আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিনেমাখোরদের আড্ডার পথে আমার ১৩ রকমের বিপত্তিনামা

অপ্রিয় এবং অবাঞ্ছিত... বিপত্তি ১ বন্ধু আশিকের আছে ৩২ গিগাবাইট পেনড্রাইভ, আর ক্যানন ডিএসএলআর ক্যামেরা। ওকে নিয়ে যাব ভাবলাম সামহোয়্যারের সিনেমাখোরদের মিলন মেলায়। ওর বাসায় বসে প্ল্যান করলাম আমরা তিন বন্ধু, আমি-সে-সাইফ আড্ডায় কী কী করব। রাত্রে বাসায় ফেরার জন্য উঠলাম দি পিপলস তুরাগ'এ। রাত্রে লোকাল বাসে চরম ভীড় থাকে।

দাঁড়িয়ে যাত্রা শুরু করলাম। গন্তব্যস্থলে পৌঁছে পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম আমার জানের টুকরা ফুল টাচস্ক্রীন হ্যান্ডসেট নেই, কোন শালায় গাপ করে দিয়েছে। সর্বনাশা পদ্মা নয়, সর্বনাশা তুরাগ! বিপত্তি ২ বাসায় এসে বাথরুমে ঢুকলাম হাত-মুখ ধোওয়ার জন্য। বলা নেই কওয়া নেই, দ্রিম! বাথরুমের মেঝেতে চিৎপটাং আমি। কোমরটা গেছে মনে হয়।

ইনভেস্টিগেশন করে বুঝলাম, স্যান্ডেলের তলা ক্ষয়ে গেছে। বিপত্তি ৩ প্রিয় মোবাইল খোয়ানোর শোকে, প্লাস বাথরুমে আছাড় খেয়ে রাতের বেলা জ্বর এসে গেল। আগে থেকেই সর্দিকাশি ছিল, তাই জ্বরটাও জোরালোই ছিল। বিপত্তি ৪ সকাল বেলা জ্বর কমে এল, কিন্তু সর্দি বেড়ে গেল ভয়াবহ। এক কাপ চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম ডাক্তারের চেম্বারের উদ্দেশ্যে।

বহু চরাই উতরাইয়ের পর কাফরুলের অনেক ভেতরে ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলাম। তবে ডাক্তারের আচরণ চরাই উতরাইয়ের কষ্ট ভুলিয়ে দিল। হাসি ছাড়া কথাই বলেন না। যাই হোক, চেম্বার থেকে বেরিয়ে ফোন দিলাম আশিককে। সে জানাল সে নাকি আসতে পারবেনা, টঙ্গীতে আছে।

মাথায় পড়ল বাজ। পেন্ড্রাইভ তার কাছে! ফোন দিলাম সাইফকে। সে আশিকের কথা শুনে বলল,' ধুর যামুনা যা!' আড্ডায় আর যাওয়া হচ্ছে না! আবার চড়াই উতরাই পেরিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বাসে উঠলাম। বিপত্তি ৫ বাস থেকে নেমে ভাবলাম আমি একাই যাব। টঙ্গীতে গিয়ে আশিকের কাছ থেকে পেনড্রাইভ নিয়ে আসব, তারপর শাহবাগগামী বাসে উঠে পড়ব।

ফোন দিলাম আশিককে। আশিক জানাল সে উত্তরায় ফিরছে। আমি সাইফ জানালে সে বলল 'আচ্ছা উত্তরায় আয়। আশিকের কাছ থেকে পেনড্রাইভ নিয়ে তারপর যাবক্ষণ। ' আমি আবার বাসে উঠলাম এবং উত্তরায় যখন পৌঁছালাম, হালকা জ্বর আর দুর্বলতায় আমার পায়ের তলার মাটি কাঁপাকাঁপি করছে।

বিপত্তি ৬ পেনড্রাইভ জয়ের পর সাইফের পায়ের স্যান্ডেল গেল ছিঁড়ে। অনেক খানিক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটার পর মুচির সন্ধান পাওয়া গেল। উহ, আমার হাঁটুর রগ তখন ছেঁড়ে ছেঁড়ে করছে। বিপত্তি ৭ একটা কলা আর একটা বন নিয়ে অবশেষে যখন বাসে উঠলাম, তখন ৩টা বাজে। ক্ষুদায় কপাকপ করে গিললাম বাসি বন আর মেডিসিন দেওয়া কলা।

র‍্যাব-১ এর কার্যালয়ের সামনে এসে বাস গেল থেমে। কী হয়েছে? ইঞ্জিনে সমস্যা। পনের মিনিট ওখানেই লস। বিপত্তি ৮ আমি আর সাইফ বসে ছিলাম একদম শেষের সিটে। তাই ঝাঁকুনী ছিল সেইরকম।

ক্যান্টনমেন্টের কোথাও এসে স্পীড ব্রেকারের কারণে এমন ঝাঁকুনী খেলাম, গতকালের ব্যথা পাওয়া পশ্চাতদ্দেশের হাড্ডি তো বটেই, মাথা পর্যন্ত চক্কর দিয়ে উঠল। বুঝলাম, ব্যথাটা বেশ ভোগাবে। বিপত্তি ৯ টিএসসিতে এসে আরেক মুশকিল, সিনেমাখোরদের কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না। মনে মনে ব্লগার তনি ভাই, তূর্য ভাই, আশকারি বা রাষ্ট্রপ্রধান, বা চেহারা চিনি এমন কাউকে টাইপ কাউকে খুঁজছিলাম। ধূর! কিয়ের কী? কম্পমান ভূমির সাথে পাল্লা দিয়ে আমি, সাইফ আর সদ্য পরিচিত ব্লগার শাহিন ভাইকে সাথে নিয়ে পুরো টিএসসি চষে ফেললাম।

কাউকে দেখলাম না দল বেঁধে জম্পেশ আড্ডা দিতে, ল্যাপ্টপ সাথে। সিনেমাখোর গ্রুপের ওয়ালে ঢুকলাম, বাতিল নোটিশ নেই। শাহিন ভাই চলে গেলেন। ইচ্ছা করছিল ফুটপাতের উপর বসে কপাল চাপড়াই। বিপত্তি ১০ সাইফ বল্ল,'এতদূর আসছি যখন, চল নিউ মার্কেট ঘুরে যাই।

' ও তখন বুঝেনি, আমি কতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছি ততক্ষণে, আমি কোমরের ব্যথায় সোজা হয়ে হাঁটতে পারছি না। বন্ধুর পিছু পিছু গলি ঘুপচি দিয়ে অন্ধের মত ঘুরলাম। এর মাঝেই মোবাইলে সিনেমাখোর গ্রুপে ঢুকে একটা একটা করে পোস্ট ঘেঁটে পুশকিন ভাইএর নাম্বার নিলাম। রিং দেওয়ার পর উনি জানালেন আড্ডা নাকি ওসমানী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভের পাশে হচ্ছে। আমার কপালে চটি স্যান্ডেলের বাড়ি পড়ল! ওখানে যেতে রিকশা ভাড়া লাগবে ৪০ টাকা, বাসায় ফেরার বাস ভাড়া আর থাকবে না।

আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না, এতদূরে কেন? আশেপাশে হইহল্লায় আমি কি ভুল শুনলাম নাকি? পুশকিন ভাইকে এসএমএস করলাম সঠিক লোকেশনটা কনফারম করতে। নাহ, উনি আর রিপ্লে করেননি। পরে রুশো ভাই জানালেন, সিনেমাখোরদের ফোন রিসিভ করতে করতে উনি পাগল হয়ে গেছিলেন। বিপত্তি ১১ সাইফ মনের মাধুরী মিশিয়ে শপিং করছে। আর আমি বসে আছি পুশকিন ভাইএর রিপ্লের অপেক্ষায়।

হঠাত ঠুশ-ঠাশ! গোলাগুলির শব্দ! কী হল কী হল? ঢাকা কলেজে বন্দুকবাজি! লোকজন স্বাভাবিক আছে, এটা ওদের গা সওয়া মনে হচ্ছে। আর আমি ভাবতে বসলাম, বাড়ি ফিরব তো? ব্লগার আনন্দমেলা জানালেন, ওইদিন নাকি বন্দুকবাজি না, আতশবাজি হয়েছে। ৫০ বর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান ছিল গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে। বিপত্তি ১২ অনেক কষ্টে ঠেলেঠুলে একটা বাসে উঠলাম। বাসের কী যেন সমস্যা, ভেতরে থেকেও পেট্রোলের গন্ধে ফুসফুস ছেঁয়ে গেল।

আর বোনাস পেলাম ইঞ্জিন সমস্যা, একদম পেছনের সিট আর ক্যান্টনমেন্টের কাছে সেই রাম ঝাঁকুনী। বিপত্তি ১৩ বাসায় ফিরে এখন জ্বর বাড়িয়ে ফেলেছি। মশারি টাঙ্গানোর ক্ষ্যামেতা পর্যন্ত নাই। তাও পোস্ট দিচ্ছি, অথচ এটার বদলে আড্ডার ছবি পোস্ট দেওয়ার কথা ছিল। আচ্ছা, অনিয়ন্ত্রিত মস্তিস্কের প্রলাপ লিখছি নাকি? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.