আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মার্ক টোয়েন (পর্ব 31)

timursblog@yahoo.com

1893 সালের বসন্তকালে কাজ ফেলে আমেরিকায় যেতে হলো তাঁকে । ওয়েস্টার অ্যান্ড কোম্পানি একেবারে শেষ অবস্থায় পৌঁছেছে । কোনো অবস্থাতেই তাকে বাঁচানো সম্ভব নয় । দুই লাখ ষাট হাজার ডলার দেনা হয়েছে তাঁর । দৈনিক এক ডলার ভাড়ার একটা সস্তা হোটেলে থাকতেন তিনি ।

এত খারাপ অবস্থায় এর আগে তিনি কখনো পড়েননি । এমন কী নেভাডায় থাকার সময়েও কেবল নিজের কথাই ভাবতে হতো তাঁকে । আটান্ন বছর বয়সে পরিবার সহ দেউলিয়া হবার বেইজ্জতির জ্বালাই অন্য রকম । এমন সময় একদিন তেলখনির মালিক হেনরি রজার্স দেখা করতে এলেন । টাকা পয়সার কথা কিছূই তাঁকে বলেননি মার্ক টোয়েন ।

হোটেলের রেস্তোঁরা বসে খেতে খেতে আগের মতোই ঠাট্টা করতে লাগলেন । কিন্তু ব্যাবসায়ী রজার্স মার্ক টোয়েনের আর্থক অবস্থা জানতে উৎসুক ছিলেন । 'মি. ক্লিমেন্স, আপনি হয়তো জানেন না । কিন্তু আনেক বছর আগে সান ফ্রানসিস্কোতে, হাওয়াই দ্বীপোএর উপর আপনার লেকচার শুনে দারুন মজা পেয়েছিলাম । আপনার জন্য কিছু করতে পারলে খুশি হবো ।

' অতএবে মার্ক টোয়েন তাঁর সমস্ত ব্যবাসায়িক কাগজপত্র মি রজার্সকে দেখতে দিলেন । রজার্স বললেন টাইপসেটিং মেশিনটার সফল হওয়ার বেশ একটা সম্ভাবনা আছে সে জন্য তিনি একটা মোটা অংক ধার দিলেন । টাকা পেয়ে আবার আগের মেজাজে ফিরে গেলেন মার্ক টোয়েন । তবে ওয়েস্টার অ্যান্ড কোম্পানিকে আর বাঁচানো সম্ভব হলো না । কথা ছিল টাইপ সেটিং মেশিনটা সফল না হলে টাকা ফেরত দিত হবে না ।

আসলে ধনকুবের মি. রজার মার্ক টোয়েন দেউলিয়াত্বের হাত থেকে বাঁচানোরজন্য্ই এমন করেছিলেন ভাবলে ভুল হবে না বিশেষ । জিনিসটা যখন শেষমেষ কোনো কাজের না বলে প্রতিপন্ন হলো তখন বেশ ফুরফুরে মেজাজে প্যারিসে চলে গেলেন মার্ক টোয়েন । এখন এটা নিয়ে ভাববার আর কোনো প্রয়োজন নেই । ব্যার্থ টাইপ সেটিং মেশিনটা এখন সিবলি কলেজ অভ এঞ্জিনিয়ারিং এ রাখা আছে ডিসপ্লেতে । মেশিনটাকে বলা হয় ওজন ও আয়তন অনুপাতে এটা পৃথিবীর সবচেয়ে খরচবহুল যন্ত্র ।

একবার এক লোক যন্ত্রপাতির প্যাটেন্টের উপর বই লিখে মার্ক টোয়েনের কাছে ভুমিকা লেখা জন্য চিঠি লিখেছিলেন । চিঠির জবাবে মার্ক টোয়েন লেখেন, "DEAR SIR,--I have, as you say, been interested in patents and patentees. If your book tells how to exterminate inventors, send me nine editions. Send them by express. "Very truly yours, "S. L. CLEMENS." এই সময়ে পুরনো বইয়ের রয়্যাল্টি ছাড়া মার্ক টোয়েনের আর কোনো রোজগার ছিল না এবং সেটাও খুব বেশি ছিল না । সুতরাং হিসেব করে খরচ করতে হতো । আশ্চযের্র বিষয় এ সময় মার্ক টোয়েন আশ্চর্য ভাল মুডে ছিলেন এবং পরিবারের লোকেরাও দুঃখে ছিলেন বলা যাবে না । প্রায় প্রতিরাতেই ক্লিমেন্স সারাদিনে কী লিখেছেন সেটা পড়ে শোনাতেন ।

একরাতে সুজি তার ডায়েরিতে লেখলো , 'আজ রাতে জোয়ান অভ আর্ককে পুড়িয়ে মারা হয়েছে !' অর্থাৎ জোয়ানের অভ আকের্র উপর লেখা বইটা শেষ হয়েছে । সুজি ক্লিমেন্স নিজেও ভালই লেখত । অন্তত যে সব টুকরো লেখা পাওয়া গেছে তা থেকে এরকম অনুমান করাটা খুব স্বাভাবিক । যে যাই হোক, জোয়ান অভ আকের্র উপর বইটা ধারাবাহিকভাবে হার্পার্স ম্যাগাজিনে ছাপা হতে লাগল । লেখকের কোনো নাম দেয়া ছিল না কিন্তু পাঠকরা ঠিক ধরে ফেলল ।

মার্ক টোয়েনের হাত শুধু মার্ক টোয়েনই নকল করতে পারেন! 1895 সালের বসন্তে মার্ক টোয়েনে তাঁর হারানো সম্পদ পুনরুদ্ধারে নতুন পরিকল্পনা ফাঁদলেন । লেকচার দিতে খুব ভাল না লাগলেও গোটা পৃথিবীতে তিনি টাকার বিনিময়ে (এখন আর বিন পয়সায় গলাবাজি পোষাবে না টোয়েনের) বক্তৃতা দিয়ে বেড়াবেন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।