ভুদাই সমিতির সেক্রেটারী হিসেবে কাজ করছি। পার্মানেন্ট প্রেসিডেন্টের পোষ্ট খালি আছে।
সুরমা নদীতে নৌকা ভ্রমণে গিয়ে ছিনতাইকারীদের হাতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) দুই ছাত্র খায়রুল কবীর ও দীপঙ্কর ঘোষ অনিকের নিহত হওয়ার ঘটনায় চরম ক্ষোভ আর অসন্তোষ বিরাজ করছে ক্যাম্পাসে।
এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের দায়সারা ভূমিকা এবং একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও নিহতদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণে চরম ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে উঠেছে শোকাতুর ছাত্রদের আবেগ অনুভূতির বিপরীতে প্রিয় শিক্ষক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ভূমিকা।
জানা গেছে, সহপাঠীদের হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একটি দল সন্ধ্যার পর পর্যন্ত অনশন করছিল। তবে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে তারা অনশন কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করে এবং ক্যাম্পাসের সামনের সড়ক থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে গেছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত হয়নি।
ড. জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে ছাত্রদের ক্ষোভ
এর আগে, ছাত্রদের শান্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশেষ করে উপাচার্য ড. সালেহ উদ্দিন, প্রভাবশালী শিক্ষক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, সিটি মেয়র বদরুদ্দিন আহমেদ কামরান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল জহির চৌধুরী সুফিয়ানের কোনও পদক্ষেপই ছাত্রদের শান্ত করতে পারেনি।
বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বিশ্বদ্যালয়ের প্রক্টর হিমাদ্রী শেখর রায় ও সহাকারী প্রক্টর ফারুক উদ্দীনের সঙ্গে সঙ্গে ড. সালেহ ও ড. জাফর ইকবালের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেয়।
তারা অবিলম্বে প্রক্টর হিমাদ্রী ও সহকারী প্রক্টর ফারুকের পদত্যাগ দাবি করে। এছাড়া ২ ছাত্র হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাশ বন্ধ রাখার দাবিও জানায় তারা।
শাবির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রধান ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে ছাত্রদের স্লোগান দেওয়ার বিষয়ে অনুসন্ধানে একটি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা ২ সহপাঠী নিহত হওয়ার বিষয়টি ড. ইকবালকে সবার আগে জানিয়েছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্র জানান, এ ঘটনায় প্রিয় শিক্ষক যতটা তৎপর হবেন বলে তারা আশা করেছিলেন, তা না হওয়ায় তারা খুব ক্ষুব্ধ হয়।
আন্দোলন নিয়ে দ্বন্দ্ব
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, নিহত ২ ছাত্রের খুনীদের বিচার দাবিতে আন্দোলন ও এর নেতৃত্ব নিয়ে শাবি ছাত্রলীগে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে।
হাফিজ গ্রুপ চাচ্ছে আন্দোলন চালিয়ে যেতে। তবে নাঈম-মঞ্জু গ্রুপের মতে বিশ্ববিদ্যালয় যে আশাস দিয়েছে তা মেনে নিয়ে প্রশাসনকে সময় দেওয়া। এর প্রভাবে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অনেকটা বিভ্রান্ত।
এদিকে, নিহত খায়রুলের জানাযা শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসেই পড়াতে চেয়েছিলেন এবং সে অনুযায়ী শনিবার সন্ধ্যায় জানাযা পড়ানোর প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু খায়রুলের পরিবার তাতে সম্মত না হওয়ায় ময়না তদন্তের পর সন্ধ্যার দিকে পুলিশ প্রশাসন তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।
জানা গেছে, স্বজনরা খায়রুল ও অনিকের লাশ নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন।
আহাজারির বিপরীতে লাশের সামনে শিক্ষকের ধূমপান!
অপরদিকে, শোকবিহ্বল শিক্ষার্থীরা যখন নিহত সহপাঠীদের জন্য আহাজারি করছিলেন, তখন সহকারী প্রক্টর ফারুক নিহত শিক্ষার্থীর লাশের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছিলেন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
এদিকে, বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রক্টর হিমাদ্রী শেখর রায় ও সহকারী প্রক্টর ফারুক উদ্দীনের পদত্যাগ দবি করেছেন। একই সাথে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা লাশের সামনে সিগারেট ধরানোর জন্য সহকারী প্রক্টর ফারুক উদ্দীনকে গণমাধ্যম ও শিক্ষার্থীদের সামনে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন।
এনিয়ে শনিবার সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। শিক্ষার্থীরা হত্যাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করে। তারা ক্যাম্পাসের মূল ফটকে টায়ার জ্বালিয়ে সারাদিন বিক্ষোভ করে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের মদিনা মার্কেট থেকে নিয়ে তেমুখী বাইপাস পর্যন্ত এলাকা দখল করে রাখে। এ কারণে এ রুটে চলাচলকারী যানবাহন ঘুরে বিকল্প পথে চলাচল করেছে ওই সময় পর্যন্ত।
রাতের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাবে
পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে সিলেট মেট্রাপলিটন পুলিশ কমিশনারে অমূল্য ভূষণ বড়ুয়া বাংলানিউজকে জানান, পুলিশ এই জোড়া খুনের ক্লু বের করার চেষ্টা করছে।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতের মধ্যে এ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাবে।
এছাড়া, মহানগর পুলিশের ডিসি (নর্থ) এজাজ আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, পুলিশ ঘটনা জানার পর থেকে সেখানে তল্লাশি চালিয়েছে। সারারাত জালালাবাদ থানা পুলিশ সেখানে তল্লাশি চালায়।
ঘটনা
প্রসঙ্গত, গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন নৌভ্রমণ শেষে শাবির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও পলিমার সায়েন্স বিভাগের ৫ ছাত্র ও ৩ ছাত্রী সন্ধ্যারাতে শহরতলীর বাদাঘাট এলাকায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে।
জানা গেছে, অপর একটি নৌকায় থাকা ছিনতাইকারীরা নদীতেই তাদের ধাওয়া করে। পরে বাদাঘাট এলাকায় এসে ৫/৬জনের ওই ছিনতাইকারী দলটি তাদেরকে মারধর ও হেনস্থা করে।
এসময় দুর্বৃত্তরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে খায়রুল ও অনিক বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা তাদের দু’জনকে মারধর করে সুরমা নদীতে ফেলে দেয়। এসময় বাকি শিক্ষার্থীরা কোনোমতে পালিয়ে প্রাণ বাঁচায় বলে জানা গেছে।
এরপর থেকে খায়রুল ও অনিক নিখোঁজ ছিলেন।
পরদিন শনিবার সকাল ৮টার দিকে খায়রুলের ও সাড়ে ১০টার দিকে অনিকের লাশ উদ্ধার করা হয়। তারা দু’জনই শাবিপ্রবি’র কেমিক্যাল ইঞ্জনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের ২য় বর্সের ২য় সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সৈকত নামে নৌকার মাঝি ও ২ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। তবে বাকি দুই দুর্বৃত্তের নাম জনা যায়নি। পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনায় জড়িত আরও ৩ দুর্বৃত্তের নাম-পরিচয় তারা জানতে পেরেছে।
তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এ ঘটনায় ভিসি ড. সালেহ উদ্দিন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
খায়রুলের বাড়ি ঢাকার বাসাবোতে। তিনি শাবি ক্যাম্পাসের পাশেই ১/সি জালালি অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন।
অপরদিকে, অনিকের বাড়ি রংপুরের সেনপাড়ায়।
তিনি সিলেটের পাঠানটুলির ফুলপরী মেসে থাকতেন।
সুত্র- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।