কিং খানের প্রত্যাবর্তন। মানে পুরান কিং খান, শাকিব খান না। তাও আবার ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের সবচাইতে ব্যয়বহুল মুভির সাথে। প্রায় ২০০ কোটি টাকার Ra.One নিয়ে শাহরুখ খান আবার দুনিয়া মাতাতে আসলো এবার একজন সুপার হিরো হিসেবে।
কাহিনী জানা যাক।
এক পাংকু পোলা , নাম প্রতীক ( Armaan Verma) । পড়াশুনার খবর নাই। খালি আসে গেম লইয়া। তাও আবার উনার গেমের ভিলেন গুলারে জোস লাগে। হিরোদের বেল নাই।
শাকিব খান রে না দেখলে যা হয় আর কি। তার বাপ শেখর ( Shahrukh Khan) একজন গো-বেচারা টাইপের Game Developer। এই বেকুব যেইখানে যায় সেইখানেই দুর্ঘটনা ঘটে। পিচ্চির মা সোনিয়া ( Kareena Kapoor) একজন বিশিষ্ট গবেষক। তার গবেষণা গালাগালি নিয়া।
তার যুগান্তকারী গবেষণা একদিন সবার গালাগালির ধরণ পরিবর্তন করবেই। পিচ্চি নিজের বাপরে দেখতে পারে না। বেচারা ভালা মানুষ তো তাই। শাহরুখ ভাবে কেমনে এই পোলারে খুশি করা যায়। তাই নিজেই এমন একটা গেম বানায় যেখানে ভিলেন চরম বস।
ভিলেন এর শয়তানি এমন যে একসাথে আমেরিকা আর নারায়ণগঞ্জ দুজায়গার নির্বাচনে জিততে পারে। ভিলেনের নাম দেওয়া হয় Ra.One । শুনতে দশানন রাবণের ইশ্টাইলিস্ট নাম। নায়কের নাম দেয়া হয় G.One। যারা শাহরুখের নামে উল্টাপাল্টা কথা ভাবেন তাদের কইয়া রাখি G মানে Good, অন্য কিছু ভাইবেন না।
Ra.One এর চেহারা বানানো হয় মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর দাড়িতে আগুন লাগাইলে যেমন লাগবে সেরকম। আর G.One তো শাহরুখ নিজেই। গেম যেদিন উদ্বোধন হয় সেদিন পিচ্চি কয় আমি খেলুম আমি খেলুম। শুরু হয় খেলা। পিচ্চি চরম বস।
Ra.One রে নাকানি চুবানি খাওয়ায় অবস্থা টাইট। কিন্তু হঠাৎ খেলা না হতেই পিচ্চির বাপ-মা বলে বাড়ি চলো। কিন্তু গেমের ভিতরে Ra.One কয় তোরে খাইসি। গেম থেকে বাইর হইয়া তোরে স্টারের কাচ্চি বানামু।
এক অসাধারণ প্রযুক্তির সাহায্যে Ra.One আসল দুনিয়াতে ঢুইকা পড়ে।
সে তো আর পিচ্চিরে চিনে না। মাঝখানে পিচ্চির বাপ শেখররে মাইরা ফেলে। পড়ে জানতে পারে যে পিচ্চিটা কেডা। এদিকে কেমনে এই Ra.One রে ঠেকানো যায়? বিরাট জ্ঞানী –গুণীরা তপস্যা কইরা বাইর করেন যে Ra.One রে মারতে G.One রে ডাকো। আইসা পড়ে হিরো শাহরুখ খান।
