সব প্রশংসা যিনি আল্লাহ পাক, উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, “আক্বল হলো মানুষের রিযিকের অর্ধেক। ” মূলত এ ক্বওল শরীফ শুধু ব্যক্তি জীবনেই নয়; আমাদের জাতীয় জীবনেও বয়ে আনতে পারে প্রভূত সমৃদ্ধি।
বলাবাহুল্য, কৃষিপ্রধান এ দেশে কৃষির প্রতি একটু নজর দিলেই আসতে পারে প্রচুর অর্থ।
ইদানিংকালে পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই রিপোর্ট হচ্ছে, ‘সবজি চাষে ফিরে গেছে ভাগ্য। ’ উল্লেখ্য, স্থান বিশেষে একেক সবজি একেক জায়গায় ভালো হয়। যথাযথ নির্বাচন ও প্রয়োগের দ্বারাই এ সুফল প্রাপ্তি সম্ভব।
প্রসঙ্গত অধিক লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষ সারাদেশে, বিশেষ করে চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কৃষকদের মাঝে আগ্রহও সৃষ্টি হচ্ছে।
তাই সম্ভাবনাময় এই শস্য চাষে সরকার বিশেষ দৃষ্টি দিলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের কৃষি অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করতে ভুট্টা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি ভুট্টা চাষ চরাঞ্চলের অভাবী কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়নে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। কিন' এক্ষেত্রে সরকারকে শুধু গৎবাধা এবং প্রচলিত পদ্ধতিতে বুধ হয়ে থাকলে চলবে না।
‘দৈনিক আল ইহসান’ পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, প্রচলিত শস্যের বাইরে বিভিন্ন অপ্রচলিত শস্য, ফুল, ফল, তৈলবীজ ও সবজির চাষ করে দেশ ও কৃষকদের লাভবান হওয়ার বিরাট সুযোগ রয়েছে। কিন' এক্ষেত্রে কাঙ্খিতভাবে আদৌ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা মিলছে না।
লক্ষ্মীপুরে মেঘনার তীরে খাঁচায় ভাসমান পদ্ধতিতে মাছের চাষ করে সাফল্য পেলেও এ পদ্ধতিতে মাছচাষে কোনো সহায়তা পাননি দু’জন মাছচাষী। পাশাপাশি এ জেলায় প্রতিবছর প্রায় সাত কোটি টাকার সয়াবিনের চাষ হলেও কৃষিঋণ নীতিমালায় নির্দেশনা নাই। এ কারণে কোন ঋণ পায় না। অথচ এখানে সুদমুক্ত কৃষিঋণ দিলে দেশের জন্যই বিরাট সফলতা আসতে পারতো।
এদিকে যশোরে উৎপাদিত ফুল বিদেশে রপ্তানি হলেও ঋণের অভাবে ফুল সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ গড়ে উঠছে না।
এদিকে অনুসন্ধানে কৃষি খাতের নানা নৈরাজ্যের চিত্রও উঠে এসেছে। গ্রামাঞ্চলে শস্য সংরক্ষণাগার, কোল্ড স্টোরেজ ও গুদামজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকের উৎপাদিত পণ্য কম দামেই মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে। গ্রামের সঙ্গে জেলা ও ঢাকার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় শহরে বাজারজাতকরণেরও সঙ্কট তৈরি হয়েছে। অসংগঠিত বাজার-ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ব্যাপক হারে বাড়ছে।
উল্লেখ্য, কৃষিঋণ নীতিমালায় সুনির্দিষ্ট করে সব চাষাবাদের কথা উল্লেখ করা সম্ভব নয়।
