লিখতে মজা লাগে :P রাতে কিছুই খাওয়া হয়নি । দুপুর বেলার যে খাবার রেখে দিয়েছিলাম কি জন্য যেন নষ্ট হয়ে গেল । বাইরে তুমুল বৃষ্টি । হোটেলে গিয়ে খাব... চিন্তা করেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে । শীত শীত লাগছে ।
স্যাঁতস্যাঁতে রুমের দেয়ালে লোনা । শালার নিজের বাসার কথা চিন্তা করে কান্না পাচ্ছে । কিসের জন্য যে ঢাবি তে ভর্তি হইলাম না... আরেকটু ভাল ভাবেই পড়লেই হত... দুনিয়ার আজগুবি চিন্তা মাথায় ঘুরছে । ঘড়ির দিকে তাকায় দেখি ১টা ২৭ বাজে । কাথাটা টান দিয়ে বুক পর্যন্ত নিয়ে থার্মোডাইনামিক্সের মোটা বইটা চোখের সামনে ধরলাম ।
সাথে সাথে দুনিয়ার ঘুম আছড়ে পড়লো আমার উপর।
খটখট শব্দে ঘুম ছুটে গেলো। রুম পুরা অন্ধকার। আমার মনে আসে ঘুমানর সময় লাইট জালানো ছিল। তাহলে গেছে কারেন্ট ।
ব্যাপার না । আবহাওয়া ঠান্ডা আছে । আবার চোখ বন্ধ করতে যাব, তখনি আবার আওয়াজ টা শুনলাম । আমি ভুলেই গেসিলাম । মনে হচ্ছে আমার টেবিল থেকে আসছে ।
কি কারণে খেয়াল নাই,অস্বাভাবিক ভয় পেয়ে গেলাম । বুক এতো জোরে ধুকপুক শুরু করলো যে মনে হল খাঁচা ভেঙ্গে আসবে । আধো আলোয় কিছু ঠিক ভাবে দেখতে পাচ্ছিলাম না । মোবাইল টা হাতের পাশেই ছিলো। টিপ দিয়ে দেখি ৩ টা বাজে ।
নিজেকে বুঝালাম কিছুই না। কিছুই শুনি নাই । আবার চোখ বন্ধ করতে যাব ,টেবিল থেকে কাঁচের গ্লাসটা ঠাস করে পরে ভেঙ্গে গেল । মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। আমার আর কিছু মনে নাই ওই রাত্রের কথা।
পরের দিন ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেলো । দৌড়িয়ে ক্লাস ধরলাম কোনোরকমে । বাসায় আস্তে আস্তে দুপুর শেষ প্রায়। রাতের কথা কাওকে বলি নাই । এটা অস্বাভাবিক ।
কাহিনিটা ত বলার মতই। কিন্তু কাউকেই বলতে মন চাচ্ছিলো না কি জন্যে জানি।
একা থাকি। মেসে উঠসি এক সপ্তাহ হলো। মেসের অন্য লোক দের সাথে কথা হয় নি ।
কেউ ই আমার ভার্সিটির না । বেশির ভাগ ই চাকরি করে মনে হয়। রাতের বেলা খুব একা একা লাগে । বিষন্ন লাগে । ৬০ ওয়াটের বাল্বের আলো মনটাই খারাপ করে দেয় ।
টিভি নাই, গল্পের বই নাই । বাসার কথা শুধু মনে পড়ে।
পরদিন ক্লাসে পরীক্ষা ছিল একটা। বই খাতা নিয়ে বসলাম খাটে । কতক্ষন পড়সি খেয়াল নাই ।
বিশাল হাই তুল্লাম একটা । আড়মোড়া ভাঙ্গলাম । যেই না একটু কাত হতে গেলাম সাথে সাথে প্রচন্ড জোড়ে কেঁপে উঠলো খাটটা।
আমি থম মেরে থাকলাম কিছুক্ষণ । তারপর এক ছুটে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম ।
ভাল ভয় পাইসি । এগুলা কি? Paranormal Activity সিনেমার কাহিনি দেখি পুরা । গলা শুকায় গেছে। ভয়ে ভয়ে ঢুকলাম রুমে আবার। রুমটা অসম্ভব ঠান্ডা ।
হ্যাল্কা একটা কটু গন্ধ পাচ্ছি নাকে । মনে মনে দোয়া দুরুদ যা জানি সব পড়তেসি । লক্ষন সুবিধার না । আমার খালি মনে হচ্ছে এখনি কিছু একটা হবে... কিছু একটা ভেঙ্গে পড়বে বা ছুটে আসবে...স্নায়ু টান টান হইয়া আসে । পানি খেলাম ।
আবার খাটেও উঠলাম । এক কোনায় বসে আছি চুপচাপ । রাত টা কেমনে কাটাবো চিন্তা করেই অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে । ঠান্ডা ভাব মনে হয় বাড়ছে । মনে হইতেসে আমি একা নাই... আরো অনেকেই আছে রুমে।
ফিসফিস করতেসে আমার চারপাশে...। ঠিক তখনই যথারীতি কারেন্ট চলে গেল।
অন্ধকারে কিভাবে সারা রাত বসে ছিলাম চিন্তা করতেও ভয় লাগে । যাই হোক ওই রাত্রে আল্লাহই জানেন কেনো,আর খারাপ কিসু হয় নাই । আমি ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম ।
