মত প্রকাশের মুক্ত মাধ্যম তৈরী হোক ১১.১১.১১
মিডিয়ার কাছে প্রশ্ন
এবারের শোলাকিয়া ঈদের জামাত কি সত্যিই সর্ববৃহৎ ছিল ?
(সর্বোচ্চ ১০ হাজার মুসল্লী হয়েছিল)
টিভিতে দেখে, পেপারে পড়ে, লোকমুখে শুনে মনের মধ্যে অদম্য ইচ্ছা এবং অন্য রকম একটা কৌতুহল ছিল। আল্লাহ যদি তওফিক দান করেন, তবে শোলাকিয়াতে ঈদের নামাজ পড়ব। শোলাকিয়া থেকে আমার বাড়ি অনেক দূরে হওয়াতে এবং পারিবারিক ব্যস্ততার কারনে সেটা আর সম্ভবপর হয়ে উঠছিল না। আল্লাহ্র অশেষ মেহেরবানীতে এবারের ঈদুল আযহাতে আমার সে ইচ্ছা পূর্ণ হয়।
আব্বা-মা, দু’জনই হজ্জে যাওয়াতে পরিবারের একক সদস্য হিসেবে পিছুটানহীন আমি ঈদের আগের দিন রাত আটটার দিকে মানিকগঞ্জ থেকে (৬ নভেম্বর) কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তরঙ্গ বন্ধু পরাগ এর বাড়িতে যাই।
ওই রাতেই দিনাজপুরের বিরল থেকে এসে আমাদের সাথে যোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অনুজপ্রতীম ছোট ভাই শাহীন। আমাদের সবার লক্ষ্য একটাই- ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে লাখো লাখো মানুষের সাথে জামাতে ঈদের নামাজ পড়ব।
এদিকে বন্ধু পরাগ রাত এগারটার দিকে তাড়া দিল, তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে। ছয়টার মধ্যে শোলাকিয়াতে না পৌছাতে পারলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে হতে পারে। কাজেই সবাই ভোর সাড়ে চারটায় ঘড়ির অ্যালার্ম দিয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লেও আমার আর ঘুম আসে না।
আমার শঙ্কা- ঘড়ির অ্যালার্ম যদি না বাজে ! যা-ই হোক, নির্ঘূম রাত কাটিয়ে আমি ভোর সাড়ে চারটার দিকে ওঠে পড়লাম। সবাইকে ঘুম থেকে জাগাতে প্রায় সাড়ে পাঁচটা বেজে গেল। গোসল শেষে ফজরের নামাজ পড়ে রেডি হয়ে আন্টির হাতের (পরাগের আম্মা) সেমাই খেয়ে বাসা থেকে বের হলাম। ঘড়ির কাটায় তখন ৬ টা ৫৫ এর মত। ইতোমধ্যে আমাদের জন্য ভাড়া করা মাইক্রোবাসটি এসে হাজির।
সাতটার দিকে পাকুন্দিয়া থেকে মাইক্রোবাস ছাড়লো। মাইক্রোবাসের অনেকেই আশঙ্কা করছিল -এত বেলা হয়ে গেল, এবার মনে হয় আমাদের রাস্তায়ই নামাজ পড়তে হবে। আমরা সাড়ে সাতটার দিকে কিশোরগঞ্জ শহরে পৌছে গেলাম। রাস্তায় ২/৪ জন পুলিশ সদস্যের দেখা মিললেও আমরা নির্বিঘ্নে ময়দানের কাছাকাছি চলে গেলাম। ময়দান থেকে ১০০ গজের মধ্যেই আমাদের গাড়ি পার্ক করে সকাল পৌনে আটটার দিকে আমার বহূল আকাঙ্খিত শোলাকিয়া ময়দানে প্রবেশ করলাম।
(উল্লেখ্য, গেটে পুলিশ থাকলেও কোনো নজরদাড়ি বা কড়াকড়ি লক্ষ্য করিনি। )
সকাল পৌনে আটটার দিকে মাঠে প্রবেশ করে দেখি সমগ্র মাঠে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ২৫-৩০ জন মানুষের বেশি হবে না। আর মিনারের (এলিট পিপল অর্থাৎ “সম্ভ্রান্ত মানুষদের” জন্য তৈরি দ্বিতল মিনার) দেতলায় ৩ জন মাইকের সাউন্ড ঠিক করছেন এবং নিচতলায় দূর-দূরান্ত থেকে আগত ১০/১৫ জন মুসল্লী বসে আছেন। আটটা পর্যন্ত মাঠের চেহারা প্রায় একই রকম ছিল। সোয়া আটটার দিকে একজন মাওলানা (নাম মনে নেই, ৩৫-৪০ বছর বয়স্ক) বয়ান শুরু করেন।
