আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক নয়-সন্তু লারমা

বৃষ্টি যেরকম আসতে আসতে ফিরে যায়..তেমনি বৃষ্টির মতো আমিও ফিরেছি বহুবার... ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাকে আমরা কোনভাবেই স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলতে পারিনা। ’ পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে রাঙামাটিতে এক সাক্ষাতকারে এই কথা বলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। তিনি বলেন-চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে ১৪ বছর আগে, চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই তখনকার সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহন করেছিলো,যে কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন,জেলা পরিষদ আইন পাশ হয়েছে,গেজেট হয়েছে এবং তার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক অবস্থার উন্নয়নে তৎকালীন সরকার কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলো। চুক্তির বাস্তবায়ন কতটা হয়েছে বা হয়নি সেই ব্যাপারে আমরা আগামী ২ ডিসেম্বররের আগে পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করতে যাচ্ছি। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন কার্যকর করার জন্য যে আইনী বিষয় আছে তা কার্যকর করতে কোন সরকারই উদ্যোগ নেয়নি এবং পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর কাছে যে ৩৩ টি বিষয় হস্তান্তর করার কথা তার বেশিরভাগই এখনো হয়নি।

বিশেষ করে ১৯৯৮ সালে জেলা পরিষদ আইন পাশ করার পর সেই সময় সরকার প্রায় তিনবছর সময় পেলেও একটি বিভাগও জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত করেনি,এমনকি একই সরকারের বর্তমানে ক্ষমতায় থাকলেও এই তিন বছরেও কোন বিভাগ তারা হস্তান্তর হয়নি। যা হয়েছে তা এরশাদ সরকারের আমলে বা বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে হয়েছে। সন্তু লারমা অভিযোগ করেন-চুক্তির যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আছে তার অধিকাংশই অবাস্তবায়িত আছে। চুক্তি স্বাক্ষরের অন্যতম পক্ষ ছিলো জনসংহতি সমিতি। তারা যথাসময়ে যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে কিন্তু বর্তমানে যে বিষয়গুলো অবাস্তবায়িত আছে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের।

সরকার যেহেতু বাস্তবায়নে এগিয়ে আসছেনা এবং বাস্তবায়নে আন্তরিক নয় বিধায় চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটা আজ অবধি দেখতে পাচ্ছিনা। ১৪ বছরেও তাই আমরা উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি দেখিনা। সন্তু লারমা আরো বলেন-২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ক্ষমতা ছাড়ার আগে পাহাড়ের ভূমি সমস্যার সমাধানে একটি আইন করেছিলো,যার নাম পার্বত্য চটটগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন। সেই সময় আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদকে পাশ কাটিয়ে সরকার আইনটি পাশ করেছিলো। যে কারণে এই আইনের মধ্যে বেশ কিছু চুক্তিবিরোধাত্মক ধারা বিদ্যমান ছিলো।

এবং পরবর্তীতে বিরোধাত্মক ধারা সমূহ সংশোধনের জন্য লিখিতভাবে সরকারের কাছে দেয়া হয় কিন্তু আজ অবধি আইনটি অসংশোধিত অবস্থায় পড়ে আছে,আমরা জানিনা,এই আইন কবে সংসদে উঠবে। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ করে বলেন-বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনবছর পার হয়ে যাচ্ছে,সরকার মুখে অনেক কিছু বললেও, এই সরকার যেসব কাজ করেছে,তার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি পূনর্গঠন করা হয়েছে,আহ্বায়ক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া,টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান হিসেবে যতীন্দ্রলাল ত্রিপুরা,উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে বীর বাহাদুর এবং ভূমি কমিশনর চেয়ারম্যান হিসেবে খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে ৩৫ টি সেনাক্যাম্প ও কাপ্তাই থেকে সেনা বিগ্রেড সরানো হয়েছে। এর বাইরে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার কোন উদ্যোগ বা কাজ করেছে বলে আমাদের জানা নেই। অথচ সরকার অনেক কথা বলেন।

পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যের সূত্র ধরে তিনি বলেন-পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী যেসব কথা বলেছেন,এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে যেসব দাবী করেছেন তাও সত্য নয়। আমাদের রিপোর্ট দেখলে আপনারা দেখবেন মন্ত্রী সত্যি বলছেন কিনা নাকি মিথ্যার বেসাতি করেছেন। নিজের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করেছেন। জনসংহতি সমিতির সভাপতি বলেন-ভূমি সমস্যা পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম সমস্যা কিন্তু একমাত্র বা প্রধান সমস্যা নয়।

এখানকার প্রধান সমস্যা হচ্ছে প্রশাসনিক সমস্যা বা রাজনৈতিক সমস্যা। মূল সমস্যা হলো জেলা পরিষদ বা আঞ্চলিক পরিষদকে কার্যকর না করা। কার্যকর না করাটাই সমস্যা। এটা কার্যকর না হলে চুক্তির অন্যান্য বিষয়গুলো নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও আঞ্চলিক পরিষদ আইন কার্যকর করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ভূমি বিরোধ অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। কিন্ত এর আইনী সংশোধনের যে প্রস্তাব মন্ত্রনালয়ের আলমারীতে ফেলে রাখা হয়েছে বলে আমাদের জেনেছি। ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনী নিয়ে সৃষ্টি জটিলতার বর্ণণা দিতে গিয়ে তিনি বলেন-পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে একটি সংশোধনী প্রস্তাবনা আকারে ভূমি মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছিলো,কিন্তু ভূমি মন্ত্রনালয় নতুন প্রস্তাব দিলো,এটা চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির কাছে পাঠাতে হবে। অথচ চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির কোন অফিস নাই,কর্মচারী নাই কোন ঠিকানাও নাই। সবকিছু জেনেশুনে ভূমি মন্ত্রনালয় কেনো এই সিদ্ধান্ত নিতে গেলো ? তারা এটি আটকে রেখেছে।

এটা নিয়ে সরকারের পক্ষে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী তা জানা সত্ত্বেওর কথা সরাসরি না বলে ঘুরিয়ে পেছিয়ে কথা বলার মানে কি ? এর মানে সরকারের সদিচ্ছা নেই। হয়তো এখানে অন্য কিছু আছে,যা আমরা জানিনা বা আমাদের জানতে দেয়া হচ্ছেনা। এতোকিছুুর পরও এতোদিন পরে সরকার কেনো ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিতে উদ্যোগ নেয়না ? মন্ত্রী বলেছেন ভূমি সমস্যা প্রধান সমস্যা,তাহলে কেনো তিনি এর সমাধানে উদ্যোগ নিচ্ছেন না ? সন্তু লারমা বলেন-পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধানের জন্য শান্তিচুক্তি হযেছে,এখন চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে এর সমাধান হবেনা,আমরা সমাধান দেখবোনা। চুক্তি বাস্তবায়ন ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। চুক্তি বাস্তবায়নের উপর সমস্ত কিছু নির্ভর করছে।

