আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশীয় মোবাইল কোম্পানীটির ঘুম ভাঙ্গবে কবে!!



বাংলাদেশে যখন মোবাইল ফোনের জয়জয়কার। চারিদিদেকে হু হু করে বাড়ছে মোবাইল ফোন ব্যবহার কারী সংখ্যা। তখন অনেকটা ঘুমের ঘুরে ছিল বাংলাদেশ সরকার। তারা কোন উদ্যোগ না নেওয়ার কারণে বিদেশী মোবাইল কোম্পানী গুলো তাদের ব্যবসার পরিমাণ বাড়াতে থাকে। দেশের অনেক টাকা দেশের বাহিরে যাবার পর তাদের ঘুম ভাঙ্গল।

‘‘দেশের টাকা দেশে রাখুন’’ স্লোগান নিয়ে টেলিটক মোবাইল ফোন কোম্পানীটি যাত্রা শুরু করে। যেখানে অন্য যে কোন অপারেটর সীম কিনতে কোন জামেলা পোহাতে হয়নি এবং তা সল্প মুল্যে পাওয়া যেত। সেখানে টেলিটক মহাপ্যাচাল নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হয়। তারা জনসাধারণের কাছ থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আবেদন পত্র জমা দেওয়ার কথা বলে। কারণ জনগণ চাইছিল দেশের টাকা যেন দেশে থাকে।

আর তাতে পুজি করে বসে রাষ্ট্রায়ত্ব এই কোম্পানীটি। ঢাকা শহরে টেলিটকের সীম নিয়ে কি হুলস্থল হয়েছিল তাতো দেশের সবার জানা। কেমন করে পুলিশ সাধারণ জনগণকে লাঠিপেটা করেছিল তা আমরা টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছিলাম। আর যারা সেদিন সীম আনার জন্য গিয়ে পুলিশের লাঠিপেটা খেয়েছিলন এবং সীম পাননি তাদের কে আমার আজ ভাগ্যবান মনে হয়। কারণ যদিও সেদিন তারা পুলিশের হাতে মার খেয়েছিল যা হয়তো জীবনেও ভুলবেন না।

কিন্তু তাদের তো টেলিটকের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। আমার আশেপাশের এমনকি গ্রামের মানুষজনও টেলিটকের সীম পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। এর জন্য তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। আবেদন পত্র ছাড়ার জন্য অনেক হবিগঞ্জ থেকে সিলেট এসে সাইবার ক্যাফেতে বসে ৫০ টাকা দিয়ে আবেদন করতে হয়েছিল। গাড়ি ভাড়া ও তার সাথে পুরো দিনটাইতো গেল।

আমার এক ভাইও আবেদন করেছিলাম ১৪টি। তিনি যেন পান সেজন্য পরিচিত যারা ছিলেন তাদের সবার নাম দিয়ে আবেদন করেছিলেন। যাদের নামে আবেদন করেছিলেন তাদের সাথে চুক্তি ছিল যদি তিনি লটারিতে জয়ী হন তাহলে আর কারো আবেদনের সীম নেবেন না। আর যদি না লাগে তাহলে যারই লাগবে সে যেন সে সীম উনাকে দিয়ে দিয়ে দেয়। কারণ তিনি তাদের যাবতীয় খরচ বহন করেছিলন।

অবশেষে ১৪ টির মধ্যে তিনটি আবেদন পত্র লটারিতে জয়ী হয়েছিল। এবং উনাকে জনানানো হল যেন মৌলভীবাজার সিটি ব্যাংক থেকে সীম সংগ্রহ করেন। আর তার জন্য দিতে হবে ২৯০০ টাকা। তিনি সিলেট থেকে মৌলভী বাজারে গিয়েছিলেন সীম আনার জন্য। সবাইকে জানিয়েছিলেন যেন আর আগের নাম্বারে ফোন না করার জন্য।

মনে করেছিলেন টেলিটকের সেবা অন্য যে কোন কোম্পানীর চেয়ে ভাল হবে। কিন্তু তার সে আশায় ছিল গুড়ে বালির মত অবস্থা। যে প্রত্যাশা নিয়ে তিনি সংযোগটি নিয়েছিলেন তার সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। কারণ টেলিটকের নেটওর্য়াকের ছিল বেহাল অবস্থা। তার সাথে অন্য কোন সমস্যা হলে তার সমাধান ও সহজে পাওয়া যেত না।

