আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মার্ক টোয়েন (পর্ব 32)

timursblog@yahoo.com

ওয়ার্ল্ড ট্যুরটা অত্যন্ত সফল ভাবে হলো । আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, সিংহল, দক্ষিন আফ্রিকা যেখানেই গেছেন অত্যন্ত উচ্ছসিত সমাদর পেয়েছেন তিনি সমস্ত মানুষের কাছ থেকে । কলকাতা সম্বন্ধে তাঁর মন্তব্য 'এখানকার গরমে একটা পিতলের নব ও গলে যাবে (!) ' কিন্তু গড়ের মাঠে অক্টারলোনি মনুমেন্ট তাঁকে দারুন আকর্ষণ করেছিল । এই সম্স্ত ভ্রমনের উপর তিনি 'চেজিং দ্যা ইকুয়েটর' বইটা লিখতে শুরু করে ভাবলেন, এবার সব ধার দেনা শোধ দিয়ে আবার নতুন করে শুরু করা যাবে সব । টাকা পয়সা যা পাচ্ছিলেন সব রজার্স কে পাঠাচ্ছিলেন, টাকার অংকটা এতোই বড় হচ্ছিলো যে মার্ক টোয়েন ভাবছিলেন এতো দিনে দেনাদারের করাল গ্রাস থেকে তিনি মুক্তি পাবেন, পৃথিবীতে তিনি মাথা উঁচু করে চলতে পারবেন ।

যখন দক্ষিন আফ্রিকা থেকে জাহাজে উঠলেন ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে তখন খুব ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন টোয়েন । প্রায় এক বছরের সফর শেষ পর্যায়, আমেরিকাতে সুজি আর জিনকে টেলিগ্রাম করা হলো তারা যেন লন্ডনে এসে শীতকালটা কাটিয়ে যায় । জুনের শেষ দিন মার্ক টোয়েনের জাহাজ এসে ইংল্যান্ডে পৌঁছাল । সুজি আর জিন তাদের পরিচারিকা ক্যাটি লিয়ারিকে নিয়ে অগাস্টের বারো তারিখে পৌঁছানোর কথা । বারো তারিখে সুজি এলো না, এলো একটা চিঠি ।

চিঠিতে লেখা, সুজির শরীর জাহাজে চড়ার মতো ভাল নেই, সুজি পরে আসবে । লিভি ক্লিমেন্স, ক্লারাকে নিয়ে আমেরিকায় উদ্দেশ্যে জাহাজে চাপলেন । পনেরোই অগাস্ট মার্ক টোয়েন ডায়েরিতে লিখলেন, "That was the 15th of August, 1896. Three days later, when my wife and Clara were about half-way across the ocean, I was standing in our dining-room, thinking of nothing in particular, when a cablegram was put into my hand. It said, 'Susy was peacefully released today.'" মার্ক টোয়েনের জীবনে যে কয়টা ট্র্যাজেডি ঘটেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড়গুলোর একটা হচ্ছে বিদেশে থাকার সময় বড় মেয়ে সুজি ক্লিমেন্সের মৃত্যু । প্রায় এক বছর মেয়েকে দেখেন নি তিনি, এবং আর কোনো দিন দেখার উপায় রইলো না । কোয়্যারি ফার্মে ভালই ছিল সুজি ।

মাঝখানে সে হার্টফোর্ডে বেড়াতে এসেছিল জর্জ ডাডলি ওয়ার্নারের বাড়িতে । সেখানেই অসুখ বাঁধিয়ে ফেলে সে । কয়েকদিন পরে বোঝা যায় রোগটা ছিল মেনিনজাইটিস । সেই 1896 সালে অ্যান্টিবায়োটিক ছিল না যে এর চিকিৎসা করা যাবে । অনেক দিন আগে মারা যাওয়া ছোট্ট ভাইটার পাশে কবর দেয়া হলো তাকে ।

সুদূর অস্ট্রেলিয়াতে দেখা একটা কবরের ফলকে রবার্ট রিচার্ডসনের এই কয়টা লাইন লেখা হলো, Warm summer sun, shine kindly here; Warm southern wind, blow softly here; Green sod above, lie light, lie light!-- Good night, dear heart, good night, good night. ক্লারা আর জিনকে নিয়ে লিভি ক্লিমেন্স লন্ডনে ফিরে এলেন এবং শোকগ্রস্ত পরিবার লন্ডনে টেডওয়ার্থে একেবারে কাউকে না জানিয়ে বাস করতে লাগল । বাজারে এরকম গুজব শোনা যাচ্ছিল মার্ক টোয়েনের পারিবার তাঁকে ত্যাগ করেছে এবং প্রৌঢ়, অসুস্থ টোয়েন ঋণ শোধের জন্য প্রাণপাত পরিশ্রম করে চলেছেন । আরেকটা বিদঘুটে গুজব ছিল মার্ক টোয়েন মারা গেছেন । আসলে লন্ডনে অল্প কিছু শুভানুধ্যায়ী কেবল জানতেন মার্ক টোয়েন কোথায় আছেন । একজন ছিলেন স্যামের দূরসম্পর্কীয় জ্ঞাতি ভাই ড. জেমস ক্লিমেন্স ।

একজন রিপোর্টার গোয়েন্দার মত খুঁজে বের করে ফেলল মার্ক টোয়েনের ডেরা । গৃহকর্তা সরাসরি জিগ্যেস করল বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর কী বলার আছে? টেনে টেনে (আর সব দক্ষিনীদের মতোই টেনে কথা বলতেন মার্ক টোয়েন) কিছুটা নাকী গলায় মন্তব্য করলেন মার্ক টোয়েন, 'আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, আমার মৃত্যুর খবরটা খানিকটা অতিরঞ্জিত । ' আসলে হিউমার ছিল ক্লিমেন্সের মজ্জাগত । আসলে লেখক হিসেবে যতটা না খ্যাত ছিলেন প্রায় ততটাই লোকে তাঁকে চেনে মজাদার কথা বলার জন্য । ইন্টারনেটে 'মার্ক টোয়েন কোটেশন' ঘাঁটলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।