তখন আস্তে আস্তে মানুষ লাইন করে ময়দানে বসতে শুরু করেন। আটটা ৪০ এর দিকে তিনি বয়ান শেষ করেন। ওই সময় পেছন ফিরে ভাল করে তাকিয়ে দেখি, মাঠের ৫/৬ ভাগের এক ভাগও পূরণ হয়নি। আমি তখন কিছুটা উদ্ভ্রান্তের মতো চিন্তা করছিলাম- আমি কি সত্যিই শোলাকিয়া ময়দানে এসেছি? পরে পৌনে নয়টার দিকে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বয়ান শুরু করেন। নয়টায় জামাত শুরু হওয়ার আগে তিনি ২/৩ বার মাইকে ঘোষনা দেন, “এখন নামাজ শুরু হচ্ছে” ।
ঠিক তখন পেছন ফিরে ভাল করে তাকিয়ে অনুমান করার চেষ্টা করলাম, দেখলাম বড়জোর মাঠের ৪ অথবা ৫ ভাগের এক ভাগ পূরণ হয়েছে। নামাজ ও মোনাজাত শেষে যখন ফিরছিলাম, তখন পরাগসহ অনেকেই আমাকে উদ্দেশ্য করে বলাবলি করছিল, “আসলে এবার যে কি হলো ! রোজার ঈদে তো রাস্তায়ই এর চেয়ে বেশি মানুষ নামাজ পড়ে। এক কাজ করো, তুমি আগামী রোজার ঈদে আবার আসো, ওই সময় দেখো কত মানুষ হয়। ” সবাই ভাবছে, আমার আশা ভঙ্গ হয়েছে, আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
পরে চিন্তা করলাম, টিভি চ্যানেলগুলো কি করে একটু দেখি।
পরাগদের বাসায় ফিরে সবগুলে টিভি স্ক্রলবারে দেখি, “ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত, লাখো মুসল্লীর ঢল”। পরে চিন্তা করলাম, দেখি পত্রিকাগুলো কি লেখে ? পরে ১০ তারিখে সবগুলো পত্রিকা দেখলাম। ওই একই সুর...... “শোকিয়ায় বৃহত্তম জামাত, লক্ষাধিক মুসল্লীর সমাগম”
সত্য-মিথ্যা বিচারের ভার ছেড়ে দিচ্ছি আপনাদের ওপর। তবে আমি মাঠে উপস্থিত অনেক স্থনীয় লোকের সাথে কথা বলেছি। কেউ বলেছেন এবারের জামাতে ৮ হাজার, কেই ৫ হাজার, কেই ১০ হাজার, কেউ বা ৭ হাজার লোকের সমাগম হয়েছিল বলে অনুমান করেছেন।
তবে কেউই ১২ হাজারের বেশি লোক হয়েছে এমন কথা বলেননি।
তবে আমি ছবির মাধ্যমে একটা হিসাব আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আমি দ্বিতীয় সাড়িতে নামাজ পড়েছি। মিনারের ঠিক মাঝখানের একটু ডান পাশে আমার অবস্থান ছিল। আমি এবং আমরা গননা করে দেখেছি, আমার ডানপাশে ৫২/৫৫ জন লোক ছিল।
সে হিসেবে বাম পাশে ৬৫ জন (৫৫+১০) লোক ছিল। অর্থাৎ একটা সারিতে ১৩০ জন লোক ছিল। কিন্তু আমি ধরে নিলাম, একটা সারিতে ১৬০ জন করে মুসল্লী ছিল। আমি নামাজ শেষে মোনাজাতের আগে গননা করার চেষ্টা করে দেখেছি, ৩৩/৩৪ টা সারি রয়েছে। ধরে নিলাম, ৪০টা সারি ছিল।
সে হিসেবে মাঠে (৪০*১৬০) ৬ হাজার ৪০০ অর্থাৎ সাত হাজার লোক ছিল।
মিনারের দোতলায় “এলিট পিপল“ ছিল ৩০০ জনের বেশি না। নিচতলায় কিছুসংখ্যক লোক ছিল। সাকুল্যে মিনারে ৫০০/৭০০ অথবা এক হাজারের বেশি লোক ছিল না।
তাহলে মোট মুসল্লীর সংখ্যা দেখা যাচ্ছে আট হাজারের বেশি ছিল না (৭,০০০+১,০০০)।