আলো ফোটার সাথে সাথে মেসের কেয়ারটেকার কাম ম্যানেজার ফারুকের রুমে গিয়ে ধাক্কানো শুরু করলাম । কিছুক্ষন ধাক্কানোর পর ব্যাটা দরজা খুললো । চোখ ডলছে। হাই তুলতে তুলতে বললো, ' কি হইসে ভাই? এত সকালে? '
সারা রাত ঘুমাই নাই । মেজাজ খারাপ ।
একটু রুক্ষ সুরেই বললাম, " আমার রুমে ত ভাই গেঞ্জাম শুরু হইসে দুই রাত ধইরা... ''
ঘুম ছুটে গেল ফারুক মিয়ার । '' কি গেঞ্জাম ভাই ? '', গলায় নিখাদ বিস্ময় ।
'' রাত্রে শব্দ হয়, জিনিস পত্র কাপাকাপি-নাড়াচড়া করে... '' আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই ফারুক চাপা গলায় বলে উঠলো, '' ১৭ নাম্বার রুমে না আপনি? ''
আমি ত অবাক । ''না... ১৮ নাম্বারে...'' ফারুক আমার দিকে বোকার মত কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল । ''আপনি ১ সপ্তাহ ধরে ঐ রুমে আছেন? খাইসে!'' ঢোক গিললো ফারুক ।
‘'ক্যন ১৮ নাম্বার রুমে কি সমস্যা?” ফারুক উত্তর দিলো না। ভিতরে গিয়ে কাকে জানি ধমকা ধমকি শুরু করলো, মেসের ছুটা কাজকর্ম করা পিচ্চি মোস্তাকরে ধরে নিয়ে আসলো। বেচারা ঘুমেই কাতর।
সেদিনই আমার জিনিসপত্র সব তাড়াহুড়া করে পাশের রুমে নিয়ে যাওয়া হইলো। আমি কয়েকবার জানতে চাইলাম ব্যাপার কি? কেউ কিছুই বললো না, দৃষ্টিকটু ভাবে এড়ায় গেলো।
যাই হোক, ঐ রুমে তালা মারা হইলো, আমারো রাতের ঝামেলা শেষ হইলো।
আমার মনের ভিতর খুঁতখুঁতিটা কিন্তু গেলনা। মেসের বুড়ো দারোওয়ান আছে একজন, জয়নাল চাচা, মেসের শুরু থেকেই আছেন। তাকে ব্যাপক ঘুষ দিয়ে এবং খাতির যত্ন করার পর ঐ ১৮ নাম্বার রুমের কাহিনি যা জানলাম তা হলো, শুরু থেকে এই সমস্যা গুলো ছিলো না। বছর দুইয়েক আগে থেকে প্রবলেম শুরু হয়।
প্রথম প্রথম বোর্ডাররা আমার মতই অতিপ্রাকৃত ব্যাপার সেপার অনুভব করতো, কিন্তু কেউ পাত্তা দেয় নি। পরে ঐ বোর্ডার শারীরিক ভাবে ভীষণ অসুস্থ হয়ে মেস ছেড়ে দেয়। পরপর বেশ কয়েকজনের একই অবস্থা হলে মেসের মালিক ওই রুম বন্ধ করে দেন আর মেসের দুর্নাম যাতে না হয় তাই পুরো ব্যাপারটা গোপন রাখেন নতুন বোর্ডারদের কাছ থেকে। কাউকে ঐ রুম নিতে দেয়া হয় না। অলটাইম বুকড দেখানো হয়।
এবার আমি দুই বছর আগে কি ঘটেছিল সেটা জানার জন্য তদন্ত শুরু করলাম। কেউ কি ঐ রুমে আত্মহত্যা করেছিল? নাকি খুন হয়েছিল? এত বড় ঘটনা ঘটলে তো হৈচৈ পরে যাবার কথা। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও এ ধরণের কিছু জানতে পারলাম না।
একদিন বিকেলে বসে রাহাত ভাইয়ের সাথে গল্প করছি। উনি মেসের সবচেয়ে সিনিয়ার বোর্ডারদের একজন।
আমাকে খুব পছন্দ করেন, প্রায়ই বন্ধুর মত আড্ডা দেন। উনার কাছে খুব কৌশলে ২বছর আগে মেসে কোনো বড় ধরণের ঘটনা ঘটেছিল কিনা জানতে চাচ্ছিলাম। উনি বোধহয় ধারণা করতে পারছিলেন, আমি কেন জিজ্ঞেস করছি। উনাকে আমার এক সপ্তাহের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেছিলাম। উনি অনেক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে বললেন, মেসের যে কাঠের আসবাব গুলো আছে, সে গুলো নাকি ২ বছর আগে একসাথে নিলামে কেনা হয়েছিলো।
কথাটা শুনেই মাথায় কি যেন একটা খোঁচা মারতে থাকলো। হঠাৎ করেই উঠে দৌড় দিলাম আমি।
নিচে নেমে ফারুক ভাইকে খুঁজে বের করে বললাম, "আপনাদের ১৮ নাম্বার রুমে কেন ঝামেলা হচ্ছে, সেটা মনে হয় আমি বের করতে পারসি। "
উনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,"মানে? কেমনে?"
