আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রধানমন্ত্রী আমাকে মীরজাফর কিংবা বেঈমান বলেননি...... গোঃ মাঃ রনি

অতি সম্প্রতি চ্যানেল আইয়ের জনপ্রিয় টক শো ‍ ‍‌‌'তৃতীয় মাত্রা'য় আমার একটি বক্তব্য এবং সরকারের সংসদীয় দলের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে কয়েকটি পত্রিকায় উপরোক্ত শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে সারাদেশে আলোচনা-সমলোচনার ঝড় বইছে। বিশেষ করে ইন্টারনেটের বিভিন্ন ব্লগে এ নিয়ে বিভ্রান্তিকর রসালো মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমার বক্তব্য প্রদান জরুরী হয়ে পড়েছে। প্রথমত, টক শোতে আমি যা বলেছি তা যেমন কোটি কোটি দর্শক দেখেছে এবং এর খন্ডিত অংশ ইউটিউব ও ফেইসবুকের মাধ্যমে দেখছে। আমার অনুরোধ চ্যানেল আইয়ের সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি না দেখলে বক্তব্যের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বোঝা যাবে না। ইন্টারনেটে প্রকাশিত সাড়ে তিন মিনিটের বক্তব্যে মাননীয় যোগাযোগমন্ত্রী কিংবা বক্তা হিসেবে আমার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কতিপয় সংসদ সদস্যের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাগুলো তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, প্রধানমন্ত্রী এমপি রনিকে মীর জাফর ও বেঈমান আখ্যায়িত করেছেন। এ বিষয়ে আমার বক্তব্য হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ওই কথা বলেননি। যারা আমাকে ছোট করার চেষ্টা করেছে তারা মূলত সুকৌশলে প্রধানমন্ত্রীকে জনসম্মুখে প্রশ্নের মুখোমুখি করেছেন। আমি দলের অত্যন্ত অধঃস্তন একজন কর্মী। আমার কর্মে ভুল থাকবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু কোন রকম কূটকৌশল কিংবা চক্রান্ত তরুণ মনে স্থান পায় না।

অন্যদিকে বয়োজোষ্ঠ্যগণ নানা কৌশলের মাধ্যমে যে রাজনীতির খেলা খেলতে চান তার পরিণতি কখনো শুভ ফল বয়ে আনেনি। আমি শিখেছি যে, সদা সত্য কথা বলবে। সত্য বলতে পিছ পা হবে না। প্রভাবশালিদের ত্রুটি নিয়ে কথা বলা উত্তম ইবাদত এবং সর্বশেষে মহান সক্রেটিসের অমিয় বাণী- নিজেকে চেনা। ইতিহাসের প্রায় একই সময়ে চীন দেশের মহাপন্ডিত কনফুসিয়াস বলেছিলেন- ' অন্যের ঘরের সামনে বরফ জমে আছে তা দিয়ে তোমার দরকার নেই।

তোমার ঘরের সামনে যে ছোট একটি খড় পড়ে আছে তা আগে পরিস্কার করো। ' মহাজ্ঞানীদের এই কথা মানলে আমাদের উচিত নিজ নিজ দলের আত্মসমালোচানা করা। অথচ ইতিহাসের উল্টো রথে আমরা এখন নিজের সকল ত্রুটিকে গোপন রেখে অন্যের ত্রুটি প্রকাশের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছি ঠিক যেমন হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলস করতেন। হিটলার তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষকে যতটা উত্তেজিত এবং প্রলুব্ধ করা যায় তা কোন লেখনির মাধ্যমে করা যায় না। কাজেই আমি বক্তব্য প্রদানকেই বেছে নিলাম।

তিনি যুগশ্রেষ্ঠ বক্তা ছিলেন এবং তার প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসও মিথ্যাচারমূলক বক্তব্যের জন্য চিরদিন কুখ্যাত হয়ে থকবেন। একবিংশ শতাব্দীর এই প্রান্তে এসে আমার ভাবনায় ঘুরপাক খাচ্ছে কোনটি করা উচিত। আমি যখন মুসলিম জুরিসপ্রুডেন্স এবং অ্যাংলো সাক্সসান জুরিসপ্রুডেন্সের ইতিহাসের থিওলজি নিয়ে ভাবি তখন মনে হয় আমারদের পররাষ্ট্রনীতির একটি বিরাট সফলতা আসতে পারে ওআইসি কেন্দ্রিক রাষ্ট্রগুলো সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে। কিন্তু এই কাজ যিনি করবেন তার থাকতে হবে প্রচন্ড সম্মোহনী ব্যক্তিত্, একই সঙ্গে ইসলামী জ্ঞানের পান্ডিত্য, আরব বিশ্বের ইতিহাস ও ব্রতি ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা। কিন্তু যখন দেখি সরকারে এই ধরনের কোন লোক দায়িত্বপ্রাপ্ত হচ্ছে না, তখন ভাবনাগুলো এলামেলো হয়ে যায়।

