মনের এলোমেলো ভাবনাগুলোকে শব্দের ফ্রেমে বাঁধার এক অপচেষ্টা।
আমার মেজাজ এখন প্রচন্ড খারাপ। এতোটাই খারাপ যে খারাপের মাত্রা বোঝানোর জন্য কোন ঠিকঠাক মতোন শব্দও আমার মাথায় আসছেনা। এই মেজাজ খারাপের পেছনে দুটো কারণ আছে। প্রথম কারণ আজকে ক্লাসে স্যার জনসমক্ষে আমাকে বিশাল অপমান করেছেন।
লাখো কোটি হজমী বড়ি গুলে খেলেও সেই অপমান হজম হওয়ার মতো নয়। অপমানিত হওয়ার কারণ হল অতি সাম্প্রতিক একটি বিষয় নিয়ে করা প্রশ্নের সঠিক উত্তর আমি দিতে পারিনি। এরপর স্যারের পালা, উনি শুরু করলেন, আমি দিন দুনিয়ার কোন খবর রাখিনা, পেপার টেপার কিছু পড়িনা। আমার ক্যারিয়ারের কপালে ঘটি বাটি মাজা ছাড়া আর কিছু নাকি লেখা নেই। এই কথা শোনার পর পুরো ক্লাসের পোলাপান যেভাবে হেসে উঠেছিলো সেটা মনে হলে এখনো আমার আমার মাথায় আগুন ধরে যায়।
প্রথম কথা আমি প্রত্রিকা পড়িনা সেটা একেবারেই ভুল। আজকের সকালের পেপারেই দেখে এসেছি সাইফ আলী খান তার গার্লফ্রেন্ড কারিনা কাপুরকে দুর্দান্ত এক আংটি গিফট করেছে। কিন্তু কাহিনী হল, এই রেফারেন্স দিয়ে ভুলেও স্যারকে বলা যাবেনা যে আমি ঠিকই নিয়মিত পেপার পড়ি। এবার সেটা অর্থনীতির পাতায়ই হোক আর হলিউড বলিউডের নিউজই হোক, পেপার তো পড়ছি। কিন্তু না, সেটা হবার নয়।
বাংলাদেশে কবে যে সত্যিকারের বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হবে আল্লাহই ভালো জানেন! আর দ্বিতীয় কথা, এই যে গত চার বছর ধরে দিস্তা দিস্তা পেইজ ফটোকপি করালাম, গাদা গাদা ফর্মুলা মুখস্ত করলাম, নীলক্ষেত টু ফ্যাকাল্টি দৌড়াতে দৌড়াতে গায়ের রঙ কয়লা বানালাম, এসব কি শ্বশুরবাড়িতে বসে বসে ঘটি বাটির ভ্যালুয়েশন করার জন্য? অসহ্য!! ডায়াসে দাঁড়িয়ে বার বার মনে হচ্ছিলো কেন একটা চায়নিজ ড্রাগন হলাম না, তাহলে এক হুংকারে স্যারকে একেবারে স্পট কাবাব বানিয়ে দিতাম।
এটা হল তিনঘণ্টা আগের কাহিনী। আমি এখন আমার মেজাজ গরম হওয়ার দ্বিতীয় কারণ বর্ননা করবো। আমি বসে আছি বাসে। মহিলা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের একটিতে।
আর আমার পাশে যিনি বসে আছেন তিনি শিশু নন, মহিলা তো অবশ্যই নন, এমনকি দেখে প্রতিবন্ধীও মনে হচ্ছেনা। রীতিমতো আস্ত এক মাঝবয়সী লোক মহিলা সিটে বসে আছেন। অথচ পাশে একজন মহিলা কোলে বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপও করছেনা। আমি আর থাকতে পারলাম বেশ কষ্ট করে গলাটাকে নরম করে বললাম, এটা মহিলা সিট উনাকে বসতে দিন। লোকটার ভাব দেখে শুনতে পেয়েছে বলে মনে হলোনা ।
