জীবন বদলায়, রূপকথা বদলায় না...... প্রায় একঘন্টা ধরে জ্যামে বসে আছি। রোদের উত্তাপে জ্বলে কয়লা হওয়াই মনে হয় বাকি শুধু। আর কিছুক্ষণ এই জ্যামে বসে থাকলে সেটাও অসম্ভব কিছু হবে না। ফোনটা ভাইব্রেট হচ্ছে। ব্যাগ থেকে বের করে দেখি আম্মু কল দিয়েছে।
“হ্যা বলো। “
“তুই কি বাসে?”
“হুম। কেন?”
“তোর কম্পিউটার না নষ্ট হয়ে গেছে। চলতেছে না। “
“মানে?”
“কম্পিউটার ছাড়লেই কিসের যেন একটা শব্দ হয় আর কি কি সব লেখা উঠে।
শোন”, বলে মোবাইলের স্পিকারটা সিপিইউর কাছে ধরলো। একটা টো...... শব্দ একটানা বেজে চলেছে।
“শুনছিস?”
“হুম। “
“কি হইছে বলতো?”
“সেটা আমি বাসে বসে কিভাবে বলবো?”
“ও আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে যাস।
“ বলে ফোনটা রেখে দেয় আম্মু।
এই এক হয়েছে বিপদ। সিএসই তে পড়ি বলে বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবার ধারনা আমি যেন কম্পিউটারের জাহাজ হয়ে গেছি। কারো পিসিতে কোন প্রবলেম হয়েছে তো ডাক পড়বে আমার। যেন বিনেপয়সার মিস্ত্রি।
না পারি কইতে না পারি সইতে।
যাইহোক ক্লাস শেষ করে বাসায় এসে দেখি বাসার সবাই মুখ কালো করে বসে আছে মনে হয় কি না কি ঘটে গেছে। সবার মুখের এমন অবস্থা দেখে আমি যাই ঘাবড়ে। না জানি কি না কি হয়েছে আমার এতো সাধের জিনিসটার। রুমে এসে তাড়াতাড়ি পিসি অন করে দেখি কী-বোর্ড এরর শো করছে।
অতঃপর কী-বোর্ডের পোর্ট ভালো করে টাইট দিয়েও কোন কাজ হয় না দেখে খুলে ফেলে রাখি। আম্মু এসে বলে, “দু-চারটা থাপ্পড় না দিলে কাজ হবে না। “ বলে কী-বোর্ডকে থাপড়ানো শুরু করে। কিছুক্ষণ থাপড়ানোর পর বলে, “এবার লাগা। দেখিস চলবে।
“ আম্মুর মেকানিকগিরি দেখে আমি হাসতে হাসতে কী-বোর্ডটা লাগিয়ে দেখি পিসি দিব্যি চলছে। আমি তো অবাক আর আম্মু গর্বের হাসি হাসতে থাকে। যাইহোক পিসি ঠিক করে আব্বুকে গিয়ে বলি। আমার কথা শুনে আব্বু “আমার মেয়ে তাহলে সত্যিই ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে“, বলে আমার কপালে একটা চুমু খায়। সত্যি বলতে কি এই ঘটনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
নিজের ভেতর হঠাৎ প্রচন্ড একটা নাড়া খাই। আমি তো জানি কিছুই করিনি আমি তবুও কত অল্পতেই না আব্বু-আম্মু খুশি হয়ে গেল। এত সহজ আব্বু-আম্মুকে খুশি করা!!! অথচ... অজান্তেই চোখদুটো ছলছল করে উঠে আমার। খুশি হয়ে আব্বু চলে যায়।
হঠাৎ আম্মু বলে ওঠে “এই দেখ।
এমনই হয়। কাজ করলাম আমি আর আদর করলো মেয়েকে। “
আমি দুষ্টুমি করে “আব্বু” বলে চিৎকার করে উঠি। আর অমনি আম্মু দৌড়ে এসে আমার মুখ চেপে ধরে।
“কি হয়েছে?” বলে আব্বু এগিয়ে আসতেই “কিছু না”, বলে আমি আর আম্মু হাসতে থাকি আর আব্বু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
এই-ই আমার ঘর - আমার ছোট্ট পৃথিবী, আমার ভালোবাসার পাঠশালা...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।