আমাদের দেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় সার্বিক অর্থে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষকে তেমন কিছু না দিয়েও এই মন্ত্রণালয়ের মাধ্য সন্তুষ্ট রাখা সম্ভব। আমাদের ধর্মমন্ত্রী যদি বায়তুল মোকাররম মসজিদ কিংবা জাতীয় ঈদগাহের জামাতে খুৎবা দিতে পারতেন তাহলে কতই না মঙ্গল হতো। সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সকল কর্মকর্তা যত বেশী দক্ষ, আন্তরিক, ভদ্র এবং গণমুখী হবে ততই সরকারে প্রতি মানুষ আস্থাবান হয়ে উঠবেন। যেহেতু ভাবনার তাড়না আমাকে প্রতিনিয়ত আঘাত করে, সেহেতু সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সফলতা ও ব্যর্থতা-আমার মানসপটে কথার ফূল হয়ে ফুটে থাকে।

সুযোগ পেলে কিভাবে যে তা বের হয়ে যায় তা আমি নিজেও জানি না। সরকারের কার্যকালীন সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিরোধী দলগুলো অস্থির হয়ে পড়েছে। প্রতিপক্ষ অস্থির হলে নিজেকে স্থির রাখাই জয়লাভের মূলমন্ত্র। কিন্তু আমি দেখছি যে, আমাদের কেউ কেউ প্রতিপক্ষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অস্থির আচরণ করছেন।

অধিকন্তু নির্বাচন পূর্ব সময়ে যে সকল বন্ধু সংগঠন আমাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন তাদের অনেকেই এখন নতুন করে হিসেব নিকেশ মেলাচ্ছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, প্রতিটি বিষয় যেনো প্রধানমন্ত্রীর একার দায়িত্ব। তার প্রধান কর্মযোগীগণ সাধারণের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। কাজেই এই সকল কর্মযোগীদের পরিবর্তে মানুষ প্রধানমন্ত্রীকেই সহজলভ্য মনে করছেন। আর আমার আপত্তি সেখানেই।

যে কর্ম পদ্ধতির ঘেরাটোপে প্রধানমন্ত্রী বন্দী হয়ে পড়েছেন তা সম্পাদনে তিনি দৈনিক গড়ে ১৮/১৯ ঘন্টা পরিশ্রম করেন এবং সাপ্তাহিক ছুটিও ভোগ করেন না। তার বর্তমান বয়স প্রায় ৬৬ বছর। কাজেই অতিরিক্ত পরিশ্রমের ধকল বেশিদিন বহন সম্ভব নয়। এই চিরায়ত সত্যটি তার কর্মযোগীগণ কেনো বুঝেন না তা নিয়ে আমি কষ্ট পাই। ইতিহাসের আরো একটি ধ্রুব সত্য হলো- ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে একটি বিশাল চাটুকার সম্প্রদায় গড়ে ওঠে।

অনেক মহান শাসকদের কে তার চাটুকাররা শেষ করে দিয়েছে। এই সব চাটুকারদের মধ্যে অনেকে আবার বিশ্বখ্যাত জ্ঞানী, গুণী ও পন্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। মুসলমানরা যাকে ফেরাউন বলে গালি দেয় তার প্রকৃত নাম রামেসিস দ্যা সেকেন্ড। মিশরবাসী এখনো তাদের জাতীয় বীর রামেসিস দ্যা সেকেন্ডকেই মনে করে তার বহুমুখী প্রতিভা, দক্ষ শাসন ক্ষমতা এবং জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য। মিশরের আরেক বিখ্যাত মুসলিম শাসকের নাম আল মুয়িজ দীনিল্লাহ।

পাক-ভারতের সম্রাট আকবরের নাম আমরা সকলেই জানি। এই ৩ জন বিখ্যাত শাসকই কিন্তু চাটুকারদের তোষামদে নিজেকে আল্লাহ বলে ঘোষণা করেছিলেন। অন্যদিকে হযরত ওমর, খলিফা হারুন অর রশীদ, চৈনিক সম্রাট কুবলাই খাঁন এবং সুলতান মাহমুদ চাকুকারদের প্রলোভন থেকে বাঁচার জন্য গভীর রাতে ভ্রমণে বের হতেন। তাদের সঙ্গীরা হতো স্বল্প বুদ্ধির সাধারণ মানুষ। ফলে সঠিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা সহজেই সম্যক ধারণা পেতেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসের মহানায়কের বিখ্যাত উক্তি- '' চাটার দলেরা সব চেটে খেয়ে ফেলেছে''- আমাকে ভীষণভাবে আহত করে। ১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে বঙ্গবন্ধু যখন বুঝতে পারলেন, তখন ঘুরে দাঁড়ানোর পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সেই আত্ম উপলব্ধি ও অসহায়ত্ব মরহুম এম আকতার মুকুল তার মুজিবের রক্ত লাল বইতে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। আমি কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন। তার সরকার গত '৯৬ সালের সরকারের তুলনায় অধিক সপলতা লাভ করুক এবঙ আমাদের মতো তরুণদের কে রাজনীতির মূল ধারায় এনে তিনি যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তার সাফল্যজনক ভাবে অব্যাহত থাকুক।

কাজেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই অগ্রযাত্রায় সামান্য ব্যাঘাত (অবশ্যই আমার দৃষ্টিতে) দেখলেই নিরস মন্তব্য ঠেকাতে পারি না। হয়তো কখনো ভুল হয়ে যায়, কিন্তু শুভাশিসের ঘাটতি থাকে না। আমার দলের উর্ধ্বতন নেতাদের নিকট প্রত্যাশা '' তরুণদের কন্ঠকে বন্ধ করে দেবেন না। তাদের মন্দুগুলোকে সংশোধন করে দিন এবং ভালো কাজের প্রণোদনা দিন''। ইনকিলাব ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.