আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাতীয় মুক্তিযুদ্ধঃ বিপ্লবী চোখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

বিজ্ঞান হলো প্রকৃত সত্য উদঘাটনের চলমান প্রক্রিয়া, নিরেট সত্য নয়। যে অনুপাতে এক ব্যক্তি কর্তৃক অন্য ব্যক্তির শোষণের অবসান ঘটানো হবে, সেই অনুপাতেই এক জাতি কর্তৃক অন্য জাতির শোষণের অবসান ঘটবে। যে অনুপাতে শ্রেণীসমূহের মধ্যকার বৈরিতা অন্তর্হিত হবে, সেই অনুপাতে অবসান ঘটবে এক জাতির প্রতি অন্য জাতির শত্রুতার। - কমিউনিস্ট ঘোষণাপত্র কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের তৃতীয় কংগ্রেসে (১৯২১) লেনিন বলেছিলেনঃ "এটা সম্পূর্ণভাবে স্পষ্ট যে, বিশ্ব বিপ্লবের আসন্ন লড়াইগুলোতে বিশ্বের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ট অংশের আন্দোলন – যা প্রাথমিকভাবে জাতীয় মুক্তি অভিমুখে পরিচালিত – পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধী হয়ে দাঁড়াবে, এবং সম্ভবত আমরা যতটা আশা করি তার চেয়ে অনেক বেশী বিপ্লবী ভূমিকা পালন করবে ................ এই ঘটনা সত্ত্বেও যে মেহনতি জনতার ব্যাপক অংশ – ঔপনিবেশিক দেশগুলোর কৃষকগণ – এখনও অনগ্রসর, তারা বিশ্ব বিপ্লবের আগামী পর্যায়গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ বিপ্লবী ভূমিকা পালন করবে। " (লেনিনঃ সংকলিত রচনাবলী, ৩২তম খন্ড) তারপর থেকে, ঔপনিবেশিক ও আধা-ঔপনিবেশিক দুনিয়া জুড়ে শ্রেণী সংগ্রাম জাতীয় সংগ্রামের রূপ পরিগ্রহ করেছে, জাতীয় মুক্তিযুদ্ধসমূহের এবং ‘নয়া-গণতান্ত্রিক’ ধরণের বিপ্লবসমূহের জন্ম দিয়েছেঃ "জাতীয় চরিত্রবিশিষ্ট সংগ্রামে শ্রেণী সংগ্রাম জাতীয় সংগ্রামের রূপ নেয়, জাতীয় সংগ্রাম দুই সংগ্রামের মধ্যকার অভিন্নতাকে স্পষ্ট করে তোলে।

একদিকে, একটা নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক পর্যায়ের জন্য বিভিন্ন শ্রেণীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দাবীগুলো এমন হবে না যাতে সহযোগীতা ক্ষুণ্ণ হয়; অন্যদিকে, জাতীয় সংগ্রামের দাবীসমূহ (জাপানকে প্রতিরোধ করার প্রয়োজনীয়তা) হবে সকল শ্রেণী সংগ্রামের প্রস্থান-বিন্দু। এভাবে, যুক্তফ্রন্টের মধ্যে রয়েছে ঐক্য ও স্বাধীনতা এবং জাতীয় সংগ্রাম ও শ্রেণী সংগ্রামের অভিন্নতা। " (মাও সে-তুঙঃ নির্বাচিত রচনাবলী, ২য় খন্ড, পিকিং, ১৯৬৫) একটির পর একটি দেশে, বিশেষ করে ভিয়েতনামে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সংগঠিত এবং মাও সে-তুঙের জনযুদ্ধের রণনীতি দ্বারা পরিচালিত একটা ক্ষুদ্র ও বস্তুগত দিক দিয়ে অনগ্রসর জাতিও, সকল সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও বিরাট সামরিক ব্যবস্থায় সজ্জিত – যে সামরিক ব্যবস্থার পেছনে একচেটিয়া পুঁজিবাদ তার সমস্ত সম্পদ বিপুলভাবে ব্যয় করেছে – তাকেও পরাজিত করতে সক্ষম। ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বজোড়া সমর্থন লাভ করেছে। এইভাবে একটিমাত্র জাতির জাতীয় সংগ্রাম একটা আন্তর্জাতিক সংগ্রামে পরিণত হয়েছে, যা আবার তার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশসমূহে নতুন জাতীয় সংগ্রামসমূহকে সক্রিয় করে তুলেছে।

