একসময় কান পেতে পশ্চিমের আর্তনাদ শোনতাম। কিন্তু এখন আর কান পাততে হয় না। সচারাচর শুনি, পশ্চিম আর্তনাদ করে চলেছে। এ আর্তনাদ বাঁচাও বাঁচাও রবে চিৎকার ধ্বনি নয়, হতাশা থেকে জন্ম নেয়া কোনো হাহাকারও নয় এটি। এ চিৎকার অতলান্তিকে ডুবতে বসা অশুভ দানবের বিশ্বকে গ্রাস করার শেষ চিৎকারধ্বনি।
হাত পা ছুড়ে দানব সমানে চিৎকার করছে। ধ্বংসের ভগ্নস্তুপ থেকেও তার পাশবিক জিহ্বা শান্তিপ্রিয় মানুষের দিকে লকলকিয়ে ধেয়ে চলেছে। বিশ্বকে শেষ করে তবেই সে ক্ষান্ত হবে!
পশ্চিম মানে ভিন্ন এক জগত। পশ্চিম মানে সভ্যতার নামে নগ্নতার বেসাতি। পশ্চিম এক বিস্ময়কর জগত, জ্বলন্ত এক অগ্নিকুণ্ড।
নারীতে-নারীতে আর পুরুষে-পুরুষে সমকামিতার ছড়াছড়ি সেখানে।
ধর্মালয় মানুষের শুদ্ধতা-সুস্থতার লালনকেন্দ্র। অসুস্থ মানসিকতায় আক্রান্ত পাপী ধর্মালয়ে যায় শুদ্ধ হতে। অস্থির আত্মা শান্তি খোঁজে ধর্মাঙ্গনে। ধর্ম মানুষকে পরিশীলিত করে।
দেয় শান্তি ও স্বস্থির অনুসন্ধান।
ধর্ম মানুষের ভেতর লালিত নানা অশুভ, অসহিঞ্চু চেতনাকে দুরীভূত করে বিশুদ্ধতার মোড়কে। ভাল, কল্যাণ, সম্প্রীতি এসব কিছুর চর্চা করে ধর্ম, চর্চা হয় ধর্মাঙ্গনে। কিন্তু যে ধর্মালয় পতিতাপালন কেন্দ্র হয়, বেশ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়, সে ধর্ম ও সভ্যতার আর কি বাকি থাকে? কি পরিণতি তাদের জন্য অপেক্ষা করে? আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবি, যে গির্জায় যৌনতার চর্চা হয়, প্রেমিক তার প্রেমাস্পদের সাথে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য গির্জাকে মনে করে নিরাপদ, ওদের কি অবস্থা?
ঈশ্বরের কৃপা পেতে যে মেয়েকে গির্জার নামে উৎসর্গ করে দেয়া হয়, পশ্চিমে তারা পরিণত হয় গির্জার ব্যক্তিগত সম্পদে। বাইরের দুনিয়া তাদের জন্য নিষিদ্ধ।
তাদের আছে বিশেষ সামাজিক মর্যাদা। তাদের দিকে সরু চোখে তাকানো অন্যদের জন্য নিষেধ। বাইরের কারো সাথে তারা মিশতে পারে না অবাধে। কিন্তু ভিন্ন জগতের জন্য নিষিদ্ধ এ নারীগুলো নিজেরাই বাস করে নিষিদ্ধপল্লীতে। মার্কিন উচ্চআদালতে দায়ের করা এক নানের আর্জিতে বলা হয়েছে, কীভাবে কামুক পাদ্রীরা কুমারী নানদের ওপর পাশবিক আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
