আমাদের সবারই স্বপ্ন আছে। কিন্তু স্বপ্নগুলির মধ্যে কি খুব একটা পার্থক্য আছে? আলাদীনের দৈত্য আসলে আমরা সবাই গদ বাধা কয়েকটি জিনিসই চাইবো। তার মধ্যে অবশ্যই থাকবে অর্থ এবং খ্যাতি। আর কী লাগে? ইশশিরে আমেরিকার সিনেমার লোকদের কত মজা। কিন্তু আমরা হয়তো ভুলে যাই যে সুখ এবং শান্তি, অর্থ এবং খ্যাতির জন্য আসবেই এমন কোন কথা নেই।
এরকমই মানুষের জীবনকে একটি মুভির মাধ্যমে প্রকাশিত হলো Rockstar মুভিটিতে।
কাহিনী জানা যাক। নায়কের নাম Janardhan ( Ranbir Kapoor) । আজকালকার পোলাপাইনদের মত তারও ধুম ধারাক্কা সংগীতশিল্পী হবার ইচ্ছা। কিন্তু সমস্যা হইলো পোলাডা ভালই গান গাইতে পারে।
আজকাল তো আবার ভাল গানের লোকদের বেইল নাই। বাপের পয়সা থাকলে আর মুখের মধ্যে একটা ছাগলা দাড়ি না লাগাইয়া বাসের হেল্পারদের লাহান চিক্কুর পাইরা গান না গাইলে তো আর রকস্টার হওয়া যায় না। নিজের নামটা JJ বানায়া মোটামুটি ভাবে গান গাওয়া শুরু করে সে। তার এক বন্ধু Khatana ( Kumud Mishra) এক কঠিন কুবুদ্ধি দেয়। নিজের মনে ব্যথা পাইলেই তুমি হইবা গুরু জেমসের মত কেউ।
Ranbir বেচারা বেকুব টাইপ। ভাবে পাশের কলেজের সুন্দরী Heer ( Nargis Fakhri) কে প্রেম নিবেদন করে রিজেক্ট খাইয়া মনে ব্যথা পাই। আহ্ কী বুদ্ধি!!
কিন্তু মেয়েটা বারবার তাকে অপমান করে কিন্তু তার মনে কোন দাগ পড়ে না। ধীরে ধীরে মেয়েটির সাথে সখ্যতা হয় তার। ২ মাস পর তার বিয়ে ।
মেয়েটির মাথায় প্ল্যান আসে। জীবনে যে সব কাজ করতে সবাই সারাজীবন নিষেধ করেছে তা এই ২ মাসের মধ্যেই করতে হবে। তারপর তো স্বামীর লগেই ইউরোপের প্রাগে থাকতে হবে। অসাধারণ ২ মাস কাটে তাদের। খাঁটি বন্ধুত্ব।
Heer এর পরিবারের সাথেও Ranbir এর অনেক খাতির। বিয়ের টাইমে তার গানের অনেক সুযোগ আসলেও Ranbir তখন Heer এর বিয়ের সব কাজ করতে মহা ব্যস্ত। Heer চলে যায়। কিন্তু তার মনে Ranbir এর জন্য এক চিনচিনে ব্যথা।
এদিকে JJ নিজের পরিবারের কোন কাজ করে না।
তাই বাসা থেকে বের করে দেয় তাকে। দুই মাস দরগাহ শরীফে কাওয়ালি গেয়ে সময় পার করে। সেখান থেকেই নজরে পরে যায় Ustad Jameel Khan ( Shammi Kapoor) এর। মোটামুটি ভালোই অবস্থা হয়ে যায় তার। এদিকে Music Company থেকে প্রাগ যাবার সুযোগ পায় সে।
প্রাগে গিয়েই Heer এর সাথে দেখা। কিন্তু Heer এর কিছু মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু পুরানো বন্ধুকে পেয়ে পুনরায় প্রাণ ফিরে পায় সে। কিন্তু এবার বন্ধুত্ব থেকে সীমা অতিক্রম করে ফেলে তারা। Ranbir চলে যেতে বলে Heer ।