আরও ছিল নানাবিদ সমস্যা। তিনি আমাকে বলেছিনে শুধু মাত্র ইনকামিং কল ফ্রি ছাড়া তখন এ্ ফোনটির কোন সেবাই ভাল ছিল না। যার কারণে আগে যে কোম্পানীর সীম ব্যবহার করতেন আবারও সে কোম্পনীতে ফেরত যান। শুধু তিনি নন এমন আরও অনেকেই এত দাম ও আগ্রহ নিয়ে যে টেলিটক ক্রয় করেছিলেন তা ছেড়ে আবার অন্য কোম্পানীতে ফেরত যান। এ হচ্ছে দেশীয় এবং সরকারী একটি প্রতিষ্টাননের অবস্থা যা অবশ্যই ভাবার বিষয়।

একটি জাতীয় সাপ্তাহিকের টেলিটকের বেহাল দশা শিরোনামে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন যে বিশাল জনগোষ্টির চাহিদ মেটানোর জন্য ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে সরকারী সেলুলার ফোন কোম্পানী টেলিটক। বর্তমানে দেশে মোট মোবাইল ব্যবহারকারী ৪ কোটি ৩৪ লাখ। বাজারে মাত্র এক বছর আগে আসা মোবাইল ফোন কোম্পনী ওয়ারিদের কাস্টমার যেখানে ২৯ লাখ অতিক্রম করেছে। সেখানে তিন বছর পরে টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা মাত্র ৯ লাখ। বেসরকারী মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলো বর্তমানে কাস্টমার সার্পোটের েেত্র সব চেয়ে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে।

নিজস্ব উদ্যোগ ও ডিলার চুক্তির মাধ্যমে তারা জেলা শহরতো বটেই এমনকি উপজেলা পর্যায়েও কাস্টমার কেয়ার সেন্টার স্থাপন করেছে। সেখানে টেলিটকের সারা দেশে কাস্টমার কেয়ার সেন্টার আছে মাত্র ১৩টি। আর তার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি এই মোবাইল কোম্পনানীটির যে কি অবস্থা। বর্তমানে সবগুলো কোম্পানী যেখানে গ্রাহকদের কে টানার জন্য গ্রামে গঞ্জে বাজারে কাস্টমার কেয়ার খোলে বসে আছে সেখানে টেলিটকে একি অবস্থা! সারা দেশের মাত্র ১৩ টি কেন্দ্রের সাহয্যে তারা তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। সর্বশেষে বিটিআরসি যখন মোবাইলে কোম্পানী গুলোকে তাদের গ্রাহদের পুণঃ রেজিষ্ট্রেশনের কথা বলে।

তখন প্রায় সব গুলো কোম্পানী বিভিন্ন শহরে অনেক গুলো পুর্ণঃরেজিস্টেশন কেন্দ্র খোলে ডিলারদের মাধ্যমে যার ফলে তাদের সিংহ ভাগ গ্রাহক নিবন্ধিত হন। কিন্তু সিলেট নগরীতে তাদের কাস্টমার কেয়ার ছাড়া আর কোন কেন্দ্র আমার চোখে পড়েনি। মোবাইল ব্যবহারকারীরা চান যেখানেই যান না কেন সব জায়গাতাতে তাদের নেটওয়ার্ক । কিন্তু টেলিটক সারাদেশে তাদের নেটওয়ার্ক কাভারেজ দিতে পারেনি। দেশীয় এই ফোন কোম্পানীটি দেশের টাকা দেশে রাখার জন্য তাদের আরও কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।

যে ধরণের সেবা অন্য মোবাইল কোম্পানী গুলো দিচ্ছে সে ধরণের সেবা দিতে না পারলে মুখদুবড়ে পড়বে টেলিটক। আর তার ফলশ্র“তিতে কোটি কোটি টাকা দেশের বাহিরে চলে যাবে। আমরা চাই টেলিটকের নীতি নির্ধারকরা যেন ঘুমি না থাকেন। এখন ও সময় আছে জেগে উঠার। একটু চেষ্টা করলে বা সচেতন হলে যদি দেশের টাক দেশে থাকে তাহলে দোষ কি?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.