ছয় মাসের হাড়ভাঙা খাটুনি, সেই সঙ্গে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ_মুহূর্তেই সব শেষ। মাছের খামার করে দিন ফেরানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন সাত যুবক। এক সপ্তাহ পরেই সেই স্বপ্ন পূরণের কথা। কিন্তু নির্মম শত্রুতায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে তাঁদের। দুর্বৃত্তদের বিষে খামারের সব মাছ মরে ভেসে উঠেছে গত দুই দিনে।
ভেঙে গেছে তাঁদের স্বপ্ন। স্বপ্নভঙ্গের বেদনা আর বিশাল ক্ষতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তাঁরা।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের মাথিয়া এলাকায় কিশোরগঞ্জ-নিকলী সড়কের পূর্ব পাশের পুরুয়াইল বিলে ৬৫ একর জলাভূমিতে মাছের চাষ করেছিলেন ওই সাত যুবক। আর এক সপ্তাহ পরেই মাছ ধরা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু শনিবার রাতে দুর্বৃত্তরা বিষ ঢেলে দিলে পুরো খামারের মাছ মরে ভেসে ওঠে।
রবিবার ও গতকাল সোমবার পর্যন্ত প্রায় সব মাছ ভেসে উঠেছে। এতে অন্তত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে খামারের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।
এ ধরনের শত্রুতায় এলাকার লোকজনও হতভম্ব। অনেককে কাঁদতে পর্যন্ত দেখা গেছে।
জানা গেছে, ছয় মাস ধরে দিন-রাত যুবকরা খামারে শ্রম ও অর্থ বিনিয়োগ করে আসছেন।
এ পর্যন্ত তাঁদের ৪৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কয়েক দিন আগে মাছ ব্যবসায়ীরা ৫২ লাখ টাকায় কিনতে চেয়েছিল খামারের সব মাছ। কিন্তু তাঁরা বিক্রি করেননি।
এলাকার লোকজন জানায়, মাথিয়া গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবদুল হাশিমের ছেলে বাবুল মিয়া ও তাঁর বন্ধু মোশাররফ হোসেন, ফরিদ মিয়া, আবু হানিফ, আবুল কালাম, ইদু মিয়া ও হারুন অর রশিদ মিলে গত জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে খামার শুরু করেন। তাঁদের সবার বয়স ২৮ থেকে ৩০ বছর।
জলাভূমিতে এ খামার গড়তে তাঁরা অন্য কৃষকদের জমিও ইজারা নিয়েছেন।
খামারের মালিকরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
উদ্যোক্তাদের একজন ফরিদ মিয়া সব সহায়-সম্বল খামারে ব্যয় করেছিলেন। সুদে টাকা ধার এনেও লাগানো হয়েছে।
এখন কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন, ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন তা ভেবেই অস্থির হয়ে পড়েছেন তিনি। আবুল কালামের অবস্থাও একই রকম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মানুষ যে এত জঘন্য হতে পারে, তা আমাদের কল্পনাতেও ছিল না। এর চেয়ে আমাকে মেরে ফেললেও ভালো ছিল। '
গতকাল সোমবার দুপুরে পুরুয়াইল বিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষ বিলে মরা মাছ ধরছে।
যে যার মতো নিয়ে যাচ্ছে ছোট-বড় বিভিন্ন জাতের মাছ। বাধা দিয়ে কাজ হচ্ছে না, বলতে গেলে বিলে চলছে হরিলুট। এরই মধ্যে মরা মাছের উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকার বাতাসে। মালিকপক্ষও লোক লাগিয়ে মাছ ধরে বিভিন্ন বাজারে পাঠাচ্ছে বিক্রি করতে।
প্রধান উদ্যোক্তা বাবুল মিয়া জানান, এসব মাছ পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
ভৈরব, ঢাকা, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় এ পর্যন্ত আট থেকে ১০ ট্রাক মরা মাছ পাঠিয়েছেন তাঁরা।
বাবুল জানান, তাঁরা বিলে কোনো ছোট পোনা মাছ ছাড়েননি। ১০০ টাকা দামের বড় আকারের মাছও ছাড়া হয়েছে হাজার হাজার। তিনি বলেন, 'আমরা হিসাব করে দেখেছিলাম, বিল থেকে এ বছর কম করে হলেও কোটি টাকার মাছ বিক্রি করব আমরা। '
বাবুল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'আমরা বৈধ পথে নিজেরা কঠোর শ্রম দিয়ে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন দেখেছিলাম।
কিন্তু দুর্বৃত্তরা সেই স্বপ্ন পূরণ করতে দিল না। '
দানাপাটুলি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বজলু জানান, বিলের পাশে কীটনাশকের প্যাকেট পাওয়া গেছে। চরম শত্রুও এ ধরনের কাজ করবে না।
গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খামারে অংশীদার করা না করা নিয়ে গ্রামের একটি পক্ষের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জের ধরে এ বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
পুরুয়াইল বিলের পাশে আরো বেশকিছু মাছের খামার আছে। এ ঘটনার পর ওই সব খামারের মালিকরা ভয়ে ভয়ে আছেন। কখন কী হয়। খামার পাহারায় তারা অতিরিক্ত লোক নিয়োগ করেছেন। পাশের খামারের মালিক করিম উদ্দিন জানান, মানুষকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার যে প্রবণতা শুরু হয়েছে, তাতে কেউ কোনো উদ্যোগ নিতে সাহস পাবে না।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানান, তাঁর কাছে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।