মন্ত্রী মহোদয় যা দেখছেন বা বলছেন,তা হলো মূল বিষয় আড়াল করে গৌণ বিষয় সামনে নিয়ে এসে সরকারের যে চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিকতা নেই,সদিচ্ছা নেই,সরকার যে প্রতারণা করছে,ভাওতাবাজি করছে,এটাকে আড়াল করার জন্য মন্ত্রী মহোদয়রা,দীপংকর তালুকদার,বীর বাহাদুরের মতো নেতারা এইসব কথা বলার চেষ্টা করছে। কিভাবে তিনি এই ধরণের কথাবার্তা বলতে পারেন ? বাস্তবতাকে অস্বীকার করে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন দাবী করে সন্তু লারমা বলেন- চুক্তি যে আজ স্থবির হয়ে আছে,অবাস্তবায়িত পড়ে আছে,এটা কে না জানে ? স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী জানেন,সবাই জানেন,জেনেও তারা এইসব কথা বলছেন কারণ সরকারের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা আছে,উগ্র জাত্যাভিমান আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল করার যে ষড়যন্ত্র তার ধারাবাহিকতা বাস্তবায়নের জন্য এই সরকারও উদ্যত। এবং আমাদের দীপংকর বাবুদের মতো নেতারা যারা নিজেদের পরিচয় হারিয়ে ফেলেছে তারা এই ধরণের অবান্তর কথা বলতে পারে ! তিনি বলেন-সরকার এবং দীপংকর বাবুরা বলেন-তারা চুক্তি বাস্তবায়ন করতে চান,কিন্তু সন্তু লারমা বা জনসংহতিরা সহযোগতিা করছেননা। এই কথাটা যে কতটা মিথ্যা,ভাঁওতাবাজি,প্রতারণামূলত,এটা যে কারোই অনুভব হবে।

যে সন্তু লারমা বা জনসংহতি জীবনের সবকিছু বিকিয়ে দিয়ে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম করে চুক্তি সাক্ষর করেছে,সেই চুক্তির বাস্তবায়ন তারা চাইবেনা,এটা একজন ছোট্ট শিশুও বিশ্বাস করবেনা। চুক্তিতে যে বিষয়গুলো অবাস্তবায়িত তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব তো সরকারেরই। আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান আরো বলেন- দীপংকর বাবু একটি মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে আছেন। এবং সেটা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়। দায়িত্বটা তার,সর্বাগ্রে তাকেই চুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্বটা নিতে হবে।

আজকে দীপংকর বাবু চুক্তিবিরোধী বলে এই সমস্ত কথা বলতে পারেন,যে কথাগুলোর কোন অর্থ নেই। এই দীপংকর বাবু কাদের সহযোগিতায় বিগত সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আপনারা সবাই জানেন। পার্বত্যাঞ্চলে যারা সশস্ত্র সন্ত্রাস করছে,চুক্তি বাস্তবায়নে বাঁধা সৃষ্টি এবং জনসংহতির নেতৃত্বকে নষ্ট করার জন্য যারা কাজ করছে সেই ইউপিডিএফ এর প্রত্যক্ষ সাহায্যে সশস্ত্র সন্ত্রাস করে দীপংকর বাবু এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আজ তাই তিনি তাদের পক্ষে কথা বলেন। পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারের বক্তব্য খন্ডন করতে গিয়ে সন্তু লারমা বলেন-ইউপিডিএফ এর পক্ষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে যা বলেছেন, তার এই যে কথা, কেনো কি উদ্দেশ্যে, কেনো বলেছেন তা কারো অজানা থাকতে পারেনা।

তিনি ইউপিডিএফ দ্বারা সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন,জনগণের ভোটে নয়। তিন পার্বত্য চট্টগ্রামের সšা¿সী সংগঠন ইউপিডিএফ দ্বারা নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি তো ইউপিডিএফ এর পক্ষে কথা বলবেনই। যে কথা তিনি বলেছেন তা একজন মন্ত্রীর কথা হতে পারেনা,ইউপিডিএফ দ্বারা নির্বাচিত দীপংকর তালুকদারের কথা হতে পারে। তিনি তাদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। ২০০১ সালে যে বিদেশী অপহরণ হয়েছিলো সেখানে দীপংকর চাঁদাবাজি করে নাই ? যে কোটি কোটি টাকা দিতে হয়েছিলো বিদেশীদের উদ্ধারে তার কতভাগ তিনি পেয়েছেন তার উত্তর কি তিনি দিতে পারবেন ? কত টাকা তিনি নিয়েছেন, তার ভাগে কত পড়েছে আমরাতো জানি ।

