আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মার্ক পার্সি ও সিমন রাইটের অনেক কীর্তি

জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন তিনি ওয়াশিংটন টাইমসে নিবন্ধ লেখেননি। অথচ এই নিবন্ধ লেখা নিয়েই দলটির গর্বের সীমা ছিল না। সে যাই হোক পুরো বিষয়টিই এখন বিতর্কের গহীণে। জানাজানি হয়ে গেছে এই নিবন্ধের মধ্যস্থতাকারী মার্ক পার্সি বিটিপি এ্যাডভাইজারস ইন্টারন্যাশনাল এর প্রধান। তবে লন্ডনভিত্তিক এই লবিস্ট গ্রুপটির একজন অংশীদার হিসেবেই পার্সিকে মানুষ চেনে।

কে এই মার্ক পার্সি? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পাওয়া গেছে তার অনেক কীর্তির সন্ধান। ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে এই মার্ক পার্সির সহায়তা নিয়েছিল লিবারেল ডেমোক্র্যাট দল। তার সহায়তায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসনে জয় পেয়েছিল লিবডেম। এরই সুবাদে সেবছর ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টারের পদটিও পেয়ে গিয়েছিলেন নিক ক্লেগ। তবে নিক ক্লেগকে পদে বসিয়ে মার্ক পার্সির বিটিপি এ্যাডভাইজরস বড় অঙ্ক হাতিয়ে নিলেও খুব একটা লাভ হয়নি তাদের সমর্থনকারী সাধারণ ভোটারদের।

নিক ক্লেগ ক্ষমতার কাছাকাছি থেকেও ভোটারদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হয়েছিলেন কিংবা তাতে গুরুত্বই দেননি। কারণ এই দালালিতে মার্ক পার্সি টার্গেট করেছিলেন ব্রিটেনের তরুণ ছাত্রছাত্রীদের। নিক ক্লেগের প্রতিশ্রুতি ছিল টিউশন ফি কমাতে কাজ করবেন তিনি। কিন্তু ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টারের দায়িত্ব পাওয়ার পর সে নিয়ে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করেননি। ফলে ইতিহাসে নিক ক্লেগ একজন অসৎ ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছেন।

তবে মার্ক পার্সি থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। দালাল হিসেবে পার্সির সাফল্যগাথা আরও অনেকদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। রুয়ান্ডার গণহত্যার বিষয়টিই ধরা যাক। পার্সিরই সহায়তায় দেশটিতে ১৭ বছর আগে ঘটে যাওয়া গণহত্যার দায় থেকে বেঁচে গেছে এর বর্তমান সরকার। ইতিহাসের ওই ভয়াবহ হত্যাকা-ে মাত্র ১০০ দিনে ৮ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

বিটিপি এ্যাডভাইজারস তার ওয়েবসাইটের একটি নিবন্ধে বিষয়টি স্বীকার করে বলেছে, রুয়ান্ডা সরকার এই গণহত্যার দায় থেকে সরকারকে মুক্ত করার দায়িত্ব তাদের দিয়েছে। এর কাজই হচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ক্যাম্পেনের মাধ্যমে গণহত্যার বিষয়টি মানুষের মন থেকে মুছে দিয়ে রুয়ান্ডাকে একটি ক্রম অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা। তারই অংশ হিসেবে পার্সির মধ্যস্ততায় নিউজউইক, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য স্পেক্টেটর, প্রসপেক্ট ম্যাগাজিন, দ্য হাফিংটন পোস্ট, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, বিবিসি লোনলি প্ল্যানেট, বিবিসি ওয়ার্ল্ড, সিএনএন, আল-জাজিরা ও সিএনবিসি’র মতো বাঘা বাঘা মিডিয়াতে প্রতিমাসে গড়ে ১০০টির বেশি নিবন্ধ প্রকাশিত হতো রুয়ান্ডাকে ঘিরে। রুয়ান্ডার শিক্ষা নিয়ে অনলাইনে আলোচনা এই সময়ের মধ্যে বেড়ে যায় ৪,৪০০ শতাংশ। রুয়ান্ডার ভ্রমণ ও পর্যটন নিয়ে আলোচনা বাড়ে ১৮৩ শতাংশ, অর্থনীতি নিয়ে কথা হয় ১২৯ শতাংশ বেশি।

