পৃথিবীর প্রাণিকুলের মধ্যে পাখিকে শান্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আদিকাল থেকে মানুষ খাদ্য তালিকায় পাখির ডিম ও মাংসের সংযোজন করে আসছে। রসনা তৃপ্তির পাশাপাশি সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষ নানা জাতের পাখি পালনও করে আসছে আদিকাল থেকে। কারও কারও কাছে পাখি পালন শখের বিষয়। তাই মানুষ নিজেদের খাদ্য চাহিদা, শখ ও মনোরঞ্জনের জন্য পাখিকে নিজ আয়ত্তে রাখার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় অনেক পাখিই মানুষের পোষ মেনেছে।
পৃথিবীর সব সুন্দরতম পাখির মধ্যে ময়ূর রয়েছে সবার শীর্ষে। বাংলাদেশের সুন্দরতম পাখিগুলোর মধ্যেও ছিল বর্মি ও ভারতীয় ময়ূর। এ প্রজাতি দুটি বর্তমানে দেশে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ময়ূর যেমন সুন্দর পাখি, তেমনি এদের অপূর্ব সুন্দর পেখম সবাইকে বিমোহিত ও আকৃষ্ট করে।
তাই ময়ূরের পালক সবার কাছেই অত্যন্ত সমাদৃত। যারা কোনোদিন ময়ূর দেখেনি তারাও এদের পালকের খুব ভক্ত। ময়ূরীর পেখম নেই কিন্তু ময়ূরের রয়েছে অপূর্ব আকর্ষণীয় পেখম। ময়ূরের সবুজ পেখমের পালকে অনেক রঙীন বড় ফোঁটা থাকে, যা খুবই আকর্ষণীয়। পেখমগুলো লেজের গোড়ার ওপরের পালক, যা অতিমাত্রায় লম্বা।
ময়ূরের চূড় আছে। ময়ূর পিঠের ওপর পেখম তুলে ডানা ঝুলিয়ে নেচে নেচে ময়ূরীকে আকর্ষণ করে, যা অত্যন্ত মনোহর ও চিত্তাকর্ষক। এদের দেহে উজ্জ্বল সবুজ ও নীলাভ পালক থাকে। মাথা, ঘাড়, গলা ও ডানার পালক কিছুটা নীলাভ। ডানার বাকি অংশ ও পা লালচে।
মৎস্য শিকারিরা সেই যুগ যুগ ধরে আগে থেকে মাছ ধরার ছিপের সঙ্গে ময়ূরের পালক ব্যবহার করে আসছেন। বিদেশেও ময়ূরের পালকের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। ময়ূরের মাংস বেশ সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। যেহেতু এদের মাংস বাজারে বিক্রি হয় না, সেহেতু তা পাওয়া গেলেও তার জন্য মূল্য দিতে হয় অত্যধিক। এই প্রেক্ষাপটে কবুতর, তিতির, কোয়েল এবং টার্কির মতো ময়ূরকেও পোলট্রি শিল্পের অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
ময়ূর দলবদ্ধভাবে বনে-জঙ্গলে বিচরণ করে। ৫-৬টি ময়ূরীর সঙ্গে এক এলাকায় একটি ময়ূর থাকে। এরা মাটিতে চলাফেরা করলেও বেশিরভাগ সময় বড় গাছের ডালে থাকে। শস্যদানা, কীটপতঙ্গ, সাপ, ব্যাঙ প্রভৃতি এদের প্রিয় খাদ্য। মাটিতে সামান্য গর্ত করে ৩-৫টি ডিম পাড়ে।
ডিমগুলো ধূসরাভ। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ২৭-৩০ দিন সময় লাগে। এদের গড় আয়ু প্রায় ৩৫ বছর। ময়ূরের যৌবনপ্রাপ্তি ঘটে সাধারণত ৩-৪ বছরে। আবদ্ধ অবস্থায় লালন-পালনের ক্ষেত্রে এদের নিয়মিত গম, ধান, সবজি, বীজ প্রভৃতি খেতে দিতে হয়।
পেঁপে, তরমুজসহ অন্যান্য পাকা ফলও এদের প্রিয় খাদ্য।
ময়ূরের পালকের প্রচুর জনপ্রিয়তা থাকার জন্য দেশের বহু অভিজাত দোকানে এদের পালক বিক্রি হয়ে থাকে। দেশে বিদ্যমান চিড়িয়াখানাগুলো ছাড়া দেশের অন্য কোথাও ময়ূর সাধারণত দেখা যায় না। তবে কখনও কখনও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন বনে কদাচিৎ বর্মি ময়ূরের দেখা মেলে। এমনও এক সময় ছিল যখন ময়ূর ঢাকা জেলার শালবন থেকে ময়মনসিংহ, ভারতের মেঘালয় ও আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচরণ করত।
বাংলাদেশে এ মূল্যবান পাখিটি বিলুপ্ত হয়ে গেলেও ভারতে যথেষ্ট সংখ্যক ময়ূর পাওয়া যায়। ময়ূর ভারতের জাতীয় পাখি। বাংলাদেশের আবহাওয়া ময়ূর লালন-পালনের জন্য বেশ উপযোগী। কিন্তু বর্তমানে তা শুধু চিড়িয়াখানা ও বিত্তবানদের পাখি হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। প্রকৃতপক্ষে এ পাখিটি গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ থেকে অনেক পরিবারই স্বাচ্ছন্দ্যে লালন-পালন করতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।