আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলোচনার পথ এখনো খোলা

সর্বদলীয় সরকারের অধীনেই যথা সময়ে নির্বাচন হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের উদ্দেশে বলেছেন, এখনো আলোচনার দরজা খোলা আছে। তবে তার আগে হরতাল প্রত্যাহার করতে হবে। ওনাকে (বেগম জিয়াকে) জাতির কাছে ওয়াদা করতে হবে গাড়ি পোড়াবেন না, মানুষ হত্যা করবেন না। জনগণের জানমাল ছিনিমিনি করবেন না। আলোচনায় বসুন, আমি আগেও বলেছি, কোন কোন মিনিস্ট্রি চান, কোন কোন মন্ত্রণালয় চান- আসেন আলোচনা করি।

গতকাল বিকালে লাখো জনতার মহাসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দলীয় ও মহাজোট নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক জেলায় জেলায় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করা হয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সবাইকে সর্তক থাকতে হবে। বিএনপি-জামায়াত হরতালে যেন মানুষ হত্যা করতে না পারে।

জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ এ জনসভার আয়োজন করে। বিকাল ৩টায় জনসভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টা থেকেই রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেত হন।

ঢাকার দলীয় এমপিরা নিজ নিজ এলাকা থেকে বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে দুপুর থেকেই সমাবেশস্থলে সমাবেত হন। গতকালের সমাবেশকে ঘিরে পুরো রাজধানী জুড়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছিল প্রাণচাঞ্চল্য। ছিল নির্বাচনী শোডাউন। নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার দলীয় নেতা-কর্মী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেত হলে তা একপর্যায়ে জনতার সহাসমুদ্রে রূপ নেয়। সম্প্রতি একই স্থানে বিএনপি-জামায়াতের সমাবেশের পর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ মহাসমাবেশে সোহরাওয়াদী উদ্যান ছিল লোকারণ্য।

নেতা-কর্মীদের হাতে ছিল নৌকা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি। একপর্যায়ে টিএসসি, শাহবাগের মোড় দোয়েল চত্বর ছাড়িয়ে যায় জনসভার সীমানা। জনসভার কারণে রাজধানীতে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টিও হয়। বিকাল সাড়ে ৩টায় সভামঞ্চে আসেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪টা ৩৫ মিনিটে তিনি বক্তৃতা শুরু করেন।

৩৩ মিনিটের বক্তব্যে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন ও বিরোধী দলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদের ৯০ ভাগ আসন থাকা সত্ত্বেও উদারতা দেখিয়েছি। বিরোধীদলীয় নেতাকে ফোন করেছি। সর্বদলীয় সরকার গঠন করে নির্বাচন করার জন্য।

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আজ সোমবার থেকে বিরোধী দলের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এই ছোট ছোট শিশুদের ভাগ্য নিয়ে খেলবেন না। শিশুদের মন ভাঙবেন না। শিক্ষার পথে যেন বিরোধীদলীয় নেতা বাধার সৃষ্টি না করেন সে আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, ৪ তারিখ (আজ) হরতাল দিয়ে ২১ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বন্ধ করলেন। আমরা পাসের হার বাড়াই আর উনি (খালেদা জিয়া) পরীক্ষা বন্ধ করেন।

উনি নিজেও মেট্রিকে অঙ্ক আর উর্দু ছাড়া কোনো বিষয়ে পাস করতে পারেননি। তার দুই ছেলের জন্য রাষ্ট্র থেকে মাসে ১৫০০ করে টাকা নিয়ে তাদের কী পাস করিয়েছেন- মানিলন্ডারিং আর দুর্নীতি। বিরোধী দলের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওনি কি ভুলে গেছেন ১/১১-এর কথা। আবার কাকে আনতে চাচ্ছেন কিসের স্বার্থে? এক-এগারোর সময় ফখরুদ্দীন এবং মইনউদ্দিনকে ক্ষমতায় এনেছেন খালেদা জিয়া। এখন আবার তাদেরকে ক্ষমতায় আনতে চান তিনি।

তখন তারা ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়েছিল। এখন তারা আবার এসে তাকে জেলে পাঠাবে না তার কোনো গ্যারান্টি আছে? অসাংবিধানিকভাবে কেউ যাতে ক্ষমতা দখল করতে না পারে সে জন্য আমাদের মহাজোটের ৯০ ভাগ আসন থাকা সত্ত্বেও দেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তা করে বিরোধী দলের নেতাকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানালাম। কিন্তু তিনি আমন্ত্রণে সাড়া না দিয়ে হরতাল দিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী মাসে আমাদের দেশে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। আমরা উৎসব করব।

বিরোধী দল ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় বসার ৫২ দিনের মাথায় বিডিআর বিদ্রোহ ঘটালেন। ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ ৭৪ জন নিহত হলো। সিএনএন এর প্রতিবেদনে সব তথ্য প্রকাশ হয়েছে। বিএনপির এক নেতা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর টাকায় এটা করানো হয়েছে। এ ঘটনার এক ঘণ্টা আগে খালেদা জিয়া কেন আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছিল আজ তা প্রকাশ হয়ে গেছে।

সংসদ উপনেতা ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রমুখ। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সভা পরিচালনা করেন।

জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারাগারে বন্দী জাতীয় চার নেতাকে হত্যাকারীদের জিয়াউর রহমান পুরস্কৃত করেছেন। আর খালেদা জিয়া একাত্তরের খুনিদের মুক্ত করে দেবেন। শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ২০ জন মানুষের জীবন নিতে পেরেছেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করেছেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস করেছেন।

হরতাল দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো যবে না। শেখ হাসিনা বলেন, 'জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন। যারা জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছিল জিয়াউর রহমান তাদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। তিনি শুধু তাদের পুরস্কৃত করেননি, যুদ্ধাপরাধীদের এমপি-মন্ত্রী বানিয়ে তাদের পুরস্কৃত করেছিল। আর এখন খালেদা জিয়া বলছেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে সব যুদ্ধাপরাধীকে মুক্ত করে দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিএনপি নেত্রীকে আমি সংলাপের জন্য ডেকেছিলাম আর তিনি আমাকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিলেন ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদের জন্য। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে। আল্লাহর রহমতে আমি তো এখনো আছি।

অন্য নেতারা যা বলেন : আমির হোসেন আমু বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া এখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।

হরতাল দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ করেছেন। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলা দিলেন যার কোনো ভিত্তি নেই। তিনি সংলাপ চান না, তিনি চান দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে। বেগম খালেদা জিয়া যখন বক্তৃতা দেন তখন মনে হয় তিনি জামায়াতের নেত্রী।

ক্ষমতায় থাকতে তার ছেলেরা হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে দুর্নীতি করেছে। জঙ্গি হামলা ও রগ কাটার রাজনীতি করেছে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে জাতি বড় মছিবতে আছে। উনাকে ডানে যেতে বললে তিনি যান বায়ে। সংলাপের কথা বললে তিনি হরতাল দেন।

জাতি স্বাধীনতার মূল্যবোধ ধ্বংস হতে দেবে না। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জাতীয় চার নেতা কারাগারে জীবন দিয়েছেন। কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধু এবং তার আদর্শের সঙ্গে বেইমানি করেননি। বেগম খালেদা জিয়া পুতুল খেলার রাজনীতি করেছেন। দেশবাসীকে বিচার করতে হবে বাংলাদেশ জঙ্গি রাষ্ট্র হবে নাকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.