৭১ এর চেতনা বুকে জ্বলছে অবিরত শিবির ক্যাডাররা দলীয় প্রশাসনের আনুকূল্য পেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে, তার অন্যতম হলো পরীক্ষার খাতা বাইরে লিখে পরে জমা দেওয়া। নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভর্তি পরীক্ষায়ও শিবির নানা অপকৌশল ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে হলগুলোর শিবির-নিয়ন্ত্রিত কক্ষ তল্লাশির সময় উদ্ধার হওয়া কাগজপত্র থেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ২৩৫ ও ২৬৬ নম্বর কক্ষ তল্লাশি করে শিবিরের নানা অপতৎপরতার বহু প্রামাণ্য দলিল উদ্ধার করে পুলিশ। পাশাপাশি শিবির-নিয়ন্ত্রিত ১১৪ নম্বর কক্ষ থেকে পাওয়া গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগের সিলমারা বেশ কিছু ফাঁকা উত্তরপত্র বা পরীক্ষার খাতা।
বেশ কিছু ভর্তি পরীক্ষার ফাঁকা উত্তরপত্রও এ কক্ষ থেকে উদ্ধার করেছে হল প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম সোবহান বলেছেন, 'এসব ঘটনা আমাদের ধারণার অতীত ছিল। এখন দেখছি, শিবির ফাঁকা উত্তরপত্রও পরীক্ষা হলের বাইরে নিতে সক্ষম হয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটিকে এসব বিষয় দেখার জন্য অনুরোধ করেছি। '
ভোররাতে ১১৪ কক্ষের আবাসিক ছাত্র শিবির ক্যাডার আতাউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মতিহার থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেন খান জানিয়েছেন, আতাউরের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আলী। সে রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে তাণ্ডবের পর অন্য শিবির ক্যাডারদের সঙ্গে সেও পালিয়ে যায়। পরে ফিরে এসে ১১৪ নম্বর কক্ষেই ওঠে।
আতাউরকে ৮ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত পুলিশের ওপর হামলার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকালই আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত থেকে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
মতিহার থানার ওসি বলেন, 'আপাতত আতাউরকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি তার বিরুদ্ধে একাডেমিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মামলা করে, তখন সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। '
সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ ড. আখতার ফারুক আরো বলেন, উত্তরপত্র জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত শিবির ক্যাডার আতাউর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে হল প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি
জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত পেলে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে মামলা করা হতে পারে। উত্তরপত্র বাইরে আনার বিষয়টি প্রমাণিত হলে তার ছাত্রত্ব বাতিল হতে পারে বলেও প্রাধ্যক্ষ জানান।
সোহরাওয়ার্দী হলের সাধারন ছাত্ররা বলেন , ১১৪ নম্বর কক্ষ থেকে পাওয়া যায় রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের পাঁচটি ফাঁকা খাতা বা উত্তরপত্র। খাতাগুলোর সিরিয়াল নম্বর ০২৮২০৫, ০২৫৯১৫, ০২৫১৫৮, ৪০৮৭১ ও ০২৫১৪২।
এসব খাতা পরীক্ষা হলের বাইরে কীভাবে গেল, এই প্রশ্নের কোনো উত্তর এখনো খুঁজে পাচ্ছেন না হল প্রাধ্যক্ষ ড. আখতার ফারুক। তিনি আরো জানান, ২৬৬ নম্বর কক্ষ থেকে ২০০৫-০৬ সেশনের ভর্তি পরীক্ষার ফাঁকা খাতাও পাওয়া গেছে বেশ কয়েকটি।
প্রাধ্যক্ষের আশঙ্কা, রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগেরই কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী পরীক্ষায় অবতীর্ণ কোনো শিবির ক্যাডারকে ভালো ফল করিয়ে দিতে এ অবৈধ সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'যেহেতু আতাউর রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগেরই ছাত্র আর খাতাও পাওয়া গেছে তার বিভাগেরই, তাই তাকেই আমরা সন্দেহ করছি উত্তরপত্র সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত বলে। '
এদিকে ১১৪ নম্বর কক্ষ থেকে ভর্তি পরীক্ষার ফাঁকা উত্তরপত্রও পাওয়া গেছে।
এসব উত্তরপত্র পদার্থবিজ্ঞান, লোকপ্রশাসন, ব্যবস্থাপনা ও গণিত বিভাগের। প্রাধ্যক্ষ আরো বলেন, 'শিবিরের এসব অপতৎপরতায় আমরা ক্রমাগত বিস্মিত হচ্ছি। ' তিনি আরো বলেন, বিদ্যমান পদ্ধতিতে দলীয় শিক্ষকদের সহায়তা ছাড়া পরীক্ষার খাতা পরীক্ষা হলের বাইরে আনা এবং পরে উত্তর লিখে জমা দেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।