আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুরত্ব যতই হোক, কাছে থাকুন...হাহাহা !

ইদানিং রাস্তায় যেই জিনিষটা আমাকে খুব আরামের একটি ঘুমের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে, তা হল-ট্রাফিক জ্যাম ! আমি বাই রোড জার্নিগুলতে সহজে ঘুমাতে পারিনা আর ঘুমালেও একটু পরে পরে ঘুম ভাঙ্গে- না হয় ঘুম না হয় বিশ্রাম। কিন্তু ঢাকার রাস্তায় এই জ্যামের কারনে গাড়ি জোরে চলতেও পারে না-নিশ্চিন্তে ঘুম দিয়ে দেই। অনেক খুঁজে খুঁজে আমার বাসা থেকে গুলশান যাওয়ার বেস্ট অপশন বের করেছি, বাই বাস। সকাল সকাল ফার্মগেট গিয়ে প্রায় ফাঁকা একটা বাসে উঠে বসে পড়ি-গুলশান পৌঁছাতে পৌঁছাতে একটা আরামের ঘুম, আবার ফেরার পথে এক ই ব্যবস্থা... এই কয়েকদিনের এইরকম কিছু অভিজ্ঞতা নিয়ে আমার এই পোস্ট- বাসের ব্যবস্থা যদিও সিটিং সার্ভিস বলে চালানো হয়, তার পর ও লোক বেশি থাকলে দাঁড়ানো প্রচুর লোক নেয়া হয় আর এটাই নাকি নিয়ম(সিটিং এর নামে চিটিং আরকি!)। এই অবস্থা নাকি আরো ভয়াবহ হয় পিক টাইমে ! মানে তখন মানুষ পারলে কান্ধের উপর উঠে থাকে...তারপর ও নাকি আরো লোক তোলা হতে থাকে (আল্লাহ আমাদের, আমাদের এই ভগ্ন-মৃতপ্রায় বাসগুলোকে হেফাযত করুন ! আমেন )।

এমন ভাগ্য আমার অবশ্য হয় নাই কিন্তু কাছাকাছি একটা হয়েছে গত বিশ্ব ইজতেমার দিনে। কোথাও বাস নাই...কি বিপদের কথা ! না আছে সিএনজি, না ক্যাব...আমি ত হতাশ-যখন দেখি চারপাশে শুধুই বাতাস ! অনেক প্রতীক্ষার পরে দেখলাম একটা বাস আসছে-প্রায় লাফ দিয়ে উঠে পরার পরে দেখি সবাই ঘুরে ঘুরে আমাকে দেখছে ! বিষয়টা কি?! পরে বুঝলাম বাসটা আসলে সরকারী কর্মচারীবাহী বাস ! আমি মাঝখানে স্লো অবস্থায় লম্ফ দিয়ে উঠে পড়েছি বলে আমাকে নামিয়েও দিতে পারছে না ! কি আর করা? আবার সামনে সিগ্নালে নেমে পরতে হল। অবশেষে পেলাম তার (বাসের!)দেখা... উস্তম-কুস্তম ভীড় ! ভাগ্য ভাল আমি এমন জায়গায় উঠে গেলাম যে খুব সুন্দর একটি সিট ও দখল করতে পারলাম। তারপরে শুরু হল কেয়ামতের আলামত ! মানুষ শুধুই উঠে - কেউ ই আর নামে না... শুনতে পেলাম অদ্ভুত অদ্ভুত সব ডায়লোগ- "ভাই আপনি আমার জামা ধরে টান দেন ক্যান?"-কেউ একজন প্রশ্ন করে রেগেমেগে। "ভাই, কি করুম ধরার কিছু নাই-তাই আপনার জামা ধইরা ঝুইলা আছি..." উত্তর ও আসে।

"কি ব্যাপার ভাই, আমার হাত আপনি খামচাইতেসেন ক্যান?"-"সরি ভাই, ভীড়ের মধ্যে হাত চুল্কাইতে গিয়া আপনার হাতে..."। "অই মিয়া! আমি নামব, নামতে দেন"-"ক্যামনে নামবেন?পরের সিগ্নালে নামেন। "--এই হল অবস্থা। ঢাকার তখন শীতের সুতীব্র কামড় থাকলেও বাসের সবাই কম-বেশী ঘামাঘামিতে ছিল...কেউ কেউ আবার বাঁচার জন্য জানালা খুলেও রেখেছে... এর মাঝে শুরু হল ঢাকার বিখ্যাত জ্যাম ! কেউ কেউ সরকারের, কেউ কেউ বড়লোকের, কেউ কেউ মাল্টি ন্যাশ্নাল কোম্পানীগুলোর গুষ্ঠি উদ্ধার করতে লাগলো। আমি এর মাঝে কখন ঘুমিয়ে পরেছি-জানি না।

ঘুম যখন ভাঙ্গলো তখন আমি ফার্মগেট পার হয়ে বাংলামোটর সিগনালে, বাস প্রায় পুরোটাই খালি কারণ সব যাত্রী(বাসের সবাই আমাকে শব! ভেবে নিয়েছে নাকি?!) ফার্মগেট এই নেমে গেছে... বাংলা ছবির "হিরু" স্টাইলে লাফ দিয়ে নামলাম ! আবারো দেখি সবাই আমাকে ঘুরে ঘুরে দেখছে...কি বিপদে পড়লাম! এখন আবার কি করলাম? পাশ দিয়ে যাবার সময় বাসের হেলপার খান চল্লিশেক দাঁত বের করে বলে উঠে- " মামা, সিগনাল ত লাল ! এমনেই থামতাম, আপনে লাফ মারলেন হুদাই..." বুঝলাম, আমার এখনও বাসের যাত্রী হয়ার অনেক বাকি-শেখার আছে অনেক কিছু। কিন্তু মনে মনে একটা জিনিষ বার বার মনে হচ্ছিল- দূরত্ব যতই হোক, বাসে সবাই যেভাবে চাপাচাপি করে ভাঁজে ভাঁজে এঁটে থাকে-তারা কাছে থাকতে বাধ্য !!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।