পাশ্চাত্যের আদালতে এ রকম হাজারো আরজি পড়ে আছে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
পশ্চিমের গির্জার অন্ধকার দিক বাইরের দুনিয়া কমই অবগত। এসব খবর বাইরে আসে না, সচেতনভাবে আসতে দেয়া হয় না। সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ র. তাঁর আমার দেখা আমেরিকা [আমেরিকা আললাতি রায়াইতু] যা ছাপা হয়নি, বলা হয় বৈরুতের প্রেস থেকে আমেরিকান এম্বেসির লোকেরা বইটির পাণ্ডুলিপি চুরি করে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে। রিসালা সাময়িকীতে তার কিছুঅংশ ছাপা হয়েছিলো।
তিনি লিখেছেন, [উল্লেখ্য উস্তাদ সাইয়্যেদ কতুব শহীদ মিশর সরকারের শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে দু’বছর আমেরিকায় ছিলেন] পাশ্চাত্যে যুবকরা তাদের প্রেমিকার সাথে, প্রেমাষ্পদের সাথে সাক্ষাৎ করতে হলে গির্জায় গিয়ে মিলিত হয়। গির্জা হলো প্রেমের অভয়ারণ্য।
আবদুল্লাহ আয্যাম শহীদ র. বলেন, যে সমাজে ঘুণ ধরেছে, ধ্বংসের উপক্রম হয়েছে, সে সমাজের অবস্থা এমন ভয়াবহ নাজুকই হয়।
পাশ্চাত্যের নগ্নতা, অশ্লীল যৌনচার আর মানবস্বভাবের স্বাভাবিক রীতি বিরুদ্ধ কালচার এতো বিস্তৃত, পশুপ্রবৃত্তিকে তা ছাড়িয়ে গেছে। পাশ্চাত্যকে কোনো পশুর সাথে তুলনা করলে বাকসম্পন্ন পশু চিৎকার করবে, না না আমাকে দয়া করে পাশ্চাত্যের সাথে তুলনা করো না।
আমি পশু বটে, তবে পাশ্চাত্য নই!
সেসব দেশে বিবাহিত ও অবিবাহিত নারী-পুরুষ তথাকথিত স্বাধীনতার তরঙ্গে ভেসে চলেছে। পাশ্চাত্য, পাশ্চাত্যানুসারী দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিন্না যৌবনা যুবতীরা অদ্ভুত একখণ্ড কাপড় পরে, যা হাঁটুর ওপরও দশ সেন্টিমিটার উন্মুক্ত থাকে। অথচ এরা নারী। উদ্ভীন্না যৌবনা রূপসী।
উস্তাদ আয্যাম র. তাফসিরে লিখেছেন, একবার আমি ইস্ট ইউনিভার্সিটিতে [East University] গেলাম।
আসরের ওয়াক্ত। বাথরুমে গেলাম অযু করবো। দেখলাম কোনো বাথরুমেই দরজা নেই। না পুরুষের বাথরুমে, না নারীদের বাথরুমে। সবগুলোরই একই অবস্থা।
এটা কীভাবে হতে পারে? কীভাবে সম্ভব?