জানতাম এমনই হয়। আগে পরে যাই হোক, মহিলা সিটে বসার পর ঘাড় বাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাদের দিকে তাকাতে কিছু কষ্ট হয় বৈকি। এবার গলাটা আরেকটু চড়িয়ে বললাম, উনাকে বসতে দিন। এবার উনি হঠাৎ বাস্তব জগতে ফিরে এসে আমাকে কৃতার্থ করলেন যেন। চোখ পিট পিট করে আমার দিকে তাকালেন।
বেশকিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর বললেন, "শাহবাগ কি চলে এসেছে"? আমি এইবার একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বাস ততক্ষণে শাহবাগ, প্রেসক্লাব পার হয়ে গুলিস্তানের রাস্তায়। এই লোক এতক্ষন ছিলো কই? আমি কিছুটা অবাক হয়েই বললাম, "শাহবাগ তো অনেক আগেই পার হয়ে গিয়েছে, আপনি খেয়াল করেন নি"? আমার কথা শোনার পরও মাঝবয়সী লোকটি স্থির হয়ে বসে রইলো। সামনের সিটের হ্যান্ডেল্টা শক্ত হাতে ধরা। আমি আরো অবাক হয়ে দেখলাম লোকটা নেমে যাওয়ার জন্য কোন তাড়াহুড়া করলোনা, বরং অদ্ভুত একটা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
আমি অস্বস্তিতে পরে গেলাম। তার চোখের মনিগুলো আমার উপর নিবদ্ধ, কিন্তু দৃষ্টি যেন অন্য কোথাও, অন্য কোন লোকান্তরে। সে যেন আমাকে দেখেও দেখছেনা, কিংবা আমার মধ্যেই যেন অন্য কাউকে দেখতে চাইছে। সেই চোখগুলোতে অদ্ভুত এক শূন্যতা, পরিচিত কোন শব্দ দিয়ে ব্যখ্যা করার মতো নয়। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।
ঐরকম শুন্য চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়না।
বাস তখন সিগনালে দাঁড়িয়ে। এক বাচ্চা চকলেট বিক্রেতা প্রাণপণ চেষ্টা করছে তার চকলেটগুলো বিক্রি করার জন্য। কিন্তু যাত্রীদের মাঝে তেমন উৎসাহ দেখা যাচ্ছেনা। খুব স্বাভাবিক একটি দৃশ্য।
এই ব্যাস্ত যান্ত্রিক নগরে একজনের হতাশাই দেখা যায় আরেকজনের স্ফুর্তির কারণ। চোখের কোনা দিয়ে খেয়াল করলাম লোকটা একটা চকলেট কিনলেন। এখনো তার মাঝে নেমে যাওয়ার কোন তাড়া নেই। অথচ গন্তব্য থেকে সে তখন অনেক দূরে। লোকটা হঠাৎ চকলেটটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “"এই চকলেটটা আমার মেয়ের খুব প্রিয় ছিল, তুমি এটা নিয়ে যাও"”! হঠাৎ এই রকম অনাকাঙ্ক্ষিত প্রস্তাবে আমি একদম জমে গেলাম।
যত রকমের অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টির নাম শুনেছিলাম সব একসাথে মনে পড়তে লাগলো। আশে পাশে তাকিয়ে দেখি বাস অনেকটাই ফাঁকা হয়ে এসেছে। দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাটিও বসে পড়েছেন। আমি যখন এইরকম নানাবিধ আশংকায় প্রায় ঘামছিলাম, হঠাৎ মনে হল লোকটি এইটা কেন বলল, চকলেটটা আমার মেয়ের খুব প্রিয় ছিল, কেন বললনা চকলেটটা আমার মেয়ের খুব প্রিয়? শুধু শুধু এই "ছিলো" শব্দটা লাগানোর কি দরকার ছিলো? একজন সচেতন ঢাকাবাসী হিসেবে আমার উচিত ছিল মনের এইসব অবাঞ্চিত প্রশ্নগুলোকে মনের ভেতরেই রেখে দেয়া। কিন্তু ভুল হয়ে গেলো।