তাই ব্যাংকগুলোর উচিত যে কোনো চাষাবাদে সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করা। কারণ, ভালো মানের সার ও উন্নত বীজের অভাবে কৃষক ঘরে ফসল তুলতে পারছেন না। সরকারিভাবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন অধিদপ্তরের (বিএডিসি) মাধ্যমে পর্যাপ্ত বীজের সরবরাহ পাচ্ছে না তারা। ডিলাররা বিএডিসি’র নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকা আদায় করছে। ফলে সার্বিক বীজ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের অনিয়ম বাসা বেঁধেছে।
পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি দামে নিম্নমানের বীজ বিক্রি করায় কৃষক প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ডিলারের স্বেচ্ছাচারিতায় বেশি দামে সারও কিনতে হচ্ছে তাদের। এদিকে কৃষকের জন্য বরাদ্দের ভালো সার সীমান- দিয়ে অবাধে পাচার হচ্ছে। অন্যদিকে সীমান্তের ওপার থেকে ঢুকছে নিম্নমানের ভেজাল সার।
বান্দরবানের পাহাড়ের ঢাল হতে পারে আদা চাষের উপযুক্ত স্থান।
বর্তমানে দেশের মোট উৎপাদিত আদার কমবেশি ৩০ শতাংশ উৎপন্ন হয় এ জেলায়। আদা চাষের ক্ষেত্রে দুই শতাংশ সুদে ঋণ থাকলেও ব্যাংকগুলো চাষিদের ওই ঋণ দিতে চায় না। অথচ সুদমুক্ত ঋণ দেয়াই জরুরী।
হবিগঞ্জসহ অনেক জেলার নিচু জমি শীতকালে পতিত থাকে। এসব জমিতে রসুন ও পেঁয়াজের চাষ করা সম্ভব।
এ ছাড়া জেলাটিতে ২৬টি হাওর ছাড়াও নিমজ্জিত জলাভূমি ও পুকুর রয়েছে। সুদমুক্ত ব্যাংকঋণ দিলে সেখানে সমন্বিত উদ্যোগে মাছের চাষ করা সম্ভব।
এদিকে ফুলচাষের জন্য যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, সদর, শার্শা ও মনিরামপুর এলাকার ফুল চাষীদের সুদমুক্ত ঋণ সহযোগিতা দরকার। কারণ, এটি খুবই লাভজনক ও ব্যয়বহুল চাষ। যথাযথ ঋণ না পাওয়ায় মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে সস্তায় ফুল বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
কেবল রজনীগন্ধা ও গাঁদা ফুলের জন্য ওই এলাকায় একটি কোল্ড স্টোরেজ আছে। অন্য কোনো ফুল সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। অথচ ফুলের জন্য আরো কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন করার পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, উন্নত প্রজাতির ফুলের জাত উদ্ভাবন ও বীজ সরবরাহের মাধ্যমে যথাযথ সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করতে পারলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি ফুলের ব্যবসা বাড়বে।
উল্লেখ্য, কাজুবাদাম চাষের জন্য রাঙামাটি, স্ট্রবেরির জন্য লালমনিরহাট, কমলা চাষের জন্য বান্দরবানের থানচি, রুমা, চিম্বুক পাহাড় এবং লতিরাজ কচুর লতার জন্য জয়পুরহাটকে বেছে নেওয়ার বিশেষ সুযোগ রয়েছে। এছাড়া গাজীপুরের পোলট্রি শিল্প, সিরাজগঞ্জের দুগ্ধখামার শিল্প, টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্প, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষ, জামালপুরের বাটিক ও হস-শিল্প এবং সিরাজগঞ্জের তামাই এলাকার তাঁত শিল্পের সম্ভাবনা অপার।
মূলত এসব কিছুই হচ্ছে আক্বল খাটানোর বিষয়। কিন' কি ব্যক্তি অথবা জাতীয় জীবন সব জায়গায়ই আমরা কাঙ্খিত আক্বল খাটাতে না পেরে বাঞ্ছিত সুফল পেতে ব্যর্থ হই। মূলতঃ এর পেছনে কারণ হচ্ছে নেক ছোহবত তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহর ঘাটতি বা অভাব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।