হ্যাঁ, লাল বাস বলতে আমি আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল বাসকেই বোঝাচ্ছি। এটা এমন একটা বাস, যেটায় উঠলেও মেজাজ খারাপ হয়, আবার বাসায় না এলে আরও রাগ লাগে। আমার বাসা মুগদা হওয়ার কারণেই আমি ‘শ্রাবণ-মুগদাপাড়া’ বাসের নিয়মিত যাত্রী। ফার্স্ট ইয়ারে যখন ভর্তি হই, তখন বাসের শিডিউল বুঝতে বুঝতেই এক মাস সময় লেগে যায়। এই বাস আবার একেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একেক জায়গা থেকে ছাড়ে।
কখনো মলচত্বর বা টিএসসি, আবার কখনো কার্জন হল। বাসে থাকত চরম ভিড়। প্রথম পাঁচ সারির সিট মেয়েদের, শেষের পাঁচ সারির ছেলেদের এবং সিটের ওপরে লেখা থাকত ছাত্রী বা ছাত্র। একদিন বাসে দেখি, ‘ছাত্রী’র ‘ ী’-কার উঠিয়ে ফেলে সেখানে ‘ছাত্র’ লেখা হয়েছে এবং ভাইয়ারা সেখানে বসে রয়েছে। এটা নিয়ে সেদিন বাসে মেয়ে বনাম ছেলে একটা ছোটখাটো ঝগড়া হয়েছিল।
কিন্তু এই বাসের রয়েছে বিভিন্ন সুবিধা। যেমন—বাসে সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে নিজের ব্যাগ যে বসে আছে তার কাছে রাখা যায়, রাস্তায় জ্যাম থাকলেও বসে থাকতে হয় না। কারণ, বাস তখন রং রুট দিয়ে যায়। ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে বাসের মামাদের ভালো খাতির থাকে। তাই বাসকে সিগন্যালে আটকে থাকতেও হয় না।
আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, এই বাসের আছে অনেক পাওয়ার। কেউ বাসকে ধাক্কা দিলে, মামাদের কিছু বললে বা কোনো ছাত্রকে কোনো উল্টাপাল্টা কথা বললে বাসের ভাইয়ারা বীরের মতো এগিয়ে যায় এবং সবকিছু ম্যানেজ করে। বাসের একটি কমিটি থাকে, তারাই বাসের শিডিউল তৈরি করে, বছরে একটা বনভোজনের আয়োজন করে, বাসের কোনো মামা বা ছাত্র অসুস্থ থাকলে টাকা তুলে তাদের সাহায্য করে। সবকিছু মিলিয়ে বাস-ভ্রমণটা খুবই মজার। এভাবে দেখতে দেখতে কীভাবে যে ছয়টি বছর পার হয়ে গেল, সেটা বুঝতেই পারলাম না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।