আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাধীনতার ঘোষক কে ? বঙ্গবন্ধু না মেজর জিয়া ?

খুব সাধারণত, যেকোন পরীক্ষার ঘোষণা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবার বেশ ক’দিন আগেই দেওয়া হয় । এইরকমটাই হয়ে আসছে । ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এদেশের মুক্তিকামী সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা, ইজ্জত বিসর্জন দেওয়া মা-বোনরা ত্যাগ, ধৈর্য এবং ভালোবাসার চরম পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন । এবং এই পরীক্ষার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছিলো সেই বছরের ৭ মার্চ তারিখে; পাঠ করেছিলেন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণে হয়তো স্বাধীনতার ঘোষণা সরাসরি ছিলো নাহ ।

কিন্তু স্বাধীনতা আদায়ের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিলো । “তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো । রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো; তবুও এই দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ । এবারের সংগ্রাম আমদের মুক্তির সংগ্রাম । এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ।

” এই ছিলো বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের কিছু লাইন যেখানে স্বাধীনতার ঘোষণা সরাসরি না থাকলেও আছে তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত । একটা শব্দের দু’রকম অর্থ হতে পারে । একটা আক্ষরিক, আরেকটা ভাবার্থ । ৭ মার্চের ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে “স্বাধীনতার ঘোষক” শব্দটির ভাবার্থমূলক উত্তর দাঁড়ায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ । যারা বিশ্বাস করতে চান না এই কথা কিংবা যারা মনে প্রাণে মানেন, মেজর জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক, তারা এটা প্রমাণ করার জন্যে সর্বোচ্চ একটি অডিও ক্লিপই উপস্থাপন করতে পারবেন ।

সবচাইতে হাস্যকর কিন্তু চরম সত্য ব্যাপারটি হলো, সেই অডিও ক্লিপটিও পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে দেয় যে বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষক । মেজর জিয়াউর রহমানের সেই ক্লিপটিতে শোনা যায়, “On behalf of our great national leader, the supreme commander of Bangladesh Sheikh Mujibur Rahman, do hereby proclaim the independence of Bangladesh. Joy Bangla.” তারা কি জানেন, মেজর জিয়া এই ঘোষণাটি কখন পাঠ করেন ? এই ঘোষণাটি পাঠ করা হয় ২৭ মার্চ তারিখে সন্ধ্যাবেলায়, চট্টগ্রামের কালুরঘাটস্থ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র (একটি অস্থায়ী বেতারকেন্দ্র) থেকে । ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানে । গ্রেফতার হওয়ার পূর্বেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান এবং তা প্রচারের নির্দেশও দিয়ে যান । বঙ্গবন্ধুর পক্ষে প্রথম ঘোষণাটি আসে আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ. হান্নানের কণ্ঠ থেকে যিনি ২৬ মার্চ দুপুরবেলা মাইক সহযোগে স্বাধীনতার কথা প্রচার করেছিলেন ।

আমি যদি আক্ষরিক অর্থেও প্রমাণ করতে যাই যে মেজর জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক, তারপরেও আমি ব্যর্থ দু’টি কারণে । প্রথম কারণটি হলো এম. এ. হান্নানের মাইকযোগে ঐ ঘোষণাটি । দ্বিতীয় কারণটি হলো, বেতার থেকে ভেসে আসা কণ্ঠটা মেজর জিয়ার কিন্তু তিনি নিজেই তার এই ঘোষণায় স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে তিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিচ্ছেন । তবে পরবর্তীতে মেজর জিয়ার ঘোষণাটিই ফলাও করে প্রচার করা হয় এবং ‘প্রচারেই প্রসার’ অনুযায়ী মেজর জিয়াই ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ বনে যান ! আমি মেজর জিয়াকে হেয় করছি নাহ, সেই ইচ্ছাও আমার নেই । কারণ তিনিও একজন বীর উত্তম খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা যিনি ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন ।

কিন্তু যেটা সত্য, সেটাকে সত্য বলে স্বীকার করতেই হবে । সম্পূর্ণই আবেগতাড়িত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া তার স্বামীকে আজও ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ বলে দাবি করে বেড়ান । তার দাবি মেনে নেওয়া যেতো যদি তিনি এটা স্বীকার করতেন যে, মেজর জিয়া বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই ঘোষণাটি দিয়েছিলেন এবং সেটি ছিলো দ্বিতীয় ঘোষণা ! অবশ্য যিনি সারাদিন তার রূপচর্চা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, তার কাছ থেকে এটা আশা কখনোই আশা করা যায় নাহ । কারণ তিনি যুক্তি বুঝেন নাহ, সত্য চিনেন নাহ ! প্রতি পাঁচ বছর পরপর প্রতিটা শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত ইতিহাসের এই একটি লাইন পরিবর্তন করা আসলেই দুঃখজনক, কলঙ্কজনক । তরুণ প্রজন্মের একজন সত্যানুসন্ধানী হিসেবে আমি আশা করবো, ইহজীবনেই যেনো তার বোধদয় হয় ।

মসজিদে নামাজের সময় মুসল্লির সংখ্যা যদি বেশি হয় এবং মাইক/সাউন্ড বক্সের সুবিধা যদি না থাকে, তাহলে ইমামের দেওয়া তাকবীরকে পেছনের মুসল্লিদের কানে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেন মাঝের কিছু মুসল্লি যাদের 'মুকাব্বির' ডাকা হয় । ইমাম তাকবীর দেওয়ার পর এই মুকাব্বিরগণও কিন্তু সমস্বরে তাকবীর দেন, কিন্তু তাই বলে তাদের 'ইমাম' ডাকা হয় নাহ, তারা মুকাব্বিরই । পদার্থ শাস্ত্র মতে, বিগ ব্যাঙ না ঘটলে যেমন এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতো নাহ, তেমনি বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় কল্পনাই করা যেতো নাহ । কারণ এই মানুষটা শুধুমাত্র আওয়ামী লীগেরই নন, বরং সমগ্র বাঙালি জাতির জন্যে এক অবিসংবাদিত নেতা । তিনিই বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, তিনিই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৮৮ বার     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.