কিছু কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া যতটা সহজ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার উত্তর গ্রহন করা অতটা সোজা হয়না। ভদ্রলোক আমার প্রশ্ন শুনে একদম স্থির হয়ে গেলেন। সোজা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, "আমার মেয়ে দেড়বছর আগে সুইসাইড করেছে"।
এরকম একটি উত্তরের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। আমি একরকম হাঁ হয়ে গেলাম।
কিন্তু লোকটির কোন ভাবান্তর দেখা গেলোনা। তিনি যেন এই প্রশ্নটির জন্যই এতক্ষন অপেক্ষা করছিলেন। তাই নিজে থেকেই বলতে লাগলেন, "আমার মেয়েটা খুব চঞ্চল ছিলো। ঘরে তো তাকে পাওয়াই যেতোনা; আর ঘরের থাকলে তার হৈ হুল্লোড়ের চোটে বাসাটাকে বাসা কম হাট বাজার বেশি মনে হতো। মেয়ের মা বলে বলে বিরক্ত, মেয়েদের এতো ছটফটানি ভালোনা, কিন্তু মেয়েটার ছেলেমানুষি কমেনি।
ছোটবেলায় মেরে মেরে মাঝে মাঝে লাল করে দিতাম এই লাফালাফি স্বভাবের জন্য। মেয়ে চুপচাপ মার খেতো। জোরে একটা শব্দও করতোনা। আমি তখন আরো রেগে যেতাম। হাতের কাছে যা পেতাম তা দিয়েই পিটাতে আরম্ভ করতাম।
আজব একটা মেয়ে ছিলো; আমার সামনে চোখের একটা ফোটা পানিও ফেলতোনা কিন্তু রাতে ঠিকই কাঁদতে কাঁদতে বালিশ ভেজাতো। ভাবতে অবাক লাগে মেয়েটা আর কখনো জানতেও পারবেনা তার এই নিষ্ঠুর বাপটার কত কষ্ট হতো সেই রাতগুলোয়; কত রাত মেয়ে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর তার এই অপদার্থ বাপটা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে এসেছে। বুকের মধ্যে কলিজাটা যেমন লাফাতো শরীরটাকে দম দেয়ার জন্য; আমার মেয়েটাও ঠিক তেমন করেই লাফাতো আমার খালি বাড়িটাকে দম দেয়ার জন্য। আমার কলিজাটা অভিমান করে চলে গেলো। আমার ভরা বাড়ীটাও এক নিমিষে শুন্য হয়ে গেলো।
মাঝে মাঝে বুকের উপর হাত রেখে ভাবি আমার কলিজা ছাড়া আমি এখনো বেঁচে আছি কিভাবে"! এইটুকু বলে ভদ্রলোক অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। ব্যাস্ত শহরের শত কোটি কোলাহল পার হয়েও তার তার লুকানো গাঢ় দীর্ঘশ্বাসের শব্দ যেন আমার বুকের উপর আছাড় খেয়ে পড়লো। আমি পাশ থেকেই দেখতে পেলাম তার চোখের কোনায় জল। রাস্তার পাশের বিজ্ঞাপনের জমকালো আলো সে চোখের জলে প্রতিফলিত হয়ে রুপালী রঙ ধরেছে। মনে হচ্ছে তার চোখের জলগুলো যেন রুপালী।
কোথায় যেন পড়েছিলাম বেদনার রঙ নীল হয়। মততার রঙ কি তবে রুপালী হয়? আমি অবাক হয়ে রুপালী রঙের জল দেখতে লাগলাম। ভদ্রলোক বলে যেতে লাগলেন।