এদিক-সেদিক মিলিয়ে আমরা সর্বোচ্চ ১০ হাজার মুসল্লী শোলাকিয়া ময়দানে এবারের ঈদুল আযহার নামাজ পড়েছেন বলে ধরে নিতে পারি।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আট হাজার অথবা ১০ হাজার মানুষ যেখানে নামাজ পড়লেন, সেটা কি আদৌ বৃহত্তম জামাত কিনা ? বাংলাদেশের আরোও কোনো জায়গায় এর চেয়ে বেশি মুসল্লী একসাথে নামাজ পড়েছেন কিনা? মিডিয়াগুলো কি স্বপ্নে থেকে দেখেছেন - এবারে লক্ষাধিক মুসল্লীর সমাগম হয়েছিল ? আর যদি তা না হয়, তাহলে মিডিয়াতে মিথ্যাচার করা হচ্ছে কিনা ? আমি শুনেছি, ঈদুল ফিতরে লক্ষাধিক মুসল্লী হয়, কিন্তু ঈদুল আযহায় মানুষ তুলনামূলকভাবে কম হয়। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, তাদের জানামতে সবচেয়ে কমসংখ্যক মুসল্লী এবার এখানে নামাজ পড়েছেন। তাহলে কি জনমনে প্রশ্ন আসবেনা যে, মিডিয়াগুলো সিন্ডিকেট করে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছেন? টিভি সাংববদিকেরা এমন করে ক্যামেরা ধরছেন, যাতে মনে হয় অজস্র মানুষ রয়েছে। পত্রিকাগুলো পুরাতন (আগের ঈদের) ছবি ছাপিয়েছে।
অন্তত প্রথমআলো পুরাতন ছবি ছেপেছে, এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি। (আমার কাছে প্রমান আছে। দয়া করে প্রথমআলোতে ছাপানো ছবি এবং আমার পাঠানো ছবি মিলিয়ে দেখবেন। প্রথমআলোর ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মাঠে কয়েকটি পিলার আছে, যা হলুদ এবং নীল রঙ্গে আবৃত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, এবারের পিলারের রং সাদা এবং নীল রঙ্গে করা হয়েছে।
প্রথমআলোর ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মাঠের গাছের মধ্যে লাল রঙ্গের কাপড়ের ব্যানারে কোনো এক মোবাইল কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেওয়া আছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোনো বিজ্ঞাপন ছিল না। প্রথমআলোর ছবিতে আরোও দেখা যাচ্ছে, মাঠের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত মানুষ, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পুরো মাঠের ৪/৫ ভাগের এক ভাগও পূর্ণ হয়নি। আরেকটি সত্য কথা হচ্ছে, কোনো একটা সারিও পূর্ণ ছিল না। পর্যাপ্ত জায়গা থাকার কারনে সবাই ফাঁক ফাঁক করে দাঁড়িয়েছেন এবং অনেক সারি বেশ খানিকটা অপূর্ণ রেখেই অনেকে পরের সারিতে দাঁড়িয়েছেন। )
আমার অনুরোধ, সত্যকে সত্য বলুন।
প্রতি বছর অনেক মানুষ হয়-সেটা বলুন। সেইসাথে এটাও বলুন যে, এবছরই স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে কম মানুষ হয়েছে । বিবেকবান মানুষের কাছে আমার একটা প্রশ্ন, ইসলাম কি মিথ্যা অপপ্রচার সমর্থন করে???
মো. শরীফুল ইসলাম
প্রথমআলোর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
ময়মনসিংহ
মোবাইলঃ ০১৭২১৬০৬৫৫০
ইমেইলঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।