কৃষি প্রধান বাংলাদেশে মানুষের একমাত্র অবলম্বন কৃষি। বাঙালীদের উৎপাদনের সিংহভাগই আসে কৃষি থেকে। তাই কৃষির গুরুত্ব সরবাধিক একথা অনস্বীকার্য। তাই কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে বিষের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও রয়েছে অনেক কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়য় । তন্নাধে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এক হিরন্ময় নাম যা বাংলার কৃষি এবং কৃষিসম্পদ উন্নয়নে অগ্রগণ্য ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত।
শে. কৃ.বির ইতিহাসঃ
যখন থেকেই বাঙ্গালী জাতির মুক্তির স্বপ্ন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন সেদিন থেকেই স্বপ্ন বাংলার কৃষককে সমৃদ্ধ করা, কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন নিয়ে আসা। কারণ বাংলার মানুষের সিংহভাগই কৃষক। কৃষকের উন্নয়নই আনবে বাঙ্গালী জাতির উন্নয়ন,এই স্বপ্নই দেখতেন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সকল নায়কগণ। বাঙ্গালী কৃষকের সর্বাধিক উন্নয়ন এবং দেশকে সমৃদ্ধতার উদ্দেশে শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হক ১৯৩৮ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন “দা বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইন্সিটিউট” যা ১৯৪৭ সালে “ ইস্ট পাকিস্তান এগ্রিকালচারাল ইন্সিটিউট” নাম ধারণ করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এই প্রতিষ্ঠানটি আবার পূর্বের নাম ধারণ করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়ে কার্যক্রম চালায়।
পরবর্তীতে দেশে অন্য একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় “ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠা হলে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর কার্যক্রম নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। তখন থেকেই বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে কৃষি ইন্সিটিউটের (বর্তমানশেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষক ছাত্রছাত্রীরা স্বপ্ন দেখেছিল একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার । অনেক চেষ্টা করেছিল, পাশাপাশি রেখেছিল তাদের লেখাপড়ার মান যা প্রশংসিত হতে থাকে দেশ এবং দেশের বাইরে। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ২০০১ সালের জুলাই মাসে সরকার সহ বিভিন্ন মহলের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয় শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যা এক হিরন্ময় নাম নিয়ে দাড়িয়ে আছে ঢাকার শেরে বাংলা নগরে এবং সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে বাংলার কৃষককে, অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে এবং সমুন্নত করছে নিজ দেশের সম্মান বহির্বিশ্বে।
শে. কৃ.বির বর্তমান কার্যক্রম ঃ
২০০১ সালের পর থেকে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সমানভাবে শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি অবদান রাখছে গবেষণা ক্ষেত্রে।
বর্তমানে দুইটি বিভাগে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। একসময় যে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি ইন্সিটিউট হিসেবে রূপ লাভ করেছিল তা আজকে সৃষ্টি করছে হাজার হাজার কৃষিবিদদের, যারা অবদান রাখছে দেশে এবং বিদেশে। এ পর্যন্ত ৫৫০০ স্নাতক এবং ৬৬৫ স্নাতকোত্তর ছাত্রছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে, যারা দেশ এবং বিদেশে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। বর্তমানে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মোট ৩০০০ শিক্ষার্থী রয়েছে যাদের শিক্ষা প্রদান করছেন ১৩০(২০১০ প্রসপেক্টাস অনুযায়ী) জন অভিজ্ঞ শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ ।
গবেষণা এবং কৃষিখাতের উন্নয়নে শে. কৃ.বিঃ
