আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মার্ক টোয়েন (পর্ব 30)

timursblog@yahoo.com

এক বিকেলে ভ্যালেন্স শহরের পনেরো মাইল দূরে নদীতে নৌকায় চড়ে বেড়ানোর সময় চিন্তাটা মাথায় এলো টোয়েনের । অন্যমনস্ক, স্বপ্নালু চোখে পূবের পাহাড়গুলো দেখছিলেন তিনি । হঠাৎ মনে হলো এর মধ্যে একটা পাহাড় দেখতে ঠিক নেপোলিয়নের মুখের মতো! ব্যাপারটা তিনি ডায়রিতে নোট করে রাখলেন । কিন্তু গোটা সফরে লেখার মত তেমন কিছু পেলেন না তিনি । সেই শীতে বার্লিনে কাটালেন তিনি ।

জার্মান সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় ভিলহেল্ম দাওয়াত করলেন ডিনারে । রাণী ভিক্টোরিয়ার নাতি কাইজার ভালই ইংরেজি জানতেন, 'লাইফ অন দ্য মিসিসিপি' বইটা পড়ে খুব মজা পেয়েছেন । 'এ ট্র্যাম্প অ্যাব্রড' ও ভাল লেগেছে তাঁর । আসলে পুরো জার্মানীতেই মার্ক টোয়েন খুব জনপ্রিয় ছিলেন । এমন কী হোটেলের পোর্টারেরও মার্ক টোয়েনের বইয়ের সংগ্রহ ছিল ।

একদিন টোয়েনের পরিচয় জানতে পেরে সে তার ছোট্ট ঘরে মার্ক টোয়েনকে টানতে টানতে নিয়ে গেল । তারপরে নাউহাইমে গিয়ে ক্লিমেন্স কিছূটা মাথা ঠান্ডা করে কাজ করতে পারলেন । 'দ্যা এক্সট্রা অর্ডিনারি টুইনস' আর 'টম সয়্যার অ্যাব্রড' গল্প ও উপন্যাসে হাত দিলেন । প্রথম গল্পটা থেকে 'পাডনহেড উইলসন' বইটা বের হবে । দ্বিতীয়টা সেইন্ট নিকোলাস পত্রিকার জন্য ধারাবাহিকভাবে লেখা ।

বেড়াতে এলেন বন্ধু টুইচেল এলেন (এ ট্র্যাম্প অ্যাব্রডের সাথী), একদিন পার্কে বেড়াতে দুজনে রানী ভিক্টোরিয়ার বড় ছেলে সপ্তম এডওয়াডের্র সাথে দেখা হয়ে গেল । 'প্রিন্স অ্যান্ড দ্য পপারে' এডওয়ার্ডকে চরিত্র বানান নি বলে হয়তো ভালই করেছিলেন টোয়েন । ইতালির ফ্লোরেন্স শহরের বাইরে ভিলা ভিভিয়ানি ভাড়া নিলেন তিনি । সেখান থেকে লিখলেন 'টম সয়্যার অ্যাব্রড,' আর 'পাডনহেড উইলসান' । তারপরে মনে পড়ল একটা কথা ।

অনেক বছর আগে যখন তিনি হ্যানিবালে কম্পোজিটরের কাজ করতেন তখন রাস্তা দিয়ে যাবর সময়ে একটা বইয়ের ছেঁড়া পাতা এসে পড়েছিল । মার্ক টোয়েন পাতাটা কুড়িয়ে নিয়ে দেখলেন সেখানে জোয়ান অভ আকের্র একটা ছবি । বর্ম পরিহিত জোয়ান ঘোড়ার পিঠে চড়ে ফরাসী সৈন্য দল পরিচালনা করছেন । ছবিটা দেখে মার্ক টোয়েন এত মুগ্ধ হলেন যে তিনি ক্রমে ফ্রান্সের ইতিহাস হয়ে, গোটা পৃথিবীর ইতিহাস পড়ে ফেললেন । এর আগে মার্ক টোয়েনের বই পড়ারই অভ্যাস ছিল না ! (আগেই বলেছি ছয় বছর থেকে এগারো বছর পর্যন্ত স্কুলে গেছেন তিনি, এবং স্কুলে থাকার সময় বানান করতে শিখেছিলেন কেবল, ছাপাখানায় কাজ করার সময় তিনি পড়তে শিখেছেন) ।

সুতরাং পঞ্চদশ শতাদ্বীর ফরাসী কৃষক বালিকা জোয়ান (1412-1431), যিনি দখলদার ইংরেজের হাত থেকে ফরাসী দেশকে মুক্ত করতে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সম্বন্ধে মার্ক টোয়েন লিখতে সবসময়েই আগ্রহী ছিলেন । 'দ্যা পার্সোন্যাল রিকালেকশন অভ জোয়ান অভ আর্ক' বইটা উত্তম পুরষে লেখা । জোয়ানের কাল্পনিক সচিব সোর দো কন্তের ভাষ্যে । 'আমি যদি নিজের নামে লিখি, তাহলে মানুষ হাসবে, ভাববে রসিকতা করছি। আসলে এটা অত্যন্ত সিরিয়াস একটা বই ।

আমি তাই এই বইটা ছদ্মনামে লিখব । ' এবং সোর দো কন্ত নামেই লিখতে শুরু করলেন টোয়েন । ছয় সপ্তাহে এক লাখ শব্দ লিখলেন । যে কোনো বিচারে অনেক লেখা, আরো বেশি যদি আমরা দেখি যে আসলে এ সময়ে টোয়েনকে ফরাসী ভাষায় লেখা অনেক রেফারেন্স ঘাঁটতে হয়েছিল । মিসিসিপি নদীতে পাইলট থাকার সময় ফরাসী আঢ়ার চর্চা করেছিলেন মার্ক টোয়েন ।

নিউ অর্লিয়ান্স তো এক সময় ফরাসীদের ছিল । মার্ক টোয়েনের যুগে অনেকই সেখানে ফরাসীতে কথা বলতো ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।