আর রুয়ান্ডার গণহত্যা নিয়ে আলোচনা ১১ শতাংশ কমে যায়। সম্প্রতি মার্ক পার্সিকে ভাড়া করে সাফল্য পেয়েছেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুর কেনিয়াত্তা। পার্সির সহায়তায় এখন তিনি দেশটির চতুর্থ প্রেসিডেন্ট। গত ৯ এপ্রিল ২০১৩ এর নির্বাচনে কেনিয়াত্তা এই পদে আসীন হন। এর আগে ২০০১ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত কেনিয়ার স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ছিলেন উহুর কেনিয়াত্তা।

তবে তাঁর বিরুদ্ধে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চলছে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা। আগামী ৯ জুলাই সেই মামলার বিচারে কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর কথা ছিল কেনিয়াত্তার তবে সে তারিখ এখন এ বছর পিছিয়ে নবেম্বরে দেয়া হয়েছে। দেশটিতে ২০০৭ সালের নির্বাচনের সময় ব্যাপক সহিংসতার পেছনে কেনিয়াত্তার হাত ছিল এই অভিযোগেই তাঁর বিচার চলছে। এত বড় দায় মাথায় নিয়েও ২০১৩-এর নির্বাচনে উহুর কেনিয়াত্তার বিজয়ের পেছনে মার্ক পার্সির দালালিকে বড় কারণ হিসেবেই দেখা হয়। বিটিপি এ্যাডভাইসারস আর মার্ক পার্সির ভূমিকা নিয়ে আর কারও মনে প্রশ্ন থাকার কথা নয়।

আর খালেদা জিয়ার নিবন্ধ ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশের পেছনে জামায়াত গংয়ের কারসাজির বিষয়টিও হয়ত পরিষ্কার! যার প্রমাণ আমরা আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো সম্প্রতি দেখতে পাচ্ছি। বিভিন্ন মিডিয়াতেই বাংলাদেশকে অস্থির, অনির্ভরযোগ্য হিসেবে প্রমাণ করতে নেতিবাচক সব নিবন্ধ, সম্পাদকীয় ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। যার একটা পরোক্ষ ও শক্তিশালী প্রভাব গিয়ে হয়ত পড়বে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায়। সম্প্রতি দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে জ্যাসন ব্রুকতো গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান এইচ সরকার গা-ঢাকা দিয়েছেন বলেই লিখে দিলেন। সংঘাত ও প্রতিবাদ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ব্যাহত করতে পারে এই শিরোনামে ১৮ জুন প্রকাশিত খবরে গণজাগরণ মঞ্চের কঠোর সমালোচনাই করা হয়েছে।

এর সঙ্গে সবশেষ সংস্করণ হিসেবে যোগ হয়েছে সিমন রাইটের মিরর প্রতিবেদনটি। সানডে মিরর-এর এই সিমন রাইট একজন অসৎ দালাল হিসেবে ২০১০ সালের ফিফা বিশ্বকাপের সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। অভিযোগ ছিল সিমন রাইটের সহায়তা নিয়ে ইংলিশ ফুটবল টিমের চেঞ্জ রুমে ঢুকে পড়েছিলেন এক ইংলিশ ফুটবল ফ্যান। নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম লঙ্ঘন ছিল এটি। কারণ ওই সময় প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারিও ওই কক্ষে অবস্থান করছিলেন।

সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকান পুলিশ সিমন রাইটকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিকভাবে ফুটবল ফ্যানটিকে ছেড়ে দিলেও পরে তাকে একটি গেস্ট হাউস থেকে আটক করা হয়। আর জানা যায় ও ফ্যানটির সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন সিমন রাইট এবং তার সঙ্গে আঁতাত করেই চেঞ্জ রুমে নিয়ে এসেছিলেন। তবে পরে জামিনে মুক্তি পান সিমন রাইট। এই সিমন রাইটকেই এবার ব্যবহারের চেষ্টা চালানো হয়েছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।

তাঁকে দিয়েই তৈরি হয়েছে ‘সাভারের রেশমা উদ্ধার ভূয়া ছিল’ এমন একটি গল্প কাহিনী। যা আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনী উভয়ের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করছে। পুরো দায়িত্বটিই পালন করছে বিটিপি এ্যাডভাইজরস। এমন মিথ্যা তথ্যে ঠাসা, বানোয়াট খবর বড় বড় মিডিয়ায় প্রকাশের সফল কারিগর এই ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানটি।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।