সময় সন্ধ্যা ৭ টা। চ্যানেল আই অন করলাম খবর দেখব বলে। শিরোনাম দেখাচ্ছে। একটু পরে বিস্তারিত শুরু হবে। এমন সময় আম্মু এসে বলল... তাড়াতাড়ি ‘জি বাংলা’ অন কর।
‘অগ্নিপরীক্ষা’ শুরু হয়ে গেল। আমার মেজাজে অগ্নি সংযোগ করে জি বাংলা বিশ্বব্যাপী তার আগুনের পরীক্ষা শুরু করল যে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে আমাকে... আর আমার মত আগুন ভয় পায় এমন হাজারো দর্শককে। মেজাজটা পুরাই বিলা হইয়া গেল!
সময় ৭.৩০। ঘটনার আবারো পুনরাবৃত্তি। এইবার মনে হয় জোতির্বিদ্যার ক্লাস শুরু হল।
কারন স্ক্রিনে বড় বড় করে লেখা দেখলাম ‘রাশি’। আহা কি সুন্দর গান... ‘রাশি তার নাম... রাশি তার নাম!’ পুরাই সংস্কৃতি!এই উচ্চমার্গের সংস্কৃতি আমাদের দেশের নাট্য নির্মাতারা আজ পর্যন্ত উৎপাদন করতে পারল না... বড়ই আফসুস! যাই হোক আম্মু আর ছোট বোন স্ক্রিনে তাকিয়ে আর আমি হাতের তালুতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে... পুরো ফ্যামিলিপ্যাক ‘রাশি’ গননা শুরু করলাম!
৮.০০ টায় এর ব্যতিক্রম হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি। রিমোর্ট আর আমার হাতে আসে না! রিমোর্ট আর আমার হাতের বিচ্ছেদের বিরহ থাকিয়া থাকিয়া বাজিতে থাকিল! আহা... এইবার ভিলেন কোন মানুষ নয়... নিছক একটা নৌকা... ‘কেয়া পাতার নৌকা’!
৮.৩০ এও যথারীতি ‘কনকাঞ্জলি’। হায় রে... বাংলা ভাষা যে কত সমৃদ্ধ তা এই নাটক না দেখলে বুঝতাম না।
নাটকের নামটাই তো এপিক! এই শব্দের আক্ষরিক ও প্রতীকি অর্থ খুঁজতে খুঁজতেই শুরু হয়ে গেল... লতা পাতার সমাহার ‘ সুবর্ণলতা’। রাত কিন্তু এতক্ষণে ৯ টা বেজে ১ মিনিট!
আহারে... এই একটা নাটক আমি আমার আম্মুকে নিজে রেফার করছিলাম! আশাপূর্নাদেবীর ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’( সুবর্ণলতার মায়ের গল্প) পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তাই মহা উৎসাহে দেখা শুরু করেছিলাম ‘সুবর্ণলতা’। আহারে কি প্রচণ্ডরকম ভুলটাই না করেছিলাম সেদিন! ৫০০ পর্ব অতিক্রম করে আজ এই নাটক আমার কাছে পরিণত হয়েছে ‘বিবর্ণলতা’য়... কিন্তু নাটকের শেষ কই! লতায়-পাতায় জড়িয়ে এটা যে কিসে পরিণত হয়েছে তা শুধু এর একনিষ্ঠ দর্শকরাই বলতে পারবে!
আহারে এতক্ষণ পরীক্ষা দিয়ে... হাতের পায়ের রাশি গুনে... লতাপাতার গুনাগুন জেনে... আমার পাকস্থলী জানান দিল...‘মিয়াসাব... আমারে বঞ্চিত কইরেন না। চক্ষু দুইটারে একটু বিশ্রাম দিয়া আমার দিকে নজর দেন’।
কিন্তু কিসের কি... চক্ষু দুইটা যে বড় বেশি দুষ্টু হয়ে গেল। কারন পর্দায় যে এখন ‘দুষ্টু’।
মেয়েটা যে কেন আমাকে ফেলে রাজার মত এক অকর্মন্যকে ‘সাত পাঁকে বাঁধল’... এই ভাবনাতেই আমি অস্থির। তবে সত্য কথা বলি... এই আধা ঘন্টা (৯.৩০-১০.০০) আমি ‘দুষ্টু’ মেয়ের ‘মিষ্টি’ মুখখানি না দেখিয়া থাকিতে পারি না। রবীন্দ্রনাথ মনে হয় দুষ্টু মেয়েটিকে দেখেই লিখছিলেন ‘মুখপানে চেয়ে দেখি... ভয় হয়...’!