পাশ্চাত্যে কি না হয়? পুরো পশ্চিম জুড়ে অবাধ যৌনাচার, নেশা, মদ-মাদকতা আর অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। পাশ্চাত্যে ২ কোটি ৫০ লাখ সমকামী রয়েছে। শুধু নিউইর্য়কের এক তৃতীয়াংশ লোক সমকামী। আহমদ দিদাত লিখেছেন, তাদেরকে সুভাষিত করে আখ্যায়িত করা হয় গে নামে। Gay মানে আনন্দ।
অথচ শব্দটি আজ নোংরা-অশ্লীলতায় ভরা, ভদ্রসমাজে উচ্চারণ অযোগ্য।
পাকিস্তানের প্রাক্তন বিচারপতি আল্লামা মুহাম্মাদ তকি উসমানি তার ভ্রমণবিষয়ক গ্রন্থ জাহান দিদাহতে তুলে ধরেছেন পাশ্চাত্যজগতের চারিত্রিক ও সামাজিক নৈতিক অবক্ষয়ের ভয়াবহ অন্ধকারময় দিকটি।
মুফতি সাহেব লিখেন, ‘শুধুমাত্র বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেই নয়, বরং আলোকিত সড়কে, লোকারণ্য বাজারে, ট্রেনে, বাসে ও জনসমাগমের স্থানে সর্বসাধারণের সম্মুখে চুম্বন, আলিঙ্গন-জৈবিকস্বাদ উপভোগ করা তাদের এক সাধারণ ব্যাপার। সারাদিনে যার পাঁচ-সাতটা দৃশ্য ইচ্ছায় অনিচ্ছায় চোখে পড়বেই। নারীদের নগ্নতা দোষের হওয়া দূরের কথা, হয়তো গর্বের বিষয় মনে করা হয়।
তাদের দেহে কাপড় নামে যা কিছু থাকে, লজ্জা নিবারণের দৃষ্টিতে তার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না।
বিশেষ বিশেষ স্থানে উলঙ্গ হওয়ায় কোনো দোষ মনে করা হয় না। জায়গায় জায়গায় Nude Dancers [উলঙ্গ নর্তকী]-র সাইনবোর্ড স্বগর্বে ঝুলানো দেখা যায়। পোস্টার ও হ্যান্ডবিল Beauty Parlous [রূপসীদের সমাবেশ] নামে খোলাবাজারে প্রকাশ্যে বিতরণ করা হয়। নিউইয়র্কের একটি বাজার অতিক্রমকালে একটি হ্যান্ডবিল [Handbill] আমাদের ন্যায় মৌলবীদের হাতেও গুঁজে দেয়া হয়।
তাতে কয়েকটি নগ্ন ছবির সঙ্গে বোল্ড টাইপে লেখা ছিলো- Play with our bodies!
লেখাটি কি একজন ভদ্রলোকের পাঠযোগ্য? জৈবিক চাহিদা পূরণের পদ্ধতিতে এ জাতি নিঃসন্দেহে কুকুর-বিড়ালের পর্যায় অতিক্রম করেছে। উপরন্তু বিস্ময়কর ও চূড়ান্ত শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, নারী যে সমাজে এতো সস্তা, তাকে ভোগ করা এতো সহজ, অনৈতিক যৌনাচারের জন্য নির্জনতাও প্রয়োজনীয় নয়, স্বেচ্ছাব্যভিচার আইনগতভাবে তো নয়ই, সমাজ কিংবা বিবেকের দৃষ্টিতেও কোনোরূপ দোষণীয় নয়, এ সমাজেই আবার বলপূর্বক ধর্ষণের এতো অধিক ঘটনা ঘটে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ’
আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মাইকেল প্যারেন্টি, যাকে মার্কিন শাসকশ্রেণীর দ্বিমুখী কপটনীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট মতামত প্রকাশের অপরাধে [!] বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের স্বঘোষিত নিশানবরদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না, তিনি তাঁর বিখ্যাতগ্রন্থ আগলি ট্রুথসের [অপ্রিয় সত্য] Hidden Hlocaust : USA- 2001 অধ্যায়ে অন্ধকার পাশ্চাত্যের কিছু গাণিতিক পরিসংখ্যান উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৭ লাখ মহিলা ধর্ষিতা হয়। প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে সেখানে একজন মহিলা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।
এটি সরকারি হিসেব, যারা অভিযোগ পেশ করেন তাদের সংখ্যা। এমন কতজনই তো আছেন, যারা এসব তিক্ততা হজম করেন গোপনে-নিরবে!
