একটা গাড়ী খুজছি , ব্যাক টু দ্য ফিউচারে যাওয়ার গাড়ীটা খুজছি / তথ্যের অংক , যুক্তির জ্যামিতি নভেম্বর ১৯৭৫ রক্তাক্ত / ষড়যন্ত্রময় / ঐতিহাসিক / দুর্ঘটনার গোলযোগময়..... ইতিহাসের গিরিখাদে সর্পিল বাঁকময় নভেম্বর....... ক্যালেন্ডারের ক্যারমবোর্ডে ক্ষমতার লালঘুটি নিয়ে হুলস্থুলময় নভেম্বর..... ১৯৭৫ এর টালমাটাল নভেম্বর নিয়ে এটিই আমার উপলব্ধি........ লালঘুটি টি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ক্ষমতা। ভুল হিসাবে , ভুল নিকাশে , স্নায়ুকম্প হাতে স্ট্রাইকারে যত শক্তিশালী টোকা-ই দেয়া হোক না কেন - লালঘুটি গর্তগত হবেনা..... বরন্চ্ঞ সম্ভাবনাটা বিপদের...... লালঘুটির লাইন অব হিট প্রতিপক্ষের নাগালে চলে যাওয়ার। নভেম্বর ১৯৭৫ এর প্রথম ৩ সপ্তাহ বাংলাদেশ রাষ্ট্র তথা এর ক্ষমতা লালঘুটির মত ইতিহাসের ক্যারমবোর্ডে এদিক সেদিক বিক্ষিপ্ত - বিছিন্ন দিকভ্রান্ত নড়াচড়া করছিলো.... সে দায় ঘুটিটির নয়.... বরং সে দায় ক্যারমবোর্ডের চারধারে যেই সব খেলোয়াড়রা খেলছিলেন তাদের.... স্ট্রাইকারে আঙুলের উল্টোপাল্টা ভুল টোকার... এই ক্ষমতার ক্যারম বোর্ডে প্রথম টোকাটি যিনি দিয়েছিলেন তিনি হলেন : ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ মুক্তিযুদ্ধ বিখ্যাত বীর উত্তম.......... আঙুলের ভুল টোকায় লালঘুটি টিকে গর্তে ফেলতে ব্যর্থ হন...... বাজি মাত করতে গিয়ে নিজেই কাত হয়ে যান...... বরন্চ্ঞ ঘুটিটিকে তার প্রতিপক্ষের অতি নাগালে পৌছে দেয়ার অনুতাপ অযোগ্য ভুল করেন...... ক্ষমতার লালঘুটিতে তিনি টোকা দিয়েছিলেন ৩ রা নভেম্বর , ১৯৭৫..... স্ট্রাইকার ছিলো বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর মিগ, হেলিকপ্টার আর সেনা বাহিনীর ৪৬ এবং ৭২ ব্রিগেড..... আর সহ খেলোয়াড় ছিলেন কর্নেল শাফায়াত জামিল..... এই ব্লগটির মূল ফোকাস হলোঃ সেদিন কি কি সিচুয়েশনাল প্যারামিটার খালেদের অনুসরণ করা ক্ষমতা দখলের সমীকরনটাকে নিয়ন্ত্রন করেছিলো...... এবং শেষ পর্যন্ত এই সমীকরনটি কেন খালেদের প্রজেক্টেড/প্রেডিক্টেড/এক্সপেক্টেড ফলাফল দিতে পারলোনা তার রুট/কজ অ্যানালাইসিস........ তার আগে যতোটা সম্ভব কম আয়তনে বেশী ঘনত্বে খালেদের সেই ক্ষণস্থায়ী অভ্যুত্থানের ক্রনোলজী জেনে নেয়া যাক : ৩ রা নভেম্বর : [১] রাত ১২ টার সময় বংগ ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১ম বেংগল রেজিমেন্টের মেজর ইকবাল তার অধীনস্থ কোম্পানীর ৩০০ সৈন্য নিয়ে বংগভবন থেকে সরে যান...... [২] রাত সাড়ে ১২ টায় ৪ই বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার কর্ণেল আমিনুল হক কে নিষ্ক্রিয় করে ইউনিটটির নিয়ন্ত্রন নিজের হাতে নেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ [৩] রাত ৩ টায় জিয়াকে বন্দী করা এবং ল্যান্সার ইউনিটকে নিয়ন্ত্রনে নেয়ার জন্য অপারেশন শুরু হয়। ক্যাপটেন হাফিজ উল্লাহকে পাঠানো নয় জিয়াকে প্রোটেকটিভ কাস্টোডীতে রাখার জন্য..... [৪] কর্নেল ওসমানী বেশ কয়েকবার খালেদ মোশাররফ , শাফায়াত জামিল, জিয়া এবং কর্নেল আমিনুল হকের সাথে টেলিফোন যোগাযোগের চেষ্টা করেন....... [৫] ভোর সাড়ে ৪ টায় খালেদা জিয়া মেজর জেনারেল মঈনুল হোসেন কে ফোন করে জানান জিয়াকে বন্দী করা হয়েছে........ আনুমানিক এই সময়েই জেলহত্যাকান্ড ঘটে....... সেসময় তাজউদ্দিন এবং নজরুল ইসলামের পাশের সেলে ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ......... [৬] স্কোয়াড্রন লীডার লিয়াকতের কমান্ডে ২ টি মিগ এবং একটি হেলিকপ্টার মিসাইল লোডেড হয়ে বংগভবনের উপর চক্কর দিতে থাকে... শাফায়াত জামিল সাভারে রেডিও বাংলাদেশের একটি ট্রান্সমিটার অচল করে দেন........ [৭] ৩ রা নভেম্বর সকাল ৮ টার ভেতরে সোনারগাঁও হোটেল ক্রসিং, সায়েন্স ল্যাবরেটরী মোড়, স্টাফরোড রেলওয়ে ক্রসিং দখলে নিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয় এবং বিমান বন্দরের রানওয়ে দখলে নেয়া হয়...... [৮] কাল ৮ টা থেকে দুপুর ১: ৩০ পর্যন্ত খালেদ মোশাররফ , শাফায়াত জামিল, মেজর হাফিজ , মেজর গাফফার এবং অন্যান্য অফিসাররা ৪ ই বেংগল রেজিমেন্টের অফিসে বসে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন..... সেসময় সেখানে বিমান বাহিনী প্রধান তোয়াব এবং নৌ বাহিনী প্রধান এম এইচ খানের সাথে উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন......... অফিসারদের ভীড়ে সেসময় গিজগিজ করছিলো ৪ই বেংগল অফিস....... [৯] সকাল ১০টায় পুলিশের আইজি নুরুল ইসলাম জেল হত্যাকান্ডের ঘটনা চীফ অব ডিফেন্স স্টাফ মেঃ জেঃ খলীলুর রহমানকে জানান.... খলিলুর রহমান সেটা তথ্যমন্ত্রী মাহবুবুল আলম চাষীকে জানান..... চাষী সেটা মোশতাককে জানান , মোশতাক ইশারা করেন সেটা আগে থেকেই জানার......... [১০] নভেম্বর ৩ , দুপুর ২ টায় জিয়া সেনা প্রধান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। জিয়ার কাছ থেকে পদত্যাগ পত্র নিয়ে আসেন ব্রিগেডিয়ার রউফ....... এ সময় জিয়া শাফায়াত জামিলের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলেন। শাফায়াত জামিল ব্যাপারটা নিয়ে বিব্রত ছিলেন..... [১১] সকাল থেকে আত্নসমর্পনের প্রস্তাব পাঠিয়ে সন্ধ্যার দিকে সমঝোতা হয় যে খালেদ শাফায়াতরা ফারুক-রশীদদেরকে দেশ ত্যাগ করতে দেবেন.... ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর / শাফায়াত জামিল / পাতা ১৩৫ শেষাংশ - ১৩৬ প্রথমাংশ : [১১] রাত ৮টা ৪৫ এ বংগবন্ধু কিলিং মিশনের সদস্যরা ঢাকা ছেড়ে যায় ব্যাংককের উদ্দেশ্যে.... মাঝে ১বার চিটাগাং এ রিফুয়েল করেছিলো... ৪ঠা নভেম্বর : [১] সকাল সাড়ে ৮ টায় এক্স ডিআইজি ই এ চৌধুরীর মাধ্যমে জেল হ্ত্যাকান্ড খালেদ এবং শাফায়াতের গোচরীভূত হয়.... [২] ১১টায় খালেদ বংগভবনে যান মোশতাকের সাথে বোঝাপোড়া করার জন্য..... [৩] সন্ধ্যা ৬ টায় শাফায়াত জামিল ৩ জন অফিসারকে সংগে নিয়ে বংগভবনে যান.... অভূতপূর্ব একটি উত্তপ্ত পরিস্হিতি তৈরী হয় সেখানে..... সেখানে তখন মোশতাক সরকারের কেবিনেট মিটিং চলছিলো.... এ সময় খালেদ দাবী করেন তাকে অবিলম্বে সেনা প্রধান করতে হবে...... মোশতাক বল ওসমানীর কোর্টে পাঠিয়ে বলেন ডিফেন্স অ্যাডভাইসারের সুপারিশ ছাড়া সেনা প্রধান নিয়োগ করা যাবেনা.... ওসমানী বলেন নতুন সেনা প্রধান নিয়োগ করতে কিছুটা সময় লাগবে..... এতে খালেদ এবং তার সংগের অফিসাররা রেগে যান এবং হুমকী-ধামকী-বাদানুবাদ চলতে থাকে...... মোশতাক মেজাজ দেখিয়ে বলেন : " আমি পাকিস্তান আর্মির অনেক জেনারেল , ব্রিগেডিয়ার দেখেছি....আমাকে ভয় দেখাতে আসবেনা...." এসময় মেজর ইকবাল মোশতাকের দিকে গান পয়েন্ট করলে ওসমানীর অনুরোধে শাফায়াত জামিল ইকবাল আর মোশতাকের মাঝে এসে দাড়ান...... সেই ঘটনায় মোশতাককে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়.... সিদ্ধান্ত হয় পার্লামেন্টের স্পীকার কিংবা চীফ জাস্টিস হবেন প্রেসিডেন্ট..... এসময় মুজিব কেবিনেটের মন্ত্রী ইউসুফ আলী এসব সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেন...... মনোরন্জ্ঞন ধর দাবী করেন প্রেসিডেন্ট হবেন স্পীকার মালেক উকিল যিনি শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের পর মন্তব্য করেছিলেন : ফেরাউনের পতন হয়েছে..... পদত্যাগের আগে খালেদ মোশাররফের মেজর জেনারেল র্যাংক সহ চীফ অব স্টাফ প্রমোশন ফাইলে মোশতাক ইনিশিয়াল দিয়ে যান..... বলা যায় বাধ্য করা হয়..... [৪] রাত ১১ টায় বাংলাদেশ রেডিও থেকে ঘোষনা করা হয় খালেদ মোশাররফ নতুন সেনা প্রধান হিসেবে জিয়াউর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন....... লন্ডন টাইমস / নভেম্বর ৫ / ১৯৭৫ / পাতা ৯ : বাকী অংশ ৫ ই নভেম্বর : [১] সকাল ১০টা নাগাদ আর্মি হেডকোয়ার্টারে মিটিং করেন খালেদ..... [২] সকাল ১০ টা থেকে ১১ টার ভেতরে মোশতাক দেশছাড়তে চেয়েছিলেন..... কিন্তু এয়ারপোর্টে খালেদের অনুগতরা মোশতাককে ফিরিয়ে দেয়...... [৩] দুপুর নাগাদ সিদ্ধান্ত হয়নি কে হবেন প্রেসিডেন্ট.... [৪] নভেম্বর ৫ বিকাল নাগাদ প্রেসিডেন্টের ভাষনের ড্রাফট তৈরী করা হয়..... [৫] সন্ধ্যায় খালেদ মোশাররফ , এম জে তাওয়াব , এম এইচ খান এবং শাফায়াত জামিল বিচারপতি সায়েমের সাথে দেখা করে তাকে প্রেসিডেন্ট হতে রাজি করান..... [৬] রাত ৯ টায় জাস্টিস সায়েমকে বংগভবনে নিয়ে আসা হয় এবং ওসমানী তাকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার জরুরীত্ব তুলে ধরেন...... [৭] রাত ১০টায় ৩ চীফ বংগভবনে গিয়ে মোশতাকের কাছ থেকে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নেন , সাড়ে ১১ টায় মোশতাক বংগভবন থেকে ২ মাস ২০ দিনের শাসন শেষে আগামসিহ লেনের বাড়ীতে ফিরে যান.... লন্ডন টাইমস / নভেম্বর ৬ / ১৯৭৫ / পাতা ৬ : ফুল রেসোলিউশন ইমেজ [৮] রাত ১ টায় বাংলাদেশ রেডিও থেকে একটি বিশেষ ঘোষনা প্রচার করা হয় যেটি মোশতাকের পদত্যাগের পূর্বে রেকর্ড করা হয়েছিলো......... এই ঘোষনায় মোশতাক জানান কতিপয় দুর্বৃত্ত জেলহত্যাকান্ড ঘটিয়েছে.... [৯] ৫ ই নভেম্বর খালেদ রংপুর ৭২ ইনফ্যান্ট্রী ব্রিগেড থেকে ২ ব্যাটালিয়ন এবং কুমিল্লা ব্রিগেড থেকে ১ ব্যাটালয়ন সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন..... ৬ ই নভেম্বর : [১] সকাল ৯ টায় জাস্টিস সায়েম দেশের ৬ষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন..... [২] ৬ ই নভেম্বর সকালে ১০ বেংগল রেজিমেন্ট কর্নেল নওয়াজীশের নেতৃত্বে ঢাকা এসে শেরেবাংলা নগরে অবস্থান নেয়..... [৩] ১১ টার সময় ফরমেশন কমান্ডারদের নিয়ে খালেদ কনফারেন্স করেন খালেদের অভ্যুত্থানে খুব তাল দিলেও কুমিল্লা ব্রিগেডের কর্নেল আমজাদ হোসেন দরকারের সময় নাচেননি..... খালেদের কনফারেন্সে আমজাদ উপস্থিত থাকলেও কুমিল্লা থেকে কোন ব্যাটালিয়ন আসেনি..... ৬ ই নভেম্বর যশোর ব্রিগেডের কমান্ডিং অফিসার ব্রিগেডিয়ার মীর শওকত বিমানযোগে ঢাকা আসেন ঢাকায় রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য...... খালেদের কনফারেন্সে মীর শওকত ও ছিলেন... মীর শওকতের বিমানে সহযাত্রী ছিলেন পরবর্তীতে সেনা প্রধান আতিকুল হক..... [৪] ৬ ই নভেম্বর বিকেলে মেজর শাখাওয়াত হোসেনের [ বর্তমান নির্বাচন কমিশনার ] মাধ্যমে শাফায়াত জামিল তাহেরের বিপ্লবী সেনা সংস্থার লিফলেট গুলো সম্পর্কে জানতে পারেন.... এই লিফলেটগুলোর মাধ্যমে সেনাদেরকে খালেদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করা হয়েছিলো....প্রচার করা হয়েছিলো খালেদ ভারতের চর...... [৫] সন্ধ্যায় খালেদ শাফায়াতকে সংগে নিয়ে ট্যাংক রেজিমেন্টে যান সৈনিকদের শান্ত করতে...... [৬] রাত ১০ টায় খালেদ শাফায়াতকে বংগভবনে যেতে বলেন...... ঠিক তখুনী মেজর হাফিজ [ বর্তমানে ভোলার বিএনপি নেতা, সাবেক সংস্কারপন্থী ] শাফায়াতকে জানান রাত ১২ টায় সেনা বিদ্রোহ ঘটার আশংকা.... [৭] রাত ১১: ৩০ নাগাদ ৩ বাহিনী প্রধান এবং শাফায়াত সিএমএলএ কে হবেন সেটা নিয়ে মুসাবিদা করছিলেন..... খালেদ সেদিন রাতে কর্ণেল হুদা [ ব্রিগেড কমান্ডার / রংপুর ৭২ ব্রিগেড ] এবং হায়দারকে [ সিও / ৮ম ইস্ট বেংগল রেজিমেন্ট ] সাথে নিয়ে বংগভবনে আসেন তাওয়াব এবং এম এইচ খান চাইছিলেন ৩ বাহিনী প্রধান হবেন ডেপুটি সিএমএলএ এবং প্রেসিডেন্ট হবেন সিএমএলএ..... আর খালেদ চাইছিলেন নিজে সিএমএলএ হতে........ [৮] রাত ১২ টা নাগাদ মিটিং চলা কালে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফোন আসে সিপাহী বিপ্লব ইগনাইট হওয়ার ..... খালেদ সাথে সাথে মিটিং ভেংগে দেন, শাফায়াতকে বলেন বংগভবনে থাকতে , নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানও চলে যান..... খালেদ হুদা ও হায়দারকে সাথে নিয়ে বংগভবন ছেড়ে যান....... খালেদের মৃত্যু ঠিক কিভাবে হয়েছিলো সেটা তাহের বিষয়ক ব্লগে জানাবো.... এই ছিলো ৯৬ ঘন্টার সেই উদ্বায়ী অভ্যুত্থানটির সিনারিও অ্যাট এ গ্ল্যান্স..... এই সাইকল অব ইনসিডেন্টসে দিনের পিঠে ঘন্টায় , ঘন্টার পিঠে মিনিটে খুব দ্রুত ঘটে যাওয়া বেশ কিছু দৃশ্য স্লো মোশনে না দেখলে বেশ কিছু ঘটনা আর রটনার রুট/কজ অ্যানালাইসিস সম্ভব নয়........ ৩ রা নভেম্বরের অভ্যুত্থান ৭ ই নভেম্বরের আরেক অভ্যুত্থানের কাউন্টার হিটে পর্যুদস্ত হওয়া খালেদের মূল ব্যর্থতা নয়...... নানা ঘটনার আবর্তনে বেশ কিছু চেষ্টার ব্যর্থতায় বিবর্তন ও আসল ব্যর্থতা নয়...... মূল ব্যর্থতা হলো : রক্তপাতহীন এক ক্যুতে কাউকে বলি না দিয়েও নিজে বলির পাঠা হওয়া..... ঠিক এই কারনেই ইতিহাসের কাকের বাসায় নীচের রটনাটি বেশ জমে আছে : খালেদ মোশাররফ ভারতের চর কেন রটেছিলো এমনটা ? সেটার কিছু কারন অনুমিত হয় যেভাবে : [১] খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানের পর ভারতীয় গণমাধ্যমে ব্যাপক স্ফূর্ততার সাথে খবরটি প্রচার করা হয়েছিলো যেটাকে সাধারনত কূটনৈতিক ভাবে বলা হয় মিত্র পক্ষের সাফল্যে হিলারিয়াস রিঅ্যাকশন [ Hilarious Reaction ]...... [২] খালেদ মোশাররফের ভাই রাশেদ মোশাররফ ছিলেন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপি এবং মা ছিলেন সক্রিয় আওয়ামী কর্মী...... [৩] মোশাররফ ক্যু করার পর খালেদ মোশাররফের মা এবং ভাই রাশেদ মোশাররফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধানমন্ডী ৩২ অভিমুখে শোকমিছিলে নেতৃত্ব দেন এবং শেখ মুজিব হত্যার বিচার দাবী করেন...... [৪] নভেম্বর ৪ সকাল ১০ টায় ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের ডিফেন্স অ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার ভোরা [ Vohra পদবীটি ভারতে গুজরাটীদের ভেতরে ব্যাপক প্রচলিত ] খালেদ মোশারফের সাথে দেখা করতে চান একটি উপহারের প্যাকেট নিয়ে..... এই ঘটনাটি সম্পর্কে বলা যায় : ফুয়েলড দা ফায়ার অফ রিউমার এই প্যাকেটটি ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছিলো দিল্লির নির্দেশে.... কিন্তু থার্ড গেট [ জাহাংগীর গেট ] কিংবা অতি সম্ভবত মঈনুল রোডের গেটে মিলিটারী পুলিশ ব্রিগেডিয়ার ভোরাকে আটকে দেয় এবং কর্নেল সবিহউদ্দীনকে ফোনে জানায়..... কর্নেল সবিহউদ্দিন মিলিটারী পুলিশ কে কর্নেল ভোরার কাছ থেকে উপহারের প্যাকেটটি নিয়ে তাকে গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন...... মূলত ঐ প্যাকেটটিতে ছিলো খালেদ মোশাররফের জন্য তৈরী করা সেনা অফিসারদের সার্ভিস ড্রেস যেটি সেসময় ভারতে প্রস্তুত হতো ! খালেদ মোশাররফ ঐ সার্ভিস ড্রেসটির অর্ডার করেছিলেন আগস্ট মাসে আর ব্রিগেডিয়ার ভোরা সাহেব সেটা পৌছে দেয়ার জন্য কি দুর্দান্ত এক সময়ই বেছে নিলেন ! জানুন ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেনের বই থেকে : পাতা ৯০ এর শেষাংশ : পাতা ৯১ এর প্রথমাংশ : [৫] সেসময় বিবিসি এবং রয়টার্সের ঢাকা করেসপন্ডেন্ট ছিলেন আতিকুল আলম নামের এক ব্যক্তি....... এই আতিকুল আলম মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তান রেডিওতে চাকরী করেছেন এবং লিবারেশন স্ট্রাগল এর বিপক্ষে ছিলেন...... মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তাকে জেল খানায় আটকে রাখা হয় কিছুদিন এবং পরে শেখ মুজিবুর রহমানের আদেশে ছেড়ে দেয়া হয়........ সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর রফিকুল ইসলাম তার বইতে এমনটাই জানিয়েছেন........ পাতা ৮৮-৮৯ / পচাত্তরের রক্তক্ষরণ এই আতিকুল আলম ৩ রা নভেম্বর জেলহত্যাকান্ডের পর থেকে ক্রমাগত ঢাকাস্থ বিভিন্ন বিদেশী রাষ্ট্রের দূতাবাসগুলোতে গিয়ে রটাতে থাকেন যে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সমর সেনের উদ্দেশ্য জেলবন্দী তাজউদ্দিন আহমেদের নিজের হাতে লেখা একটি চিঠি তিনি পেয়েছেন......... সেই চিঠি তিনি জার্মান অ্যাম্বেসেডরকে দেখিয়েছেন..... সেই চিঠি থেকে জানা যায় যে খালেদ অভ্যুত্থান ঘটাবে , শেখ মুজিবের ৪ খলীফাকে মুক্ত করবে এবং বাংলাদেশ ভারতবান্ধব পররাষ্ট্রনীতিতে ফিরে যাবে........ লরেন্জ্ঞ লিফশুলজ নামক জিয়া বিদ্বেষী ধান্দাবাজ এই মার্কিন সাংবাদিকের কাছ থেকে এই দরকারী তথ্যটা জানা যায় : বাংলাদেশ , দা আন ফিনিশড রেভুল্যুশন / পাতা ৬৬ / ১ম প্যারাগ্রাফ: ফুল রেসোলিউশন ইমেজ কিন্তু পরবর্তী সময়ে আতিকুল আলম সেই চিঠি তার কাছে আর নেই বলে জানান.... [৬] অনেক অতি উৎসাহী আওয়ামী সমর্থক ব্যক্তি যেটা ফলাও করে প্রচার করে থাকেন যে খালেদ ক্যু করার পর মোশতাককে ১টি টি দাবী নামা পাঠিয়েছিলেন....... যেমনঃ জিয়ার পরিবর্তে অন্য কেউ সেনাপ্রধান হবে.... মোশতাকই প্রেসিডেন্ট থাকবেন....... ফরেন পলিসি মুক্তিযুদ্ধের বন্ধুরাষ্ট্র প্রবন হতে হবে......... সর্বশেষ পয়েন্টটি ভারত এবং রাশিয়াকে ইংগিত করে........ এই অভিযোগের হেক্সাগন বন্দী হয়ে পড়েছিলেন খালেদ মোশাররফ যেটা থেকে তিনি আর বেরোতে পারেননি........ কারন ? তাজউদ্দিনের চিঠি এবং ভারতবান্ধব পররাষ্ট্রনীতির সেই অভিযোগ জোড়ের ঘন ছায়াপাত ঘটে নীচের ২ টি ইতিহাসের দলিল-দর্পনে....... [১] ৬ ই নভেম্বর বিচারপতি সায়েম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেয়ার পর জাতির উদ্দেশ্যে যেই দেয়া ভাষনটি দিয়েছিলেন সেটি.... সেই ভাষনটির সিনোপসিস পাওয়া যায় সেসময়কার লন্ডন টাইমসে / রিপোর্ট করেছিলেন কুলদীপ নায়ার......... নভেম্বর ৭ , ১৯৭৫ / পাতা ৬ / লন্ডন টাইমস : এই রিপোর্টটির প্রথমাংশ থেকে জানা যায় ছাত্রদের নেতৃত্বে মোটর সাইকেল এবং বেবীট্যাক্সীতে করে প্রায় ২০০০ কর্মী সমর্থক শেখ মুজিবের ধানমন্ডী ৩২ এর বাসায় গিয়েছিলেন শোক জানাতে এবং ফুল দিতে......... অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি সায়েম তার ভাষনে বলেন : বর্তমান পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষিত....... ৭৭ এর ফেব্রুয়ারীতে নতুন নির্বাচন হবে...... বর্তমান কেবিনেটও বাতিল...... ১৫ আগস্টের পর মানুষ আশা করেছিলো আইন শৃংখলার উন্নতি হবে, সামাজিক ন্যায়বিচার মজবুত হবে...... ■ বরন্চ্ঞ সুখ্যাত বন্দী নেতাদের নিষ্ঠুর মৃত্যুতে জাতি উদভ্রান্ত........ জাতির এই দুঃসময়ে মোশতাক তাকে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন ■ ভারতকে পরিষ্কার ভাবে ইংগিত করে বলা হয় নিকটবর্তী প্রতিবেশীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক শক্তিশালী করা হবে.......... [২] সেসময়কার ইকোনোমিস্টের একটি রিপোর্টের শেষাংশ..... নভেম্বর ১৫ / ১৯৭৫ / দ্য ইকোনোমিস্ট : ফুল রেসোলিউশন ইমেজ ইকোনোমিস্টের রিপোর্টটির মাঝখানের কলামটি অনুবাদ করলে দাড়ায় : গত সোমবার এবং শুক্রবার যেসব অফিসাররা ক্যু করেছে তাদের ভেতরে বিভেদ রেখাটি হলো ভারতের প্রতি তাদের মনোভাব........ সূত্র মারফত জানা যায় যে আগের ক্যু টি হয়েছিলো ভারতের নেপথ্য সহযোগীতায় এবং শেখ মুজিবের আগের কেবিনেটের ভারতমুখী মন্ত্রীদেরকে তাদের পদে পুনর্বহাল করার উদ্দেশ্যে- যেটি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছেনা........ [ আতিকুল আলমের তাজউদ্দিনের চিঠি বিষয়ক প্রোপাগান্ডা বেশ ভালোই ডালপালা ছড়িয়েছিলো ] কিন্তু এ সপ্তাহের শুরুতে [ খালেদের অভ্যুত্থানে ] ইন্দিরা গান্ধীর সুস্পষ্টভাবে আনন্দিত হওয়া এবং একইভাবে শুক্রবারের [ বাংলাদেশের ] ক্ষমতার পালাবদলের পর মনোক্ষুন্ন হওয়া একটি ব্যাপারই ইংগিত করে : কোন প্রকার ভারতপন্থী কলকাঠি যদি নড়েও থাকে [ খালেদের দ্বারা] ফলাফল শেষ পর্যন্ত উল্টো হয়েছে........ সম্প্রতি ইন্দিরা গান্ধী পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রন ফিরে পেয়েছেন..... সুতরাং বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা সংহত করার তাড়া তেমন নেই তার......... [ জুন ১৯৭৫ এ এলাহাবাদ হাইকোর্টে ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচনী প্রার্থী যোগ্যতা নিয়ে মামলা চলছিলো ]........ কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী খুব বেশী দিন প্রকাশ্য ভারতবিরোধী একটি সরকারকে এমন একটি দেশে সহ্য করবেননা যেই দেশটি তৈরী করার জন্য ভারত প্রচুর ঝুঁকি নিয়েছিলো........... অনুবাদে [ ] গুলোর ভেতরের নোটগুলো আমার ব্যক্তিগত........ সবকিছু মিলিয়ে এটা সুস্পষ্ট যে ভারতীয় চর গুজবের আগুন বাড়িয়ে তোলার জন্য সেসময় তেলের আর হাওয়ার অভাব হয়নি....... তাই বলে কি খালেদ ভারতীয় চর প্রমানিত হন ? এমনকি সায়েমের ভাষনের ফরেন পলিসি ইংগিত করে বললেও ? ব্যক্তিগতভাবে আমি তেমনটা মনে করিনা....... কারন ভারতবান্ধব ফরেন পলিসির যেই বাক্যগুলো তোতাপাখি সায়েমকে দিয়ে উচ্চারন করানো হয়েছে সেটা ভাষনের ড্রাফটে সুপারিশ করতে পারেন সম্ভবত খালেদের সহযোগী ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামান আর লেঃ কঃ গাফফার..... ৭২ থেকে ৭৫ বাংলাদেশের মানুষকে অমানুষিক নির্যাতন করা নেড়ী কুকুর স্কোয়াড রক্ষী বাহিনীর চীফ ছিলেন নুরুজ্জামান আর একটি ইউনিটের কমান্ডিং অফিসার ছিলো গাফফার...... বলাবাহুল্য সেসময় দেরাদুনের ইন্ডিয়ান মিলিটারী অ্যাকাডেমীতেই রক্ষী বাহিনীকে কোলে পিঠে আদর করে বড় করা হচ্ছিলো [ ট্রেনিং এবং আধুনিক সরন্জ্ঞাম এর মাধ্যমে ]......... শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর ভারতীয় কমপ্ল্যান আর পাকা আমের ম্যাংগো স্মুথি অনেকদিন খাওয়া হচ্ছিলোনা ঐ ২ রক্ষী বাহিনীর ধাড়ীকুকুরের.... অন্যদিকে ৪ নেতা হত্যাকান্ড নিয়ে সায়েমের ভাষনের অংশটুকু শাফায়াত জামিল এবং বাকী অফিসারদের মাথা থেকে বেরুনোর সম্ভাবনা বেশী....... কেন সেটা একটু পরই জানবেন..... শেষ কথাঃ সায়েমের ভাষনের যেই অংশগুলো খালেদকে সুস্পষ্টভাবে ভারত পন্থী হিসেবে দাঁড় করায় সেগুলো খালেদের মস্তিষ্ক প্রসূত নয়...... এর মূল কারন খালেদ যদি ভারতপন্থী ফরেন পলিসি চাইতেন তাহলে তিনি মোশতাককে প্রেসিডেন্ট রাখতে চাইতেন না..... অথচ খালেদ মোশতাককেই প্রেসিডেন্ট পদে বহাল রাখতে চেয়েছেন এবং মোশতাকের ফরেন পলিসি যে অ্যান্টি ইন্ডিয়া এটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই......... মূলত ফরেন পলিসির ব্যাপারটা খালেদের মাথায়ই ছিলোনা....... বরন্চ্ঞ খালেদের মূল দাবী ছিলো [১] খালেদ কে সেনাপ্রধান করা , [২] ট্যাংকগুলোকে ডিসআর্ম করে ক্যান্টনমেন্টে ফেরত পাঠানো, [৩] সেনাবাহিনীর চেইন অফ কমান্ড ফিরিয়ে আনা এবং [৪] মোশতাক প্রেসিডেন্ট থাকা........ ঢাকাস্থ মার্কিন অ্যাম্বেসী থেকে অ্যাম্বেসেডর বোস্টার ইউ.এস স্টেট ডিপার্টেমেন্টে পাঠানো টেলিগ্রাম DHAKA-05470 এ এমনটাই জানিয়েছেন....... সিআইএর বেশ কিছু দলিল ব্যক্তিগতভাবে ফ্যাক্স করে আবেদন করার পর আমার হাতে এসে পৌছেছে..... কিন্তু নভেম্বর ১৯৭৫ এর ডিক্লাসিফায়েড দলিলগুলোর জন্য ফ্যাক্স করে প্রায় ১ মাস হলে গেলেও সেগুলো হাতে এসে পৌছেনি....... তাই আপাতত প্রথম আলোর মিজানুর রহমানের রিপোর্টগুলোকেই সূত্র হিসেবে ব্যবহার করতে হচ্ছে : নভেম্বর ৩ / ২০০৯ / প্রথম আলো / পাতা ১৩ / ক্রপড অংশ : এটি যদি মিজানুর রহমানের মনগড়া নিজস্ব অনুবাদ কিংবা সংযোজিত ব্যক্তিগত অভিমত না হয়ে থাকে তাহলে বোস্টারের শেষ বাক্যটি খেয়াল করুন : ■ এসব দাবীর মূল উদ্দেশ্য ছিলো দৃশ্যত রক্তপাত এড়ানো যা ভারতীয় হস্তক্ষেপ ডেকে আনতে পারতো...... ডেভিস বোস্টারের পাঠানো কূটনৈতিক টেলিগ্রামের এই মার্কিন দলিলগুলো সদ্য অবমুক্ত হলেও তারও অনেক আগে অবিকল একই তথ্য জানিয়েছেন কর্নেল হামিদ তার বইতে....... সুতরাং তথ্যগুলো যে সঠিক অর্থাৎ এগুলোই যে ছিলো খালেদের ব্যক্তিগত দাবী মোশতাকের কাছে সেটা ১০০ % নিশ্চিত : কর্নেল হামিদ / ৩ টি অভ্যুত্থান....কথা / পাতা ৮৬ / শেষাংশ : অন্যদিকে পরদিন নভেম্বর ৪ তারিখে বংগভবনে মোশতাকের কেবিনেট মীটিং যে দাবীগুলো ওঠানো হয়েছিলো সেগুলোও পাওয়া যায় কর্নেল হামিদের বইতে.... পাতা ৮৮ - ৮৯ / ৩ টি অভ্যুত্থান এবং কিছু না বলা কথা : ৩ রা নভেম্বর ৪ ই বেংগল অফিসে বসে তৈরী করা খালেদের দাবী আর পরদিন মোশতাকের কেবিনেট মীটিঙে তার সাংগপাংগদের দাবীর পার্থক্যগুলো দেখুন : স্পষ্টভাবে জেলহত্যা কান্ড এবং শেখ মুজিব হত্যাকান্ড নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিলেন শাফায়াত জামিল এবং অন্যরা , খালেদ মোশাররফ নয়.... বরন্চ্ঞ খালেদের মাথায় তখন ১ চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো : সেনাপ্রধান হবো , সিএমএলএ হবো , আর্মির চেইন অব কমান্ড রিস্টোর করবো....... মুজিব মারা গেছে , ৪ নেতা মারা গেছে , যা হবার হয়ে গেছে...... বিষয়টা পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে শাফায়াত জামিলের বর্ননায়...... শাফায়াত জামিল / যড়যন্ত্রময় নভেম্বর / পাতা ১৩৭ / শেষাংশ: ফুল রেসোলিউশন ইমেজ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮ টায় ডিআইজি ই.