কিন্তু কিসের কি... নাটক জুড়ে শাঁকচুন্নি জা আর নাটুকে শাশুড়ির প্রলাপের ছড়াছড়ি!
ধুর দেখবই না ‘জি বাংলা’।
কিন্তু জি বাংলাও কি কম চালাক। মীর তার আক্কেল দেখিয়ে পর্দায় নিয়ে এল বাংলাদেশের ‘জামিল’কে... শুরু হল মীরাক্কেল। আর কই যায়! দেখতে থাকি জামিলের উন্মুক্ত প্রতিভা... যা সুদূর কলিকাতা অবধি বিস্তৃত! কিন্তু একটু পরেই ভাবতে শুরু করলাম ‘এইটা কি কৌতুকের অনুষ্ঠান না অন্য কিছু! আমার হাসি পায়না কেন? পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে শ্রীলেখার সমস্ত শরীর দুলানো হাসি.... তবে আমার হাসি কই?’ মাঝে মাঝে দুইটা বলদ ( একটা চিকন-লম্বা আর অন্যটা বেটে-কালো) কি যে শুরু করে আমি অনুষ্ঠানের মাঝেই ঘুমিয়ে যাই। এর চেয়েতো আমার সামুর ১৮+ কৌতুক পড়ে আমার ১০০ গুন বেশি হাসি উদ্রেক হয়!
হায় হায়......একি?অনুষ্ঠান তো সব শেষ! তা আমার ভাগটা কই? আমার দেশীয় চ্যানেলের ভাগটা কই? ৭টা ঠেকে ১১টা...... শুধু কি আমার বাসায় এই অবস্থা...?আমার মত প্রায় প্রতিটা বাসায় আজ একই দশা! আমাদের দেশের ১০টার ওপর চ্যানেল আছে... ওগুলোর সবগুলোই কি মানে এত নিম্ন যে দেশীয় চ্যানেল এভাবে বর্জন করতে হবে? আমাদের দেশের কয়টা চ্যানেল ওদের দেশে এভাবে রাজত্ব করতে পারছে? অনেকে বলবেন আমাদের অনুষ্ঠানগুলোর মান অনেক নিম্ন। আমি তাদের বলছি... আরে একবার তো অন্তত প্রবেশাধিকার দিন... তারপর দেখুন না কি করি আমরা! কাপুরুষের দল... সবগুলো চ্যানেল ব্যান করে রেখেছে... পাছে প্রতিযোগিতায় না পারে!
তাই আমাদের মা-বোনদের বলছি... ‘জি বাংলা’...‘স্টার প্লাস’... ‘জি টিভি’... ‘সনি টিভি’ এইসব অন্ধের মত ফলো করা ছাড়ুন।
এইসব আমাদের ভাল কিছু শেখাচ্ছে না... বরং খুব সুক্ষভাবে তাদের সংস্কৃতির বেলেল্লাপনা... নগ্নতা আমাদের সংস্কৃতির মাঝে ইনজেক্ট করছে...যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত নগ্নতার সুড়সুড়ি দেয়া অসংখ্য রমনীয় বিজ্ঞাপন!
আমার কাছে আমার দেশীয় সংস্কৃতিই সেরা... তা মানে সে যতই পিছু হোক না কেন!! আমি কখনো পরাশ্রয়ী হতে চাই না! ধিক্কার সেই সব হতভাগাদের যারা নিজেদের সংস্কৃতি ফেলে একটি পচেঁ যাওয়া সংস্কৃতিকে আকড়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে!!
আসুন... সবাই দেশের স্বার্থে নিজেদের সংস্কৃতিকে মনে প্রানে ধারণ করি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।