আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলোচনার শীর্ষে সৌভাগ্যবান ১৭ বিনিয়োগকারী ও ৮৫ প্রতিষ্ঠান

কোনো কোম্পানির পরিচালক না হয়েও বিভিন্ন কোম্পানির পাঁচ শতাংশ কিংবা তারও বেশি শেয়ার ধারণ করছেন- পুঁজিবাজারে এমন সৌভাগ্যবান বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১৭ জন এবং প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮৫টি। এসইসির বেঁধে দেওয়া সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক না হয়েও এখন এসব সৌভাগ্যবান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পরিচালকের মতো সম্মানজনক ও গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে তাদের সামনে; যা পুঁজিবাজারের ইতিহাসে নতুন মাত্রা দেবে বলে মনে করছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সৌভাগ্যবান ১৭ সৌভাগ্যবান বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে ৪ কোটি ৫৯ লাখ ৪ হাজার ৯০৬টি শেয়ার। আর সৌভাগ্যবান ৮৫ প্রতিষ্ঠানের হাতে রয়েছে মোট ৪১ কোটি ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮০টি শেয়ার। জানা গেছে, বছর শেষে কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা কিংবা পরিচালক এসইসি নির্ধারিত শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হলে এদের মধ্যে থেকেই প্রাথমিকভাবে উদ্যোক্তা পরিচালক নির্বাচিত হবেন।

পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের ফলে তাদের এ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারণ-সংক্রান্ত এসইসির নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের এককভাবে পরিশোধিত মূলধনের দুই শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার সংরক্ষণ করতে হবে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক তা সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হলে ওই কোম্পানির কোনো বিনিয়োগকারী বা প্রতিষ্ঠান যদি এককভাবে পাঁচ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার ধারণ করে, তবে সেই ব্যক্তি ওই কোম্পানির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন। ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালের বিনিয়োগকারী আলহাজ সাইদুর রহমানের কাছে বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের ৩২ লাখ ৩৪ হাজার শেয়ার রয়েছে; যা কোম্পানির মোট শেয়ারের ৭.০৩ শতাংশ। মিসেস জুবেদা খাতুন আলহাজ টেক্সটাইল মিলের ৭.৫৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন।

এই বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে এ কোম্পানির ৫ লাখ ৮৩ হাজার ১৪২টি শেয়ার। ৫৯ হাজার শেয়ার ধারণ করছে এপেক্স স্পিনিং অ্যান্ড নিটিং মিলস লিমিটেডের বিনিয়োগকারী গোলাম মোস্তফা। এই বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির মোট ৭.০২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। চট্টগ্রাম ভেজিটাবেল লিমিটেডের বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ আবুল হাইয়ের কাছে রয়েছে এই কোম্পানির ৬ শতাংশ বা ৭২ হাজার শেয়ার। ইস্টার্ন ব্যাংকের বিনিয়োগকারী আনিস আহম্মেদ ব্যাংকের ২ কোটি ৫৮ লাখ ২২ হাজার ৮১৪টি শেয়ার ধারণ করছেন; যা ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ৫.৭০ শতাংশ।

গ্রিন ডেলটা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিনিয়োগকারী শায়িফ এ চৌধুরী এ কোম্পানির ২৯ লাখ ১৪ হাজার ৮০০ শেয়ার ধারণ করছেন; যা মোট শেয়ারের ৭.১৪ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগকারী আব্দুল্লাহ আজিজ আল রাজীর কাছে রয়েছে ব্যাংকটির ৭.৫৮ শতাংশ বা ৭ লাখ ৫৯ হাজার ১৭১টি শেয়ার। কোহিনূর কেমিক্যাল লিমিটেডের ২ জন বিনিয়োগকারী আছেন, যারা এককভাবে পাঁচ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারন করছেন। তারা হলেন, তাওসিফ মাশরুর উল করিম এবং তাসকিয়া লেববা করিম। দুজনের মধ্যে তাওসিফ মাশরুর উল করিমের হাতে রয়েছে কোম্পানির ৪৮ হাজার শেয়ার; যা মোট শেয়ারের ৯.৬০ শতাংশ।