দুনিয়া তছনছ , দ্রব্য-মূল্যের ঊর্ধ্বগতি সব মুশকিল আহসানের নাম G.One। কিন্তু এই হিরো আবার কারেন্ট খায় তাই লোড-শেডিং সমস্যার কোন সমাধান নেই। শুরু হয় দুইজনের মারামারি। এখন Ra.One ভাবে আমার এই টাইপ চেহারা থাকলে সবাই “আপনার তিশা কেমন আসে?” জিগাইতে শুরু করলে বিপদ। পাশের দোকানে টাক সমস্যার সমাধানের বিজ্ঞাপনে Arjun Rampal কে দেখে নিজের চেহারা বানায় ফেলে।
এদিকে G.One কারিনা আর পিচ্চিকে নিয়ে পালায় ভারতে চলে আসে। Ra.One ও চলে আসে। সবশেষে সেই অসমাপ্ত গেম পুনরায় শুরু হয়। G.One এর মত মগা সুপার হিরো আগে কেউ মনে হয় দেখেনি। শাহরুখ মাইর খাইতে খাইতে পুরা আলু ভর্তা ।
কিন্তু কেমনে জিতবে G.One? তাকে তো Ra.One কে মারতেই হবে।
মুভিটিতে অনেকদিন পর শাহরুখ খানকে দেখে দারুণ লেগেছে। তবে শাহরুখের অবলা সুপার হিরোর চেয়ে বেকুব মানুষের চরিত্রটি বেশি ভালো লেগেছে। কারিনা কাপুরকে অসাধারণ লেগেছে। বর্তমানে তার এক নম্বর হিরোইন হওয়া কোনই ব্যাপার না।
শুধুমাত্র ভাগ্যের দোষই বলতে হবে। মুভিটি একটি একশান মুভি হলেও একশানগুলি তেমন ভালো হয়নি। Ra.One চরিত্রটি বেশ ভয়ংকর ভাবেই Arjun Rampal প্রতিষ্ঠিত করেছে। তবে মুভিটির সাধারণ দৃশ্যগুলি বেশি ভালো। মুভিতে বেশ কিছু কমেডি সিন আছে।
বিশেষ করে Rajnikanth এবং Sanjay Dutt , Priyanka Chopra ‘র দৃশ্যগুলি বেশ চমৎকার।
মুভির গানগুলি কানে শোনার চেয়ে মুভিতে দেখতে বেশি ভালো লেগেছে। বিশেষ করে Chhammak Challo র নাচানাচি অসাধারণ হয়েছে। Akon বাবাজী গানটাও ভালোই গেয়েছেন। কারিনাও নাচসে সেইরকম।
তবে মুভিতে ছাম্মাক ছাল্লো নিয়ে কিঞ্চিৎ রহস্য আছে। Vishal-Shekhar এর কাজ বেশ ভালোই হয়েছে বলতে হবে।
মুভিটি বানানো বেশ কঠিন ছিলো। পরিচালক Anubhav Sinha ভালোই সাহস দেখিয়েছেন। তবে কাহিনীর ভিত্তি ছিল একদম দুর্বল।
গেম থেকে Ra.One বাইর হইয়া গেল? তারে থামাইতে আবার আরেকজনরে গেম থেকে বাইর করতে হবে?
মুভির HART জিনিসটা দেখলেই বুঝা যায় Iron Man থেকে ধার করা। এছাড়া একটি ট্রেন নিয়ে দৃশ্যটি কিছুটা Spider-Man 2 এবং রজনীকান্তের Robot এর কথা মনে করিয়ে দেয়। এই দুইটা কাম না করলেও পারতো।
মুভিটির জন্য শাহরুখ দারুণ খাটসে। গেম বানাইসে।
কমিক বই বানাইসে। সবচেয়ে বড় কথা মুভি হিট হোক ফ্লপ হোক ব্যাপার না। এইটা শাহরুখের নিজের বাচ্চাদের একটা শখ ছিলো। নিজের সন্তানদের জন্য একজন বাপের এই মুভি বানানোটাই একটা ভালো কাহিনী ছিল।
মুভিটি নিয়ে আগে থেকেই খুব একটা উচ্চাশা রাখিনি।
তবে শাহরুখের জন্য মুভিটা তেমন খারাপ লাগেনাই। কারণ শাহরুখ খান তো শাহরুখ খানই।
রেটিং- ২.৫ /৫
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।