ফিরে আসে Ranbir। তার মনে বিতৃষ্ণা, ঘৃণা এবং জ্বালা। মন থেকে আগুনের সুর বের হয়ে আসে তার থেকে । হয়ে ওঠে বিখ্যাত Jordan। কিন্তু মনে শান্তি নেই।
মানুষ এত পছন্দ করে। কী লাভ এসব দিয়ে? Heer নাই। কিন্তু আবার Heer আসে তার জীবনে। কিন্তু Jordan কী পারবে তাকে ধরে রাখতে? বিধাতা তো সবাইকেই এ দুনিয়া থেকে কেড়ে নেয়।
মুভিটির দ্বিতীয় ভাগে Jordan ও Heer এক নিঃস্বার্থ ভালবাসার জন্য মুভিটি এক অন্যরকম উচ্চতা পায়।
অভিনয়ের দিক দিয়ে Ranbir কে প্রথমভাগে মোটামুটি লাগলে পরের ভাগে দুর্দান্ত লেগেছে। সত্যিকারের একজন রকস্টার যেটা ভারতে নেই কিন্তু বাংলাদেশে আছে তাকেই দেখা গেছে মুভিতে। বিশেষ করে হাসপাতালে যখন Ranbir বলে : “আমার কিছু লাগবেনা শুধু আমার মনে ব্যথা দিওনা। “ তখন সবার মনই খারাপ হয়ে যায়। Concert গুলির দৃশ্য বিশেষ করে Saadda Haq এর দৃশ্যায়ন লোম খাড়া করে দেয়।
Kumud Mishra, Piyush Mishra, Shernaz Patel এর অভিনয় ভালো হলেও মুভির ১২ টা বাজাইসে Nargis Fakhri। মুভিটিতে অনেক ভালো একজন অভিনেত্রীর প্রয়োজন ছিল। মুভিটিতে প্রাথমিকভাবে Kareena Kapoor কে নেয়ার কথা থাকলে সমস্যা হয়ে দাড়ায় Ranbir ও Kareena নিজেদের জীবনে ভাই-বোন। তবে এই মুভিতে Kareena থাকলে দুর্দান্ত হত।
সংগীতের কথা আর কী বলবো।
এক কথায় অসাধারণ। A.R.Rahman পুরা ফাটায় ফালাইসে। Saddaa Haq, Jo Bhi Main, Kun Faya Kun, Nadan Parindey সবগুলাই ঝাক্কাস। তবে গানগুলির গীতিকার Irshad Kamil এবং Ranbir এর কণ্ঠে Mohit Chauhan এর প্রশংসা না করে পারা যায় না।
মুভিটি Imtiaz Ali আবার দেখায় দিসে যে আসলে বেশ বড় মাপের একজন মুভি নির্মাতা।
সবাই 3D এর পিছনে উঠে পড়ে লাগসে। কাহিনীর পিছনে পরা মুভি নির্মাতাদের বড়ই অভাব। মুভিটির Saadda Haq এর দৃশ্যায়ন এতটাই জটিল হইসে যে সকলেই নিজের অধিকারকে কেড়ে নেবার কথা মনে পড়ে যায়। আমরাও যেন আমাদের নদীগুলিকে বাঁচাতে ক্ষোভের সাথেই বলছি : “Saadda Haq … Aithey rakh “ ( আমার অধিকার ... এইখানে রাখ ...)।
মুভিটির নায়িকার চরিত্রটি অনেক কঠিন ছিল।
এ জন্য Nargis Fakhri’র উপর বড় চ্যালেঞ্জ চলে আসে। নায়িকার চরিত্র অন্য কেউ হলে মুভিটি আরও অসাধারণ হতো। সব মিলিয়ে বেশ ভালো মুভি।
রেটিং – ৪ / ৫
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।