আমরা কি জানিনা,কারা সেই টাকার ভাগিদার ছিলো ? আজকে দীপংকর বাবুরাই চাঁদাবাজি করতেছে। সন্তু লারমারা চাঁদাবজি করেনা,তারা এর বিরুদ্ধে লড়াই করতেছে। আজকে সরকার যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানতে দলীয়করণ করেছে,জেলা পরিষদ দীপংকর বাবুর অঙ্গুলি হেলনে পরিচালিত হচ্ছে,নিয়োগে যে বাণিজ্য হচ্ছে ,সম্প্রতি যে ২৬৩ জন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে সেখানে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়েছে। এখান থেকে দীপংকর বড় ভাগ পেয়েছে। তাহলে চাঁদাবাজি করে কে ? চাঁদাবাজি সন্তু লারমা করেনা,চাঁদাবাজি করে দীপংকর এবং তার সাথে সহযোগিতা করে যারা,তারা।

এই বিষয়গুলো আড়াল করার জন্য দীপংকর বাবু নিজের দোষ অন্যের গাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। জনসংহতি সমিতির কোন সশস্ত্র গ্রুপ নেই দাবী করে তিনি আরো বলেন-জেএসএস সশস্ত্র সন্ত্রাস করছেনা। জেএসএস এর হাতে কোন অস্ত্র নেই। আমাদের হাতে অস্ত্র নেই,থাকার কথাও না। চুক্তি সাক্ষরের পরপরই ইউপিডিএফ এর জন্ম দেয়া হয়েছে।

জনসংহতির নেতৃত্বকে ধ্বংস করার জন্য এবং চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা-এই দুটি মূল উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের জন্ম। সরকার তথা শাসকগোষ্ঠীর বিশেষ মহলের সহযোগিতায়। ইউপিডিএফ প্রসঙ্গে সন্তু লারমা বলেন-খাগড়াছড়িতে চুক্তি সাক্ষরের সময়,সারাবিশ্বের সামনে, মন্ত্রী পরিষদসহ সবার সমানে তারা চুক্তির বিরোধীতা করে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেছে,ব্যনার দেখিয়েছে,কালো চুক্তি মানিনা বলেছে। এখন তারা আবার বলে, তারা নাকি চুক্তি মানে,চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে চায়। কিন্তু সেদিনতো তারা চুক্তি মানে নাই।

সবার সামনে তারা চুক্তির বিরোধীতা করা সত্বেও তাদের কোন শাস্তি দেয়া হয় নাই,এমনকি তাদের গ্রেফতারও করা হয় নাই। কেনো করা হয় নাই ?? করা হয় নাই এই কারণে,এই দীপংকর বাবুরা জড়িত ছিলেন বলে। তারাই এই ইউপিডিএফকে আশ্রয় প্রশয় দিয়ে তাদের শক্তি বৃদ্ধি এবং ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাতে সহায়তা দিয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়ন যেনো এগিয়ে যেতে না পারে সেই জন্য এই ইউপিডিএফ । তিনি বলেন-ইউপিডিএফ এর ১৪ বছরের যে সন্ত্রাস,প্রথমে ছিলো কিছু কাগজপত্র লেখালেখি,তারপর নিলো লাঠি,তারপর চাইনিজ কুড়াল,তারপর পাইপগান তারপর বিশেষ হাতিয়ার।

এগুলো হয়েছে এই দীপংকর বাবু আর সরকারের বিশেষ মহলের সহযোগিতায়। ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র সন্ত্রাাসের কারণে পার্বত্যাঞ্চল অশান্ত অবস্থা,নিরাপত্তাহীনতায়। এখানে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি। এখানে শত শত মানুষকে জিম্মি করে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তাই ইউপিডিএফ এর হাতে নিপিড়ীত মানুষ সংগঠনিত হয়েছে এবং ইউপিডিএফ বিরোধী একটি সশস্ত্র গ্রুপ গড়ে উঠেছে।

