আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাবি থেকে সিরাজগঞ্জ: ধর্ম, যৌনতা ও আওয়ামী লীগ

দুনিয়াতে শুধু দুই প্রকার মানুষ আছে। একদল ভাল, একদল খারাপ। এর বাইরে আর কোন বিভেদ নাই। শিরোনাম দেখে যারা বুঝবেন তারা আর পরের টুকু হয়তো পড়তে চাইবেন না । যারা বুঝবেন না, তারা শুরুতেই গালাগাল করবেন।

আওয়ামী লীগের সাথে আমি জামায়াতের তুলনা কখনোই করিনা, যেটা সবাই করে থাকে। আমি করি ধর্মের সাথে। ধর্মের অপর নাম অনেক কছুই বলা যায়। সম্প্রতি আমার এক লেখায় আমি বলেছিলাম ধর্ম ও যৌনতার মাঝে পার্থক্য নেই। সেখানে আমি দেখিয়েছিলাম ধর্ম এবং যৌনতার মাঝের সাধারন মিলগুলো।

যদি গণিত কষে সমাধান বের করতে হয় তাহলে ফলাফল অন্যরকম হয়ে যায়, সেটা হলো- 'যৌনতা ও আওয়ামী লীগের মাঝে কোন তফাত নেই'। 'বঙ্গবন্ধু' একটা পদবী। যিনি এই পদবীর মালিক, তিনি আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক ভাষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের স্থপতি। এই মানুষটা এমনিতেই অনেক সম্মানিত। বাংলাদেশের জনগন তাকে ভালভাবেই চেনেন ।

কিন্তু শেখ হাসিনা এবং তার বাবার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দল আওয়ামী লীগ তাকে এমন একটা স্থানে নিয়ে গেছে, যেখানে মানুষ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যায়। শাহবাগের এক শৌচাগারের দরজায় আওয়ামী লীগ প্রকাশিত জাতীয় শোক দিবসের পোস্টার দেখেছিলাম। যাতে বঙ্গবন্ধু গালে হাত দিয়ে চিন্তা করছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় টয়লেটের কোন ঘটনা রটেছিল বলে কখনো শুনিনি ! তাহলে টয়লেটের দরজায় তার কাজ কি ? আমার বোধগম্য হয়নি টয়লেটে এই পোস্টার লাগানোর আসল প্রয়োজনীয়তাটা কি !! একটু অন্য প্রসঙ্গে যায়, ২০০৮ সালে সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায়। শুনলাম, জেল হত্যা দিবস পালন এবং লালন ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদে ৩রা নভেম্বর রাবির উদীচী ও ধূমকেতু নাট্য সংসদ ক্যাম্পাসে ‘মান্দার’ নামে একটি নাটক পরিবেশন করতে যাচ্ছে।

আমি রাজশাহীতেই ছিলাম, নাটকটি দেখতে গেলাম। নাটকের কাহিনী গ্রামের এক জোতদারকে ঘিরে। এই নাটকের একটি চরিত্রের নাম রসুল মিয়া। নাটকে রসুল মিয়া নামের কাজের ছেলেকে তার মনিব জোতদার গালমন্দ করেন। ঘটনার সূত্রপাত এখানেই।

স্থানীয় প্রেসক্লাবের সদস্য সংগ্রামের সংগ্রামী সাংবাদিক বুঝে গেলেন রসুল মিয়াকে গালি দেয়া মানে ‍মহানবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ)-কে গালি দেয়া। তার সেই মনে করা কাহিনী যথারীতি ছাপা হলো জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামে। ছাপা হলো আল বাইয়্যিনাত গোষ্ঠীর মুখপত্র দৈনিক আল ইহসানেও। জেগে উঠলেন ক্যাম্পাসের ধর্মের প্রতি স্পর্শকাতর "ভদ্র ছেলেরা" !! শিবিরের সদস্যরা রাতারাতি গড়ে তুললেন 'সচেতন ছাত্র সমাজ'। শুরু হলো নাট্যকর্মীদের হঠাও আন্দোলন।

বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতি, মিছিল-সমাবেশে উত্তাল হয়ে গেল 'শান্ত ক্যাম্পাস'। নাট্যকর্মী ফারজানাকে শিবিরকর্মীরা ক্লাসরুম থেকে টেনে হিচড়ে মিছিলে আনার চেষ্টা করে। না পেরে, গালাগাল দেয়, পরে শায়েস্তা করবে বলে শাসিয়ে যায়। এরপরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে শিবির কর্মী ও সচেতন ছাত্র সমাজের আহ্বায়ক আবু হানিফ বলে, "যেভাবে তসলিমা নাসরিন ও দাউদ হায়দারকে দেশ ছাড়া করা হয়েছে উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর সকল নাট্যকর্মীকেও সেইভাবে চিরতরে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে। " ধুমকেতু নাট্য সংসদের তৎকালীন আহ্বায়ক রফি আহমেদ চঞ্চল ভাইয়ের কাছ থেকে নাটকের স্ক্রিপ্ট আমি ফটোকপি করে নিয়েছিলাম।

