আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাহাড়ের লোকাল পলিটিক্স, অস্ত্রবাজি বা অন্যান্য ...

বৃষ্টি যেরকম আসতে আসতে ফিরে যায়..তেমনি বৃষ্টির মতো আমিও ফিরেছি বহুবার... ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর চব্বিশ বছরের সশস্ত্র জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে আসে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও এর প্রায় দুই হাজার সশস্ত্র সদস্য। কিন্তু সেই প্রকাশ্য চুক্তি সাক্ষরের দিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম বিভক্ত হয় দলটি। দলটির সহযোগি সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে চুক্তির বিরোধীতা করেই পূর্ণস্বায়ত্ত্বশাসনের দাবীতে জন্ম নেয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। সাময়িক সেই সংকট বেশ ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠেছিলো জনসংহতি। নিয়মিত বিভিন্ন শাখা সম্মেলন,চুক্তি বাস্তবায়নের দাবীতে আন্দোলন,আর নানা ইস্যূতে দেশে বিদেশে নানা মহলের সমর্থন আদায় করে দলটি সরকারের উপর বেশ চাপসৃষ্টিকারী সংগঠন হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়।

খাগড়াছড়ির প্রায় পুরো জেলায় এবং নানিয়ারচর উপজেলায় ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করলেও বাকী পার্র্বত্যাঞ্চলে বেশ দাপট নিয়েই কার্যক্রম চলছিলো জনসংহতির। কিন্তু ২০০৬ সালের জরুরী সরকার যেনো জনসংহতির জন্য বিপর্যয় বয়ে নিয়ে আসে। এই সময় সারাদেশে ব্এিনপি-আওয়ামী লীগের একদল নেতার মতো পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির একদল নেতাও জনসংহতিতে সংষ্কারের দাবীতে সোচ্ছার হয়। তারা সন্তু লারমার একক নেতৃত্ব থেকে দল বাঁচাতে নানা উদ্যোগ নেয় এবং শেষাবধি জনসংহতি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নতুন আরেনটি রাজনৈতিক দল গঠন করে,যার নাম পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএনলারমা)। একসময়কার সন্তু লারমার ঘনিষ্ট সহকর্মী রূপায়ন দেওয়ান,তাতিন্দ্র লাল চাকমা পেলে,সুধাসিন্ধু খীসা,চন্দ্রশেখর চাকমা,শক্তিমান চাকমারা মিলে তৈরি করেন নতুন এই সংগঠনের রূপরেখা।

প্রকাশ্যে এই কারণে জনসংহতির কোন ক্ষতি হয়নি বলে দাবী করা হলেও সাংগঠনিকভাবে বেশ বেকায়দায় পড়ে জেএসএস। আবার এই সময় গ্রেফতার হন জনসংহতির সেকেন্ড ইন কমান্ড সত্যবীর দেওয়ান। কিন্তুু জেএসএস এর কিছুটা বেকায়দায় থাকার সুযোগ নিয়ে পার্বত্য মানচিত্র দখলের লড়াইয়েও বেশ এগিয়ে যায় প্রতিপক্ষ ইউপিডিএফ। তারা রাঙামাটির নানিয়ারচর ছাড়াও বাঘাইছড়ি,জুড়াছড়ি,বিলাইছড়ি,রাজস্থলী,কাউখালী,লংগদু উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে। আবার জনসংহতি একেবারেই নিয়ন্ত্রনে থাকা বান্দরবান জেলায়ও নিজেদের সাংগঠনিক উপস্থিতি জানান দেয় তারা,নানা কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে।

ফলে পাহাড়ের রাজনীতিতে শুরু হয় নয়া মেরুকরণ। এই মেরুকরণের সর্বশেষ হিসেবটা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কিছুটা স্পষ্ট হয়। অরাজনৈতিক এই নির্বাচনে এই জেলায় ৪৯ টি ইউনিয়নের অন্ততঃ ২০ টিতে ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়। যদিও ইউপিডিএফ এর বিরুদ্ধে জোর করে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করাসহ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার নানা অভিযোগ উঠেছে। তারপরও ইউপিডিএফ এর এই নির্বাচন ফলাফল আরো ভালো হতে পারতো যদি এই নির্বাচনে প্রার্থীদের উপর চাপ সৃষ্টির জের হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতা অনিমেষ চাকমা সহ চার নেতা মৃত্যু না হতো।

ইউপিডিএফ এর পক্ষ থেকে তাই ইউপি নির্বাচনের ফলাফলকে ‘রক্ত¯œাত বিজয়’ হিসেবে দেখা হয়। অন্যদিকে পাহাড়ের লড়াই সংগ্রামের পুরোনো দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিও বসে নেই। সম্প্রতি তারা আবারও পার্বত্য রাঙামাটি জেলার বেশিরভাগ জায়গায় নিজেদের আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ইতিমধ্যেই জুড়াছড়ি,বরকল,কাউখালি,বিলাইছড়ি উপজেলাগুলোর বেশ কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রন নিয়েছে তারা। পাহাড়ীদের এই তিন রাজনৈতিক দলের মধ্যে জনগণের কাছে ও জাতীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতায় এগিয়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি,পাহাড়ের মানচিত্রের আধিপত্যের জায়গায় এগিয়ে ইউপিডিএফ,আর বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকান্ড আর আন্তর্জাতিক যোগাযোগে এগিয়ে জনসংহতি সমিতি (এমএনলারমা)।

ফলে আগামী দিনে কোন দলটি এই অঞ্চলের পাহাড়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই তিনটি দলেরই একটি জায়গায় মিল আছে। নিজেরা কখনই স্বীকার না করলেও তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই নিজস্ব সশস্ত্র সংগঠন থাকার অভিযোগ আছে,জনগণ এবং নিরাপত্তাসংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেও। আবার এই তিনটি দল দুটি ব্লকে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলা চালায় প্রায়ই। এই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে গত ১ বছরেই প্রাণ হারিয়েছে অর্ধশত পাহাড়ী যুবক।

এই সংঘাত বন্ধে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কাজে আসেনি। আদৌ এই সংঘাত বন্ধ হবে এমন লক্ষণ ও দেখা যাচ্ছেনা। জনসংহতি সমিতির দুটি গ্রুপই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বললেও ইউপিডিএফ এর দাবী পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসন। ফলে সংকটে পাহাড়ের রাজনীতি আর তারচেয়ে বেশি সংকটে পাহাড়ের সাধারন মানুষ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।