আত্মরক্ষার জন্য, নিজস্ব প্রতিরক্ষার জন্য যে গ্রুপটি গড়ে উঠেছে তারা চুক্তির স্বপক্ষের,চুক্তির বাস্তবায়ন চায় এবং একটা নিরাপদ জীবন পেতে চায়। তারাই ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র সন্ত্রাসের বিপক্ষে অস্ত্র ধরেছে। এবং আজকের বিভিন্ন স্থানে যে সংঘাত চলছে তা হচ্ছে,ইউপিডিএফ এর বিরুদ্ধে যারা আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র ধরেছে তাদের মধ্যে,এটা জেএসএস নয়। জেএসএস এখনো সেই পথে যায় নাই। জেএসএস এখনো চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের কাছে কাকুতি মিনতি করছে, পায়ে ধরছে,কিন্তু ১৪ বছরে কোন সরকার এগিয়ে আসে নাই।

তারা মনে করছে জনসংহতি সমিতি খুবই দূর্বল,নিঃশেষ হয়ে গেছে। ওয়ান এলেভেন এর ফখরুদ্দিন সরকারে আমলে কিছুসংখ্যক জনসংহতির নেতা আদর্শচ্যুত হয়েছে, রূপায়ন বাবু,পেলে বাবুরা সরকারের বিশেষ মহলের সাথে আঁতাত করে দল থেকে বেরিয়ে গেছে। আমরা নিয়মাতান্ত্রিকভাবে গনতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছি। চুক্তি করেছি বলেই আমাদের দাবী দাওয়া ,কথা বার্তা বেশি হবে। কিন্তু ইউপিডিএফকে আ¤্রয় প্রশয় দেয়া ঠিক হবেনা।

ইউপিডিএফ এর জন্মই হয়েছে একটা হীন উদ্দেশ্য নিয়ে। যারা জন্ম দিয়েছে তারাও হীন উদ্দেম্যে জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন-পাহাড়ের মানুষের অধিকার নিয়ে যে ষড়যন্ত্র চলছে,অমুসলিম অধ্যুষিত এই এলাকাকে মুসলিম অধ্যূষিত অঞ্চলে পরিণত করার ষড়যন্ত্র চলছে,সেই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ইউপিডিএফ এর জন্ম। ইউপিডিএফ এর সম্পর্কে সবকিচু জেলেও সরকার তাদের লালন পালন করছে। তাদের অত্যাচারে,তাদের বিরুদ্ধে কিছু মানুষ অস্ত্র ধরেছে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য,জীবন বাঁচানোর জন্য।

সেটাকে আপনার ইউপিডিএফ এর সাথে জেএসএস এর সংঘাত বলতে পারেননা। আমি দেখি মিডিয়াতে তাই লেখা হয়,দেখানো হয়। কিন্তু এটা ঠিক নয়। এটা আপনারা কেনো লেখেন আমি জানিনা। জেএসএস এখনো ওই পথে যায় নাই।

তাই আমরা ইউপিডিএফ কে নিষিদ্ধ করার দাবী করছি। কিন্তু আমাদের দীপংকর বাবু হুমকী দিচ্ছেন যে,জেএসএস কে নিষিদ্ধ করবেন । বাপের বেটা হলে আপনি করে দেখান,জনসংহতিকে আপনি নিষিদ্ধ করতে পারেন। তখন দেখা যাবে,আপনি দীপংকর বাবু কোথায় থাকেন,কোথায় যান। ভূমি কমিশন সংশোধনের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে’পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন- ওনিতো দিন রাত মিথ্যা কথা বলেন।

ওনি মিথ্যার বোঝা নিয়ে এখানে সেখানে নানা কথা বলেন। ওনি একেক জায়গায় একেক কথা বলেন। ওনি কাউখালিতে এককথা,বাঘাইছড়িতে আরেক কথা,ঢাকায় গিয়ে অন্যকথা বলেন। ওনি কোন কথাটা ঠিক বলেন ? তার কোন দায়দায়িত্ব নাই এখানে। আমাদের মাননীয় মন্ত্রী একজন ঠগবাজ ব্যক্তি,যাকে আমরা অনেক আগেই জাতীয় কুলাংগার হিসেবে ঘোষনা দিয়েছি,তাকে কেনো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এতো আদর যতœ করে মন্ত্রনালয়ে পাঠান এটা আমরা বুঝিনা।