মুক্তি ও সমানাধিকারের জন্য আমেরিকান নিগ্রোদের সংগ্রাম নিজেই একটা জাতীয় আন্দোলন, লেনিন যা উপলব্ধি করেছিলেনঃ "যুক্তরাষ্ট্রে, নিগ্রোদের ................. এক নিপীড়িত জাতি হিসাবে শ্রেণীভুক্ত করা উচিত; কারণ ১৮৬১-৬৫ সালের গৃহযুদ্ধে যে ক্ষমতা অর্জিত হয়েছিল এবং প্রজাতন্ত্রের সংবিধানে যার নিশ্চয়তা দান করা হয়েছিল, ১৮৬০-৭০ সালের প্রগতিশীল, প্রাক-একচেটিয়া পুঁজিবাদে (সাম্রাজ্যবাদ) পরিবৃত্তির সাথে প্রধান নিগ্রো অঞ্চলগুলোতে (দক্ষিণে) তা ক্রমাধিক পরিমানে খর্ব করা হয়েছিল ........." (লেনিনঃ সংকলিত রচনাবলী, ২৩তম খন্ড) অনুরূপভাবে, এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করতে গিয়ে মাও সে-তুঙ দেখিয়েছেন যে, এটা একটা শ্রেণী সংগ্রাম ও জাতীয় সংগ্রাম উভয়ইঃ "আমেরিকান নিগ্রোদের আন্দোলনের দ্রুত বিকাশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তীব্র হয়ে ওঠা শ্রেণী সংগ্রাম এবং তীব্র হয়ে ওঠা জাতীয় সংগ্রামেরই প্রকাশ ............... চুড়ান্ত বিচারে, জাতীয় সংগ্রাম হচ্ছে শ্রেণী সংগ্রামের ব্যাপার........ নিগ্রোদের ক্রীতদাসে পরিনত করা এবং নিগ্রোদের নিয়ে ব্যবসার সাথেই উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের অশুভ ব্যবস্থা উদ্ভূত হয়েছিল এবং সতেজ হয়ে উঠেছিল এবং কৃষ্ণ জনগণের সম্পূর্ণ মুক্তির সাথে এটা নিশ্চিতভাবেই খতম হবে। " (মাও সে-তুঙঃ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে মার্কিন নিগ্রোদের ন্যায্য সংগ্রামের বিবৃতি। পিকিং রিভিউ; ২০ আগষ্ট, ১৯৬৩। ) জাতীয় মুক্তি সংগ্রামগুলো যত বিস্তৃতি লাভ করে, সাম্রাজ্যবাদী শাসনাধীন এলাকা তত সংকুচিত হয়, তত তার ওপর শোষনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়, এভাবে জাতীয় মুক্তির নয়া সংগ্রামগুলোর সূচনা হয়। এটা হচ্ছে সেই আবর্ত চক্রক যা থেকে সাম্রাজ্যবাদের কোন রেহাই নেইঃ "মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, যা দেখতে একটি অতিকায় দৈত্যের মত, বর্তমানে মৃত্যুশয্যার খিঁচুনি শুরু হয়েছে, সারাংশের দিক থেকে একটা কাগুজে বাঘ।

আজকের দুনিয়াতে কে কাকে ভয় করে? ভিয়েতনামী জনগণ, লাওসের জনগণ, প্যালেস্টাইনের জনগণ, আরব জনগণ বা অন্যান্য দেশসমূহের জনগণ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে ভয় করে না; মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীই দুনিয়ার জনগণকে ভয় করে। বাতাসে পাতা নড়ার শব্দেই সে আঁতকে ওঠে। অসংখ্য ঘটনা প্রমাণ করে যে, একটা ন্যায়সঙ্গত উদ্দেশ্য প্রচুর সমর্থন লাভ করে, আর একটা অন্যায় উদ্দেশ্যের জোটে সামান্যই সমর্থন। একটা দূর্বল জাতি একটা শক্তিশালী জাতিকে, একটা ক্ষুদ্র জাতি একটা বৃহৎ জাতিকে পরাভূত করতে পারে। একটা ক্ষুদ্র দেশের জনগণ অবশ্যই একটা বৃহৎ দেশের জুলুমকে পরাভূত করতে পারে, যদি কেবল তারা সংগ্রামে রুখে দাঁড়াতে সাহসী হয়, অস্ত্র তুলে নিতে সাহসী হয় এবং তাদের দেশের ভাগ্রকে তাদের নিজেদের হাতে আঁকরে ধরে।

এটা হচ্ছে ইতিহাসের একটা নিয়ম। " (মাও সে-তুঙঃ দুনিয়ার মজদুর এক হও, মার্কিন আক্রমণকারী এবং তাদের লেলিয়ে দেওয়া কুকুরগুলোকে পরাজিত করো! পিকিং রিভিউ; ২০ মে, ১৯৭০) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.