জন্মলগ্ন থেকেই এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রী দেশের কৃষি উন্নয়নে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করছে।
কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা এবং কৃষকদের তথা বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নই শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য। ফলে এখানে রয়েছে কৃষি গবেষণা পরিষদ যা শে. কৃ.বির মেধাবী গবেষকদের পদচারনায় মুখরিত। তারা গবেষণা করছে কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে এবং উদ্ভাবন করছে নতুন নতুন জাত যা বাংলার কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনের অগ্রদুত হিসেবে কাজ করবে এবং বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করবে সমৃদ্ধ, উন্নত এবং খােদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে।
পড়াশোনার পাশাপাশিঃ
পড়াশোনার পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত। সংস্কৃতি সংগঠন হিসেবে রয়েছে ‘কিষাণ থিয়েটার” যেখানে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা নাটক,গান,কবিতা, নাচ এ অংশগ্রহণ করে থাকেন।
পাশাপাশি রয়েছে উদ্দীপন,নিলিমা, রোভার স্কাউট নামক সংগঠন যারা বিভিন্ন কার্যাবলী করে থাকেন। বিজ্ঞান সচেতন এবং বিজ্ঞান চর্চার স্বার্থে রয়েছে “প্রতিফলন” যেখানে মিলিত এক ঝাঁক ভবিষ্যৎ কৃষিবিজ্ঞানী। নিজেকে যুক্তিবাদী এবং সচেতন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার স্বার্থে রয়েছে “শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি” । এছাড়াও সম্প্রতি টি.আই.বি এর তত্ত্বাবধানে চালু হয়েছে “ইয়েস” গ্রুপ যারা দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন নিয়ে কাজ করছে। এছাড়াও ইংরেজির প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধিতে রয়েছে সাউ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব।
যানজটপূর্ণ শহরে একটু গ্রামের ছোঁয়াঃ
জনবসতি, যানজট আর হাজারো দুর্ভোগ যেখানে ঢাকা শহরের প্রতিদিনের প্রতিচ্ছবি সেখানে একটি প্রশান্তিময়, নিবিড় পরিবেশ খুঁজে দায় কিন্তু শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যেন দেয় ঢাকা শহরের এক বৈচিত্র্যতা। ক্যাম্পাসে পা দিলেই যেন পাওয়া যায় শান্ত,স্নিগ্ধময় পরিবেশ, পাখির কলকাকলি বিশুদ্ধ বাতাসের পরশ ঠিক যেন এক মুহূর্তের মাঝে খুঁজে পাওয়া যাবে গ্রামের এক নিভৃত শান্ত আবহাওয়া। এছাড়া বিভিন্ন ফুলের সুগন্ধি, শত শত প্রজাতির গাছ যা এই শহরের মানুষ কে দেই অস্বস্তির পাশে একটু স্বর্গীয় সুখের ছোঁয়া। আর তাইতো ঢাকা শহরের এই মানুষগুলো একটু সুযোগ পেলেই ঘুরতে আসে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কাম্পােস ,ফলে বিকেল হলেই যেন ক্যাম্পাস আঙ্গিনা ভরে ওঠে দর্শনার্থীদের আগমনে যা শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্মানের শীর্ষ চুড়ায় পৌঁছে দিয়েছে।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ স্বপ্নঃ
দেশের কৃষক সমাজকে উন্নয়ন তথা কৃষিখাতের উন্নয়নই শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য।
ফলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষিকা এবং শিক্ষার্থীরা । সবচেয়ে প্রাচীন কৃষি প্রতিষ্ঠান হিসেবে জন্ম নিলেও এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা, যা ধীরগতিসম্পন্ন করে তুলেছে এর কার্যক্রম। তাই উচ্চ মহলের কাছে সকল ছাত্রছাত্রীর একটাই চাওয়া এই প্রতিষ্ঠানকে যেন দেওয়া হয় কৃষি ক্ষেত্রে অবদানের সর্বোচ্চ সুযোগসুবিধা, যা গতিশীল করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম, অবদান রাখবে দেশের কৃষিখাত উন্নয়নে এবং দেশকে প্রতিষ্ঠা করবে দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত দেশ হিসেবে যা বাংলাদেশকে দেশের বাইরে পরিচিত করবে সমৃদ্ধ, উন্নত এবং শক্তিশালী দেশ হিসেবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।