আমাদের চুক্তির কারণে সৃষ্ট আমাদের মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব নিয়ে তিনি চুক্তিবিরোধী অবস্থান নিয়ে আছেন। এই মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব এবং কাজ দেখেই বোঝা যায় এই সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক নয়। এই সরকার চায় চুক্তি নামে থাকুক,এটা যেনো কাজে পরিণত না হয়। বাঙালীদের সংগঠন সমঅধিকার আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন-চুক্তি বাস্তবায়নে আমি সমঅধিকারকে বড় বাধা মনে করিনা। এটা সরকারের সৃষ্টি।

এখানে স্মরণ করতে হয় আমাদের স্বনামধন্য দুর্নীতির মাধ্যমে নির্বাচিত এমপি ওয়াদুদ ভূইয়াকে। ওনাকে শিখন্ডি হিসেবে দাঁড় করিয়ে এটা করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে যে ইসলাম অধ্যুষিত এলাকা করার প্রক্রিয়া এরই ধারাবাহিকতা হলো এই সংগঠন। ইউপিডিএফ এর পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবী প্রসঙ্গে তিনি বলেন-পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসান বলে কোন ব্যবস্থা সারা পৃথিবীতে নাই। এটা একটি অর্থহীন শব্দ।

স্বায়ত্ত্বশাসনের মাত্রা ও পরিধি ভিন্ন হতে পারে। ভারত সহ বিভিন্ন দেশে স্বায়ত্বশাসনের বিভিন্ন রূপ আছে কিন্তু পূর্ণস্বায়ত্ত্বশাসন বলে কিছু নাই। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এই স্বায়ত্ত্বশাসনের এই মাত্রা ও ভিন্ন ভিন্ন। পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন নামে কোন শব্দ কোথাও নাই,এটা ইউপিডিএফ এর আবিষ্কার,এটা মিনিংলেস(অর্থহীন)। জনসংহতির সাথে ইউপিডিএফ এর সমঝোতা চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন-তাদের সাথে আমাদের কখনই কোন চুক্তি হয় নাই,তাদের সাথে বৈঠক হয়েছে অনেকবার।

তারা সন্ত্রাসী হলেও আমরা এই এলাকার শান্তির স্বার্থে ধৈর্য্য ধরে, দুরদর্শী হয়ে আমরা চেষ্টা করেছি সমঝোতার। আমরা তাদের একটা কথা বলেছি-তোমরা অস্ত্র ত্যাগ করো, তোমাদের অস্ত্র কাকে জমা দিবা তা আমরা জানিনা,সে অস্ত্র জমা দিয়ে তোমরা দশটা রাজনৈতিক দল করো,এতে আমাদের কোন আপত্তি নাই। তবে আমাদের দলে সুযোগ নাই। আমাদের দলে আসতে গেলে তার একটা প্রক্রিয়া আছে,পদ্ধতি আছে। ইচ্ছে করলেই জনসংহতির সদস্য হওয়া যায়না।

তিনি আরো বলেন- এরা সন্ত্রাসী,এদের সাথে কিসের চুক্তি হবে। এদের সাথে আমরা বৈঠক করেছি,আমরা বলেছি,এখনো বলছি,এই মুহূর্তে তারা যদি অস্ত্র ত্যাগ করে এসে বলে আমাদের কাছে আর অস্ত্র নাই,আমরা আর কাউকে খুন করবেনা,পঙ্গু করবনা,তাহলে ঐক্য হতে পারে। এটাও আমরা আহ্বান করেছিলাম,তারা সেটা মানে নাই। সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির চলমান দাবী প্রসঙ্গে তিনি বলেন-আদিবাসী কোন জাতিবাচক শব্দ নয়। যে ৫৪ টা জাতি এই দেশে বাস করি।

