যা লিখি, হয়ত কিছুই লিখি না। যা লিখব হয়ত অনেককিছুই লিখব। আসল কথা হলো, গল্প ছাড়া কিছুই লিখতে পারি না #
যে পথে বাড়ি ফেরার কথা সেই পথে বাড়ি ছিল না বলে আমি ঘুরপথে বাড়ি ফিরতে গেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি শূন্যতা, সেখানে কোনো পাখি উড়ছে না। অথচ মা পইপই করে বলে দিয়েছিল আকাশে পাখি না উড়লে বাড়ি ফিরবি না। এই আকাশে পাখি নেই, যে আকাশে পাখি আছে সেই পথে বাড়ি নেই।
আমি ঠিক মাঝে অথবা একটু আগে পিছে হবে কোনো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ি। মা’র কথা আমি অমান্য করি কেমন করে? তাকিয়ে দেখি স্টেশন। লাল রং এর বিল্ডিং। স্টেশনের গায়ে নাম লেখা নেই, আশেপাশে কোনো মানুষ নেই। এক টং এর দোকানে বসে চা বিক্রেতা মাছি তাড়াচ্ছে।
ভাই,আকাশে পাখি নেই কেন?
আকাশ? আপনি আকাশ কই পাইলেন? এখানে তো কোনো আকাশ নাই।
তাইলে,ঐটা কী?
চা বিক্রেতা দাঁত বের করে হেসে ফেলে, হলুদ হলুদ দাঁত; দেখতে বিশ্রী লাগে।
এভাবে হাসবেন না।
হে হে। ধুর মিয়া,ভালা শার্ট-প্যান্ট পড়সেন, এইটা বুঝেন না ঐটারে আকাশ কয় না,কয় ফকফকা সাদা মানে শূন্যতা।
আমি চিন্তায় পড়ে যাই। তাই তো শূন্যতা, আকাশ মানে শূন্যতা। শূন্য দিয়ে গুণ করলে সব শূন্য হয়ে যায়। তাহলে সেখানে পাখি ওড়ে কিভাবে? আমরা যাদের উড়তে দেখি সেটা কী? জোছনা কী? চাঁদ কী? মেঘ কী? । তারমানে পাখি নেই, জোছনা নেই, চাঁদ নেই, তারা নেই?
চা বিক্রেতা হাসি থামিয়ে বলে, লন চা খান।
যাইবেন কই?
আমার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু এখন কোথায় যাব?
এইখানে ট্রেন থামে না?
থামত কোনো এককালে। এখন তো কিছু নাই। ঐ যে আকাশের কথা কইলেন না? আছে কিন্তু নাই,স্টেশনের ঐ অবস্থা আর কী।
চা খেতে খেতে জিজ্ঞাসা করি, মানুষ নেই কেন?
চা বিক্রেতা চুপ হয়ে গেলে খেয়াল করি, তার সঙ্গে আমার চেহারায় অনেক মিল।
শুধু তার দাঁত হলুদ, তাকে হাসলে বিশ্রী দেখায়, আমাকে দেখায় না।
আশ্চর্য আমার চেহারার সাথে আপনার চেহারায় অনেক মিল।
মিল তো হবেই। আবার নেমে আসে নিঃস্তব্ধতা।
এখন আমি কী করব? চা বিক্রেতার ভাষ্যমতে এখানে কোনো ট্রেন থামে না, এখানে কোনো আকাশ নেই, এখানে কোনো মানুষ নেই।
তবে আমি যাব কোথায়?
বাড়ি ফিরা যান। নাইলে,আমার মতো আটকা পড়বেন।
বাড়িতে কেউ নেই। মা ছিল। মারা গেলেন কইদিন আগে।
মারা যাওয়ার আগে এই ঠিকানাটা দিয়ে গেলেন। কিন্তু এখন কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমি সাধারণত মানুষের সাথে কম কথা বলি। এখন এই অচেনা জায়গায় অচেনা মানুষের সাথে কথা বলেই যাচ্ছি, বলেই যাচ্ছি।
আবার কথা বলে ওঠে লোকটি, এইটা পরকালে যাওয়ার আগের স্টপেজ, বুঝলেন? মারা গেসেন আপ্নি,এইখানে সবার চেহারা এক, স্বপ্ন এক, কান্না এক,হাসি এক।
আমি হেসে উড়িয়ে দেই। এটা হওয়া সম্ভব না। আমি তো বহুদিন আগেই মারা গিয়েছি। নতুন করে কিভাবে মরব।
তা ক্যামনে মারা গেলেন?
ঠিক ক বছর আগের বাবা মারা গেল মনে নেই।
আমার ইন্টার পরীক্ষা চলছিল। এরপর পর যা হবার তাই হলো। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেল। ইচ্ছে করলে করতে পারতাম কিন্তু করি নাই। একটা দোকান দিয়ে বসলাম।
ভালোই চলছিল। মা বিয়ের কথাবার্তা শুরু করেছিল। আমার না, আমার বোনের। বিয়ের আগের দিন রাতে কে বা কারা বোনের মুখে এসিড মারল। ততদিন পর্যন্ত লড়াই করে যাচ্ছিলাম।
আর পারলাম না। জীবনের এসব জটিলতার সাথে কিভাবে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়, বাবা শিখিয়ে দিয়ে যেতে পারেন নি। আমিও শিখতে পারি নি। এরপর যে ছেলে এসিড মারল সে এসে আমার দোকান ভাঙচুর করল। তার ক’দিন পরেই তার বড় ভাই কমিশনার ইলেকশনে দাঁড়াইল, আমি ভোট ও দিলাম।
আসলে সেদিন-ই আমি মারা গিয়েছিলাম। আর আপনি বলছেন এটা পরকালের আগে স্টপেজ স্টেশন?
#
ঘুম ভেঙে গিয়ে দেখি বাসাতেই আছি। তারমানে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম? মা আমাকে কোথায় যেতে বলেননি। অথচ হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হয়ে দেখি আকাশে সত্যি পাখি নেই। আকাশ কী আছে?
বাড়ির সামনে স্টেশনে মানুষের ভীড়।
আমি জানি, প্রত্যেকে বহন করে চলেছে নিজস্ব কাহিনী, নিজস্ব গল্প। হয়ত আমার মতো কিংবা মার চেয়ে খারাপ কোনো গল্প। কারো কারো হয়তো গল্পই নেই।
আকাশে পাখি থাকে না, আকাশ থাকে না, স্বপ্ন থাকে না অথচ আমরা সব দেখি, সব করি, বেঁচে থাকি। মনে হয়- বেঁচে থাকা শূন্যতা, মরে যাওয়া তার চেয়েও বেশি শূন্যতা।
শূন্যতার ভেতর খাবি খাওয়া একদল নির্বোধ মানুষের দল আমি, আমরা, সবাই, আমাদের পুর্বপুরুষেরা,আমাদের উত্তরপুরুষেরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।