"এই একটা মাত্র মেয়ে ছিলো আমার। চঞ্চলতা যতই থাকুক পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলো মেয়েটা।
এস এস সি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ+ পেয়েছিলো। প্রথমবারের মতো আমাদের গ্রামের কোন মেয়ে এতো ভালো রেজাল্ট করলো। এরপর থেকে যতবার গ্রামে গিয়েছি, মানুষজন আমার আগে আমার মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করতো। আমি বুক ফুলিয়ে বলতাম আমার মেয়ের রেজাল্টের কথা। দশজন পরামর্শ দিলো মেয়েকে এবার আরও ভালো কলেজে ভর্তি করা উচিত।
আমার মেয়ের কোন আব্দারেই আমি কখনো এক শব্দে হাঁ বলিনি। কিন্তু কি মনে করে যেন সেদিন রাজী হয়ে গিয়েছিলাম। মেয়ের সাফল্যে গর্বিত বাবা তখন বোঝেনি সেই হ্যাঁ এর মুল্য কতোটা চড়া হতে পারে।
আমার মেয়েটা কখনোই ঘরকুনো ছিলোনা। কিন্তু ঢাকার কলেজে ভর্তি হওয়ার কথা শুনে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলল।
সে কিছুতেই এই বাড়ি ছেড়ে তার মাকে ছেড়ে যাবেনা। কিন্তু বাবার কঠিন্যের কাছে মেয়ের চোখের জল টিকলোনা। এখনো মনে পড়ে মেয়েকে যেদিন হোস্টেলে তুলে দিয়ে এসেছিলাম, চোখে পানি নিয়ে মেয়ে চুপচাপ ভেতরে চলে গিয়েছিলো। একবার ঘুরে বলেনি বাবা আসি আমার জন্য দোয়া করো। বড় অভিমানী মেয়ে।
আমিও মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলিনি মা ভালো করে পড়িস। একেই হয়তো বলে বাপকা বেটি। প্রথম কয়েকমাস মেয়ে বার বার ফোন দিতো। নতুন জায়গা তার ভালো লাগেনা। কথা তো আর আমার সাথে হতোনা।
তার মায়ের কাছেই কান্নাকাটি করতো। আমি দূর থেকে ধমক দিতাম, বলতাম এতো তাড়াতাড়ি শখ মিটে গেলো। ভালো রেজাল্ট ছাড়া বাসায় যাতে না ফেরে বলে দিও। মেয়ে নিশব্দে ফোন রেখে দেয়া ছাড়া আর কোন প্রতিউত্তর করেনি। আস্তে আস্তে ফোনালাপ কমতে থাকে।
মেয়ের মা ব্যাস্ত হয়, আমি সব উড়িয়ে দেই। ভালো রেজাল্ট দরকার, পড়া বাদ দিয়ে কান্নাকাটি করলে তো চলবেনা। পরীক্ষায় ভালো করতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। মেয়ের জন্য মাসের টাকাটা জোগাড় করতে কিছুটা কষ্ট হতো। কিন্তু মেয়ের হাতে টাকা দিয়ে আসতে দেরী হতোনা।
মেয়ে আমার হোস্টেলের দরজায় দাঁড়িয়ে নিচু মাথায় টাকা হাতে নিতো। মেয়ের চেয়ে মেয়ের রেজাল্টের খবরই বেশি জরুরী ছিলো। সে গাইগুই করতো। স্পষ্ট কোন উত্তর দিতনা। আমি তো উত্তর চাইতাম না।
আমি চাইতাম রেজাল্ট। অনেক ভালো রেজাল্ট। যাতে আরও গর্ব করে বুক ফুলিয়ে হাঁটতে পারি। মেয়ের সুকীর্তিগুলো আরও জোর গলায় যেন বয়ান করতে পারি। কখনো বুঝতেই চাইনি যার কাছে আমার এতো চাওয়া সেই ছোট্ট মেয়েটি আমার কাছে কি চায়।