পাশ্চাত্য যা করে বড় করেই করে। ঈশ্বরকে যতোটুকু তুলে ধরে, শয়তানকেও ততো ঊর্ধ্বে তুলতে দ্বিধা বা সংকোচবোধ করে না। জিমি সোয়াগট নামের যাজক সাহেব তার গবেষণা গ্রন্থ Homo Sexuality [সমকামী]-তে লিখেছেন, আমেরিকা! ঈশ্বর একদিন তোমার বিচার করবেন, ঈশ্বর তোমাকে ধ্বংস করবেন। তিনি যদি তোমার বিচার না করেন, তবে তাকে সেইসব সমকামী দুঃশ্চরিত্রবানদের নিকট ক্ষমা চাইতে হবে, একদা বিকৃত রুচি ও সমকামিতার জন্য তিনি যাদেরকে ধ্বংস করেছিলেন।
ইংল্যাণ্ডে কি হয়? লিখেছেন ইংরেজ লেখক- জর্জ র্যালি স্কট, বেশ্যাবৃত্তির ইতিহাস গ্রন্থে। পেশাদার নারীদের বাদ দিলেও আরেক শ্রেণীর নারী আছে। এদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তারা তাদের আয়-উপার্জন বাড়ানোর জন্য আনুষঙ্গিকরূপে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। হয়ে পড়ে যৌন উন্মাতাল।
এটা এখন মেয়েদের ফ্যাশন। বিবাহের পূর্বে নিঃসঙ্কোচে অপরের সাথে যৌনসর্ম্পক স্থাপন তাদের দৃষ্টিতে কোনোরূপ অসঙ্কোচের বিষয় নয়।
কয়েক বছর আগে ক্যামারুনের ইউয়াণ্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-তত্ত্ব বিভাগের এক অধ্যাপক দশ বছর জার্মানিতে থেকে পাশ্চাত্যকে অভিহিত করেছিলেন কুকুর সভ্যতা বলে। উক্তিটি বর্ণবাদী মনে হলেও প্রফেসরের দশ বছরের গবেষণাপত্র অধ্যয়ন করে বুঝেছি, খুব বেশি বলেননি অধ্যাপক। কুকুরের মাঝে সভ্যতা না থাক, তবুও তারা পাশ্চাত্য নয়!
পাশ্চাত্যে যৌনতা এক শিল্প।
একে বলা হয় Art. সামাজিক উন্নতি নির্ভর করে এ শিল্পের বিকাশের ওপর। তাই পাশ্চাত্য অকৃপণভাবে, মুক্ত-উদারভাবে বিকশিত করে চলেছে তার যৌনশিল্পকলা। মানুষের সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তা-চেতনার ধারণাতীত উপায় ও কলা-কৌশলে বিস্তৃত হয়ে চলেছে তার বিকৃত রুচির নগ্ন-যৌনতা। অতলান্তিক পেরিয়ে এ কামকলা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের দিকে দিকে। কালো আফ্রিকায়, মরুবালুর দুবাই কিংবা আরব সীমানাঘেঁষা মিশর অথবা আমাদের ছোট্ট ক্যানভাসের অজপাড়া গাঁয়ও।
ইন্টারনেটের বেতারে ছড়িয়ে পড়ছে তা ইথারে-ইথারে।
যৌন মাতলামির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে মরণ নেশার ভয়াল থাবা। পাশ্চাত্যের ব্র্যান্ডি কিংবা হুইস্কি, রাশিয়ার ভদকা মানুষের রক্তধারায় বিষাক্ত নীল ছড়িয়ে দিচ্ছে মুক্তবাজার অর্থনীতি আর বিশ্বায়নের ডামাডোলে। পশ্চিমে এগুলো কালচার, উন্নতির সোপান! টেবিলে সাজানো কিংবা শেলফ ভর্তি সারি সারি মদের বোতল। আশপাশে দু’চারটে গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড।
পশ্চিমে এগুলো জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পরিবার বা পারিবারিক ধারণা সেখানে সেকেলে। কি দরকার অযথা কোনো নারীর, কিছু বাচ্ছা-কাচ্ছার দায়ভার গ্রহণ করার! চাইলে যা এমনি পাওয়া যায়, দায়িত্ববোধের মধ্যে তা টেনে নেয়ার কোনো মানে হয়?