এ. চৌধুরীর কাছ থেকে জেলহত্যা কান্ডের ঘটনা জানতে পেরে তাকে সহ খালেদ ৪ ই বেংগল অফিসে আসেন শাফায়াত জামিলকে সেটা জানাতে..... তখন সকাল ১০ টা...... শাফায়াত সেটা জানতে পেরে রাগে ফেটে পড়ে এবং খালেদ কে সাথে সাথে বংগভবনে গিয়ে মোশতাককে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে উচ্ছেদ করতে বলে....... খালেদ তখন কি করছিলেন......... সকাল ১০: ৩০ - ১১ :০০ এর ভেতরে পৌছে বংগভবনে গিয়ে খালেদ জেলহত্যাকান্ডের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে পকেট থেকে জিয়ার রেসিগনেশন লেটার বের করে মোশতাকের সাথে দরকষাকষি করছিলেন তাকে সেনাপ্রধান কেন করা হচ্ছেনা....... মোশতাক অজুহাত দেখান কেবিনেটের মীটিং ছাড়া সেনাপ্রধান নিয়োগ সম্ভব নয়.......বিকালে মোশতাক কেবিনেট মীটিং ডেকেছেন...... এই সকাল ১১:০০ থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত খালেদ তখন কেবিনেট মীটিং এর অপেক্ষায় বসে ছিলেন ! এ যেন অনেকটা সেহরী খেয়ে ট্রেনের টিকেটের লাইনে দাড়ানো কখন কাউন্টার খুলবে........ সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে খালেদ মূলত তার আর্মি চীফ হওয়া নিয়েই ঘোরের ভেতরে ছিলেন........ খালেদ যে তখন বৈকালিক কেবিনেট মীটিং এর ললিপপ মুখেপুরে জি এম তাওয়াব আর এম এইচ খানের সাথে গল্পজুড়ে সময় কাটাচ্ছিলেন সেটা জানুন কর্নেল হামিদের কাছ থেকে : তিনটি অভ্যুত্থান এবং কিছু না বলা কথা / পাতা ৮৭ / শেষাংশ : ফুল রেসোলিউশন ইমেজ একই বিষয়টার সত্যতা মেলে মেজর রফিকের বইতেও পচাত্তরের রক্তক্ষরন / পাতা ৭১ / প্রথমাংশ / মেজর রফিক : খালেদ যে জেলহত্যার ঘটনায় হতাশ এবং বিমর্ষ হলেও সেটাকে "অগ্যস্ত শোচনা নাস্তি" মাইন্ডসেটে নিয়েছিলেন তার আরেকটি প্রমান ৪ নেতার কবরস্থান........ রাশেদ মোশাররফ এবং খালেদের মা ৪ ঠা নভেম্বর কেবল শেখ মুজিবের বাড়ী অভিমুখে শোকর্যালীতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেটাই নয়..... জেল হত্যার প্রতিবাদে তারা ৫ ই নভেম্বর হরতাল ডেকেছিলেন... এবং ৪ নেতার দাফন করতে চেয়েছিলেন সোহরাওয়ার্দী এবং শেরেবাংলার কবরের পাশে........ দাফনের পর পল্টনে মীটিং করতে চেয়েছিলো আওয়ামী লীগ...... অথচ খালেদ এসব ঘটনায় তার মাকে বলেছিলেন : "মা তোমরা আমার মৃত্যু ডেকে আনলে , তোমরা কেন এসব করতে গেলে" খালেদ এসবের কিছুতো হতে দেন ইনি , এমনকি মনসুর আলী , তাজউদ্দিন এবং নজরুল ইসলামের দাফন করেন বনানী কবরস্থানে [ সাবেক আমেরিকান সেন্টারের পাশে ]..... কামারুজ্জামানের লাশ হেলিকপ্টারে করে তার গ্রামের বাড়ীতে পাঠানো হয়েছিলো.......... নভেম্বর ৫ / ২০১০ / প্রথম আলো / মার্কিন দলিল : ৬ ই নভেম্বর ১৯৭৫ ঢাকা থেকে ডেভিস বোস্টারের ওয়াশিংটনে পাঠানো দলিল : এই হচ্ছে সেই "ভারতের চর" খালেদ মোশাররফ যিনি কিনা ঐ ৪ নেতাকে জেল থেকে বের করে ভারতের দালাল সরকার ক্ষমতায় বসাতে চেয়েছিলেন ! বর্ননার শেষ অংকে নাটকের শেষ অংকটিও এবার বলে যাই........ সেটি হলো খালেদ কেন মুজিব হত্যাকারীদের যেতে দিলেন ? মূলত এদেশে কিছু মুজিব বিষয়ক হিস্টিরীয়াগ্রস্ত লোক আছে যারা সারাক্ষন সবার ভেতরে মুজিবের শত্রু অথবা বন্ধু চরিত্র আবিস্কার করেন........ এধরনের কিছু আওয়ামী ফ্রীক খালেদের জন্য অনবরত আফসোস / মাতম করে বেড়ায়........ তাদের আফসোস কিংবা মাতম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মাতৃভূমি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের জন্য কসবা যুদ্ধে মাথায় গোলার আঘাত নেয়া বীরউত্তম খালেদের জন্য নয়....... মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তী ''K" ফোর্স অধিনায়ক খালেদের জন্য নয়...... ওদের সব কান্না মুজিবের প্রপোনেন্ট খালেদের জন্য....... মুজিবের শত্রু মোশতাক-ফারুক-ওসমানী- চাষী-ঠাকুর চক্র....... ঐ চক্রের শত্রু খালেদ........ মুজিবের শত্রুর শত্রু....... সুতরাং খালেদ মুজিবের প্রোপোনেন্ট........ এই ভেবেই এই আওয়ামী কুমীররা কেঁদে বুক ভাসায় খালেদের জন্য..... এই যেমন মহাখ্যাত মোজাম্মেল বাবু : ৩ রা ফেব্রুয়ারী / ২০১০ / আমাদের সময় কিংবা সম্প্রতি কালের কন্ঠ থেকে পদত্যাগী আবেদ খান : ২০ জুলাই / ২০১০ / কালের কন্ঠ কিন্তু সত্যি বাস্তবটা হলো খালেদ কারোররই প্রপোনেন্ট কিংবা অপোনেন্ট কিছুই ছিলেননা কেবল একজন ব্যতিত...... সেটি হলো জিয়ার সাথে প্রতিদ্বন্দীতা সেনা প্রধানের চেয়ার দখল নিয়ে.... মূলত যুদ্ধ বিজয়ী বীরত্বপূর্ন সব সেনানায়কের ভেতরেই এধরনের ইগো অ্যান্ড অ্যাসপিরেশন থাকে...... জিয়ার ভেতরে ছিলো..... খালেদের ভেতরে ছিলো..... মন্জ্ঞুরের ভেতরে ছিলো..... তাহেরের ভেতরে ছিলো..... এটি নতুন কিছু নয় , নবীজির আমলে সাহাবাদের ভেতরেও ছিলো...... খুবই মানবীয় এই ইগো অ্যান্ড অ্যাসপিরেশন থেকে খালেদ - জিয়ার সাথে যে মাত্রার প্রতিদ্বন্দীতায় জড়িয়েছিলেন সেটা ছিলো খুবই নিরীহ এবং নরম....... কেবলমাত্র প্রোটেকটিভ কাস্টডী....... অন্যদিকে খালেদ ফারুক - রশীদদের মোটেই শত্রু ছিলেননা....... মোশতাকের তো নয়ই সেটা এতক্ষনে জানতে পেরেছেন........ মূলত খালেদের হাতে ফারুক রশীদদের জীবন মোটেই ঝুকিতে ছিলোনা..... ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াতের বইতে যেটা জানা যায় : সকাল ৯ টায় ৪ ই বেংগলে ডালিম এবং নুর হাজির হয় ফারুক- রশীদের দূত হয়ে সমঝোতা করার জন্য যেটা ছিলো খালেদ শাফায়াতদের জন্য ভূত দেখার মত...... এদের মধ্যে নুর ছিলো স্বয়ং শেখ মুজিবের বুকে গুলি চালানো কালপ্রিট যে কিনা আগস্ট ১৫ পরবর্তী সময়ে গর্ব করে এটা বলতো...... আমিই শেখ মুজিব কে মেরেছি........ অন্যদিকে রশীদ- ফারুকরা যখন আত্নসমর্পনে রাজী হচ্ছিলেননা তখন ডালিম তাদের কে ধমক দিয়ে বলে ৪ ই বেংগল অফিসে এসে সারেন্ডার করার জন্য , ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যেতে...... বাংলাদেশ : রক্তাক্ত অধ্যায় / পাতা ৭৯ শেষাংশ / ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত : উপরন্তু ডালিম প্রচন্ড নির্ভয় আত্নবিশ্বাসের সাথে ফারুক রশীদেরকে ধমকাচ্ছিলো এমনভাবে যেন সে খালেদের দলেরই কেউ ! শত্রুর ডেরায় বসে ডালিমের এমন বেমানান নির্ভয় আত্নবিশ্বাস, নুরের এত দুঃসাহস আর বংগবন্ধু হত্যাকারীদের দেশত্যাগ এসবের শিকড় কোথায়....... আমার অনুসন্ধানে আমি ২ টি শিকড় পেয়েছি : [১] মেজর ডালিম তার ওয়েব সাইটে যা বলেছে ৩ রা নভেম্বরের অভ্যুত্থান নিয়ে: মেজর ডালিমের স্টেটমেন্ট মেজর ডালিমের ওয়েবসাইট ডালিমের সাথে খালেদ কিংবা কর্নেল হুদার সম্পর্ক ছিলো খালেদ ভাই , গুদু ভাই ! [২] খালেদ আর ফারুকের ভেতরে একটি পারিবারিক সম্পর্ক ছিলো....... নভেম্বর ৪ / ২০০৯ / প্রথম আলো / ৩ রা নভেম্বর ১৯৭৫ ওয়াশিংটনে বোস্টারের টেলিগ্রাম : সাবজেক্ট - খালেদ মোশাররফের বায়োডাটা চাচা-ভাতিজা..... ডেভিস বোস্টার তেমনটাই জানিয়েছেন ওয়াশিংটনকে........ আরো জানিয়েছেন ১৯৭৩ সালে শেখ মুজিব জীবিত থাকাবস্থাতেই খালেদ মেজর জেনারেল হতে চেয়েছিলেন এবং সেনাপ্রধান হওয়ার ইচ্ছাটাও অনেক পুরোনো.... দুটোর কোনটাই শেখ মুজিব পূরন করেননি....... যাইহোক....... ব্লগ অনেক লম্বা হয়ে গেছে , তাই শেষ মন্তব্য করে ফেলিঃ ক্রিকেট খেলায় অনেক সময় ব্যাটসম্যান বল না বুঝে হঠাৎ উইকেট ছেড়ে লাফিয়ে মারতে যায়..... এটাকে বলে ড্যান্সিং ডাউন দা উইকেট খেলা... পরিনতি : অধিকাংশ সময় ব্যাটসম্যানই কুপোকাত হয়....... ক্ষমতার রাজনীতির উইকেটেও খালেদ ডাউন দা উইকেটে হঠাৎ বেমক্কা লাফিয়ে ছক্কা মারতে গিয়েছিলেন.... ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে : খালেদ অক্কা পেয়েছেন....... তাই ক্রিকেট ধারাভাষ্যকাররা ঠিক যেভাবে বলে আমিও ঠিক সেভাবেই বললাম : খালেদের অভ্যুত্থানটি ছিলো একটি.................রাশ অব ব্লাড
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।