------ আপডেট: অপহৃত শিশু সাদিয়া খাতুন রুমাকে গতকাল ফরিদপুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
সাদিয়া খাতুন রুমা।
সুন্দর ফুটফুটে প্রাণচঞ্চল একটা মেয়ে। বয়স তেরো কি চৌদ্দ। স্কুলের গন্ডি এখনো পেয়োয়নি।
সে ময়মনসিংহের গৌরীপুর শাহগঞ্জের ড. এম আর করিম উচ্চবিদ্যালয়ে এ বছর সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছিল। স্কুলের প্রতি ভালোলাগা তার দারুন, ক্লাসের হোমওয়ার্ক, ছবি আঁকা, বন্ধুদের সাথে কানামাছি আর বউচি খেলা আর বাবা, মা নিয়েই তার আপন জগত। আজব দেশে এলিস (Alice in wonderland) গল্প পড়ে যার কল্পনার জগতটা আরো বর্ণীল ও স্বপ্নময় হয়ে উঠেছিল, সে স্বপ্ন নিমিষেই ধূলিসাৎ করে দিল একটা ঝড় এসে।
অপহৃত হলো যেভাবে:
গত ১৯ শে সেপ্টেম্বর ২০১১ ইং তারিখে সকাল নয়টায় সাদিয়া তার নিজের বাড়ী থেকে স্কুলে যাবার পথে তারই আপন ভগ্নিপতি বাবলু (৩৭) তাকে অপহরন করে উঠিয়ে নিয়ে যায়। সকালবেলা যখন সাদিয়াকে গাড়ীতে করে উঠিয়ে নিয়ে যায় এলাকার অনেক লোকজনই প্রত্যক্ষ্য করেছে ঘটনাটি।
তারা কেউ আমলে দেয়নি, এলাকাবাসী বাবুলকে খারাপ প্রকৃতির জানলেও মনে করেছে-ছোট একটি মেয়ে ভগ্নিপতির সাথে যাচ্ছে, তাতে কি! এলাকাবাসী তখন জানতো না যে, ছোট সাদিয়াকে যে স্কুলে যাবার পথ থেকে শপিং করার প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সেই নরপশু বাবলু:
নাম: বাবলু
বয়স: ৩৭
পিতা: মৃত মনির
মাতা: বেদানা
গ্রাম: রনখেলী উত্তর
ডাকঘর: রনখেলী উত্তর
থানা: গোলাপগঞ্জ
জেলা: সিলেট
বাবলু একজন খারাপ প্রকৃতির লোক। সিলেটের অধিবাসী এই বাবলু দীর্ঘ বছর দেশের বাইরে থাকার পর দেশে এসে সাদিয়ার বড় বোন তাসলিমা আক্তারকে বিয়ে করে। বিয়ের পর তার প্রকৃত রূপ প্রকাশ পেতে শুরু করে এবং তাসলিমার সাথে বনিবনাও হচ্ছিল না। তাসলিমার সাথে সব সময় খারাপ ব্যবহার ও মারধোর করতো।
এবং বাবলুকে তাদের বাড়ীতে কখনও খুঁজে পাওয়া যেতনা। ঘটনার পর বাবলুকে এই এলাকায় ও তার আত্মীয় স্বজনের বাসায়ও কোন হদিস পাওয়া যায়নি। বাবলুর বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারনা মামলাও রয়েছে।
গৌরীপুর থানায় সাধারন ডাইরী:
সাদিয়া অপহৃত হবার পর সাদিয়ার বাবা গৌরীপুর থানায় সাধারন ডাইরী করা হয়।
গৌরীপুর থানায় সাধারন ডাইরী নং: ৫৯, তারিখ: ০২/১০/২০১১
এদিকে এই পাষন্ড মানুষ নামধারী বাবলু একদিকে যেমন সাদিয়াকে অপহরন করে নিয়ে সাদিয়ার জীবনটা নষ্ঠ করে দিল তেমনি নষ্ঠ করে দিল তার বড় বোনের জীবনটাও।
একটি পরিবারে এমন দুর্বিষহ ঘটনা ঘটলে কিভাবে ভালো থাকে সাদিয়ার বাবা মা।
আমরা কি করতে পারি সাদিয়ার জন্য:
পুরো ঘটনাটি আমি শুনলাম আজ (২৮ নভেম্বর ২০১১) সাদিয়ার আপন মামার কাছ থেকে। শুনে যখন থ' হয়ে গেলাম ঠিক তখনি লিখতে বসা। সাদিয়ার মামা এজকন স্কুল শিক্ষক। একজন পরিচ্ছন্ন আধুনিক মন-মানসিকতার অধিকারী এই মানুষটিকে আমি অনেক পছন্দ করি।
আমি তার কাছে শুনার পর ভাবছি কি করা যায়। সভাব্য সব জায়গা গুলোতে আমি জানালাম, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিস ট্রাস্ট সহ আরও কিছু জায়গাতে। সেখানে আমরা কাগজ পত্র নিয়ে যাবো। আমরা ভাবছি মিডিয়া গুলো সে ব্যাপারে কোন প্রকার সাহায্য করতে পারে কিনা।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা:
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মোকাদ্দমা নং: ৩২৭/১১, ধারা- ৭/৩০, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০।
মামলা করার তারিখ: ১২/১০/২০১১
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন কি বলে আর পুলিশ কি করে:
নারী ও শিশু অপহরণের শাস্তি ৭৷ যদি কোন ব্যক্তি ধারা ৫-এ উল্লিখিত কোন অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে কোন নারী বা শিশুকে অপহরণ করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা অন্যুন চৌদ্দ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।
আইন শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থার নির্লিপ্ততা আমাদেরকে পীড়া দেয়:
মামলা দায়ের করা হলেও ময়মনসিংহ পুলিশ অপহৃত শিশু সাদিয়াকে উদ্ধারে তেমন কোন ভুমিকা চোখে পড়ছে না। পুলিশ বলছে সাদিয়ার পরিবারকে খুঁজে বের করতে।
জাতীয় শিশু নীতি, ২০১০শিশুর সুরক্ষা বিষয়ে কি বলে:
১ সকল প্রকার সহিংসতা, নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে শিশুদের সুরক্ষিত থাকার অধিকার থাকবে।
শিশুদের উপর সহিংসতা, নির্যাতন ও অবহেলা বন্ধ করার লক্ষ্যে কার্যকর জন সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
২ শিশুদের প্রতি অপরাধ ও অবহেলার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ঘটনা সনাক্তকরণ, অভিযোগ দায়ের, তদন্ত পরিচালনা ও নজর রাখার জন্য সংশিষ্ট সংস্থা/প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও শক্তিশালী ও কর্মক্ষম করা হবে।
৩ শিশুর পরিত্যক্ত ও আশ্রয়হীন হওয়ার মৌলিক কারণ অনুসন্ধানসহ পরিত্যক্ত ও নিরাশ্রয় শিশুর আশ্রয় ও খাদ্যসহ সুরক্ষার ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৪ শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এই কাজে নিয়োজিত সকল সংস্থা/প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা হবে।
৫ জাতিসংঘ শিশু অধিকার কমিটির সুপারিশ ও দেশের বিদ্যমান বা¯ব— তার প্রেক্ষিতে ফৌজদারী দায়-দায়িত্বের ন্যূনতম বয়স সংশোধনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৬ শিশুদের আটক রাখার পরিবর্তে প্রবেশন, ডাইভারশন, পরামর্শ প্রদান ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা
হবে।
৭ সকল শিশুকে অর্থনৈতিক শোষণ থেকে এবং তাদের সুষ্ঠুভাবে বেড়ে উঠার প্রতিবন্ধক অবস্থা থেকে সুরক্ষা প্রদান করা হবে।
৮ পারিবারিক পরিবেশে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা/প্রতিষ্ঠান পরিবারের সাথে একযোগে কাজ করা হবে।
বাংলাদেশের এতো শিশুনীতি এতো মানবাধিকার আইন দিয়ে আমরা কি করবো?
হিসেব কষলে অনেক লম্বা ফর্দ হবে। অনেক আইন আছে বাংলাদেশে।
অনেক নীতিকথা শুনি টকশোতে, সেমিনারে, সংসদে। কিন্তু এইসব নীতি, আইন বাস্তবায়নের জন্য কোন তদারকি নেই আমাদের দেশে। অপহৃত শিশু সাদিয়ার বাবা কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা তার প্রাণের আত্মা ছোট্ট মেয়েটিকে উদ্ধারের জন্য।
সাদিয়ার স্কুল শিক্ষক ও সহপাঠী বন্ধুদের দাবী:
সাদিয়া ময়মনসিংহের গৌরীপুর শাহগঞ্জের ড. এম আর করিম উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। তার স্কুল শিক্ষক ও সহপাঠী বন্ধুরা জোড় দাবী জানিয়েছে ,আইন শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যরা যেন দ্রুত সাদিয়াকে খুঁজে বের করে এবং বাবলুকে গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
অপহৃত শিশু সাদিয়া খাতুন রুমাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসুন:
এই ব্লগ লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো; আমরা যারা ব্লগার আছি সবার নিজের অবস্থান থেকে সাদিয়াকে উদ্ধারের জন্য কি করা যেতে পারে সে ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। সাদিয়া অপহৃত হবার পর অনেকদিন পার হয়ে গেছে তার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা অনেক ব্লগার আছি, আমাদের বিরাট একটা প্লাটফরম বলা যায়, আমরা ব্লগাররা এগিয়ে এলে সাদিয়ার বাবা মা একটু সাহস পাবে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সহ, কবি, সাংবাদিক, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্য, মানবাধিকার সংস্থার সদস্যরাও এই ব্লগিংয়ে আছেন। তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ -অপহৃত শিশু সাদিয়া খাতুন রুমাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসুন।
কেউ যদি আরও বিস্তারিত জানতে চান তাহলে ফোন করতে পারেন নিচের সেল নাম্বারে:
মো. এনামুল হক (সাদিয়ার মামা)
+৮৮ ০১৯১৫ ৩৩ ৬২ ৫৯
-হাসান ইকবাল
২৮.১১.২০১১
ঢাকা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।