অপর বিনিয়োগকারী তাসকিয়া লেববা করিমের হাতে রয়েছে ৯.৪০ শতাংশ বাং ৪৭ হাজার শেয়ার। অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিনিয়োগকারী আর ওয়াই স্যামসাং ওই কোম্পানির ৭.৬৩ শতাংশ অর্থাৎ ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭২৫টি শেয়ার ধারণ করছেন। সাব্বির আহম্মেদ এককভাবে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৬.৩০ শতাংশ বা ১৩ লাখ ২১ হাজার ৩১০টি শেয়ার ধারণ করছেন। এ ছাড়া আব্দুর রহমান আনসারী প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৫.৩৩ শতাংশ, মারুফ সাত্তার আলী একই বীমা কোম্পানির ৭.৪৭ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন। স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের তিনজন বিনিয়োগকারী রয়েছেন, যাদের প্রত্যেকের হাতে ১২ লাখ ১০ হাজার করে শেয়ার রয়েছে; যা কোম্পানির মোট শেয়ারের ৬.৬৭ শতাংশ।

অপরদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী মধ্যে আইসিবি ও আইসিবি ইউনিট ফান্ডের হাতে রয়েছে ১৭ কোম্পানির পাঁচ শতাংশের বেশি শেয়ার। এর মধ্যে আইসিবি ইউনিট ফান্ড এপেক্স স্পিনিং অ্যান্ড নিটিং মিলস লিমিটেডের ১৪.২৩ শতাংশ এবং গ্লাক্সোস্মিথ বাংলাদেশ লিমিটেডের ১১.৬১ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেছে। ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস লিমিটেডের কাছে রয়েছে বাংলাদেশ ল্যাম্প লিমিটেডের ৬.৯৪ শতাংশ শেয়ার। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের ১৯.৩৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ফাইভ কনটেনার ক্রেডিট লিমিটেডের হাতে। ফাইন ফুডস লিমিটেডের ৬.৪৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের কাছে।

ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের হাতে রয়েছে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের ৯.৯৭ শতাংশ এবং প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের ৬.৯৩ শতাংশ শেয়ার। যার পরিমাণ ৩ কোটি ৫৮ লাখ ১ হাজার ১০টি। আইএফআইসি ব্যাংকের ৫.৫৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে এবিআইএল-আইডিএর হাতে। এম.এম. ইস্পাহানির হাতের রয়েছে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ৫.৩৪ শতাংশ শেয়ার। যার পরিমাণ ৫ কোটি ৪০ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০টি।

অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের হাতে রয়েছে শাহজালাল ব্যাংক লিমিটেডের ৮.২১ শতাংশ বা ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৪৯ হাজার ৮৬৪টি শেয়ার। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৪৫.২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ৬টি প্রতিষ্ঠানের হাতে। এর মধ্যে ১৫.৯৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে মেসার্স কুমিল্লা দোকান ফাউন্ডেশনের হাতে। মেসার্স আমু টি কোম্পানির হাতে রয়েছে ৭.৬০ শতাংশ শেয়ার। উত্তরা অটোমোবাইলস ম্যানুফেকচার লিমিটেডের হাতে রয়েছে উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ১১.৭৫ শতাংশ বা ৮৬ লাখ ৮৩ হাজার ৮০টি শেয়ার।

বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, বছর শেষে এসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী যখন কোনো বিনিয়োগকারী কোনো কোম্পানির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন, তা অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের কাছেও আগ্রহের হবে। এসইসির এই নিদের্শনা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে বড় ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। তবে তা পাঁচ শতাংশে নির্ধারণ না করে কমিয়ে আনার দাবি জানান তারা। এ বিষয়ে ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান বলেন, আমরা চাই সব শ্রেণীর বিনিয়োগাকরী এই সুযোগের আওতায় আসুক। সাধারণভাবে একজন বিনিয়োগকারীর পক্ষে এসইসির বেঁধে দেওয়া পাঁচ শতাংশ শেয়ার ধারণ করা কঠিন।

এফবিসিসিআইয়ের পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, আমরা এফবিসিসিআইয়ের মাধ্যমে ইতিমধ্যে এসইসির কাছে এই সীমা কমিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়েছি। পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে দুই শতাংশ করা হলে সব শ্রেণীর বিনিয়োগকারী এই সুযোগ নিতে পারবে বলে মনে করেন তিনি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.