কয়েকবার পড়ে রসুল মিয়া নামের চরিত্রের মাঝে ধর্ম বিষয়ক কোন কিছু পেলাম না। আবু সায়েম ভাই তখন রাবি উদীচীর সাধারণ সম্পাদক। ক্যাম্পাসে ঢোকায় তার জন্য বিপদজনক হয়ে দাড়ায় । শুরু হয় পুলিশ আর গোয়েন্দা বাহিনীর ছড়াছড়ি। কাহিনী ওখানেই শেষ না, নাট্যকর্মীদের মুরতাদ ঘোষনা করে কোতল করার জন্য পুরস্কারের ঘোষনা দেয় আল বাইয়্যিনাত।

রাস্তার দেয়ালগুলো পোষ্টারে ছেয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসগুলোতে নাট্যকর্মীদের ফাসীর দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আরো কিছুদিন কাহিনী চলার পর প্রশাসন ধুমকেতুকে নিষিদ্ধ করে। তারপর শান্ত হন ক্যাম্পাসের 'আলেম-ওলামারা' সাহেবরা। আপনারা এতক্ষন রসুল মিয়া থেকে রাসূল (সা হওয়ার কাহিনী শুনলেন।

গতকাল বুধবার ঠিক একইরকম একটি ঘটনা ঘটেছে, খবরটি এই রকম: "শান্তনুর রচনা এবং মোঃ নোমানের পরিচালনায় নির্মাণাধীন ১০৪ পর্বের ‘ক্যাপসুল ফাইভ হানড্রেড এমজি’ নাটকে টাউট চরিত্রে জাহিদ হাসানের নাম মুজিব রাখায় এবং তা সংবাদপত্রে ছাপা হওয়ার প্রতিবাদে বুধবার সন্ধ্যায় তার বিচারের দাবিতে সিরাজগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সস্পাদক অ্যাডভোকেট কেএম হোসেন আলী হাসান ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মিছিলটি জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বিক্ষোভকারীরা ‘জাহিদের দু’গালে জুতা মারো তালে তালে’ এবং ‘জাহিদের ফাঁসি চাই, দিতে হবে’ ছাড়াও বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেয়। বিক্ষোভকারীরা জোর দাবি জানিয়েছেন নাটকটি যাতে কোনো টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচার না।

কেএম হোসেন আলী হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, 'নাট্য অভিনেতা জাহিদ হাসান মূলত বিএনপি সমর্থক। তাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে হেয় করার জন্যই নাটকে টাউট চরিত্রে মুজিব নামের বিপরীতে তিনি অভিনয় করেছেন। ' তবে জাহিদ হাসান জানান, ‘ক্যাপসুল ফাইভ হান্ড্রেড এমজি নাটকে তিনি টাউট মজিদের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। জাতীয় দৈনিকটি ভুলবশত মজিদের স্থলে মুজিব ছাপিয়েছে। এ কারণেই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

’ তিনি আরও বলেন, ‘নাটকটির কোথাও মুজিব নামে কোনো চরিত্রই নেই'। " রাস্তার চর্মরোগী ফকিরকে টাকা দিলে নেবে, তবে কখনোই তার চিকিৎসার জন্য যদি তাকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করেন, ঐ চর্মরোগী রাজী হবেন না, কারণটা সহজেই অনুমেয়। কালের বিবর্তনে তুর্কি-আফগান-আর্যদের সংমিশ্রনে গড়ে ওঠা সংকর জাত এই বাঙালি জাতির মস্তিস্ক, এখন ঐ চর্মরোগীর চাইতেও অনেক বেশি স্বার্থান্বেসী ও ফ্যানাটিক রুপ ধারন করেছে। আওয়ামী লীগ এই ধরনের মস্তিস্ক তৈরি করতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। আওয়ামী লীগ এখন মুজিবকে ভেজে ভেজে অন্যরকম এক ধর্ম বানাতে চায়।

পচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর এই "আওয়ামী ঈশ্বর"কে বাংলাদেশের ঈশ্বরের আসনে বসাতে চেয়েছেন শেখ হাসিনা। তার ফলের একটা নমুনা হলো, সিরাজগঞ্জের এই ঘটনা। যৌনতা প্রথমে অনুভুতিকে আকর্ষন করে, সেই অনুভূতি পৌছায় মস্তিস্কে। দেহ সাড়া দিতে সময় নেয় আরো অনেকক্ষন। আওয়ামী লীগের এই ফ্যানাটিক মস্তিস্ক ঝেড়ে ফেলার এখনই সময়।

নতুবা বাঙলার শরীরে ছড়িয়ে পড়লে এইডসের মত আরো অনেক মারাত্নক রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাতে সংকর বাঙালি জাতির মৃত্যু শুধু প্রশ্নবিদ্ধ নয়, কলঙ্কিতও হয়ে যাবে। ("রাবি থেকে সিরাজগঞ্জ: ধর্ম, যৌনতা ও আওয়ামী লীগ" লিখেছেন, সিয়াম সারোয়ার জামিল ৩৩) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.