আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মার্ক টোয়েন (পর্ব ৩৪)

timursblog@yahoo.com

অনেকে ভাবতে পারে যে এবারে মার্ক টোয়েনের আক্কেল হয়েছে । এবারে আর কোনো বিদঘুটে প্রজেক্টে পয়সা খাটাবেন না তিনি । কিন্তু পরের মাসেই তিনি এক অস্ট্রিয়ান কার্পেট প্রস্তুত কারকের কার্পেট বোনার যন্ত্রে লগ্নি করার কথা ভাবতে লাগলেন । কিন্তু এই 'যাদুর কার্পেট' প্রজেক্ট থেকে স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের হেনরি রজার্স টোয়েনকে নিরস্ত করলেন । প্রচুর ম্যাগাজিন আর্টিকল লিখেছেন তিনি এ সময় ।

এর বেশ কিছু পরে 'ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স' নামে সংকলিত হয়েছে । কিন্তু আমরা একধরনের তিক্ততা দেখতে পাই টোয়েনের লেখার মধ্যে । হতে পারে হারানো সময়ের জন্য মনস্তাপ থেকেই হয়েছিল এটা । প্রাব নয় বছর ধরে ইউরোপে থাকছেন তাঁরা । এমন সময় বাহাত্তর বছর বয়সে মার্ক টোয়েনের বড়ভাই ওরাইওন ক্লিমেন্সের মৃত্যু হলো কেওকুকে ।

কোনো অসুখ বিসুখ ছিল না ওরাইওনের, এক সকালে মৃত্যু এসে স্রেফ কড়া নেড়ে ছিল তাঁর দুয়ারে । মার্ক টোয়েন এসময়ে ভিয়েনার হোটেল ক্রানৎসে থাকতেন । তাঁর স্যুইটটাকে বলা হতো 'সেকেন্ড এমব্যাসি' । কারন তখন অস্ট্রিয়ার (তখন অস্ট্রো-হাঙ্গারিয়ান সাম্রাজ্যে ) সবচেয়ে পরিচিত ও খ্যাতিমান আমেরিকান ছিলেন টোয়েন । কাজে অকাজে কারনে -অকারনে লোকে দেখা করতে আসতো টোয়েনের সাথে ।

যদিও নিজে ধুমপান করতেন তাহলেও দশ হাজার ডলারের বিনিময়ে একটা তামাকের বিজ্ঞাপনে তাঁর নাম ব্যাবহার করতে দিতে আপত্তি জানালেন তিনি । আরেকবার দশটা লেকচারের বিনিময় দশ হাজার ডলার প্রস্তাবও প্রত্যাখান করলেন, যদিও টাকার খুব দরকার ছিল তখন । এরকম ভাবে টাকা কামালে আত্মসন্মান বিক্রি হয় বলেই ধারনা ছিল তাঁর । ১৮৯৯ সালের গ্রীস্ম কালে ভিয়েনা ছাড়লেন তাঁরা । জিনের অসুখের কারনে গ্রীস্মকালটা সুইডেনে যাত্রাবিরতি করলেন ।

তারপরে শীত কাটানোর জন্য ৩০, ওয়েলিং কোর্ট লন্ডনে, যাত্রা বিরতি করলেন ক্লিমেন্স পরিবার । পরের গ্রীস্মে লন্ডনের ঠিক বাইরে ডলিস হিলে উঠলেন, যেখানে প্রধান মন্ত্রী গ্ল্যাডস্টোন থাকতেন অনেক সময় । জায়গাটার এখনকার নাম গ্ল্যাডস্টোন পার্ক । অক্টোবরের ৬ তারিখ ১৯০০ সালে, পঁয়ষট্টি বছর বয়সে আমেরিকায় ফিরে এলেন মার্ক টোয়েন । লন্ডন, ভিয়েনার থেকে নিউ ইয়র্কের পত্রিকাগুলো মার্ক টোয়েনকে অভিনন্দনে কম যায়নি ।

মার্ক টোয়েনের বিশাল ঋণ ও সেসব শোধের গল্প এখন লোকের মুখে মুখে । লোকে তাঁকে স্যার ওয়াল্টার স্কটের সাথে তুলনা করছে । কারন স্কটও লিখে বিশাল ঋণ শোধ দিয়েছিলেন । ক্লাব আর সমিতি গুলো হামলে পড়ল বক্তৃতা দেয়ার জন্য । কাগজগুলো এসে বলল প্রতিটা শব্দ এক ডলার এই হারে তাঁকে পারিশ্রমিক দেবে তারা ।

কিন্তু তেমন সাড়া দিলেন না টোয়েন । লেকচারে রুচি ছিল না আর তাঁর । মাঝে মাঝে এখানে সেখানে এক আধটা লেকচার দিতেন কোনো ডিনার পার্টিতে । অল্প কিছু পত্রিকাতে লিখতেন । হার্পার ব্রাদার্স তাঁর সমস্ত লেখা একত্রে ছাপার বন্দোবস্ত করছে ।

নিরিবিলি থাকতেই থাকতেই বেশি পছন্দ করতেন ক্লিমেন্স । মানুষ এখন মার্ক টোয়েনের কথার মধ্যে একটা অন্য সিরিয়াস সুর শুনতে পাচ্ছিল । হ্যাঁ, এখনো মাঝে মাঝে হাসাতে পারতেন তিনি । কিন্তু আগের চেয়ে অনেক সিরিয়াস হচ্ছিলেন তিনি কথার মধ্যে । তাঁর অন্যতম বিষয় ছিল দেশপ্রেম ।

তবে সেটা ঠিক অন্য লোকের দেশপ্রেম নয় । দেশকে যদি ভালবাসতে হয়, তবে পতাকাকে পবিত্র রাখতে হবে । সবাই যে কথা বলে সেটাই সঠিক মেনে নিলে দেশপ্রেমের অর্থ থাকে না । 'রাজতন্ত্রেও দেশপ্রেম নিয়ে কথা বলা হয় । আমাদের দেশপ্রেম কী সেরকম হবে?' "মাই কান্ট্রি রাইট অর রং" ধাঁচের অন্ধ দেশপ্রেমে অরুচি ছিল টোয়েনের ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।