shamseerbd@yahoo.com
রাস্তায় দাঁড়িয়ে এভাবে সিএনজির জন্য অপেক্ষা করতে করতে হিমুর মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। এই ঢাকা শহরটা আসলেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে, মনে মনে এই কথা ভাবতে না ভাবতে একটা পুলিশের জীপ তার সামনে এসে হার্ড ব্রেক করল। চমকে তাকাল, আর মনে মনে পুলিশ কে একটা গালি দিল । পুলিশ যে কবে মানুষ হবে।
দরজা খুলে নেমে আসল ওসি ইদ্রিস।
হিমু বললে যে কাউ কে যেকোন সময় কবর থেকে তুলে নিয়ে আসবে এই ইদ্রিস- তার নিজের মুখে বলা কথা । তার একটায় আফসোস হিমুকে সে কখনো নিজের বাসায় ভাল মন্দ খাওয়াতে পারলোনা । এটা না পারলে সে মরেও শান্তি পাবেনা এমন কথাও অলরেডি হিমুকে জানানো হয়েছে- তারপরও সে এই সুযোগ পায়নি ।
আজকে বাসার কাছাকাছি হিমু কে পেয়ে সে মনে মনে খুশী হয়ে আছে। আজকে হয়ত সেই শুভ দিন , হিমু কে বাসায় নিয়ে ভাল মন্দ খাওয়াবে।
হিমু ইদ্রিস’র দিকে তাকিয়ে আছে, থানার ওসি গুলো চেহারার এমন বিকট আর বিশ্রী কি করে হয় সে ভেবে পায়না, তার উপর মুখের দুপাশ দিয়ে পানের রস পরছে। এ লোক যেভাবে এগিয়ে আসছে মনেত হয় তাকে জড়িয়ে ধরবে । কিন্ত কে এই লোক ? হিমু মনে করতে পারছেনা।
ইদ্রিস সত্যি সত্যি হিমু কে এসে জড়িয়ে ধরল, তার হাতে চুমু খেল, গাড়িতে কনস্টেবলরা না থাকলে সে হয়ত হিমুকে পায়ে ধরে সালামও করত । তারাত আর জানে না এই বুজুর্গ লোকের কথা ।
টহল পুলিশ একদিন হিমুকে ধরে এনে লকাপে পুরে দিল । ওসি ইদ্রিস জানতে চাইল ও কি করছে। কনস্টেবল জানাল স্যার এই হারামজাদারে দেইখা কেমন সন্দেহজনক মনে হইতাছে, তাই ধইরা নিয়া আসছি, দুই বাড়ি দিলেই সব কইয়া দিব।
লকাপের ভেতর থেকেই হিমু বলে উঠে আমাকে হারামজাদা বলবেননা, আমার বাবা হচ্ছেন অমুক আর মায়ের নাম.......
হিমু কথা শেষ করার আগেই ইদ্রিস লাঠি নিয়ে লকাপের দরজা খুলতে লাগল।
আপনার মন খারাপ , তাই বলে আপনি আমাকে পিটাইলেত মন ভাল হবেনা।
আপনার বাচ্চা কাচ্চা নেই-বউ কে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন , এই রাগ আমার উপর ঝাড়লেত আর বাচ্চা হবেনা ।
আকাশ থেকে পরা বলতে যা বোঝায় ইদ্রিসের চেহারা দেখলে তাই মনে হবে । নিজের চেয়ারে ফিরে গেল সে, কিছুটা থতমত। কনস্টেবলকে বলল লকাপ খুলে হিমুকে তার সামনে নিয়ে আসতে।
আপনি এসব কি বললেন ?
হিমু নিস্পৃহ ....।
আপনি কি করে জানলেন।
উত্তর না দিয়ে হিমু বলল- আপনার বউকে বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন, আপনার একবছরের মাথায় বাচ্চা হবে।
থানা থেকে বের হয়ে কিছুক্ষন ধানমন্ডী লেকের পাড়ে হাঁটাহাঁটি করল হিমু ,আর ওসি ইদ্রিস সন্ধ্যায় অফিস থেকে বের হয়ে শ্বশুড় বাড়ি যাবার জন্য বাস ধরল।
বছর খানিক পরেই ওসি এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের পিতা হল, তার চাকরি বাকরির প্রতি তেমন একটা মন নেই, বউ বাচ্চা নিয়েই বেশী টাইম কাটায়, থানা চালায় সেকেন্ড অফিসার। এমনি সময় আরেকদিন হিমু থানায় আসল, আগেও কয়েকবার এসেছিল নানা কাজে, ঢুকেই ইদ্রিস এর সামনে বসে বলল চা দিতে।
আবেগে আপ্লুত ইদ্রিস পুরা থানার জন্য বিরিয়ানির অর্ডারও দিয়ে দিল।
হিমু তাকে নিচু গলায় বলল ভবিষ্যত ভালনা আপনার, ট্রান্সফারের চান্স আছে। ইদ্রিসের লাইন ঘাট ভাল, কিছুক্ষনের মাঝেই সে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে টাকা পয়সা দিয়ে সব ম্যানেজ করে ফেলল। তার পর থেকে আর হিমুর সাথে তার দেখা হয়নি।
হিমু আজকে ইদ্রিসকে চিনতে পারছেনা।
ইদ্রিস যেন আবার আকাশ থেকে পরল। সে ও ভাবল হিমুর শরীর খারাপ। আপনি আমার বাসায় চলেন, আমার বউ আপনার মাথায় পানি ঢাইলা দিব, মাথা ঠান্ডা হইলে সব ঠিক হইয়া যাইব- হড়হড় করে বলে চলে ইদ্রিস।
আপনাকে আমি চিনতে পারছিনা বলে হিমু অন্য দিকে হাঁটা ধরে- আর ইদ্রিসের মনে হল কেউ যেন তার মাথায় বাড়ি দিয়েছে, হিমু তাকে চিনতে পারছেনা, ইদ্রিসের চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে, কনস্টেবলরা হতভম্ব, তারা কিছুই বুঝতে পারলনা ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।