"আপনি চাবিটা নেন, আর চলেন আমার সাথে", আমি অধৈর্য গলায় বললাম। কি মনে করে জানি উনি আর কিছু বললেন না, নীরবে চাবিটা নিয়ে আমার পিছু পিছু আসলেন।
রুমের তালা খুলতেই একটা বোঁটকা গন্ধ নাকে বারি মারলো। সম্পূর্ণ রুম ফাকা কেবল একটা খাট পরে আছে। আমি সেটার দিকে হাত বারিয়ে বললাম, "এটাই সব নষ্টের মূল"
ফারুক ভাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন দেখে আমি বললাম, "দেখেন, ঠিক দুই বছর আগে আপনারা এই কাঠের জিনিস গুলা কিনছেন, আর তখনই এই রুমে ঝামেলা শুরু হইসে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম, কোনো সুইসাইড বা মার্ডার কেসের ঘটনা নাই। তখনই আমার খেয়াল হলো, আমার বড় চাচাকে এভাবে শোয়ার খাটের মধ্যে তাবিজ ভরে বান মেরে অসুস্থ করে ফেলা হয়েছিলো।
আপনারাও নিলামে নিশ্চয়ই এরকম একটা তাবিজ করা খাট কিনে ফেলেছেন। "
আমার ব্যাখ্যা ফারুক ভাইয়ের পছন্দ হল। তিনি তখনই কয়েকজনকে ডেকে খাটটা বাইরে উঠানে, রোদের মধ্যে নিয়ে গেলেন। আরেকজন কে পাঠালেন কাছের মসজিদ থেকে হুজুর সাহেব কে নিয়ে আসতে। হুজুর আসার পর আমি সাবধানে খাটের পায়া গুলো পরীক্ষা করলাম।
একটা পায়ায় দেখা গেলো, বেশ বড় একটা ফাটা দাগ, পুটিং ভরে বার্নিশ করা হয়েছে, সহজে চোখে পরবে না। পায়াটা খুলে আলাদা করা হলো, তারপর দা দিয়ে এক কোপ দিতেই খাপের মত পায়াটা দুই ভাগ হয়ে গেল।
তার ভেতর থেকে যা বের হলো,দেখে এই কড়া রোদের মধ্যে দেখেও শিউরে উঠলাম। ছোট একটা বাচ্চার হাতের হাড়, কুনুই থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত। ঠিক মত পঁচে নি, সাদা হাড়ের গায়ে কালো কালো লেগে আছে এখনো।
সেটাকে জড়িয়ে একটা হলুদ কাগজ, তাতে বিজাতীয় ভাষায় কিছু লিখা। হুজুর জোরে জোরে দোয়াদুরুদ পড়তে শুরু করলেন। আমরা পিছিয়ে আসলাম। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপারটা ঘটলো তখনই, আমার মনে হল, আমি যেন একটু নড়তে দেখলাম আঙ্গুল গুলো। কি জানি হলো আমার, ভিতর থেকে এক ভয়ানক ভীতি বিভৎষ চিৎকার হয়ে বেড়িয়ে আসলো।
এক দৌড়ে নিজের রুমে এসে খাটের কোনায় বসে থরথর করে কাঁপতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পড়ই বড় ভাইরা এসে আমাকে পানি খাওয়ালেন, অভয় দিতে লাগলেন। আমার স্বাভাবিক হতে বেশ কিছুদিন লেগেছিল।
ঐ হাড়, তাবিজ নিয়ে কি করেছিলেন হুজুর, আমি জানতেও চাইনি। সমস্যা হলো, এখনই প্রায়ই রাতে দুঃস্বপ্নে দেখি ঐ হাতটাকে আমি, আঙ্গুল গুলো নাড়িয়ে আমাকে জেন ডাকছে।
চিৎকার করে ঘুম ভেঙ্গে উঠি তখন। বড্ড অশান্তিতে কাটছে আমার দীর্ঘ রজনী গুলো...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।