কখনো বুঝতেই চাইনি যে স্বপ্ন নিজে দেখতে হয়, স্বপ্ন কখনো কারো ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া যায়না। তাইতো এই স্বার্থপর বাবা খেয়ালই করেনি তার খরগোশের মতো ছটফটে মেয়েটা আস্তে আস্তে মিইয়ে যাচ্ছে। যে কলিজা আমার সংসারের জান ছিলো তার ধুকধুকানি আস্তে আস্তে কমে আসছে। মেয়ের ভবিষ্যতের চিন্তায় মশগুল বাবার তাই মেয়ের বর্তমান দেখার সময় হয়না।
মেয়েটা কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষায় ফেইল করেছিলো।
কলেজ জানিয়ে দিয়েছিলো গার্জিয়ানের বন্ড সাইন ছাড়া কোন প্রমোশন হবেনা। আর ফেইলের খবর ভালো রেজাল্টের আশায় বসে থাকা বাবাকে জানানো তার পক্ষে অসম্ভব। আমার মেয়ে এই জটিল সমস্যার খুব সহজ একটা সমাধানের পথ বেছে নিয়েছিলো। আর তা হলো গলায় ফাঁস লাগিয়ে চুপচাপ এই পৃথিবী থেকে সরে যাওয়া। আমার মেয়েটা সবসময়ই মায়ের খুব ন্যাওটা ছিলো।
অথচ যাওয়ার সময় চিঠি রেখে গেলো আমার জন্য। খুব বেশি কিছু লেখা ছিলোনা সেখানে। শুধু দুইটা লাইন, “বাবা আমি তোমার ভালো রেজাল্ট করা মেয়ে হতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করে দিও। চিঠিটা হাতে নিয়ে আমি স্থির হয়ে বসেছিলাম।
আশে পাশের মহিলারা এসে খুব কাঁদল। যারা মেয়েকে ভালো কলেজে ভর্তি করার বুদ্ধি দিয়েছিলো তারা আরও বেশি কাঁদল। মেয়ের মা বার বার মুর্ছা গেলো। শুধু আমিই কাঁদতে পারলাম না। প্রতিরাতে মেয়ের কবরের পাশে গিয়ে বসে থাকি।
গত দেড়বছর ধরে খুব চেষ্টা করেছি কাঁদতে কিন্তু কান্না আসেনা। আমার বুক ধড়ফড় করে, শ্বাস আঁটকে আসে। ইচ্ছে করে চোখগুলা খুবলে তুলে ফেলি, তারপরেও যদি একটু পানি বের হয়। কিন্তু না; বুকটা আমার আগুনে পোড়ে অথচ চোখ দিয়ে একফোঁটা পানিও বের হয়না। আজ তোমাকে দেখে জানিনা কি হল।
মনে হল তোমাকে নিজের হাতে একটা চকলেট কিনে দেই। আমার নিজের মেয়েকে তো কখনো দেইনি। যদি দিতাম তাহলে হয়তো আজ তোমার জায়গায় এইখানে আমার মেয়ে বসে থাকতো আমার পাশে। আর দেখ এই চকলেট টা কেনার সাথে সাথে কি অদ্ভুত একটা ব্যপার হল। আমার চোখে পানি।
আমি কাঁদছি। গত দেড় বছরে এই প্রথম বারের মতো আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে"। বলতে বলতেই তিনি হুহু করে কেঁদে উঠলেন। অনেক দিনের জমানো কান্না এতো সহজে থামবার নয়। তার চোখের পানি চিক চিক করছে।
রুপালী রঙের জল। এতক্ষন এই রুপালী জলের একমাত্র দর্শক ছিলাম আমি। এখন আমার সাথে সাথে বাসভর্তি লোকেরাও রুপালী রঙের চোখের জল দেখতে লাগলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।