সম্প্রতি রাশিয়ায় চালু হয়েছে রেন্ট-এ-হ্যাজব্যাণ্ড। স্বামীদের মজুরির একটা স্ট্যান্ডার্ড রেটও নির্ধারিত আছে। প্রথম দু’ঘণ্টা ৫০০ রুবল।
পরবর্তী প্রতিঘণ্টা ২০০ রুবল। এর মানে কিন্তু এই নয় বিয়েযোগ্য স্বামীর অভাব সেখানে। বরং খণ্ডকালীন, সাময়িক ও মেয়াদী স্বামী পাওয়া যাচ্ছে বেতনভিত্তিক। চাইলে বদলানো যাচ্ছে যখন তখন। নারী পাল্টাচ্ছে পুরুষ, পুরুষ পাল্টাচ্ছে নারী।
পুরো পশ্চিম জুড়েই চলছে অদল-বদলের খেলা।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম, হেরোইন ও নেশাজাত দ্রব্য চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত সিআইএ। হাজার কোটি ডলারের এ মার্কেটে বেনামে আছে সিআইএ-র আধিপত্য। জাতিসংঘ বলছে আফগানিস্তানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পপি চাষে সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। পপি থেকে উৎপন্ন হয় ভয়াল নেশা হেরোইন, আফিম ইত্যাদি।
সিআইএ এগুলো কালোবাজারি করে আয় করে লাখ লাখ পশ্চিমী ডলার। পরে এসব অর্থ ছড়িয়ে দেয়া হয় ল্যাতিন আমেরিকার সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর পাশ্চাত্যপন্থী বিদ্রোহী গ্র“পগুলোর মাঝে, মার্কিন স্বার্থে এরা কাজ করে। এছাড়া ব্যয় হয় ইরাক ও আফগানিস্তানে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নির্মূলে। পেন্টাগনের আর্কাইভ থেকে নানা সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন নথি ঘেঁটে পাওয়া গেছে ভয়াবহ এসব তথ্য।
পশ্চিম কি? আমার কাছে প্রথম প্রশ্ন ছিলো এ রকম।
পশ্চিম কেন রক্তের গন্ধে মাতাল হয়ে যায়? পশ্চিমকে নিয়ে আমি পড়েছি। বছরের পর বছর গভীর অধ্যয়ন করেছি। বিশেষ করে ৯/১১ পর যখন পশ্চিম তার অশুভ দন্তনখরে ক্ষত-বিক্ষত করতে লাগলো মুসলিম উম্মাহর হৃদপিণ্ড। কখনো আরবে, কখনো আজমে। পশ্চিমের থাবা বিস্তৃত হয়েই চললো।
অরক্ষিত হয়ে পড়লো মুসলিমবিশ্বের প্রতীকী মানচিত্রগুলো। ইসলাম থেকে বঞ্চিত হয়েও মুসলমানরা তখনো পর্যন্ত যাতে স্বস্থির শ্বাস ফেলার অবকাশ পেতো!
