আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানুষরা কি এমনই হয়! সুখে থাকলেই ভূত উঠে মাথায়

অন্যের থেকে ও অন্যরকম এমন কিছু করার শখ। হাদিসে বর্নিত একটি গল্প দিয়েই শুরু করি: মুসা নবীর আমলে নবী যখন তার অনুসারীদের নিয়ে নতুন একটি জায়গাতে চলে আসলেন তখন তার অনুসারীরা মুসাকে জানালো, হে মুসা আমরা তো আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে তোমার কথায় নিজেদের সব কিছু ফেলে রেখে তোমার সাথে চলে এসেছি। তাই তুমি এবার আল্লাহকে বলো আমাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে। আমরা কোন চাষবাস করতে পারব না। নবী হুশিয়ার উচ্চারন করে বললেন, হে আমার ভাইয়েরা তোমরা এমন কথা বলো না আর এমন কাজ আমাকে করতে বলো না, তাহলে আল্লাহ আমাদের উপর নাখোশ হতে পারেন।

কে শোনে কার কথা, তারা আরো জোর গলায় বলতে লাগল, তখন তো তুমি বলেছিলে আমরা বিপদে পড়লে আল্লাহ আমাদের দেখবে। এখন ভাই আমরা এত কিছু বুঝি না তুমি আল্লাহকে বলে আমাদের বসে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা করো। ওদের সাথে না পেরে মুসা নবী আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করল আর আল্লাহ তার দোয়া কবুল করল। তখন ভোর বেলা মুসা এবং তার অনুসারীদের জন্য কুয়াশার মত আব নামে এক ধরনের বেহেস্তী খাবার পাঠাতে লাগল আল্লাহ তায়ালা। সকালে উঠে আল্লাহর পাঠানো খাবার খায় আর সারাদিন কার্যকর্ম ছাড়া বসে থাকে।

কিছু দিন পর দেখা গেল কিছু লোক আল্লাহর পাঠানো সেই খাবার পর্যন্ত সংরক্ষন করা শুরু করছে। তখন নবী আবার হুশিয়ার দিয়ে বলল, হে আমার অনুসারীগন তোমরা কি জান না, আল্লাহ তায়ালার কাছে সব কিছু অসীম, তাই তোমরা তার পাঠানো খাবার সংরক্ষন করো না কারন এটা করার দরকার নেই। আল্লাহ তো তোমাদের চাহিদামত দিচ্ছেন। কিন্তু তারপরও এসব বন্ধ হওয়া তো দুরের কথা তারা আবার নতুন বায়না নিয়ে নবীর কাছে এল। এবার তাদের দাবি, আল্লাহ কে বলো আমাদের জন্য আর খাবার পাঠাতে হবে না।

এরচেয়ে বলো আমাদের জমিগুলো যেন উর্বর করে দেয়, আমরা চাষবাস করে খাব। বসে বসে খেতে আর ভালো লাগছে না। নবীজি আবার হুশিয়ার দিয়ে বললেন, ওরে তোমরা এমন কথা বলো না। আল্লাহ আমাদের কে যা দিয়েছেন তা দিয়েই সন্তুষ্ট থাক। বেশী লোভ করা ভালো না।

কিন্তু কে শোনে কার কথা, তাদের একটাই দাবি আল্লহকে বলে যেন তাদের জবি উর্বর করে ভলো চাষবাসের ব্যবস্থা করা হয়। কি আর করা অবশেষে নবী আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন আর আল্লাহ তার প্রিয় বান্দার দোয়া কবুল করলেন। জমি উর্বর হল, ভালো ফসল ফলতে লাগল। এখনো কোন অসুবিধা নাই। এভাবে বেশ কিছু দিন যাওয়ার পর, আবার একদিন সবাই মিলে মুসা নবীর কাছে আসল।

এবার তাদের বড় কোন দাবি নাই। শুধু একটাই ছোট দাবি আর তা হল আল্লাহ যেন তাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করে দেয়। কারন, কারন একটাই, এভাবে চাষ করা আর বসে বসে খাওয়া তাদের একদমই ভালো লাগছে না। তাই আল্লাহকে বলে যদি নবী তাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করে দেয় তাহলে তারা যুদ্ধে যাবে। এবারো নবী বরাবরের মত হুশিয়ার দিয়ে বললেন, তোমরা এমন কথা বলো না।

আল্লাহ যা দিয়েছেন তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাক। বেশী লোভ করো না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তাদের একটাই দাবি, বসে বসে তো অনেক দিন খাওয়া হল এবার যুদ্ধ করতে চাই। কি আর করা, নিরুপায় হয়ে নবী আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন এবং আল্লাহ তার দোয়া কবুল করলেন।

