হা হা হা পায় যে হাসি!!! *উৎসর্গঃ ব্লগার আসিফ মুভি পাগলা
নব্বই দশকের শুরুর দিকে মৌচাক মার্কেটে ঢোকার মুখে একজন মোটা, কালো, মধ্যবয়স্ক মুচি বসতেন। তাকে দেখলেই আমার অয়োময় নাটকের নিবারনের কথা মনে পড়ত। আশেপাশে যে আরো দু'য়েকজন মুচি ছিল, তারা কেউ এই ভদ্রলোককে একদম সহ্য করতে পারত না, সবসময় ঝগড়া ছিল। কিন্তু কাস্টমারদের মধ্যে উনি খুব জনপ্রিয় ছিলেন। যতটা না তার কাজের জন্য, তার চেয়ে অনেক বেশি তার বাঁশি বাজানোর অসাধারন প্রতিভার জন্য।
জুতার কাজ শেষ হবার পর একটু অনুরোধ করলেই ব্রাশ, কালি ফেলে তুলে নিতেন তার বাঁশিটা আর চমৎকার সুর তুলতেন। মৌচাকের সামনের তিনরাস্তার মোড়ের জ্যাম, গাড়ির প্যাঁ-পোঁ, মার্কেটে আসা নানানবয়সীর হৈচৈ-হুড়াহুড়ি আর তার মধ্যে বাঁশিতে পল্লীগানের সুর - সবকিছু মিলিয়ে একটা অদ্ভুত আবেশাচ্ছন্ন সময়।
বাঁশি আর বেহালার মধ্যে কি যেন একটা বৈশিষ্ট্য আছে, শুনলেই মনে হয় হৃৎপিন্ডটাকে চিড়ে দিয়ে কাঁদছে। কিন্তু এই কাঁদার মধ্যেও কি যেন একটা সুখ আছে আর প্রায় বিনা পয়সা এই সুখ পাওয়ার লোভেই আমি কয়েকদিন পরপর এই ভদ্রলোকের কাছে জুতা পালিশ করতে যেতাম।
আমার মতই বাঁশি শোনার লোভে অনেক বেশি কাস্টমার তার কাছে কাজ করাতে আসত।
এটাই বোধহয় অন্য মুচিদের রাগের কারন! সহকর্মীদের সাথে তার ব্যবহারও অবশ্য খুব ভাল ছিল না।
এরপর দেশের বাইরে চলে গেলাম। মধ্যে কয়েকদিনের জন্য একবার দেশে গেলেও মৌচাকের ওদিকে যাবার সুযোগ পাইনি। ৬-৭ বছর পর ৯৯ সালের দিকে অনেক দিন পর আবার মৌচাকে গেলাম তার বাঁশি শোনার জন্য। ততদিনে ওখানে ওভারব্রিজ হয়ে তুলকালাম অবস্থা।
মুচিরা জায়গা বদলে ওভারব্রিজের নিচে চলে গেছে। কিন্তু বাঁশিওয়ালাকে তাদের মধ্যে দেখলাম না। অন্য মুচিদের কাছে খুব একটা যেতাম না বলে তাদের চেহারাও মনে নাই। পুরোনো মুচিদের সাথে বাঁশিওয়ালার যে মধুর (?!) সম্পর্ক, তাদের কিছু জিজ্ঞেস করতে সাহস হচ্ছিল না। বেশ সংকোচ নিয়ে কিছুক্ষন পর জিজ্ঞেস করলাম একজনকে।
যা ভেবেছিলাম, শোনামাত্রই রেগে গেল - "মামু, দিলেন তো মেজাজটা বিলা কইরা"। শেষপর্যন্ত জানা গেল, বাঁশিওয়ালা নাকি বেশ কিছু দিন আগে পাততাড়ি সেখান থেকে গুটিয়ে অন্য কোথাও চলে গেছে। বাঁশি শুনতে না পেরে মনটা বেশ খারাপ করে চলে আসলাম। পরে অবশ্য মনে হল যে লোকটা মিথ্যা কথাও বলতে পারে। হয়ত সেদিন কোন কারনে ছিল না, দু'দিন পর আবার গেলেই পাওয়া যাবে।
নানান ধরনের ঝুটঝামেলায় আর যাওয়া হল না। কয়েকদিন পর আবার ফিরে আসলাম পরবাসের আবাসে।
আজকে অনেক বছর পর ফেসবুকে একজন ব্লগারের একটা স্ট্যাটাস দেখে ("উপলব্ধি ১ : পেশাদার গায়কদের চাইতে রিকশাওয়ালাদের গান শুনতেই বেশী ভাল লাগে । তাদের অনেকেরই গানের গলা নাই কিন্তু আবেগ আছে । ") বাঁশিওয়ালার কথা খুব মনে পড়ল।
সবসময় 'মামা' ডাকের কারনে তার নাম হয়ত কোনদিন জানতামই না বা জানলেও আজকে আর মনে করতে পারছি না।
-------------------------------------------------------------------------------
* ব্লগার আসিফ মুভি পাগলা ব্লগে খুব নিয়মিত নন। তাকে মূলত পাওয়া যায় ফেসবুকে। আমি ফেসবুকে তাকে অনুসরন করি তার ক্লাসিক স্ট্যাটাসগুলির কারনে। চরম সব দার্শনিক কথাবার্তা আর হাস্যরসের অপূর্ব মিশেলে ভর্তি থাকে সেগুলি।
আমার পছন্দের একজন মানুষ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।