আমরা সবাই মিলে চাই একটি সম্মিলিত পরিচিতি থাকবে,সেটাই আমাদের দাবী। আমরা সংবিধান সংশোধন কমিটিকে বলেছি,আমাদের স্ব স্ব জাতিগত পরিচয় দিয়েই আমাদেরকে সংবিধানে স্বীকৃতি দিতে হবে। আমরা সেই জন্য পঞ্চোদশ সংশোধনীতে আমাদের যে বাঙালী করা হয়েছে আমরা এটার বিরোধীতা করি এবং এখনো বলি এটা বাতিল করতে হবে। আদিবাসী একটি সমষ্টিগত পরিচয় এটা জাতিগত পরিচয় নয়। এখানে ইউপিডিএফ কি বলল বা কি করল এটা আমাদের ব্যাপার না।

চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সাথে দূরত্ব বাড়ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন-আওয়ামী লীগের সাথে দূরত্ব বাড়ছে কারণ চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে তাদের নেতিবাচক ভূমিকা। জুম্ম আওয়ামী লীগ নেতারা চুক্তিবিরোধী ভূমিকা রাখছেন। ফলে দুইদল যে যার রাজনীতি করলেও চুক্তি বাস্তবায়নে নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা আর সরকারে যেহেতু তারা,তাই চুক্তি বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ স্বাভাবিক ভূমিকা রাখছেনা বলে দুরত্ব ধীরে ধীরে বাড়ছে এটা বলতেই পারেন। তবে,আওয়ামী লীগ আর জনসংহতির আদর্শ কখনোই কাছাকাছি ছিলোনা। চুক্তির বিষয় নিয়ে আমাদের সম্প্রীতি হয়েছিলো,এখন চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা হওয়ায়,দূরত্বতো একটু বাড়বেই।

পার্বত্য চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ বিশেষ করে জুম্মদের মধ্যে যার আওয়ামী লীগ করে জুম্ম আওয়ামী লীগ তারাতো আরো বেশি খারাপ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন- বান্দরবানের নেতা প্রসন্ন বাবু,্রাঙামাটিতে দীপংকর বাবু নেতা,খাগড়াছড়িতে যতীন বাবু নেতা,আজকে তারা কি করছে । চোখের সামনে তারা চুক্তির বিরোধীতা করছে। তিন জেলা পরিষদও চুক্তি বিরোধীতায় আছে। আমাদের রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানতো আঞ্চলিক পরিষদের পাশ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করেন,কিন্তু তিনি আঞ্চলিক পরিষদ কোথায়, ঠিকানা খুঁজে পাননা। পাহাড়ে চাঁদাবজি প্রসঙ্গে তিনি বলেন-পার্বত্য এলাকার চেয়েও ঢাকায় চাঁদাবাজি বেশি হয়।

ঢাকায় একটি ওয়ার্ডে যে চাঁদাবাজি হয়,গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামেও তো তা হয়না। কিন্তু মিডিয়াতে এতো ফলাওভাবে প্রচার করা হয়,মনে হয় পার্বত্যাঞ্চলে হাজার হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়। সন্ত্রাসের কথাও যদি বলা হয়,ঢাকার একটি ওয়ার্ডে সারাবছর যে সন্ত্রাস হয়,আমাদের তিন পার্বত্য জেলা মিলেও সেই পরিমাণ সন্ত্রাস হয়না। শাসকগোষ্ঠীর বিশেষ মহল এগুলো ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করছে আসল কাজটাকে আড়াল করার জন্য। পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন-দীপংকর তালুকদার বিগত তিন বছর ধরে যেসব কথা বলে আসছেন,তার আগাও নাই,গোড়াও নাই।

তিনি কি বলেন তা তিনি নিজেও বোঝেন না বা বোঝার চেষ্টাও করেননা। তিনি যে মন্ত্রী পরিষদে আছেন,সেই মন্ত্রী পরিষদ এবং সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে কোন অবস্থাতেই আন্তরিক নয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.