অরুণালোক শ্রমিক নির্ভর শিল্প ব্যবস্থায় উন্নতি নির্ভর করে একজন শ্রমিক তার কর্মঘণ্টার কতটুকু সময় সে কাজ করলো। আন্তর্জাতিক শ্রমনীতি অনুযায়ী একজন শ্রমিক সেক্ষেত্রে দৈনিক আটঘণ্টা পরিশ্রম করবে। এরপর সে যদি অতিরিক্ত সময় কাজ করে তবে তার পারিশ্রমিকও অতিরিক্ত পাবে। একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিকভাবে যেখানে আটঘণ্টা কাজ হওয়ার কথা, সেখানে বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে চারঘণ্টারও কম সময় কাজ করা যাচ্ছে। বাকী সময় পুষিয়ে নেবার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিকদের বাড়তি সময়েও কাজে ধরে রাখতে হচ্ছে।
এতে একটি পণ্যের উৎপাদন খরচ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশ্য যেসব প্রতিষ্ঠানে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে, সেগুলোর কথা ভিন্ন। কিন্তু এটাও ভাবনার বিষয় যে, বাংলাদেশে ক’টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে? আর বাকিগুলো?
শ্রমিকের কর্মঘণ্টা নিয়ে নয় বরং আজকের আলোচনার বিষয় বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশের শিল্প এখন প্রায় পুরোটাই বিদ্যুত নির্ভর। যে দেশের বৈদ্যুতিক সুবিধা যত বেশি, সে দেশ তত বেশি উৎপাদন করবে।
আর উৎপাদন বেশি হওয়া মানে রপ্তানী আয় বেশি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে বিদ্যুতের এখন যে অবস্থা তাতে উৎপাদন হার কোথায় নেমে গেছে, তা ব্যাখ্যা করে বুঝানোর দরকার পড়ে না। বিষয়টি কমবেশি সবাই অনুমান করতে পারেন।
বৈদ্যুতিক সমস্যার কারণে নাগরিক জীবন আজ মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত। বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করছে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন।
তাই বিদ্যুতের সমস্যার কারণে পানির অভাব ঘটবে এটা খুবই স্বাভাবিক। এ দু’টির সমস্যা মিটে গেলে ঢাকাবাসির মতো সুখি আর কোন নগরের অধিবাসিরা হতো না। সারা দেশের বাকী অধিবাসির বিবরণ দেওয়ার চাইতে চুপ থাকাই ভাল।
কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। একদিকে যেমন পর্যাপ্ত পানি প্রবাহের অভাবে বাংলাদেশে একমাত্র জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের উৎপাদন কমে গেছে, অন্যদিকে জ্বালানী ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে যে কয়টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে তাতে পর্যাপ্ত জ্বালানী সরবরাহ দেওয়া যাচ্ছে না, তাই সেগুলোরও উৎপাদন কমে গিয়ে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নাজুক আকার ধারণ করেছে।
নাগরিক জীবনে পুরোটা না হলেও খানিকটা স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সরকার রমজান মাসে সিএনজি স্টেশনগুলোতে ছয় ঘণ্টা (বিকেল তিনটে থেকে রাত নয়টা) বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এখনও পর্যন্ত বলবৎ থাকা সরকারি এ সিদ্ধান্ত তুলে না নিলে পাম্প মালিকগণ আগামী নভেম্বরে ধর্মঘটে যাওয়ার চিন্তা করছেন। বিষয়টি ভাবনারই বটে। অথচ প্রতিদিনই বিদ্যুৎ ব্যবহারের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, তাতে বিদ্যুতের যোগান দেওয়া সত্যিই কঠিন হয়ে গেছে। তাহলে উপায়? সে উপায়টাই খুঁজে বার করার সময় এসে গেছে।
সৌরশক্তিকে ঠিকমতো কাজে লাগানো দরকার। উন্নত বিশ্বে সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে তারা ক্রমশঃ উন্নত থেকে উন্নতর জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। যেক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশিরা অনেক পিছিয়ে আছি। আশার কথা, অতি অল্প পরিমাণে হলেও বাংলাদেশে সৌর শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তি হিসেবে রূপান্তর করে খুব সফলভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। বেসরকারিভাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সৌর বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।
কিন্তু যেটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এটি খুব ব্যয়বহুল হওয়ায়, এর সুবিধা বাংলাদেশের সব শ্রেণীর জনগণ পাচ্ছে না। সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার সার্বজনীন করতে হলে বেসরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যাপক সরকারী উদ্যোগ দরকার। তাহলে দেশ ও জাতি দারুণ উপকৃত হবে। বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন যেভাবে বাড়ছে, সরকার দায়িত্ব নিয়ে সৌরবিদ্যুৎ সেক্টরেও অন্যান্য শিল্পের মতো বিনিযোগকারী জোগাড় করে এটিকে সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।
কেননা, সৌরবিদ্যুৎ এখন সময়ের দাবী। দেশ ও জাতির কল্যাণের স্বার্থে সরকার এ বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন।
প্রকৃতির অফুরন্ত শক্তির ভাণ্ডার সূর্য। প্রতিদিনই নিয়ম মাফিক এটি আলো দেয়, তাপ দেয় আর কানে কানে বলে যায়, ‘তোরা নে না, আমার তাপ-আলো, যে যতোটা পারিস। কাজে লাগানোর চেষ্টা কর আমার শক্তিকে’।
অথচ প্রযুক্তিগত কারণে আমরা পিছিয়ে আছি। যাঁদের কাছে প্রযুক্তি, প্রয়োজনীয় উপকরণ আছে, তাঁরা যদি এটিকে শুধুমাত্র ব্যবসায়ীক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে দেশের সর্বস্তরের মানুষের স্বার্থে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুবিধাটা সার্বজনীন করে দেন, তবে জাতি হিসেবে বাংলাদেশিরাও উৎপাদন ও জাতীয় অগ্রগতিতে পিছিয়ে থাকবে না।
পরিচিতি
লেখক, কবি ও সাংবাদিক
ঠিকানা ঃ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক
পাক্ষিক তৃতীয় বাংলা
ক ৫৪/১, বারিধারা নর্থ (নদ্দা), গুলশান, ঢাকা- ১২১২
বারিধারা, নদ্দা, ঢাকা
মোবাইল ঃ ০১১৯১১৫৬৮৭৬
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।