ফরজ হয়ে গেল যুদ্ধ মুসা নবী এবং তার অনুসারীদের উপর। যুদ্ধ কাদের সাথে? যুদ্ধ হল পাশের আরেকটি রাজ্যের সাথে। তো নবী মনে হয় হাজার খানেক অনুসারী নিয়ে যুদ্ধ করতে রওনা হলেন। পথে তারা শুনতে পেল, পাশের রাজ্যের ৭০ হাজার যোদ্ধা আসছে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে। এই কথা শুনে মুসা নবীর অনুসারীরা বলল, হে মুসা আমরা তোমার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে যুদ্ধ ফরজ করার জন্য বলেছি, তাই বলে বিপক্ষ দলের ৭০ হাজার লোকের সাথে যুদ্ধ করতে হবে এটা কোন কথা।

আমরা বাপু এমন যুদ্ধে যেতে পারব না। তুমি আর তোমার আল্লাহ মিলে যুদ্ধ করো গিয়ে, আমরা এর মধ্যে নাই। নবী হুংকার দিয়ে বললেন, তোমরা এমন কথা বলো না। জয়-পরাজয় আল্লাহর হাতে। তোমরা যুদ্ধে চল, জয় আমাদের হবেই ইনশাল্লাহ।

আর এ যুদ্ধ তো তোমরাই চেয়েছিলে। তখন অনুসারীরা বলল, হুম যুদ্ধ চাইছি দেখে কি এত লোকের সাথে যুদ্ধ করে প্রানটা খোয়াবো নাকি। না..বাপু আমরা যুদ্ধে যেতে পারব না। তুমি বরং একলাই যাও। একথা বলে বেশীর ভাগ অনুসারী উল্টোপথে বাড়ির দিকে রওনা হলো আর কিছু অনুসারী মুসা নবীর সাথে থেকে গেল।

কিন্তু আল্লাহর লীলা তো বোঝা দায়, তাই ঐসব অনুসারীরা কিন্তু উল্টো পথ ধরলেও বাড়িতে আসতে পারেনি। বরং তারা একঐ পথে টানা ৭০ বছর চক্রাকারে ঘুরেছে। আমার আলোচ্য বিষয় কিন্তু এই হাদিস বয়ান করা নয়। আমি চিন্তা করছি, আমাদের এই বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা কি..? একটু ভালো থাকা, একটু ভালো খাওয়া, জীবনের নিরাপত্তা, আর আগামী প্রজন্ম যেন একটা ভালো ভবিষ্যত পায় তার বন্দোবস্ত করা। এই তো চাওয়া, তাই না..? কিন্তু এই চাওয়া পুরুন করা তো চাট্রিখানি কথা নয়।

এর জন্য আমরা নিরবধি পরিশ্রম করে যাচ্ছি, যেন খুব দ্রতই লক্ষ্য পৌছানো যায়। কেউ কেউ আবার ক্ষমতার শীর্ষে থেকে ভাবছে ধুর শালা সবাইকে নিয়ে কবে না কবে লক্ষ্যে পৌছাবো, তারচেয়ে ভালো সুযোগ যখন একবার পেয়েছি বরং নিজের আর ছেলে মেয়েদর জন্য কিছু আখের গুছিয়ে নেই। শুরু করে দুর্নীতি, হয়ে যায় মুষ্টি মেয় লোক খুউব ধণী। এবার আসনি আমার আলোচ্য বিষয়ে.... কয়দিন ধরে গাদ্দাফি সরকারের আমলে তার উন্নয়ন কর্ম কান্ডের খবরগুলো খুউব চোখে পড়ছে। আর মনে পড়ছে উপরের হাদিসটি, যার মর্মকথাই হল- সুখে থাকতে ভূতে কিলায়।

এখন দেখার বিষয় ইউএস আর পশ্চীমাদের লেজ ধরে চলা বর্তমান লিবিয়ায়, যারা ঘর হারিয়েছে তারা কত দ্রুত তাদের ঘর পাবে। যারা বেকার এবং চাকরি হারিয়েছে তারা কত দ্রুত চাকরি পাবে। দুর্নীতি তাদের প্রশাসনে প্রবেশ করে কত দ্রুত স্বনির্ভর দেশটিকে পরনির্ভরশীল করে দিবে। আমরা খুবই ভাগ্যবান আমাদের জীবন দশায় আমরা অনেক ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরেছি। কিন্তু তার থেকেও আরো মজার বিষয়, যদি আমরা আরো কিছুদিন বেচে থাকি তবে এইসব ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিনতিও দেখতে পাব।

ভাবছি লিবিয়ার জনগণও কি মুসা নবীর ঐসব অনুসারীর মত ভুল করল। অনুসারীদের পরিনতি কি হয়েছিল তা সবার জানা কিন্তু লিবিয়দের পরিনতি কি হয় তা দেখতে হয়ত বেচে থাকতে হবে আরো কয়েক দশক। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.