্তু অতটুক সুযোগ এখনো পাননি। বৌকে যখন গাড়ীতে তোলা হল পটকা ভাই নয়া জামাইর কাছে গিয়ে বলে “আমার বোন খুব আদর যত্নে মানুষ,আপনারা কিন্তু ওর দিকে খেয়াল রাখবেন” ফিরে আসার সময় প্রাক্তন প্রেমিকা আপন মামাত বোনের দিকে তাকিয়ে বললেন “ভাল থাকিস বোন,শ্বশুড় শ্বাশুড়ির সাথে মিলে মিশে থাকিস”
সবশেষ করে পটকা ভাই আমাদের দিকে হন্তদন্ত হয়ে এসে বললেন “এই কই বিরি দে,কতক্ষন বিরি খাইনা। মামা কত বড় দায়িত্ব দিছে আমারে।
একটা বিয়া সামলানো আর যুদ্ধ করা সমান কথা। সবকিছু ঠিকঠাক মত হইয়্যা গেছে। বইন আমার নিশ্চয় সুখী হবে”
পটকা ভাইকে নিয়ে আগের লেখাগুলো
নরকের প্রথম স্তর।
নরকের ২য় স্তর।
সুপার ষ্টার কাউ
বিলকিস তুমি কেবলই একজন বিলকিস ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।