মানুষকে ভালোবাসি।
(ভাষার মাসে আবার দেওয়া যায় এই লেখাটা)
শ্বশুর বাড়ী ঢুকছিলাম। পিচ্চি শালাটা আমাকে দেখে চেচিয়ে উঠলো-
-রুখ যাও! রুখ যাও!!
একটু লজ্জা পেলাম । চেহারার এমন রুক্ষ অবস্থা । ছোট শালাটাও তা ধরে গেছে।
-আরে চিন্তা করিসনা “ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী” মাখছি। চেহারা আইসা যাইবোনি। “ পিচ্চি তবু চেচাচ্ছে “রুখ যাও। রুখ যাও” আমি মনে মনে বললাম “ধুর”। এক পা এগিয়ে গেলাম আর ধপ করে গোবরের মধ্যে পারা দিয়ে বসলাম।
ছোট শালা ছুটে এসে বললো-
-হাম কেহেটি না রুখ যাও। শোনা নেহি…
আমি বললাম “ চুপ যা বেটা রুখ যা…পানি কই পামু তাই বল…
-ইধার পে পে কই পানি নেহি মিলেগা…আন্ডার মে যাও…
-আরে আন্ডা তো খামুই। শ্বশুর বাড়ী আসছি আন্ডা খামুনা…আন্ডা ভাইজা খামু…বয়েল কইরা খামু…রান্না কইরা খামু…কিন্তুক পানি কই…
আমার শালা খিক খিক করে হেসে ভিতরে চলে গেলো। আমি কোনরকমে পানি জোগাড় করে কাজ ছেড়ে ভিতরে গেলাম। ভাত খাওয়া শেষ করে বিশ্রাম করছিলাম।
একটু ঝিম ঝিম লাগছিলো। হঠাৎ বুঝলাম কেউ একজন আমার চুল, হাত, পা টানাটানি করছে আর চেচিয়ে বলছে “জিজু …জিজু…জাগ যাও …জিজু…” চোখ খুলে দেখলাম আমার শালা আরো দুয়েকটা ধরে এনে শুরু করে দিয়েছে। আমি খেপে গিয়ে তাড়া দিলাম। বিকালের দিকে পাশের বাড়ীর সুন্দর শালী এসেছে দেখা করতে। কি সুন্দর বাঙ্গালী বাঙ্গালী চেহারা।
আমি তার কাছে সব “রুখ যাও…জিজু জিজু” ঘটনা খুলে বললাম। সে আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকলো আর বললো-
-আপ হিন্দি সামঝে নেহি? কিউ?
খাটের কিনারা দিকে বসে ছিলাম। তার কথা শুনে একটু কাত হয়ে গেলাম আর ধপ্পাস করে নীচে পরে গেলাম। শালী হাততালি দিয়ে চেচিয়ে উঠলো-
-এইসে ই হোয়েগা। যো হিন্দী নেহি সামজে উস্কা এইসে ভি হয়েগা……
মাটি থেকে উঠে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম , এই বাসায় আর এক মিনিট ও নয়।
বন্ধু নাম্বারে ফোন দিলাম বন্ধু মোটর সাইকেল নিয়ে হাজির হলো। খবর শুনে আমার শ্বাশুরী ছুটে আসলো-
-ব্যাটা তু কাহা যাতাহে। মাট যাও মাট যাও। “
বন্ধুর হোন্ডার ভট ভট শব্দের সাথে শ্বাশুরীর “মাত যাও্ মাত যাও” মিলিয়ে একটা ছন্দ তৈরী হলো। সেই ছন্দে ছন্দে শ্বশুর বাড়ী ছাড়লাম।
ভাবলাম বন্ধুর বাড়ী দুইদিন থাকবো। সব ঠিক চললো শুধু ঘুমের সময় বাজে স্বপ্ন দেখি । দেখি এক গাদা লেজা আলা বাদর কেউ আমার চুল ধরে টানছে, কেউ ধরেছে হাত, পা, পেট। সবাই একসাথে চেচাচ্ছে “জিজু…জিজু…জাগ যাও…জিজু…” আমি বললাম “যা বান্দর ভাগ” । বাদর গুলো লেজ নাড়িয়ে আরো জোড়ে জোড়ে বলছে “জিজু…জিজু…জিজু…” কয়দিন না ঘুমিয়ে অস্থির হয়ে গেলাম।
ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার আমার সব শুনে মৃদু হেসে বললো-
- ওর কই বাত হে?
- আরে না আমার বাত তাত নাই্…আমার বাবার ছিলো…বেচারা শেষ বয়েছে খুব কষ্ট পেয়েছে বাতের ব্যারামে…” ডাক্তার নার্সের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো-
- মিল গ্যায়া। আদমী মিল গায়া। আম্বুলেন্স কো কল করো।
আম্বুলেন্স এসে আমাকে নিয়ে এক গুদাম ঘরে রেখে আসলো।
কারাগারের মতো গুদাম ঘর। ঘরে ঢুকেই দেখলাম অনেক গুলো সুন্দর মানুষ। কেউ রবীন্দ্র নাথ পড়ছে, কেউ বিবেকানন্দ, কেউ মীর মোশারফ হোসেন…একজন আমার দিকে দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-
- এই তাহলে শেষ জন। নাম্বার ১৯৫২।
- আমি এখানে কেনো? ১৯৫২ মানে কি? লোকটা হেসে বললো-
- সারা দেশে মোট ১৯৫২ জন আছে যারা হিন্দি বোঝেনা…হিন্দী কথা বলতে জানেনা…এরা তাদের ধরে এনে এখানে শিক্ষার ব্যবস্থা করে।
সিরীয়াল দেখানো হয়, গান, ছবি আছে…স্পীকিং কোর্স আছে…২১ দিনের কোর্স …এতেই কাজ হয়…
আমাই কাদো কাদো চোখে তাকালাম। বলে কি! সে ফিসফিস করে বললো-
-ভয়ের কিছু নেয়। আমরা ঐসব শিখিনা, কানে তুলো দিয়ে বসে থাকি। আপনাকেও দিয়ে দেবো। ।
-কিন্তু এতো খুব অন্যায়। এসবের মানি কি“
আমি রেগে প্রহরীদের দিকে ছুটে গেলাম। প্রহরীদের মুখ দেখা যাচ্ছেনা। তারা মুখ ঘুড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-আপনারা কি করছেন।
লজ্জা করেনা বাঙ্গালী হয়ে। সামনে “ফেব্রুয়ারী’ আসছে।
প্রহরী তিনজন আমার দিকে ঘুড়ে দাড়ালো। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় অবস্থা। এরা প্রত্যকেই খুব বিখ্যাত লোক।
একজন দেশের সেরা পত্রিকার সম্পাদক, একজন মিডিয়া মালিক(দুইটা টিভি চ্যানেল আর এওটা রেডিও সেন্টারের মালিক) আরেকজন নেতা। আমার মাথা ঘুড়াতে লাগলো। জ্ঞান হাড়িয়ে পরে যাবো এই অবস্থায় শুনলাম তারা কথা বলছে একে অপরের সাথে-
-“ফেব্রুয়ারী মাস আয়েগা তো কেয়া হোগা? –মেরা ভাইকা রক্ত রাঙ্গানো একুশ ফেব্রুয়ারী…কেয়স্যা মে ভুলি…হা হা হা”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।