ধীরে-নিরবে, শত বছরে পশ্চিমের যে কর্মপরিকল্পনা মুসলিমবিশ্ব ঘিরে, মরু আরবের বালুমাটি, তার পরিবেশ-প্রতিবেশ ঘিরে এগিয়ে চলছিলো, হঠাৎ করেই তা সুনামির তাণ্ডব পেলো। আমি এর মূল জানার জন্য পশ্চিমকে আমার থিসিসের বিষয়বস্তু করেছি। পশ্চিমকে নিয়ে অধ্যয়ন করতে গিয়ে পরিচিত হয়েছি তাদের থিঙ্কট্যাঙ্কের সাথে। যারা পশ্চিমে বাস করে, পশ্চিমে খায়।
চিন্তা করে পশ্চিমী মাথা নিয়ে। এমনসব লোকের সাথেও আমার পরিচয় হয়েছে, যারা পশ্চিমে বাস করে না ঠিকই, কিন্তু পশ্চিম থেকে আলাদা কোনো রূপ তাদের নেই। তাদের ভাষা ভিন্ন, সংস্কৃতি ভিন্ন, রঙ-বর্ণ ভিন্ন, তবুও তারা পশ্চিমের। চিন্তা-চেতনা, কর্মকাণ্ড কিংবা আকার-অবয়বে শতভাগ পশ্চিমী তারা।
আমি তাদেরকে জেনেছি-বুঝেছি, মূল্যায়ন করেছি নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গিতে।
তাদের রচনায় পশ্চিম কিভাবে উঠে এসেছে, তা পর্যালোচনা করেছি। মার্কিন প্রফেসর নোয়াম চমস্কি, বৃটেনের আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিশ্লেষক রবার্ট ফিস্ক, আধুনিক ক্রুসেডের বাইবেল ক্লাস অব সিভিলাইজেশনের প্রবর্তক ইহূদি প্রফেসর স্যামুয়েল পি হান্টিংটন, কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের প্রফেসর এডওয়ার্ড সাঈদ, মারওয়ান আল বাকলান, মিশরের নোবেলজয়ী নাগিব মাহফুজ এরকম আরো কত শতজন। তাদের সবার রচনা বিশ্লেষণ করেছি, জেনেছি পশ্চিম কী? কী তার রূপ-অবয়ব?
পশ্চিমে সাহিত্য মানেই যৌনতা। সেটা গল্প হতে পারে, উপন্যাস হতে পারে, হতে পারে কবিতা কিংবা থ্রিলার, এমনকি হরর কাহিনী। তাতে যৌনতা থাকবেই।
নারী দেহের বর্ণনা ছাড়া পশ্চিমে সাহিত্য অচল-নিরস। পশ্চিমের চলচ্ছিত্র জগত যেন দুনিয়া থেকে ভিন্ন কিছু। পশ্চিমী চলচ্ছিত্র মানে অশ্লীল কিছু। নগ্নতা আর বেহায়াপনার ছড়াছড়ি। হলিউড হচ্ছে এসবের আখড়া।
হল্যাণ্ডে যে সকল ছবি নির্মিত হয়, তাতে পর্ণোগ্রাফির কোনো না কোনো ক্লিপ থাকবেই। সেখানে আছে ন্যুড টিভি, আছে বিকিনি পরা নগ্ননারী দেহের প্রদর্শনী। পশ্চিমি টিভি চ্যানেলগুলোর এ অবাধ যৌনপ্রদর্শনী যেকোনো সুস্থ বিবেক, শুদ্ধ আত্মাকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলবে নিঃসন্দেহে। অথচ বিশ্বায়নের অশুভ থাবায় তা বিস্তৃত আমাদের ভূগোলেও।
পশ্চিমী যৌনতার উন্মত্ততা কত ভয়াবহ তা মানুষ স্বাভাবিক চিন্তায় ধারণাও করতে পারবে না।
পশ্চিমে মানুষের পরিচয় কেবল নারী আর পুরুষ। কে পিতা, কে মাতা, কে ভাইবোন, আর কে স্বামী-স্ত্রী তার কোনো বাছবিচার নেই সেখানে। পশ্চিমী বর্ণবাদী বিদ্বেষের নানা কথা প্রচলিত হলেও কেবল যৌনতার বেলায় নেই সাদা-কালোর কোনো ব্যবধান। আছে নারী সমকামী, আছে পুরুষ সমকামী, আছে বহুগামী। এরা সবাই বাস করে পশ্চিমে।
সেখানে তাদের জন্য যথার্থ স্বাধীনতা আছে। আছে পশু প্রবৃত্তির সমাজব্যবস্থা। আছে ন্যুড পার্ক, ওপেন হাউস, আছে ন্যুড কলোনী। মানুষ আদলের এই লোকগুলো এখানে প্রবেশ করে জামা কাপড় খুলে। পুরুষ এবং নারী! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।