বৃষ্টি যেরকম আসতে আসতে ফিরে যায়..তেমনি বৃষ্টির মতো আমিও ফিরেছি বহুবার...
‘এক সেকেন্ডের নাই ভরসা বন্ধ হইবে রং তামাশা চক্ষু মুদিলে হায়রে দম ফুরাইলে.....’ ফিরোজ সাঁই এর জনপ্রিয় এই গানটি যেনো সত্যি হয়ে গেলো রাঙামাটির কোতয়ালী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আব্দুল করিম সরকার এর জীবনে। মাত্র এক সপ্তাহ আগের রবিবার সকালে রাঙামাটি শহরের বনরূপা এলাকার একটি স্টুডিও থেকে ছবি তুলে থানায় ফেরার সময় মোটর সাইকেল দূর্ঘটনায় নিহত হন তিনি। ছবি তোলার সময় কি তিনি জানতেন,আজই তার জীবনের শেষ দিন ??
তার মৃত্যুর সংবাদটি শুনে শোকে পাথর হয়ে গেছে তার ছবির ফটোগ্রাফার স্বপনও। শোকে নির্বাক হয়ে তার মন্তব্য-‘কেনো জানি ছবি তুলতে আসা এই পুলিশ অফিসারটিকে অনেক ভালো লাগছিলো,তিনিও বেশ হাসিখুশি ছিলেন। ’
আশ্চর্য ব্যাপার হলো এই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর সাতটা দিন পার হয়ে গেলেও এখনো গ্রেফতার হয়নি হত্যার কারণে দায়ী মোটরসাইকেল চালক।
রাঙামাটি জেলা পরিষদ ও ইউএনডিপি’র যৌথ পরিচালনার প্রকল্পের ওই কর্মকর্তা আদৌ গ্রেফতার বা বিচারের সম্মুখীন হবেননা বলেও ইংগিত দিয়েছেন একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা। কিন্তু কারণ কি ? উপর মহলের চাপ ! কারণ বিষয়টি নাকি ‘নিছকই দূর্ঘটনা’ ! ও,তাই...তাহলে তো বলতেই হয়,দেশের সব সড়কে যত দূর্ঘটনা হয় সবই ‘নিছকই দূর্ঘটনা’ ! সেইসব দূর্ঘটনায় নিহতদের হত্যার জন্য তবে চালকদের বিচার চাওয়া কেনো ? নাকি ‘ওরা মানুষ বলেই ওদের জীবনের মূল্য আছে’ ? আর পুলিশ ? পুলিশ তো ‘মানুষ’ নয়,তাই পুলিশ হত্যার বিচার নাই। আব্দুল করিম নিহত হওয়ার পর মোটরসাইকেলটি যিনি চালাচ্ছিলেন সেই কনস্টেবল নাসির বাদী হয়ে ওই জেলা পরিষদ-ইউএনডিপির প্রকল্পের কর্মকর্তাকে আসামী করে কোতয়ালী থানায় একটি মামলা করলেও ‘ভাগ্যবান’ সেই আসামী এখনো ধরা পড়েনি।
দূর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হচ্ছে,একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার নিহত হওয়ার পরও আমাদের ক্ষয়ে যাওয়া রাজনীতির ব্যর্থ নেতারা দায়ী ব্যক্তিকে গ্রেফতার না করার চাপ দিচ্ছেন। হায় সেলুকাস,কি বিচিত্র এই দেশ ! রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং ইউএনডিপি তো পাহাড়ে পান থেকে চুন খসলেই অনুদান দেয়,অর্থের ঢালি নিয়ে মাঠে নেমে আসে।
তাদেরই একজন কর্মকর্তার ‘খামখেয়ালী’তে নিহত পুলিশ অফিসারের জন্য কি করেছেন ? আহত অবস্থায় এই পুলিশ অফিসারতে তাদের কেউ কি দেখতে গিয়েছেন ? সুচিকিৎসা জন্য কোন তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়েছেন ?? নিহত পুলিশ অফিসারের লাশ দেখাতো দূরের কথা তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ?? ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই এমন কর্মচারীদের গাড়ী বরাদ্দ দেয়ার দায়তো তিনিও এড়াতে পারবেন না।
আসুন,বিপরীতভাবে ভাবি। যদি নিহত পুলিশ অফিসার ‘ আব্দুল করিম সরকার’ এর জায়গায় ‘জয়জিৎ ত্রিপুরা’ হতো ?? তাহলে এতোক্ষণে পুলিশের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করা হয়ে যেতো। কেউ কেউ আবার ‘পুলিশের হাতে আদিবাসী হত্যা’ প্ল্যাকার্ড নিয়েও দাঁড়িয়ে যেতে । অতিউৎসাহী সংবাদকর্মীদের সংবাদের শিরোনাম হতো ‘-পুলিশের গাড়ী চাপায় আদিবাসী যুবক নিহত’।
ওসি,এসপিকে ক্ষমা চাইতে হতো অনেকের কাছে,দৌড়াদৌড়ি শুরু করতে হতো চাকুরী বাঁচাতে। একটু নীচু সারির কোন কোন অফিসার হয়তো ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ও হয়ে যেতেন। এই আমাদের ‘অসাম্প্রদায়িক’পার্বত্য চট্টগ্রাম ।
কিন্তু একটি মৃত্যু শেষ পর্যন্ত মৃত্যুই। বর্ণ,ধম,জাতিগত পরিচয় বা পেশা দিয়ে কোনদিনই তাকে চিহ্নিত করা উচিত নয়।
যারা পুলিশ অফিসার আব্দুল করিম এর মৃত্যুর জন্য দায়ী তাদের আইনের মুখোমুখি করা উচিত। আদালতই নির্ধারণ করবে,কে কতটা দোষী,কার দায় কতটা ছিলো। কিন্তু তার আগে কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানী না করতে কথিত ‘ উপর মহলের’এতো ব্যতিব্যস্ততা কেনো ? সব সময় পুলিশের কাছেই দায়িত্বশীল আচরণ চাইবেন,আর পুলিশের বেলায় কেনো আপনাদের এই দ্বিচারিতা ?? সত্যিকারের আইনের শাসন চাইলে পুলিশের অন্যায় আচরণের নিন্দা যেমন করতে হবে,পুলিশের ব্যাথায় কাঁদতেও হবে। কারণ,পুলিশ যখন জেনে যাবে,তাদের মৃত্যুর কোন দাম নেই,তখন তাদের কাছে আমার-আপনার মৃত্যুরও দাম থাকবেনা ! সেই দায় নিশ্চয়ই সাধারন মানুষ হিসেবে আমরা নিতে চাইবো ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।